এফ এল স্টুডিও এর ৬ টিপস- নিজেই তৈরি করুন নিজের গান!

F L Studioগান গাইতে পারুন আর না পারুন , মনে মনে কিংবা বাথরুমে অথবা রাস্তায় একাকী হাটছেন, গুনগুনিয়ে কেউ গান করেন না অথবা গান শোনেন না এমন মানুষ খুব কম। মন খারাপের সময়গুলো বা জ্যোৎস্না স্নাত রাত, একলা বারান্দায় কফির চুমুক আর ফেভারিট গানগুলো প্লেলিস্টে অথবা খুব অস্থিরতার মাঝে একটু গান শুনে নিজেকে উজ্জীবিত করা খুব দারুণ একটা ব্যাপার। আর সেটা যদি হয় নিজের গান তাহলে তো কথাই নেই!

পাঠকরা হয়তো ভাবছেন কিভাবে সম্ভব?

আসলেই সম্ভব, সময়টা যখন ইন্টারনেট আর সহজলভ্যতার যুগ তখন সম্ভব তো বটেই। কিছু সফটওযার, ভালো কনফিগারেশন এর পিসি, আর নরমাল কথা বলার জন্যে মাইক। ব্যাস নিজেই তৈরী করতে পারেন নিজের গান, নিজের কম্পোজিশন।আর প্রফেশনালি করতে চাইলেও সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে সাউন্ড কার্ড, কনডেন্সার মাইক্রোফোন আর মিউজিক সম্পর্কে জ্ঞান এসব থাকলেই হয়ে গেলো।

বর্তমানে সাউন্ড প্রডিউসার বা মিউজিক কম্পোজিশনের জন্যে অন্যতম জনপ্রিয় সফটওযার হলো এফ এল স্টুডিও। যার ইন্টারফেস গুলো খুব সহজেই বুঝতে পারবেন ,ইন্স্ট্রুমেন্ট সিলেক্ট করা বা চ্যানেল সিলেক্ট করে ইফেক্ট দেয়া -সবকিছুই খুব ইজি এই সফটওযার এ।

১। এফ এল স্টুডিও- এটা আসলে কি?

অন্যান্য মিউজিক কম্পজিশন সফটওয়ার যেমন লজিক প্রো,প্রো টুলস ,কিউবেস,ম্যাজিক্স মিউজিক প্রো কিংবা রিজন এর মতো সফটওযার থেকে এফ এল স্টুডিও অনেক সহজেই এবং চাইলেই খুব দ্রুত শিখা যায়। তবে তাল,লয়,স্কেল ,বিট সম্পর্কে ধারনা রাখাটাও সমান জরুরী। গান হলো সাধনা আর চর্চার বিষয়, তাই যতো শেখা যায় এর বেসিক সম্পর্কে ততোই সফটওয়ার ব্যাবহার করা আরো সহজ হবে। আজ আমরা এফ এল স্টুডিও ১১ এর ভার্সন সম্পর্কে জানবো

২। লুপ ও সাউন্ড লাইব্রেরি

এই সফটওয়ার এর মুল সুবিধা হলো – এর সুবিশাল লুপ এবং সাউন্ড লাইব্রেরী। এছাড়া এক্সট্রা ভার্চুয়াল সফটওয়ার বা প্লাগিন ইউজ করে মিউজিক কম্পোজিশন করা যাবে। প্লাগিন ডাটাবেইস এ ইফেক্ট হিসেবে আছে ডিলে,পিচ,ডায়নামিকস কিংবা প্লাগিন জেনারেটর হিসেবে আছে মিডি, ড্রাম, কন্ট্রোলার এর মতো ইন্টারফেস গুলো।

৩। প্লাগিনের খুঁটিনাটি

আর যদি এফ এল স্টুডিও এর প্লাগিন প্রিসেট এর কথা ধরি তাহলে তো কথাই নেই। প্লাগিন প্রিসেট এর ইফেক্ট সেকশন এ আছে ইকুলাইজার, রিভার্ব, দিলে, লিমিটার, ম্যাক্সিমাস এসব দরকারি এবং প্রয়োজনীয় ইফেক্ট যা অতি সহজেই সিলেক্ট করে ইউজ করতে পারেন এই সফটওযারটিতে, সেটা ভয়েস এর জন্যে হোক বা ইনস্ট্রুমেন্ট এর ইফেক্ট এর জন্যেই হোক। প্লাগিন প্রিসেট এর জেনারেটরস সেক্শন এ আছে বিশাল ইন্স্ট্রুমেন্ট এর ভান্ডার। পিয়ানো, ড্রাম, সিন্থেসাইজার, বেইজ, স্লেয়ার কি নেই তাতে! সাইট্রাস এ আছে ২০০ এর ও বেশী ইনস্ট্রুমেন্ট। হার্মার বা হার্মলেস এ আছে প্যাড, পিয়ানো, বেইজ, পারকাশন, লিডস, স্ট্রিং, বেল এরকম আধুনিক সব সফটওয়ার।

৪। কিভাবে শুরু করবেন এর ব্যবহার?

এফএল স্টুডিও এর শক্তিশালী দিক হলো তার টুলস এবং ইলেক্ট্রোনিক মিউজিক বা বিট মিউজিক তৈরী করার সক্ষমতা. এই মিউজিক রেকর্ডিং স্টুডিও শুরুতেই ইলেকট্রনিক বিটের মিউজিক তৈরি করার সহজ এবং অন্যতম সফটওয়ার হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তীতে এতে সব আধুনিক সব ইন্সট্রুমেন্ট ,আপডেট যুক্ত করা হয় । এফ এল স্টুডিও এর পিয়ানো রোল বর্তমানে খুব শক্তিশালী ডিজিটাল অডিও ওয়ার্কস্টেশন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে পরিচিত ।এই MIDI রেকর্ডিং পদ্ধতি ধাপে sequencers ব্যবহার করে কম্পোজিশন এবং অডিও এ্যারেন্জ করা যায় খুব সহজেই. Step Sequencer ব্যবহার করে মিউজিক কম্পোজিশন করার ক্ষেত্রে আপনি সাউন্ড বা লুপস ড্র্যাগ করে নিয়ে বা ড্রপ করে মিউজিক নোটগুলো Sequencer এ সহজেই এড করতে পারেন । এর পরে আপনি এটি লেফট ক্লিক করে একটি Step (একটি নোট বা লুপ) এড করতে পারেন অথবা রাইট ক্লিক করে নোট বা লুপগুলো অপসারণ করতে পারেন।

৫। এফ এল স্টুডিও- ফিচারস

এখন MIDI মিউজিক প্রডিউস করার উপর ভিত্তি করে এফ এল স্টুডিও যেমন ৩০ টা সিন্থেসাইজার,ড্রাম মেশিন, Sample প্যাড সমৃদ্ধ শক্তিশালী সফটওয়ার তেমনি এর স্টুডিও ভার্সন এ রয়েছে আরো উল্লেখযোগ্য কিছু ফিচার ।

এফ এল স্টুডিও এর কিছু আকর্ষনীয় ফিচার —

  • অডিও এডিটিং এবং ম্যানিপুলেশন পিচ সংশোধন , পিচ শিফটিং , সমন্বয় , টাইম স্ট্রেচিং , বীট সনাক্তকরণ এবং কাটা , স্ট্যান্ডার্ড অডিও ম্যানিপুলেশন ( কাট/পেস্ট করা ) ইত্যাদি।
  • একটি VST হিসাবে অন্যান্য DAWS বা ডিজিটাল অডিও ওয়ার্কস্টেশন এ হোস্ট হিসেবে কাজ করে কিংবা Rewire এর মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়া।
  • লাইভ মিউজিক পারফরমেন্স ফিচার যেখানে ভিডিও ইফেক্ট ভিজুয়ালাইজেশন ফিচারটিও বিদ্যমান
  • অটোমেশন জেনারেটর বা অটোমেশন কার্ভের মাধ্যমে ফর্মুলা প্লাগ,অডিঅ ক্লিপ,ইনস্ট্রুমেন্ট লিংককে নিয়ন্ত্রণ করা।
  • মাল্টি – ট্র্যাক অডিও রেকর্ডিং রেকর্ড এবং MIDI ইনপুট কীবোর্ড , ড্রাম প্যাড এবং কন্ট্রোলার থেকে রেকর্ডিং এবং মিউজিক প্লে করার সিকুয়েন্সিং ও ব্যবস্থা।
  • মিউজিক এরেন্জমেন্ট, সিকুয়েন্সিং, রিমিক্স করা যেখানে রিয়েল টাইম অডিও ইফেক্ট যেমন ডিলে,রিভার্ব,ফিল্টারিং ইত্যাদি থাকে।

৬। এবার নিজের মিউজিক নিজেই রেকর্ড করার পালা

রেকর্ডিং করার জন্যে এফ এল স্টুডিও তে সবচাইতে আলোচিত ফিচার হলো এডিসন

এডিসন দিয়ে ভয়েস রেকর্ডিং করার পাশাপাশি এক্সটার্নাল সাউন্ড কার্ড ব্যাবহার করে আপনি যদি ইনস্ট্রুমেন্ট এর মিউজিক রেকর্ডিং করতে চান,তার এডিটিং,টাইম স্ট্রেচিং এফেক্ট,কপি/পেস্ট,সাউন্ড ব্লুর ইফেক্ট ইত্যাদি খুব সহজেই করা যাবে।এখানে লাইভ রেকর্ডিং করার সুবিধাও যেমন আছে তেমনি একসাথে মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট বাজিয়ে ভয়েস এর রেকর্ডিং বা শুধু ড্রাম,গীটার স্কোর রেকর্ডিং সব ই সম্ভব

আপনি লুপ বা প্যাটার্ন যেভাবে চান,সেভাবেই রেকর্ড করতে পারেন।

বর্তমানে অনেক ভাল মিউজিক প্রডিউসার এই সফটওয়ার ব্যাবহার করছেন এবং পুরোপুরি প্রফেশনাল মিউজিক যেখানে কম্পোজিশন থেকে শুরু করে,ভয়েস রেকর্ডিং বা ইনস্ট্রুমেন্ট রেকর্ডিং যাই ই হোক সব কিছু করাই সম্ভব।
ধৈর্য্য,প্যাশন,মিউজিকে সম্পর্কে আগ্রহ আর নলেজ থাকলেই খুব সহজেই আপনি নিজেই তৈরী করে ফেলেতে পারেন নিজের গান ।

আজই শুরু করে দিন।

সাহায্য নেয়ার জন্যে গুগল,ইউটিউব আর এফ এল স্টুডিও এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট তো আছেই ।
https://www.image-line.com/flstudio/

লেখক- তানজীব হাসান। ভালবাসি বই পড়তে,তার চেয়ে বেশী ভালবাসি গাইতে,নতুন গান কম্পোজিশন করতে,এখন ব্যাস্ততা,জীবনের দৌড় সবকিছু এক কেন্দ্রীক করে ফেললেও শিল্পের প্রতি ভালবাসা আছে এখন ও,সেটা গান,গল্প বা যাই হোক,আর মাঝে মাঝে কবিতাও লিখি,ভালোই লাগে