“অ্যাক্সিডেন্টাল ডিসকভারিজ “- আকস্মিক আবিষ্কারের কিছু গল্প

শুরু থেকেই মানুষ আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। সেফটিপিন থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ সবকিছু মানুষের এই নেশার ফল। আবিষ্কারের নেশা যতই বেড়ে চলেছে মানুষের প্রয়োজনের তালিকাটিও ঠিক যেন তার সাথে পাল্লা দিয়ে ততই বাড়ছে । দৈনন্দিন জীবনে আমরা কত কিছুই না ব্যবহার করে থাকি । তার মধ্যে কিছু জিনিস হল হাজার বছরের গবেষণার ফল আবার কিছু হল “ অ্যাক্সিডেন্টাল ডিসকভারি ‘’ বা আকস্মিক আবিষ্কার । তেমনি কিছু আকস্মিক আবিষ্কারের গল্প নিয়ে এই লেখাটি।

টুথব্রাশ

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমাদের সবারই যার সাথে দেখা না করলেই নয় সে হল আমাদের সকলের বন্ধু “ টুথব্রাশ”। দাঁত মাজার এই ঝকঝকে জিনিসটির আবিষ্কারের গল্পটিও বেশ ঝলমলে । ১৭৭০ সালে দুষ্কর্মের অভিযোগে উইলিয়াম অ্যাডিস নামের এক লোককে জেলে যেতে হয় । সেই সময় মোটা কাপড় দেওয়া হতো দাঁত মাজবার জন্য । ব্যপারটি এই ভদ্রলোকের মোটেও পছন্দনীয় ছিলোনা । তারমাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো এক নতুন ধারণার । খাবার শেষে পড়ে থাকা একটি হাড়ের এক দিকে বেশ কিছু ফুটো করে জেলের সেপাইদের কাছ থেকে চেয়ে নেন ঘোড়ার লেজের কিছু চুল । কায়দা করে ফুটো গলিয়ে চুলগুলো বেঁধে দিয়ে তৈরি করেন নতুন এক জিনিস যা আজকে “টুথব্রাশ’’ নামে পরিচিত ।
টুথপেস্ট
টুথপেস্ট আবিষ্কারের হাজার বছর আগে চীন, মিশর ও ভারতে প্রথম দাঁত সুস্থ রাখার চিন্তা ভাবনা শুরু হয় । সেইসময় মানুষ গাছের বাকল , লবণ ও ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে এক ধরনের মিশ্রণ তৈরি করতো । এরপর পারস্যের এক ব্যক্তি জিরইয়ার নতুন এক ধরনের মাজন তৈরি করেন । পরবর্তীতে যা টুথপেস্ট নামে পরিচিতি লাভ করে ।

সেফটিপিন

আমেরিকার ওয়াল্টার হাফ, সেফটিপিনের জনক । এক সময় তিনি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হয়ে গিয়েছিলেন । পরে তিনি পিতলের তার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এদিক ওদিক করে নতুন একটি জিনিসের রূপ দেন যা আজকে সেফটিপিন নামে পরিচিত।১৮৪৯ সালে এপ্রিল মাসে সেফটিপিনের পেটেন্ট ৪০০ ডলারে বিক্রি হয় ।
ভেলক্রো
নামটি অনেকের কাছে একটু অপরিচিত মনে হলেও ভেলক্রোর সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত । ব্যাগ বা জুতা পরার সময় কাপড়ের একটি অংশ আরেকটি অংশের ওপর রেখে একটু চাপ দিলেই লেগে যায়, আবার একটু টান দিলেই “কচ’’ শব্দ করে খুলে যায় । এটিই হল ভেলক্রো । ভেলক্রো আবিষ্কার করেন সুইজারল্যান্ড এর একজন  প্রকৌশলী জর্জ ডে মেস্ত্রাল । তিনি একবার তার পোষা কুকুর নিয়ে আল্পস পাহাড়ের কাছে এক জঙ্গলে বেড়াতে যান ফিরে এসে তিনি লক্ষ্য করেন তার জামা ও কুকুরের গায়ে প্রচুর বারডক গাছের বীজ লেগে আছে । বীজগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দিয়ে দেখেন তাতে হাজার হাজার হুক জাতীয় পদার্থ লেগে আছে যা সহজে কাপড়ে আটকে যায় । এরপর সিনথেটিক কাপড় দিয়ে তিনি বানিয়ে ফেললেন জিনিসপত্র খোলা বন্ধের এক চমৎকার উপায় – “ ভেলক্রো”।

চুইংগাম

আমেরিকার টমাস অ্যাডামস , চুইংগাম এর আবিষ্কারক । সাপোডিলা গাছের আঠা জাতীয় নির্যাস জমাট করে রাবার বানানোর চেষ্টা করছিলেন অ্যাডামস । অনেক চেষ্টার পর যখন কাঙ্খিত জিনিসটি দাড় করাতে পারছিলেন না তখন অন্যমনস্ক হয়ে সেটা মুখে পুরে ফেলেন । তিনি দেখলেন জিনিসটি তো চিবুতে মন্দ নয় । তাতে আরো কিছু উপকরণ মিশেয়ে তৈরি করে ফেললেন চুইংগাম।

কফি

ইথিওপিয়ার কালদি নামক এক মেষপালক ছাগক চড়াতে গিয়ে একদিন লক্ষ্য করেন অন্যান্য দিনের তুলনায় ছাগলগুলোর আচরন একটু অন্যরকম ।এর কারণ খুঁজতে গিয়ে কালদি এক রকম বুনোফল খুঁজে পান যা এই অন্যরকম আচরনের জন্য দায়ী । তারপর মুখে মুখে ছড়িয়ে পরে এই বুনো ফলের কথা ।

 

পেন্সিল
পেন্সিল ব্যবহার শুরু হয় ১৫৬৫ সালের পর থেকে। ইংল্যান্ডের বরোডেলে গ্রাফাইট আবিষ্কারের পর মেষ পালকেরে একদিন দেখেন এই গ্রাফাইট দিয়ে ভেড়ার গায়ে দাগ দিলে তা সহজে উঠে যাচ্ছে না । এরপর থেকে ধীরে ধীরে গ্রাফাইটের ব্যবহার শুরু হয় । বারবার ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এটি কাঠের সঙ্গে বেঁধে ব্যবহার করা হতো যার বিতর্কিত রূপ আজকের পেন্সিল ।