মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন- হিলারি ক্লিনটন ফ্যাক্টস

লেখাটি Listverse ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ফিচার থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। মূল লেখার লিঙ্ক দেখুন এখানে। 

শক্তিধর দেশ আমেরিকায় বসবসকারী বাংলাদেশী অভিবাসীরা যেমন সামনের নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত, তেমনি সুদূর বাংলাদেশের আকাশে-বাতাশেও চলছে নানা বিচার-বিশ্লেষণ। খবরের মাধ্যম কাগজী হোক বা অনলাইন কিংবা টিভি পর্দা সবখানে শক্তির দেশের নানা রকম খবর সামনে আসছে। আমরা এই পর্বে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরতে যাচ্ছি ।

হিলারি ক্লিনটন, আমেরিকার আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রাট থেকে মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। যার নামের সাথে জড়িত বিভিন্ন অপবাদ। যার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অনেকে তাকে মিথ্যাবাদী, অবিশ্বাসী’র মত অখ্যাতি মূলক শব্দ দ্বারা স্মরণ করে থাকে। কিন্তু এই অভিযোগগুলো আসলে কতটা সত্য?

সত্য বা মিথ্যা যাচাই করা আমাদের কাজ নয়। আ্মরা শুধু মাত্র এই যাবত কালীন তাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলা নানা সমালোচনা ও মিডিয়ায় মাধ্যমে সামনে আসা নানা রকম দিক তুলে ধরছি। আসুন দেখি তার একটু ঝলক।

১) একনায়কতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে উষ্ণ সম্পর্কঃ

সৌদি আরব, কাতার, বাহারাইন, আলজেরিয়া দেশ সমূহ ভিন্ন দেশ হিসেবে বিবেচিত। একটা বিষয়ে তাদের মিল রয়েছে, তা হলঃ মানবাধিকারের প্রতি অসম্মান। যদিও আপাত দৃষ্টিতে হিলারি সেটাকে নজরে না নিয়ে সেই সব স্বৈরশাসনের নেতাদের কাছ থেকে মোটা অংক বুঝে নেন বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার নামে।
এভাবে বছরের পর বছর , ফাউণ্ডেশনের বিবৃত লক্ষ্য, জেন্ডার সমতা ও lesbian, gay, bisexual, transgender সম্পর্কিত অধিকার নীতি মালার সাথে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও নারী ,সমকামী, ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের প্রতি ভয়াবহ মানসিকতা সম্পন্ন সেইসব দেশের কাছে থেকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন গ্রহন করেছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার।

০২) ক্যাশ ফর অ্যাক্সেসঃ

বাহরাইন সিংহাসন উত্তারাধিকারী ও সেই দেশের সেনাবাহিনীর সুপ্রীম কমান্ডার প্রিন্স সালমান, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের একজন বড় দাতা। ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি দিয়েছিলেন বত্রিশ মিলিয়ন ডলার শুধুমাত্র সাক্ষাৎ প্রাপ্তির জন্য। এর পরপরেই স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাহরাইন আর্মির জন্য ৬৩০ মিলিয়ন ডলারের কমার্সিয়াল আর্মস বিক্রি অনুমোদন দেয়।

সেই সাথে সামনে আসে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল ব্রোকারিং এবং তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারীর সাথে প্রিন্স সালমানের বৈঠকের পর গনতন্ত্রকামীদের কঠর ভাবে দমন করতে চায় এমন দেশের স্বৈরাচারী সরকারের সাথে অস্ত্র-চুক্তি বৃদ্ধি পায়।
এটি ছাড়াও আইটিবি অনুসন্ধানে হিলারীর ফাউন্ডেশনে দেওয়া সৌদি আরবের অনুদান এবং অস্ত্র চুক্তির মেয়াদ শেষ করার বিষয়ে শক্ত সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আসে।

০৩) এফ বি আই কে নির্দোষের জন্য নিয়োজিত করাঃ

Billy Dale, ছিলেন হুয়াইট হাউজের একজন ঝানু কর্মকর্তা। তিনি তার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আগ অবধি, দীর্ঘ ৩০ বছর প্রেসিডেন্টের সফর ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ট্রাভেল অফিস ডিরেক্টর। ১৯৯৩ সালে ১৯ শে মে তাকে চাকরীচ্যুত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে এফ বি আই অনুসন্ধান জারি করে। তার অপরাধ ছিল তিনি সে পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন , যে পদটি সেই সময়ের ফার্ষ্ট লেডি হিলারী ক্লিনটন তার বন্ধুর জন্য চেয়ে ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে অর্থ-আত্মসাৎ এর অভিযোগ আনা হয়ে ছিল এবং হিলারী ক্লিনটন এফ বি আই কে জোর দিয়ে ছিলেন তদন্ত করার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিলির উপর আনীত অভিযোগ প্রমান না হওয়ায় এফ বি আই তাকে সন্দেহমুক্ত ঘোষণা করে। তারপর বিলি নিজেই কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নিয়ে ছিলেন।

০৪) তহবিলের সাথে বন্ধুদের সংযুক্তিঃ

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন দুই মিলিয়ন ডলারের সেট আপে Energy Pioneer Solutions (EPS)র সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। আপাত দৃষ্টিতে এখানে অন্যায় কিছু দেখা যায় না, যতক্ষণ না আপনি এটি অনুধাবন করবেন যে ঐ গ্রুপটি ক্লিনটনেরই এক ব্যক্তিগত বন্ধুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, এমন হয়তো ক্লিনটনের সহযোগীদের সমৃদ্ধির অভিপ্রায়ে হয়ে থাকতে পারে।

এই ব্যাপারে হিলারি বলেন , এখানে অন্যায় কিছু করা হয়নি। ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ইপিএস কে মেধার ভিত্তিতে বাছাই করেছে। কিন্তু এটা দেখতে কষ্ট হয় না যে, ইপিএস একটি ফর-প্রোপিট কম্পানি ফলে ষ্টেক হোল্ডাররা এই ধরণের চুক্তির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। যেখানে রয়েছে বিল ক্লিনটনের ব্যক্তিগত বন্ধু, ডেমোক্রেটিক অপারেটিভ, ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি ট্রেজারার । সকলে ফাউন্ডেশনের এই ডিলের মাধ্যমের লাভবান হয়েছে।

০৫) রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতাঃ

আমেরিকার মত শক্তি ধর দেশের “সেক্রেটারী অব স্টেট” হওয়ার প্রথম ও মৌলিক যোগ্যতা হল ক্লাসিফাইড তথ্য সমূহকে সামলে রাখা। কিন্তু তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় সংবেদনশীল তথ্যগুলো সামলে রাখতে তো পারেননি , উপরন্তু সেগুলো বিদেশী হ্যাকাররা নাগাল পাওয়ার মত করে রেখে ছিল।
“সেক্রেটারী অব স্টেট” যদিও তার গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল সংরক্ষনের জন্য প্রাইভেট সার্ভার ব্যবহার করে। কিন্তু হিলারী একাধিক,অনিরাপদ ডিভাইস ব্যবহার করে ছিলেন। এই ব্যাপারে তার বক্তব্য ” তিনি সর্তক ছিলেন না”।

০৬)বয়কট ইস্যুতে দো-মনা ভাবঃ

ছয় মাসেরও কম সময় আগে তিনি ইসরাইল বিরোধী বয়কটে অংশগ্রহন নিয়ে শক্ত ভাষায় সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। আর সম্প্রতি নর্থ ক্যারোলিনায় হওয়া ট্রান্সজেন্ডার ল’ কেন্দ্রিক বয়কটকে সমর্থন জানিয়ে তিনি টুইট করেছেন। যা যথেষ্ট কুটিলতা পূর্ণ। কাউকে সমর্থন দিলেন আর কাউকে আক্রমণ করলেন। আগেই বলেছি আমরা বিচার করবো না ভাল কি মন্দ। সবার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার ছিল।
অনেকে তার দেখানো হঠাৎ বয়কট প্রীতিকে ভোটার টানার কৌশল মনে করছেন।

০৭)ধর্ষণের ব্যাপারে দ্বিমুখী মনোভাব

২০১৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর হিলারি ক্লিনটন টুইট করেন “Every survivor of sexual assault deserves to be heard, believed, and supported.” । কিন্তু. Juanita Broaddrick কে হিলারি শুনা তো দূরে থাক , বিশ্বাসই করেননি। যা তারই বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ স্পষ্টত, Juanita অভিযোগ করেন বিল ক্লিনটন এ্যাটর্নি জেনারেল থাকা সময়ে তাকে ধর্ষণ করে ছিলেন। ঘটনা সত্য কি মিথ্যা যদিও তা কখনোই সামনে আসেনি। কিন্তু হিলারি শুধু মাত্র অবিশ্বাস করেই থেমে থাকেনি। বরং Juanita কেসকে আরো নোংরা পর্যায়ে নিয়ে ছিলেন।

০৮) ধর্ষনকারীর রক্ষা কারীঃ

১৯৭৫ সালে কোর্ট নির্ধারিত উকিল হওয়ায় হিলারী ক্লিনটনকে ১২ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী ৪১ বছর বয়সী ফেক্টরি কর্মীর পক্ষে কেইস নিতে হয়েছিলে। উকিল হিসেবে তার মক্কেলকে ডিফেন্ট করার পথ বাছাই করার সুযোগ ছিল তার এবং তিনি সে পথটাই বাছাই করলেন, যার মাধ্যমে ১২ বছর বয়সী ভিকটিম মেয়েটির জীবন নরক হয়ে গিয়েছিল।
ঘটনার এতো বছর পরেও ভিকটিম এখনো দাবী করেন হিলারী তাকে দুর্নাম করেছিলেন। হিলারি তাকে এমন ভাবে উপ্সথাপন করেছিলেন যেখানে মনে হয়-সকল দোষ তার। আরো বলা হয়েছিল, মেয়েটিই ব্রোকেন ফ্যামিলি থকে আসা, তার মানসিক অবস্থা ভালো না, সে সাগ্রহে এমনটা কামনা করেছিল । ইতোপূর্বে আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছে——। এভাবে তাকে এক প্রকার কাদায় লেপ্টেনো হয়েছিল।

০৯)স্বাস্থ্য সমস্যাঃ

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলে কথা, সব আলোচনা হবে আর স্বাস্থ্য বাদ যাবে কেন। সুস্থ বলে দাবী করা সত্ত্বেও বিগত কয়েক মাসে তার শারীরিক নানা সমস্যা সামনে আসতে থাকে। সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে সামনে আসে নাইন-ইলাভেন এর স্মৃতি অনুষ্ঠানে নিউমোনিয়া আক্রমনের কারণের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা। আরো আছে, জানুয়ারীতে সাইনাস ইনফেকশনের কারণে কানের ভেতরে এক ধরণের টিউব বসানো । মার্চ মাসে তার ব্রেইন স্ক্যান করতে হয়েছিল।
উপরোক্ত সকল বিষয় ৭০ ছুঁই ছুঁই করাদের জন্য যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। যেখানে হিলারীকেও বাদ দেয়া যায় না। যদিও তার পক্ষ হতে তাকে হেলদি এবং ফিট দাবী করা হয়েছে।

১০) স্ক্যাশ ফান্ডঃ

একজন ব্যক্তির জন্য সংগঠিতভাবে কি পরিমান প্রচার কার্য্য তথা ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা যাবে সে ব্যাপারে শক্ত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে কিছু পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি বেশি সুযোগ পায়, যেহেতু তারা একের অধিক প্রার্থীর জন্য কাজ করে। হিল পি এ সি হল তেমনি একটি পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সামনে আসে তা হল- এই কমিটির উত্তোলিত ফান্ডের মাত্র ১১ শতাংশ প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ হয়। বাকী পুরো অংশটি হিলারীর পিছনে যায় এবং তুচ্ছ ক্ষেত্রে ব্যায় হয়। টাকার পরিমান এতো যে তা দিয়ে হিলারীর ২০০৮ সালের ক্যাম্পেইনের বাবদ ঋন পরিশোধ করা সম্ভব।