১০ রাজা-রাণীর ১০ অদ্ভুত মৃত্যুর সত্য গল্প

0322নিশ্চিতভাবে রাজকীয় ব্যক্তিবর্গরা সেইসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, যা সাধারণ মানুষ কল্পনা করতেও পারেনা। তারা উন্নতমানের শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য-বস্ত্র ভোগ করেন। কিন্তু একটা বিষয়ের নিশ্চয়তা তাদের থাকে না, সেটা হল শান্তিপূর্ণ মৃত্যু।

১। স্কটল্যান্ডের রাজা ২য় জেমস

১৪৩৭ থেকে ১৪৬০ এর মধ্যবর্তী ২৩ বছর স্কটল্যান্ড তাঁর অধীনে শাসিত হয়। রাজত্বকাল তাঁর অনুকূলে ছিল বলা যায়। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একদিকে যেমন তাকে জনপ্রিয়তা দিয়েছিল, অন্য দিকে তিনি ইংল্যান্ডের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবিশেষের(আর্ল অফ ডগলাস)হত্যাকান্ডের মত নিন্দনীয় কাজের জন্যও দায়ী ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর আধিপত্য ও শাসনের পথে হুমকী স্বরুপ যে কাউকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষন করতেন।

যদিও স্কটিশদের স্বাধীনতার যুদ্ধ পনের শতকের দিকে শেষ হয়ে গিয়েছিল, তবূও সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল বৃটিশদের নিয়ন্ত্রনাধীন থেকে যায়। তারমধ্যে একটি অঞ্চল ছিল রক্সবার্গ ক্যাসল (দূর্গ)। রাজা দ্বিতীয় জেমস ভেবেছিলেন এই দূর্গ পুনরায় উদ্ধার করতে সমর্থ হবেন।  বৃটিশ বাহিনী তাদের সিংহাসন দখলের সিরিজ যুদ্ধের ফলে দূর্বল হয়ে পড়েছিল। জেমসের পক্ষে এটি একটি মারাত্মক ভুল।

অবরোধের সময় রাজা দ্বিতীয় জেমস মারা যান একটি কামান বিস্ফোরণ দ্বারা। প্রাথমিক দেখায় এটি অস্বাভাবিক কোন মৃত্যু ছিলনা। যেহেতু কামান তৈরীই হয়েছে হত্যার জন্য। কিন্তু অদ্ভূত হল, বিস্ফোরিত কামানটি তাঁর নিজের ছিল।

কামান প্রি দ্বিতীয় জেমস কামানসমূহ ফ্ল্যান্ডারসদের থেকে আমদানি করেছিলেন এবং সেগুলোর ব্যবহার দেখার জন্য অতীব উৎসাহী ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি সেই কামানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যেটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। এই রহস্যময় ও মর্মান্তিক দৃশ্যের পরিপূর্ণ বিবরনী তুলে ধরেন ষোল শতকের স্কটিশ ইতিহাসবিদ রবার্ট লিন্ডসে -” রাজা দাঁড়িয়ে ছিলেন কামানের এক অংশে , ভুল পরিচালনার কারণে শুটিংয়ের সময় বিস্ফোরিত অংশ তার উরুর হাড়কে দ্বিখন্ডতি করে দেয়। তিনি সাথে সাথে মাটিতে লুটে পড়ে মৃত্যুবরন করেন।”

২। ফ্রান্সের রাজা অষ্টম চার্লস

তিনি অমায়িক হিসেবে ব্যপক পরিচিতি পান। ফ্রান্সের রাজা হিসেবে ১৪৮৩ থেকে ১৪৯৮ সাল পর্যন্ত পনের বছর তাঁর রাজত্বকাল ছিল। সিংহাসন আরোহনের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র তের বছর, যেকারণে তাঁর রাজত্বকালের অর্ধেক সময় রাজপ্রতিনিধি হিসেবে বড় বোন অ্যানি এবং তাঁর বর সকল রাজকর্তব্য নির্বাহ করেন।

রাজা হিসেবে  তাঁর স্বভাব ছিল নম্র প্রকৃতির। সরকার আর রাজনীতিতে চার্লস সেভাবে আগ্রহ দেখাননি, একজন অনভিজ্ঞ বালকের কাছ থেকে যা প্রত্যাশিত ছিল। তাঁর অবস্থান সুদৃঢ করতে ,তিনি রাজতন্ত্রের অধীন রাজ্য সমূহে অনেক ছাড় দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স এবং ইতালিয়ান প্রদেশ সমূহের সাথে সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করেছিল।

তাঁর রাজত্বকালের সম্ভবত সবচেয়ে ঘটনাবহুল দিক হল টেনিস খেলা চলাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করা।

তিনি খেলোয়াড় ছিলেন না । তিনি এ্যাম্বইস শহরে অনুষ্ঠিত একটি ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় তিনি নীচু খিলান বা আর্ক যুক্ত দরজা লক্ষ্য করতে না পেরে তার ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় মাথা আটকিয়ে ফেলেন। এরপর প্রাথমিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেও পরে কোমায় চলে যান এবং কয়েক ঘন্টা পর তাঁর মৃত্যু ঘটে।

৩। অষ্ট্রিয়ার সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথ

গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি অষ্ট্রিয়ান ইতিহাসের দীর্ঘ একচ্ছত্র রাজত্ব উপভোগ করেছিলেন। সম্রাট প্রথম ফ্রেঞ্জ জোসেফ  এর স্ত্রী হিসেবে তিনি একদিকে যেমন সম্রাজ্ঞী ছিলেন, তেমনি হ্যাঙ্গারির রাণী ছিলেন ৪৪ বছর। যা ১৮৯৮ সালের সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ তাঁর মৃত্যু অবধি বলবৎ ছিল, যেদিন তিনি লুইগি লুছেনি নামক ব্যক্তির হাতে খুন হন।

এটি ছিল একটি ভুল স্থান ও ভুল সময়ের ঘটনা। লুছেনির স্বীকারোক্তি অনুসারে তার সাথে সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথের ব্যক্তিগত কোন বিরোধীতা ছিল না। সকল ইতালিয়ান নৈরাজ্যবাদীরা রাজকীয় এবং ধণী ব্যক্তিদের ঘৃণা করত। লুছেনির হত্যার লক্ষ্য ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অফ অরলিন্স।

দূর্ভাগ্যক্রমে ঘটনার দিন জেনেভায় ডিউক ব্যাতীত সকলে উপস্থিত ছিলেন এবং লুছেনিও পৌঁছাতে দেরি করেছিল। ফলশ্রুতিতে  তার লক্ষ্যভেদ ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর সে খবর কাগজ উল্টিয়ে শহরের পরবর্তী টার্গেট।  তার পরবর্তী শিকারে পরিণত হন সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথ। লুছেনি সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথের অবস্থানরত হোটেল খুজের বের করে এবং সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে। তিনি যখন বেরিয়ে আসেন, ঠিক সে সময় লুছেনি তাঁর বুকে ছুরি বসিয়ে দেয়।

এই ঘটনার পর সে গর্বিতভাবে আত্মসমর্পন করে। সে নিজেকে ইতালিতে হস্তান্তররের দাবি জানায় এবং শহীদের মর্যাদার মত মৃত্যু বরণ করতে চায়। কিন্তু সরকার কোনভাবে তাকে সাঁয় দেইনি। পরবর্তীতে সে তার সেলের ভেতর আত্মহত্যা করে।

০৪। গ্রীসের রাজা অ্যালেকজান্ডার

রাজা অ্যালেকজান্ডার গ্রীস শাসন করেন বিশ শতকের শুরুর দিকে। বানরের কামড়ে সাতাশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণের সময় তাঁর রাজত্বকাল হয়েছিল তিন বছর। হত্যাকারী ছোট লেজ ওয়ালা এই বার্বার ম্যাকক জাতের বানর, প্রাসাদে পোষা অনান্য প্রাণীদের সাথে ছিল।

একদিন তিনি তাঁর কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেরিয়ে ছিলেন। সে সময় তিনি অনান্য প্রাণীদের মধ্যে কলহ লক্ষ্য করেন এবং তা থামাতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ম্যাকক বানর তাকে কামড়ে দেয়। ক্ষত স্থান  সমূহ পরিষ্কার করে দেয়া হয়। পুরো ঘটনাটিকে ভুলে যেতে বলা হল, (যদিও বানরটিকে মেরে ফেলা হয়ে ছিল)। প্রথমদিকে ক্ষত সমূহকে তেমন গুরুতর মনে না হলেও পরবর্তীতে এটি সংক্রমিত হয়ে একই দিনে তীব্র পচনে রাজাকে শয্যাশায়ী করে দেয়।

তাঁর জীবন হয়ত বেঁচে যেতো, যদি তাঁর চিকিৎসক সংক্রকিত পা কেটে ফেলে দিতেন। কিন্তু চিকিৎসকদের কেউই সেই পথে না গিয়ে, অন্য উপায়ে রাজাকে সুস্থ করতে চেয়েছেন। কিন্তু ১৯২০ সালের অক্টোবরে ২৫ তারিখ টানা তিন সপ্তাহ যন্ত্রনার সাথে লড়াই করে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

০৫। প্রিন্স সাডো

আঠার শতকের শেষের দিকের জসিয়ন রাজা ইয়ঞ্জো ছিলেন কোরিয়ান ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এবং দীর্ঘ রাজত্বের অধিকারী একজন শাসক। তাঁর ৫২ বছরের রাজত্বে তিনি কনফুসিয়ান মনোবৃত্তি জনিত সংঘাত লঘু করার চেষ্টা করেন এবং নতুন ধরনের একটি কর ব্যবস্থাপনাও বাস্তবায়ন করেন। যদিও অনেকে তাকে অনেক ভাবে স্মরণ করে থাকে ,তথাপি তাকে সবচেয়ে বেশি মনে করা হয় তাঁর নিজের সন্তান হত্যার দায়ে।

তিনি চাইতেন না তাঁর পরবর্তীতে তাঁর উগ্র ও হিংসাত্মক মনোভাবাপন্ন ছেলে প্রিন্স সাডো রাজত্ব করুক। কেননা সা্ডো ছিল রীতিমত এক আতংকের নাম। চারদিকে সিরিয়াল কিলার এবং ধর্ষক হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। শুরুর দিকে সে নিজের চাকরদের আহত করে পরে হত্যা এবং মহিলাদের ধর্ষণ করতো।  শেষপর্যন্ত দেখা গেছে সে ইচ্ছামত যে কারো সাথে যখন তখন যা-তা করতে থাকে।

রাজা ইয়ঞ্জো জানতেন তিনি ছেলেকে মৃত্যুদন্ড দিতে চাইলে আইনি বাঁধা আসবে। কিন্তু তিনি ছেলেকে পদচ্যুত করার সম্মতি পেয়েছিলেন সাডোর মায়ের কাছ থেকে। এটি পাবার পর তিনি সাডোকে চালের গুদামে ভেতর বন্দী রাখার আদেশ দেন। আট দিন পর যখন খোলা হয় ততক্ষনে সাদো শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।

০৬। বাভারিয়ার রাজা দ্বিতীয় লুদউইক

তিনি অবজ্ঞাসূচক “পাগল রাজা” খেতাব পেয়েছিলেন যদিও এটি তাঁর প্রাপ্য কখনো ছিল না।  তিনি যা করেছিলেন তা হল, তিনি শিল্পের জন্য রাজনীতিতে অবহেলা করে ছিলেন না। তিনি রাজত্ব নিয়ে মাথা দিতে বলতে গেলে একদম চাননি। এমনকি যখন তাঁর রাজত্ব প্রুসিয়ারদের আয়ত্বে চলে গিয়েছিল, তখনো না। তিনি তাঁর প্রিয় গীতিকারদের প্রমোদানুষ্ঠানের জন্য প্রাসাদ নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি সুরকার রিচার্ড ওয়েগ্নারকে খুবই পছন্দ করতেন।

তিনি তাঁর সকল অমিতব্যায়িতার খরচ মিটাতে বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ব্যাংক যখন তাঁর সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দেয়, তখনো তিনি তা অবহেলা করেন। এই ধরণের সমস্যাকেও সমাধান না করায় ১৮৮৬ সালে তাকে তার সরকার কর্তৃক ” উম্মাদ” ঘোষনা করা হয়।

ষ্টার্ণবার্গ লেকের কাছে বার্গ প্যালেসে তিনি অন্তরীন হয়ে ছিলেন। কিছুদিনপর সেখানে তিনি রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এখনো আমরা জানিনা তাকে কে হত্যা করে ছিল।

রাজা তাঁর চিকিৎসক নিয়ে পায়চারী করতে বেরিয়ে ছিলেন। সেই চিকিৎসক যিনি রাজাকে উম্মাদ বলেছিলেন। কয়েক ঘন্টার পর তাদের দুজনের লাশ পাওয়া যায়। সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, রাজা প্রথমে চিকিৎসককে হত্যাকরে,পরে নিজেকে। যাই হোক অতিসত্ত্বর চক্রান্তের আভাসও পাওয়া যায়।

আধুনিক বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক সেই ময়না তদন্ত যা তড়িগড়ি করে দেওয়া হয়েছিল, সেটির সাথে একমত পোষন করেনন না। উপরন্তু বিভিন্ন ভাবে উল্লেখ পাওয়া যায় যে রাজার পরিহিত কোটে বুলেটের দুটি ছিদ্র পাওয়া যায় এবং জনশ্রুতি অনুযায়ী বিভিন্ন স্বত্ত্বাধিকারীর কয়েকজনের উপস্থিতির বিষয়ও সামনে আসে।

০৭। হলি রোমান সম্রাট প্রথম ফ্রেড্রিক

১১৫২ সালে জার্মানির প্রথম নির্বাচিত এই সম্রাট ফ্রেড্রিক বারবারোসা নামেও পরিচিত ছিল। যিনি ১১৫৫ সালে পুরোপুরিভাবে রাজপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে ইতালির রাজাও হন । ৩৫ বছরের রাজত্বে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল ধর্মযুদ্ধে তার অংশগ্রহন। তৃতীয় ধর্মযুদ্ব চলাকালীন সময়ে তিনি হলি ল্যান্ডে ১১৯০ সালে মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

ফ্রেড্রিক তাঁর জার্মান সৈন্যবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে তুর্কীর ভেতর দিয়ে সালাদিনের মুখোমুখি হচ্ছিল। অন্যদিকে সুলতান অনান্য মুসলিম নেতাদের নিয়ে প্রতিরোধের জন্য সুসংহত হয়ে ছিল আগে থেকে। যাই হোক ফ্রেড্রিক কখনো সালাদিন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারতেন না। তিনি বোকার মত নদীতে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়ে ছিলেন।

তাঁর সৈন্যবাহিনী যখন তুর্কীর গুজসু নদীতে পৌছায়, যেটি “সালেপ নদী” নামেও পরিচিত ছিল। তখন তাঁর উপদেষ্টাগন বলেছিলেন এই অদম্য পানি পার হওয়ার জন্য তারা একটা সেতু খুজে পেয়েছেন। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন এই নদী ঘোড়ার পিঠে করে পার হওয়া যাবে। তিনি নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে প্রথমেই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যান। কিন্তু তাঁর ঘোড়া পানির স্রোতে ঠিকে থাকতে পারেনি, তিনি নিজেও সাতারে সমর্থ্য ছিলেন না অতিরিক্ত অস্ত্রশস্ত্র সজ্জার কারণে। এক পর্যায়ে সম্রাট ও তাঁর ঘোড়া এক সাথে পানিতে ডুবে যায়।

০৮। ফ্রেডেরিক, প্রিন্স অফ ওয়ালস

তিনি ছিলেন দ্বিতীয় জর্জের ছেলে এবং তৃতীয় জর্জের পিতা। তাঁর পিতা এবং ছেলে উভয়েই ইউনাইটেড কিংডম এর রাজা হিসেবে রাজত্ব করলেও তিনি করতে পারেন নি। কেননা তার পিতার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। রাজা দ্বিতীয় জর্জ ও তার স্ত্রী, দুজনেই তাদের বড় ছেলেকে ঘৃণা দৃষ্টিতে দেখতেন। রাণী ক্যারোলিন মৃত্যুশয্যায় বলে ছিলেন “আমি স্বস্তি পাচ্ছি এই ভেবে যে অস্বাভাবিক এই বস্তু আমাকে আর দেখতে হবে না”

তিনি রাষ্ট্রে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। তিনি নিজেকে খেলাধুলা জাতীয় কিছুর সাথে ব্যস্ত রাখতেন। বিশেষ করে তিনি ক্রিকেট প্রেমী ছিলেন। আর এটিই তার সর্বনাশের কারণ হয়। ১৭৫১ সালে ৪৪ বছর বয়সে, তার পিতার মৃত্যুর নয় বছর আগে তিনি ফোঁড়া ফেটে যাওয়া জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয় এই ফোঁড়া ক্রিকেট খেলার সময় বল থেকে প্রাপ্ত আঘাত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।

০৯। আন্সব্যাচ এর রাণী ক্যারোলিন

ফ্রেডেরিক এর মা রাণী ক্যারোলিনের মৃত্যু ছিল তার চেয়েও কষ্টকর ও অদ্ভুত। জীবনের শেষে দিকে রাণী অনেক স্থূলকায় গঠনের হয়ে যায়। তিনি গেঁটেবাতেও ভোগছিলেন। প্রাসাদে তিনি হুইল চেয়ারে চলাচল করতেন।

ছোট সন্তানের জন্মের পর নানা ধরণের শারীরিক সমস্যাও তৈরী হয়। তার সকল সমস্যার মূলে ছিল অন্ত্রবৃদ্বিমূলক রোগের কারণে।

একদিন ব্যাথার পরিমান সীমাহীন হয়ে রাণী শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তাঁর গর্ভাশয় থেকে রক্তপাত হতে থাকে অবিরাম। এক পর্যায়ে ১৭৩৭ সালের নভেম্বরের ২০ তারিখ তাঁর জরায়ু ছিন্নবিন্ন হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

তার এমন ভয়ংকর এবং যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যু আরো বেশি অবিস্মরণীয় হয়ে যায় আঠার শতকের কবি অ্যালেকজান্ডারের কবিতায়। “Here lies, wrapt up in forty thousand towels/The only proof that Caroline had bowels.” (যদিও উৎসগত দিক বিতর্কিত)

১০। নাভারের ২য় চার্লস

১৩৪৩ থেকে ১৩৮৭ পর্যন্ত তিনি নাভারে রাজ্যে শাসন করেন। তিনি খুব ভাগ্যবান ছিলেন যে কিনা ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের শত বছরের যুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। তিনি প্রায় দল বদল করতেন নিজের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুসারে। তাই তার নাম হয়ে যায়” চার্লস দ্যা বেড”।

তার মৃত্যু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত লক্ষ করা গেলেও ,সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল আঠার শতকের লেখক ফ্রান্সিস ব্যালংডন এর উদ্বৃত অংশ। তাঁর মতানুসারে -চার্লস অনেক অসুস্থ ছিলেন, তার চিকিৎসক পরামর্শ দেন, রাজাকে যেন ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ব্রান্ডিতে(কড়া মদ) ভেজানো  লাইলেন কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়।

চিকিৎসকের একজন সেবক সেই কাপড়কে সুন্দর করে সেলাই করে দিয়েছিল যাতে শক্তভাবে লেগে থাকে। সেলাই শেষ হবার পর যখন সেবক সুতার শেষ অংশ কাটতে যাচ্ছিল। যেহেতু এই চিকিৎসা রাতে চলছিল, সেবক রাজার শরীরে কাঁচির আঘাত লাগার ভয়ে সুতা কাঁচি দিয়ে না কেটে বরং মোম্বাতির আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার সিদ্বান্ত নেন। কিন্তু কাপড় মদে ডুবানো ছিল , তাই আগুন কাছে পাওয়ার সাথে সাথে তা রাজার সমগ্র শরীর জ্বালিয়ে দেয়।

লেখিকা সম্পর্কেঃ এ্যানি মাসুদ। ভাল লাগে লেখালেখি, বই পড়া,কবিতা লেখা। এছাড়া নতুন এবং সিম্পল রান্না শিখতে এবং খাওয়াতে পছন্দ করি। ইউ এস এ বাংলা পত্রিকা “ঠিকানা”য় মুক্তাঙ্গনে নিয়মিত লিখা হয়। তাছাড়া অনলাইনে লেখালেখির সাথে জড়িত বছর খানেক ধরে। পরিবারকে সময় দিতে ভালোবাসি। কাজ করি কিন্তু চাকরি করি না।