বাস্তব দুনিয়ার এক্স ম্যান ও ৬ সুপারহিরোর গল্প

superheroesdocumentaryসুপারহিরো শুধু হলিউড মুভির ধারণা নয়, এটা বাস্তবেও হতে পারে।  জিনগত পরিবর্তন একজন সাধারণ মানুষকে সুপারহিরোতে পরিবর্তন করতে পারে। সাধারণত আমরা অনেক সময় বুঝতেও পারি না আমাদের আসে পাশে অনেকেই আছে যাদের  অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। এমন না যে তাদের চেহারা খুব চাকচিক্যময় কিন্তু তাদের এমন সব ক্ষমতা আছে যা দেখে আপনার মনে হতেই পারে যে তারা কমিক বই থেকে উঠে আসা চরিত্র।

১। সত্যিকারের ব্যাটম্যান

আমাদের মধ্যে কয়জনই আছে যে কিনা ভাগ্যের নির্মম পরিণতিকে পরিবেশ আর বর্তমান জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। খুব কমই আছে এমন, তাদের মাঝে ড্যানিয়েল কিশ একজন। দৃষ্টিশক্তি না থাকা সত্ত্বেও ইকো লোকেশন অর্থাৎ শব্দের প্রতিধ্বনির মাধ্যমে তিনি তার আশেপাশে দেখার ক্ষমতার অর্জন করেন।

মাত্র ১৩ মাস বয়সে ড্যানিয়েল কিশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান। তিনি তার এই অন্ধত্ব জীবনকে ভাগ্যের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন।তার চলাফেরা করতে কোনরকম কষ্ট হতো না এমনকি হাইকিং ছিল অন্যতম শখ। কিশ ইকোলোকেশন এ এতটাই পারদর্শী যে নিজেই পাহাড়ে সাইকেল চালাতেন,রাস্তায় যখন অনেক গাড়ি থাকে তখনও, এমন কি তিনি গভীর অরণ্যে নিজেই ক্যাম্পিং করে থাকেন এবং নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ান।

যদিও এটা বংশগত কোন পরিবর্তন নয়, খাপ খাইয়ে নেওয়ার এক অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব।

২। কাচ ও গ্লাস খাদক

ছোটকাল থেকে আমরা যখন বেড়ে উঠি আমাদের মা আমাদের জন্য অনেক সতর্কতা অবলম্বন করেন যেন আমরা খাবার ছাড়া অন্যকিছু খেয়ে না ফেলি।চুইংগাম যে আমাদের পাকস্থলিতে সবসময়ের জন্য থেকে যায় তা খুবই ভয়ানক। এটা নিশ্চিত যে আমাদের মা কখনো ফ্রেঞ্চ বিনোদনদাতা মাইকেল লোটিতো এর কথা শুনে নি।

লোটিতো ফ্রেঞ্চ ভাষায় মন্সিউর মাগ্নেটউত অর্থাৎ যে সবকিছু খায় বলে পরিচিত। তিনি কিছু অদ্ভুত জিনিশ যেমন টেলিভিশন, বাইসাইকেল, কফিন এমনকি উড়োজাহাজের ভিতরের আলোকবাতি উনার ক্ষুধা নিবারণের জন্য খেতেন। সাধারণ খাবার যেমন ডিম,কলা খেলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন। লোটিতোর একদিনে ১ কিলোগ্রাম ধাতু এবং গ্লাস লাগতো।

দীর্ঘ ৪৮ বছর পর্যন্ত এই উল্লেখযোগ্য  খাদ্যতালিকা বজায় রাখার পর তিনি গিনেস বুক এ রেকর্ড করেন ‘সবচেয়ে অদ্ভুত খাদক’ হিসেবে। এই ফরাসী ভদ্রলোক লোটিতো ২০০৭ সালে পরলোক গমন করেন।তার এই অবিশ্বাস্য পাকস্থলী আজও এক অজানা রহস্য।

৩। তিব্বতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু

আমাদের সবারই প্রায় শরীরের তাপমাত্রা প্রাকৃতিক কোন কারণ, সারাদিনের অনেক কাজে হয়তো বেড়ে যায় কিন্তু তিব্বতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এটি এক আশ্চর্যজনক উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসে।

যোগ ব্যায়ামের জি-টুম-ম এর মাধ্যমে তারা যখন ধ্যানে মগ্ন থাকেন তখন ভিক্ষুরা তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এটা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও জীবন বাঁচানোর একটি কার্যকর দক্ষতা। যখন ঠাণ্ডা ঘরে কাপড় ভিজে সিক্ত হয়ে যায় তখন বৌদ্ধভিক্ষুরা শুধুমাত্র প্রাণনাশক হাইপোথারমিয়া থেকে তাদের জীবন রক্ষা করেি থাকেন না, এমনকি সেই ভিজা কাপড় শুকিয়ে ফেলতে পারে শুধুমাত্র তাদের শরীরের তাপমাত্রা দিয়ে।

বিজ্ঞানীগণ ধারণা করেন ধমনীর রক্ত প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ এর কারণ। অধিক পরিমাণের রক্ত প্রসারণ যেটা শরীরের উপরিভাগের ত্বককে গরম রাখে।আমরা আবার দেখতে পারছি এটা আমাদের বংশগত কোন পরিবর্তন নয়,এক প্রকার অলৌকিক দক্ষতা।

৪। ব্যথামুক্ত জীবন

আমরা আমাদের ব্যথা থেকে মুক্ত হতে অগণিত এবং হাজার ওষুধের ব্যবহার করে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা এসব ওষুধ থেকে কোন উপকার পায়না। কারণ তাদের কখনই এগুলোর দরকার হয়না।

এনহাইড্রোসিস এমন একটি বংশগত অবস্থা যা সহজাতভাবেই সকল ব্যথাকে সংবেদনহীনতায় পরিণত করে। এর ফলে ব্যথা অথবা অধিক তাপমাত্রা কোনকিছুই অনুভূত হয়না। তাই এটিকে মায়ের বৈশিষ্ট্য থেকে আসা এক আশ্চর্যরকম উপহার বলা যায়। কিন্তু একটা পর্যায়ে দেখা যায় যে ব্যথা অনুভূত করাটাই একটি ভাল জিনিস। কারণ অনেক সময় শরীরের কোন অঙ্গ ছিঁড়ে, কেটে গেলে অথবা আঘাত পেলে মানুষ এই অসুস্থতার কারণে বুঝতে পারে না যে সে ব্যথা পেয়েছে। ছোট বাচ্চারা খেলার সময় পড়ে গিয়ে যেই আঘাত পায় ওইটা একমাত্র এক্স-রে করার পরই জানা যায় কতটা ক্ষতি হয়ছে।

ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া এটাই এর একমাত্র উপকারিতা। বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষা করে বের করেন এটি এক ধরনের জিনগত সমস্যা।

৫। সত্যিকারের ‘রেইন ম্যান’

একসময় একলোক ছিল যার জ্ঞানের ক্ষমতা এতটাই যে সাধারণ মানুষ হলেও অতিমানব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তিনি কি আলবার্ট আইনস্টাইন ? কিম পীক যিনি ছিলেন সাধারণ কাজে অক্ষম শুধুমাত্র তার মস্তিষ্কের অপূর্ণতার কারণে। কিম যখন দাঁত ব্রাশ করতেন তখন তাকে সাহায্য করা লাগতো। তিনি শুধু মানুষের সাধারণ কথাবার্তা বুঝতে পারতেন কিন্তু কোনরকম সামাজিক অন্যান্য কাজ বুঝতে পারতেন না।

মজার ব্যাপার হল কিম মাত্র এক নজরেই বইয়ের ২ পৃষ্টা পড়ে ফেলতেন এবং তিনি কখনই যেই লাইনটি একবার পড়েন তার একটি শব্দও কখনো ভুলতেন না। শেক্সপীয়ারের অগণিত নাটকের প্রতিটি শব্দ উনার মুখস্থ ছিল,যখন কেউ নাটকে অভিনয় করতো কিম দেখতেন আর কোন ভুল হলে তিনি শুধরিয়ে দিতেন।

কিম পীক তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ১২০০০ বই পড়েছেন। এককথায় আমরা কিমকে জীবন্ত উইকিপিডিয়া বলতে পারি। তার মানসিক দক্ষতা এতটাই চমকপ্রদ ছিল যে ১৯৮৮ সালে নির্মিত ছবি ‘রেইন ম্যান’ কে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিম পীক ২০০৯ সালে পরলোকগমন করেন।

৬। সার্বিয়ান বিদ্যুৎ মানব

 শরীরের ঘাম অপ্রিয় বিরক্তিকর সাধারণ বিষয়। সৌভাগ্যক্রমে একজন সার্বিয়ান ব্যাক্তি আছেন যার কিনা এই সমস্যা নেই। তার শরীরে ঘামগ্রন্থি নেই।বিবা স্ত্রুজা নামক ব্যাক্তির শুধু যে ঘামগ্রন্থি নেই তা নয়। তার কোন চুল নেই, এমনি ভ্রুও নেই। তার এই  অদ্ভুত অবস্থার কারণে বিদ্যুতের শক থেকে তিনি নিরাপদ। শরীর আর্দ্রতা না থাকার কারণে বিদ্যুৎকে তার শরীর শোষণ করে না এবং সে তার শরীরে বিদ্যুৎ জমা রাখতে পারে ব্যাটারির মত এবং খাবার রান্না করতে পারে খালি হাতে।

এটি তার না শুধু শখ না। তার নিজের একটি ‘ইলেক্ট্রো থেরাপি’ সেন্টার আছে যেখানে রোগীদের বিদ্যুতের শক দিয়ে পেশির ব্যথার চিকিৎসা করানো হয়। সে তার আঙ্গুল দিয়ে পোড়ানোর কাজ করতে পারে বড় ধরনের জখম ছাড়াই। এই কারণে প্রতিবেশিদের বারবিকিউ পার্টিতে তার কদর বেশি।

৭। অবিশ্বাস্য অনিদ্রা

সুপারহিরো সহ অনেকেই আছে যারা রাতে ও দিন সবমসময় কাজে ব্যস্ত থাকে।আমাদের মনে প্রস্ন আসতে পারে এরা ঘুমায় কখন! ভিয়েতনামে এমন একজন কে পাওয়া গিয়েছে যিনি কিনা সবসময় জেগে থাকে। ‘হাই এনজক’ নামক এক ভিয়েতনামি কৃষক বিগত ৪৩ বছর ঘুমায় নি। ১৯৭৩ সালে এক অসুখের পর থেকে সে লক্ষ্য করল যতই ক্লান্ত হোক না কেন সে ঘুমাতে পারে না। কিন্তু এতে সে অসুস্থতা অনুভব করে না। তার মন ও শরীর একদম সুস্থ।সে প্রতিদিনের কাজ ভালভাবে সম্পন্ন করে। বরং অতিরিক্ত সময়েও আর বেশি কাজ করে থাকে।

 গবেষকদের গবেষণার জন্য তার ছোট গ্রাম ছেড়ে যেতে সে রাজি হয় নি। এই কারণ তার ঘুমের এই সমস্যার কারণ জানা যায় নি এখন পর্যন্ত।

লেখিক সম্পর্কেঃ আমি সাবরিনা আফরিন।পড়াশুনা করছি বিবিএ তে।ভাল লাগে বই পড়তে ও নতুন নতুন তথ্য জানতে ।