স্টার গেট- পৃথিবীর ৬ প্রাচীন স্থান, যেখানে প্রবেশ করলে আপনি চলে যেতে পারেন অন্য কোন মহাবিশ্বে

image source-http://www.mrwallpaper.com/
image source-http://www.mrwallpaper.com/

প্রাচীন সমাজে পৃথিবী থেকে অন্য জগতে যাওয়ার বিভিন্ন প্রবেশপথের কথা বলা হয়েছে।এসব গল্পকে নিছক কাল্পনিক ও পৌরাণিক বলা হলেও বর্তমানে আমাদের এফ.বি.আই. বলছে আমাদের পৃথিবীতে অন্য গ্রহ থেকে কেউ না কেউ আসছে। এই ফিচারে আমরা তুলে ধরবো পৃথিবীর বুকে অবস্থিত এরকম ৬ টি স্থানের কথা যাদের বলা হয়, অন্য গ্রহ বা মহাবিশ্বের অন্য কোন প্রান্তে চলে যাবার প্রবেশ পথ বা স্টার গেট।

১। পেরুর গেট অফ দ্যা গড

জোস লুইস ডেলগাদো মামানি গেট অফ দ্যা গড”  হিসেবে পরিচিত এটি ১৯৯৬সালে আবিষ্কার করেন যখন তিনি পর্যটকদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখানোর চাকরি নিয়েছিলেন । স্থানীয় উপজাতিদের কাছ থেকে শোনা যেতো পেরুর হায়ু মার্কা অঞ্চলে অবস্থিত গেট অফ দ্যা গড স্রষ্টার রাজ্যে পৌঁছানোর প্রবেশদ্বার। এমনকি মামানিও দাবি করেছিলেন তিনি এটি হঠাৎ আবিষ্কারের পূর্বেই কয়েক বছর আগে স্বপ্নে দেখেছিলেন।  তিনি তাঁর স্বপ্নে প্রবেশপথে যাওয়ার পাথরগুলোকে দেখেন সেগুলো গোলাপি রঙের মার্বেল পাথরের এবং একটি ছোট দরজা খুলে যায় যার ভিতর থেকে উজ্জ্বল নীল রঙের একটি আলো আসছিলো যা দেখতে মনে হচ্ছিলো কোন ঝলমলে সুড়ঙ্গ।

সেখানে প্রকৃতপক্ষে দুইটি পথ ছিল যা দেখতে ইংরেজী বর্ণ T আকৃতির। সবচেয়ে বড় পথটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ উভয়ই ৭ মিটার এবং ছোটো পথটির দৈর্ঘ্য ২ মিটার।কিংবদন্তির মতে বড় দরজাটি  স্বয়ং ঈশ্বরের নিজের জন্য। ছোটটি মরণশীলদের জন্য যারা কিছু বীরত্বপূর্ণ কাজ করে অমর হয়ে ঈশ্বরের সাথে বাস করে।এই বর্ণনাটি মামানির স্বপ্নের সাথে মিলে যায়।

২। উইলশায়ার এর পাথরের স্তম্ভ

এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রসিদ্ধ স্থাপত্য। প্রাচীন এই পাথরটি ‘স্টোনহেইঞ্জ’ নামে পরিচিত। এটি যখন তৈরি হয় তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়। ইতিহাসবিদগণ দাবি করেন এই অপূর্ব সাজানো গোছানো নীলাভ পাথরগুলো ৫০০০ বছর পূর্বে তৈরি,  যা ৩৮৬কি.মি. জুড়ে বিস্তৃত।এখানকার কিছু পাথরের গঠন সত্যি অদ্ভুত। ৫০০০ বছর পূর্বে এগুলোর সৃষ্টি বলা হলেও অনেকে মনে করে এগুলো আরও আগে তৈরি হয়েছিল। প্রাচীন এই নিদর্শন ১৪টি লাইনে বিভক্ত। অনেকে বলে এই পাথরগুলোর আধ্যাত্মিক শক্তি আছে। সাম্প্রতিককালে সেখানকার একটি ঘটনা এই দাবিকে আরও দৃঢ় করে। ১৯৭১সালে আগস্ট মাসে কিছু লোক দেখতে পায় রাত ২টার দিকে কোন পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হঠাৎ বজ্রপাত এবং কিছু পাথর ও ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারগণ দেখেন পাথরগুলো হতে অদ্ভুত নীল আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে এবং সেখানে অদ্ভুত আর্তনাদও নাকি শোনা যায়।

৩। দেবতার প্রবেশদ্বার

সেডোনা অ্যারিজোনার একটি ছোট শহর। নেটিভ বা আদিবাসী আমেরিকান উপজাতি নাওয়াণ্ডাদের একসময়ে পবিত্র শহর ছিল এটি। কথিত আছে লাল পাথর দিয়ে শহরটি ঘেরা। এই পাথরের প্রবেশদ্বারকে বলা হয় “দেবতাদের প্রবেশদ্বার”। আরও কথিত আছে, এগুলোর ঘূর্ণনের ক্ষমতা আছে। এইসব পাথরগুলো আধ্যাত্মিক এবং এরা পরিবর্তিত হয়ে শব্দ করতে পারে। ১৯৫০ সালে অ্যারিজোনা পাহাড়ে শিকারিরা উপজাতিদের কাছ থেকে এক গল্প শোনেন। তিনজন লোক ঘোড়ায় চড়ে এই প্রবেশদ্বার আবিষ্কার করে।  তিনজনের একজন ছিলেন পবিত্র  ও সৎ লোক। সে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। আরেকটি প্রচলিত কাহিনী হলো মরুভূমিতে একদিন হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি হল,আকাশ ধূসর হয়ে গিয়েছিল। তখন পাথরগুলোর  কাছে এর খিলানপথ দেখা দেয় এবং এর ভিতর দিয়ে আকাশকে একদম নীল দেখাচ্ছিল।তাই উপজাতিরা বিশ্বাস করতো এটি দেবতাদের জগতে যাওয়ার প্রবেশদ্বার।

৪। শ্রীলঙ্কার রান্মাশু গুহা

এই গুহার মধ্যে পাথর দেওয়ালের একটি বৃহৎ টুকরা লুকানো ছিল। ধারণা করা হয় এর মধ্যে তারকা মানচিত্র বা চার্ট আছে যা দিয়ে একটি দরজা খোলা যাবে। এই দরজা হলো পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের প্রবেশদ্বা্র। যে এই দরজা খুলবে সে চলে যাবে মহাবিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করবে।  এই চার্টের নাম “সাকওায়ালা” যার অর্থ পৃথিবী এবং চক্র।  প্রাচীন নেটিভ আমেরিকানরা বলে এই পাথর হলো অন্যান্য প্রাচীন প্রবেশদ্বারের মতই এক প্রবেশপথ।আধুনিক বিজ্ঞানীগণ এর ভিতর দিয়ে জলপথ আবিষ্কার করে।

৫। মিশরের আবাইদস বা এবিডস

মিশরের প্রাচীনতম এবং আকর্ষণীয় শহর হল আবাইদস। প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করতো এটি দেবতা অসিরিস এর তীর্থযাত্রা এবং সমাধির কেন্দ্র।এখানে “সেটির” মন্দির নামে একটি মন্দির আছে যা খুবই বিখ্যাত। সবচেয়ে মজার বিষয় হল ডোরথি নামের এক মহিলা দাবী করেন যে তিনি পূর্ণজন্ম লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ফেরাউন সেটির গোপন প্রেমিকা। বিংশ শতাব্দিতে ডোরথি প্রাচীন মিশরীয় লিপি পড়তে পারতেন এবং কোথায় প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ ছিল, কোথায় গোপন কামরা আছে তা জানতেন। যখন মাটি খুঁড়ে এসব আবিষ্কার হয়েছে সবাই তখন তার কথা বিশ্বাস করেছিলো। আশ্চর্যের বিষয় হল  ডোরথি পাথরের জায়গায় একটি প্রবেশদ্বারের কথা বলেছিল যেটি বস্তুত প্রাকৃতিক নয়। ২০০৩ সালে এক মার্কিন সামরিক মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার বলেন এখানে প্রাকৃতিকভাবে প্রবেশ পথ করা হয়নি।

৬।  মিশিগান লেক এর প্রাচীন পাথর

২০০৭ সালে ডুবন্ত জাহাজ খোঁজার সময় মিশিগানের লেকে একটি ১২ মিটার লম্বা পাথর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে। ধারণা করা হয় এটি ৯০০০ বছরের পুরাতন পাথর। বিজ্ঞানী নর্থওরশ্তন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক হলি এবং তার সহকর্মী ব্রায়ান বলেন এটি অ্যাবট দ্বারা তৈরি এটি ১০০০০ বছর পূর্বের।  এই জায়গার কথা গোপন রাখতে চায় আমেরিকান উপজাতি। অনেক  বিজ্ঞানী মনে করেন এটি একটি স্টারগেট বা ওয়ারম হোলের দেহাবশেষ।এই লেকের এই অংশ নিয়ে অনেক প্রচলিত কাহিনী আছে। ১৮৯১সালে টমাস হিউম নামের জাহাজ তার সব ক্রু সহ এই হ্রদে পড়ে হারিয়ে যান। ১৯২১সালে এই হ্রদের উপর থেকে ১১জনকে নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়, সাথে ছিল একটি নৌকা কিন্তু পরে এই নৌকা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। ১৯৩৭সালে ম্যাকফারল্যান্ড লেক মিশিগান বরাবর নতুন এক পথ তৈরি করে। এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ক্যাপ্টেন ডোনার বিশ্রামের জন্য তার জাহাজের ডেকের দরজা বন্ধ করে রুমে যান। কয়েক ঘণ্টা পর তার সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে রুমে ঢুকে দেখে তিনি উধাও।  তাকে আর কখনই খুঁজে পাওয়া যায় নি।

লেখিকা সম্পর্কেঃ আমি সাবরিনা আফরিন।পড়াশুনা করছি বিবিএ তে। ভাল লাগে বই পড়তে ও নতুন নতুন তথ্য জানতে ।