সন্ধান না পাওয়া ১০ গুপ্তধনের খোঁজে

maxresdefaultগুপ্তধন আছে নাকি নেই? আপনার অনুসন্ধিৎসু মন কি বলে? ছোটবেলায় গুপ্তধনের খোঁজে ঘর থেকে বেরিয়ে পরা সেসব এভেঞ্চারাস গল্পের বই পড়ে একবারও কি আপনার মনে হয়নি বের হয়ে পড়ি সে যক্ষের ধনের সন্ধানে। ছোটবেলায় পড়া আলিবাবার গল্পের মত কোন গুহার যদি খোঁজ পাওয়া যেত তাহলে কি দারুণই না হতো একবার ভাবুন তো!  রূপকথার গল্প বলে এসব গল্প যতই উড়িয়ে দেনা না কেনো সত্যি বলতে কি এই পৃথিবীতে এখনও এমন অনেক গুপ্তধন রয়ে গেছে যা জানতে  নিশ্চয় আপনার আগ্রহ জাগছে । রূপকথার বই থেকে বের হয়ে আজ আপনাদের জানাব সেসব সত্যিকার গুপ্তধনের খবর যা আপনার শৈশবের হারিয়ে যাওয়া এডভেঞ্জারাস্ মনকে আবার জাগিয়ে তুলবে।

১। কলম্বিয়ার গুয়াটাভিটা হ্রদের তলায় থাকা গুপ্তধন

দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ার গুয়াটাভিটা হ্রদের তলায়  পড়ে রয়েছে প্রচুর সোনার মুদ্রা । কিভাবে এলো এই সোনার মুদ্রা? জানতে কৌতুহল হচ্ছে? যতটুকু জানা যায়, কোনও রাজা তাঁর সম্পদ এখানে লুকিয়ে রাখেননি, উল্টো স্থানীয় একটি রীতিই এর কারণ। জল দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে পুরোহিত সারা গায়ে সোনার ধুলো মেখে একটি স্বর্ণমুদ্রা এই হ্রদে ফেলে থাকেন। তা হলে ভাবুন, কত সোনার মুদ্রা এই জলাশয়ের নীচে জমেছে এত দিনে! কিন্তু দুঃখজনক ব্যপার হলো এই জলাশয়ে নামা নিষিদ্ধ।

২। ওক দ্বীপের লুকানো গুপ্তধন

নোভা স্কটিয়া সমুদ্রসৈকত থেকে সামান্য দূরেই ১৪০ একরের দ্বীপটির অবস্থান। এই দ্বীপটি তে ক্প্টেন কিড ও তৎকালীন জলদস্যুর লুকানো সম্পদ আছে বলে জানা যায়। সৈকতের অনেক কাছে হওয়ায় সম্ভবত আরো বেশি করে গুপ্তধন শিকারিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় এটি। গুপ্তধন খুঁজতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণও হারিয়েছেন কয়েকজন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওক আইল্যান্ডে মেলেনি কোনো গুপ্তধন। প্রায় ৯ মিটার মাটি খুড়ে সেখানে এক পাথর পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল ৪০ ফুট নীচে লুকানো আছে গুপ্তধন। কিন্তু  এটি ছিলএকটি ফাঁদ যাতে প্রতিবছরই ৭-১০ জন গুপ্তধন সন্ধানী ডুবে মারা যান। ১৮৬৬, ১৮৯৩, ১৯০৯, ১৯৩১ এবং ১৯৫৯ সালেও বারবার গুপ্তধনের আশায় চালানো হয়েছে আভিযান। কিন্তু প্রতিবারই অভিযান ব্যর্থ হয়। ১৯৬৫ সালে রবার্ট ডানফিল্ড পুরো দ্বীপটি ইজারা নিয়ে জোরেশোরেই গুপ্তধনের অভিযানে নামেন। প্রায় ২০০ ফুটেরও বেশি গর্ত খুঁড়েও ব্যর্থ হতে হয় তাঁকে। আজও অধরায় রয়ে গেল ওক দ্বীপের  গুপ্তধন।

 ৩।আমেরিকার বেডফোর্ডে গুপ্তধনের সন্ধানে

আমেরিকার বেডফোর্ডে ৬ কোটি ডলারের অধিক গুপ্তধন আছে বলে শোনা যায়। যদিও তার হদিশ এখনও পাওয়া যায়নি। এমন ঘটনা শোনা যায় যে, এই সম্পত্তির মালিক থমাস বেলি নামে এক ব্যক্তি। বেলফোর্ডের বাসিন্দা বেলি তাঁর সমস্ত সম্পদ এই দেশেই কোথাও লুকিয়ে রেখে নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি বন্ধুকে একটি বাক্স হস্তান্তর করেছিলেন। বাক্স থেকে তিনটে চিরকুট মেলে।  যার একটিতে গুপ্তধনের ঠিকানা, একটিতে গুপ্তধনের পরিমাণ এবং আর একটিতে গুপ্তধনের মালিকদের নাম লেখা ছিল। দ্বিতীয় চিরকুটের ভাষা উদ্ধার করা গেলেও, বাকি দু’টো এখনও বোধগম্য হয়নি। যার ফলে গুপ্তধনের পরিমাণ জানা গেলেও তা উদ্ধার করা যায়নি।

 ৪। রকি মাউন্টনে ফরেস্ট ফেনের লুকিয়ে রাখা সম্পদ

 কোটিপতি ফরেস্ট ফেন ছিলেন একজন শিল্পসংগ্রাহক। ৮৪ বছর বয়সী এ ব্যক্তির দাবি, তিনি নাকি কোটি টাকার সোনা আর অলংকারে ভরা একটি বাক্স লুকিয়ে রেখেছেন রকি পর্বতমালার গভীরে। ১৯৮৮ সালে ফেনের কিডনিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তাররা তাঁর বাঁচার আশা খুবই কম বলে জানান। তখন ফেন ঠিক করেন তিনি তাঁর গুপ্তধন তিনি লুকিয়ে রাখবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। রকি পর্বতের কোনো এক জায়গায় সোনা ও সংগ্রহে থাকা অমূল্য  প্রত্নসম্পদ পিতলের বাক্সে ভরে লুকিয়ে রাখেন বলে জনশ্রুতি আছে। তবে কেউই সঠিকভাবে জানে না আসলে কোথায় রয়েছে এটি। ফেন শুধু ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এটি কলোরাডো, মনটানা, নিউ মেক্সিকো অথবা উওমিং-যেকোনোখানেই হতে পারে। তবে ফেনের এমন পাগল আচরণের পেছনে অনেকেই মনে করেন, এমন গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার গল্প স্রেফ ভাঁওতাবাজি। মানুষের নজরে আসার জন্যই এমন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আবার কারো মতে, এটা আসলে ফেনের একটা মজা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে সত্যিই গুপ্তধন লুকানো আছে কি না, সে খবর তো আসলে ফেন ছাড়া বলতে পারবে না কেউই।

 ৫। দ্য গ্রসভেনর

ইংলেন্ডের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই ভারত উপমহাদেশে এসেছিল মূলত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরবর্তীতে সম্রাজ্য বিস্তারে অধিক মনোনিবেশ করে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজা-মহারাজো, বাদশাহদের পরাজিত করে তাদের সম্পদ দখল করে নিতে থাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৎকালীন শাসকরা । এরকম প্রচুর সম্পদ নিয়ে ১৭৮২ সালে ভারত থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি জাহাজ যার নাম ছিল জাহাজ ‘দ্য গ্রসভেনর’। ধারনা করা হয়, জাহাজটিতে ২ কোটি ৬০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা, সোনার গয়না, রত্ন, দামী পাথর, হিরে, জহরত এবং চুনি ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে ৭০০ মাইল দূরে তা মাঝ সমুদ্রে ডুবে যায়। সাগরের তলায় জাহাজটি এখনও আটকা রয়েছে বলে  সন্ধান পাওয়া যায়। কিছু সম্পদ  উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বেশিরভাগ ধনরত্নই  এখনও সাগরের নিচে জাহাজেই আটকে আছে।

 ৬।কোকোস দ্বীপের গুপ্তধন

cocos2কোস্টারিকার কোকোস দ্বীপটিতে একসময় জলদস্যুদের আস্তানা ছিল বলে মনে করা হয়। একসময় জানা গিয়েছিল যে, কুখ্যাত জলদস্যু বেনিতো বোনিতো এই দ্বীপে লুকিয়ে রেখেছিলেন তাঁর যাবতীয় সম্পদ। অনেক বিশেষজ্ঞ আবার মত দেন যে  ক্যাপ্টেন থমসন নিজের ধন সম্পদ লুকিয়ে রাখার জন্য ১৮২১ সালে  বেছে নিয়েছিলেন কোকোস দ্বীপটিকে। ক্যাপ্টেন জন কুকের জাহাজের এক নাবিক এডওয়ার্ড ডেভিসও এই দ্বীপে নিজের সম্পদ লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে গুজব আছে। এই গুপ্তধনের আশায় প্রতিবছর বহু এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ এই দ্বীপে আসেন। অনুসন্ধার চালান। কিন্তু এখনো পর্যন্ত গুপ্তধনের কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।

৭। অস্ট্রিয়ার টপলিজ লেকের গুপ্তধন

আল্পস পর্বতের উপরে থাকা টপলিজ হ্রদেও নাকি প্রচুর গুপ্তধন রয়েছে। শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে নাৎসি সৈন্যরা অপারেশন বার্নহার্ড অসফল হওয়ার পর  হার নিশ্চিত জেনে এক সময় প্রচুর সম্পদ অস্ট্রিয়ার টপলিজ হ্রদের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। ২০০২ সালে যার হদিশ পাওয়া যায়। যা এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

৮। হিন্দুকুশ পর্বতের গুপ্তধন

১৭৩৯ সালে ভারত আক্রমণ করেন নাদির শাহ। ইতিহাস অনুযায়ী, ভারত আক্রমনে বেশ কিছু রাজ্য দখল করে নেন তিনি । সেসময় প্রচুর ধন-সম্পদ লুঠ করেছিলেন তিনি। নাদির শাহের মৃত্যুর পর তাঁর ঘনিষ্ঠ আহমেদ শাহ লুঠ হয়ে যাওয়া সে সম্পদ নাকি লুকিয়ে রাখেন হিন্দুকুশ পর্বতে,এমনটাই অনেকের বিশ্বাস। যদিও এখনও পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি লুকিয়ে রাখা সম্পদের।

৯। স্ফটিকের ঘর

সপ্তদশ শতকের সেরা স্থপতি এনড্রে স্লটার তিৎকালীন সোভিয়েট রাশিয়ার চার্লোটেনবার্গ প্রাসাদে স্ফটিকের এই ঘরটি নির্মাণ করেন। ১৭০১-১৭০৯ সালের মধ্যে  সম্পূর্ণ ঘরটি নির্মিত হয় যা স্ফটিক ও সোনা দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বেষ্টিত ছিল। ১৫৪০ কেজি স্ফটিক ও সোনা দিয়ে মোড়ানো এই ঘরটি ১৭ মিটার লম্বা ছিল। ১৯৪১ এ জার্মান সৈন্য এই প্রাসাদ দখলের পর এই সুরম্য ঘরটি ২৭ টি ভাগে ভাগ করে বাল্টিক প্রনালীর কাছে কোসিল্টবার্গ প্রাসাদে প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৪৩ পর্যন্ত এই ঘর টি চার্লোটেনবার্গে প্রাসাদেই রাখা হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ঘরটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় নাৎসী বাহিনীর রুটকৃত অনেক সম্পত্তির মধ্যে এই ঘরটিও ছিল। জাহাজে করে এটি অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। ২০০৩ সালের ৩১ মে  রাশিয়াতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদামির পুটিন এই ঘরের  একটি রেপ্লিকা উদ্বোধন করেন।

১০। ম্যাক্স ভ্যালেনটিনের সোনার পেঁচা

ফ্রান্সের ম্যাক্স ভ্যালেনটিন নামে এক ব্যক্তি ১৯৯৩ সালে সোনার একটি পেঁচা লুকিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। পেঁচাটি যে খুঁজে দিতে পারবে তাঁকে অনেক পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন ম্যাক্স। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তার খোঁজ কেউ পায়নি। ২০০৯ সালে ম্যাক্স মারা যান। সোনার পেঁচা রহস্যেই থেকে গিয়েছে।

লেখকঃ প্রকাশ কুমার নাথ। পেশায় কম্পিউটার প্রোগ্রামার । ভালো লাগে বই পড়তে আর নানান দেশের খবর সংগ্রহ করতে। এছাড়া গান শুনার নেশা তো রয়েছেই । ইচ্ছে আছে বই লেখার । কালি, কলম আর মগজাস্ত্র এক সুরে বাঁধার অপেক্ষায় আছি ।