যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা মানুষ জীবনে প্রায় দেরীতে শিখে থাকে।

7-lesson-learn

7-lesson-learn

জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা গুলো একদিকে যেমন হয় গভীর, তেমনি হয় বিজ্ঞতাপূর্ণ। কেননা শিক্ষা গুলো প্রায় সময় কঠিন পথ ধরে আসে। এই প্রক্রিয়ায় সব চেয়ে কঠিনতম অংশ হল “এটা অনুধাবন করা যে সকল সুযোগ চিরস্থায়ী হয় না”। দেখা যায় এমন এক সময় গিয়ে অনুধাবন হয় যখন অনেক দেরী হয়ে যায়। সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি শিখে নেওয়া ।

১। যদি আপনি তাই করতে চান “যা আপনি ভালোবাসেন” তবে সে বিষয়ে আপনাকে অন্যদের তুলনায় তিনগুন পরিশ্রম করতে হবে

অধিকাংশ মানুষ যা ভালোবাসেন তা করে জীবন কাটাতে পারেন না। তারা সেটা করে, যেটা তাদের বলা হয়েছে “এটা করা উচিত” অথবা মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গী-সঙ্গিনীর পরামর্শ অনুসরণ করা থাকে।

কিংবা, অনেক সময় এমনো হয়, অনেকে মনের দিক থেকে ঐ ধরণের কোন তাড়না অনুভব করেন না। কিন্তু আপনি যদি আপনার ভালবাসার, ভাললাগার কাজটিই করতে চান , তবে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে “প্রত্যাশিত” ভাবে না দেখে বরং “বিশেষ সুযোগ” হিসেবে দেখতে হবে। সাধারণত এই ধরণের মানুষরা সংখ্যায় খুব বেশি হয় না। তাই আপনি যদি আসলেই করতে চান তবে এখন বলতে “এখনই” কাজে লাগতে হবে।

২। রাগের অন্তরালে সবসময় থাকে “ভয়”।

জ্ঞানী “Yoda ” (Yoda এটি একটি ছবির কাল্পনিক কিন্তু জনপ্রিয় চরিত্র, এই সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে ইউটিউবে Yoda সার্চ করে দেখতে পারেন ) বলেন “ভয় হচ্ছে অন্ধকারের দিকে যাওয়া একটি রাস্তা। ভয় ক্রোধ আনে, ক্রোধ আনে ঘৃণা, আর ঘৃণা বাড়ায় দুর্ভোগ”।

যখনি আমরা ভোগান্তিতে থাকি, বিশেষ করে দীর্ঘ সময়ের জন্য, তখন আমরা বিশ্বাস করি যে এমনটা হচ্ছে আমাদের বাইরের কিছুর জন্য – এমন কিছু যা আমরা ঘৃণা করি। আর যদি আমরা এই আবেগটাকে অতীত করে ফেলি, আমরা দেখতে পায় ঘৃণাটা আসলে রাগেরই একটা অংশ। যেটা নিশ্চিতভাবে আমরা লম্বা সময়ের জন্য ধরে রেখেছিলাম।

সবকিছুর তলদেশে সবসময় যা থাকে সেটা হল ভয়। নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে মনে কেমন “ভয়” ? হারানোর ভয়। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ভয়। যেতে দেওয়ার ভয়। কিন্তু ভয়ের এই সারবত্তা যদি স্বীকার করে নেওয়া যায়, তবে আপনি এর উজ্জ্বল ছায়া দেখবেন। সেই সাথে আপনি আগ্রসর হতে সক্ষম হবেন।

৩। আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসই আমাদের ভবিষ্যত ব্যক্তিত্ব গঠণ করে।

আজকে আপনি যে কাজ/কাজ সমূহ করছেন তা হল এমন একটি দিকে যা “আগামীর আপনাকে” তৈরী করবে। এই কাজ যদি আপনি নিয়ম করে এক সপ্তাহ করেন তা হলে বুঝবেন আপানি “পরিবর্তন” এর উপরিভাগে ঘষামাজা শুরু করে দিয়েছেন। আর যদি আপনি তা কোর্স আকারে এক মাসের জন্য পুনরাবৃত্তি করে যান , তবে আপনি পূর্বের আপনার সাথে ভিন্নতাটা দেখতে শুরু করবেন। পুনরাবৃত্তির কাজটি যদি আপনি এভাবে এক বছর, দুই বছর, পাঁচ বছর —-করে যান একটা সময় গিয়ে আপনি আর আপনাকে চিনতে পারবেন না। আপনি পরিবর্তন হয়ে যাবেন… এভাবে সম্পূর্ণভাবে।

তাই প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসগুলোকে হেলা করা যাবে না। ভালো কিংবা খারাপ, আপনার অভ্যাসগুলোই নিশ্চিত করবে ভবিষ্যতে আপনি কেমন হবেন।

৪। আবেগ-বোধ শক্তির চর্চা

আমরা যখন কোন কিছুর অনুশীলন, চর্চার কথা বলি, আমরা তা সবসময় দক্ষতার পরিপ্রেক্ষিতেই বলে থাকি। যেমনঃ আমরা পিয়ানো বাজানো অনুশীলন করি কিংবা হকি খেলার অনুশীলন করি। কিন্তু কথা হলো, মানুষ হিসেবে আপনি যে আবেগ, অনুভূতি বা চেতনাকে ধারণ করেন । সেই সব কিছুরও অনুশীলন হয়ে থাকে। আপনি নম্রতা অনুশীলন করতে পারেন। আপনি ক্ষমাশীলতা অনুশীলন করতে পারেন। আপনি আত্মসচেতনতা যেমন চর্চা করতে পারেন , তেমনি পারেন কৌতুকরসবোধেরও। ঠিক একইভাবে চর্চা হয় রাগ, দ্বন্দ আর অসন্তোষের।

আবেগীয়ভাবে আপনি যে ধরণের মানুষ তা সচেতন/অসচেতনভাবে আপনার কাজে প্রতিফলিত হয়। আসলে আমরা তো জন্মগতভাবে কেউ মনমরা হয়ে জন্মায় না। খুশি-অখুশি সব বিভিন্ন পরিবেশের অনুশীলনের ভেতর দিয়ে আমরা ধারন করি।

৫। প্রত্যেকের নিজস্ব কার্যপ্রণালী থাকে

উপরোক্ত কথাটি গতানুগতিক এবং নেতিবাচক প্রেক্ষাপটে ব্যবহার হয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। তবে এখানে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কেননা দিন শেষে কিন্তু হিসেব কষলে পায়, আমরা যা করি তা নিজের জন্য করি। এটা স্বীকার করে নেওয়া ভাল। আমাদের নিজস্ব লক্ষ্য আছে, স্বপ্ন আছে, উচ্চাখাংকা আছে। আছে নিজস্ব বলার মত বন্ধুবান্ধব, পরিবার ইত্যাদি। অথাৎ মৌলিক কিছু বিষয়ে আমাদের অবস্থান একই।

প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব সূচি তথা কার্যপ্রণালী থাকে। আপনি চাইলেই কাউকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না। আপনি চাইলেই কারো অগ্রাধিকারের তালিকায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন না। কিংবা এমনটা কারো কাছে প্রত্যাশা করতে পারেন না। হ্যা , আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, কিছু সময়ের জন্য চেষ্টা সফলও হতে পারে। কিন্তু এক সময় সত্যটা ভেসে উঠবে।

তাসত্ত্বেও, গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সবার মনে রাখতে হবে – অন্যকে সাড়া দেওয়া এবং অন্যকে তার স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। ঠিক যেভাবে আমরা নিজের ক্ষেত্রে অন্যের সাহায্য প্রত্যাশা করি। যেকোন সম্পর্ক এই উপায়ে মসৃনভাবে আগ্রসর হতে পারে।

৬। অর্জন আর অর্জনের যাত্রা কখনো পরিপূরক হয় না

আমাদেরকে আমাদের মা-বাবারা সেই ছোট্ট থেকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে বড় করেন। বড় হয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি বড় অফিসার হবো, ডাক্তার হবো,আইটি বিশেষজ্ঞ হবো নিত্য নতুন আরো কতো হবো যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার যা হবার কথা তথা যার যা লক্ষ্য ছিল, সে লক্ষ্যে পৌছানোর পিছনে একদিকে থাকে নিজের কষ্ট-শ্রম অন্য দিকে থাকে আমাদের চারপাশের আপনজনদের ত্যাগ।

মূল বক্তব্য, স্বপ্ন যেদিন দেখি আর স্বপ্ন যেদিন পূরণ হয়। এটি অনেক লম্বা সফর। কিন্তু সফরের চেয়ে সবার নজর থাকে সেই স্বপ্ন তথা গন্তব্যের দিকে । আসলে ঐ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ যে যাত্রা এবং সেখান থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো অর্জিত বিষয়ের চেয়েও অনন্য।

ব্যাপারটি যদি এমন হয় আপনাকে উপরে তোলার পথের সকল আবেগীয় প্রচেষ্টার আপনি মূল্যায়ন করলেন না। তবে আপনার সেই অর্জনের কোন মূল্য থাকে না। অর্থহীন। অর্থাৎ অর্জনটা যেমন মুখ্য । তেমনি মুখ্য আপনি কিভাবে, কোন পথে তা অর্জন করেছেন। যেমন আপনি দৌড়ে প্রথম হবেন লক্ষ্য নিয়ে দৌড় শুরু করলেন। দেখা গেল আপনি দৌড়ের চেয়ে ধাক্কা-ধাক্কা করেছেন বেশি। সব শেষে আপনি প্রথম হলেও আপনার এই কৃতিত্বের বাহবা দেওয়ার কেউ থাকবে না।

৭। কঠোর পরিশ্রম আর হাসি; এক সঙ্গে গাঁথা

কেউ যখন কোন ব্যাপারে “হাস্যময়” থাকে, মানুষ মনে করে সে হয়তো ব্যাপারটিকে গুরুত্বসহকারের নেইনি। যদিও সেরা ধারণা হাসোজ্জল কর্মের ভেতর দিয়ে আসে। সবচেয়ে ভালো কিছু আনন্দের মুহুর্তেই ঘটে থাকে। মানুষের সংযোগ তথা সম্পর্ক শুরু হয় হাসি দিয়ে। আর কোন সমস্যা সমাধান , চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিংবা কর্মস্থলে হাসোজ্জল পরিবেশ থাকে তবে তার হাত ধরে নতুন সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হয়।

জীবন হল উপভোগের জন্য। কিছু মানুষ এটা বুঝতেই চাইনা। তারা গম্ভীর থেকে থেকে বৃদ্ধ হয়ে যায়। আসলে একঘেঁইয়ে , গম্ভীর পরিবেশে যে পরিমান কাজ হয়, বরং হাস্যময় পরিবেশে তার চেয়ে দ্বিগুন কাজ সম্পয়াদন করা যায়।