বাংলাহাব অনুপ্রেরণা গল্প-“লাক ভেলকি”

সব টিভি চ্যানেল , সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা হাজির । সবার চোখ আবীরের দিকে । হবে নাই বা কেন ।  বর্ষসেরা লেখক” পদকে ভূষিত হয়েছে সে । পাশে আছেন তার বাবা-মা । পুরোটা তার কাছে এখনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে । চেষ্টার কমতি ছিলনা তার কিন্তু এতো বড় অর্জনের ভাবনাটা তার কাছ থেকে একটু দূরেই ছিল । আবীর ভালোবেসে লিখত আর লিখার মাঝে যে আনন্দটা খুঁজে পেত সেটাই ছিল তার কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন । এতো আলোর মাঝখানে থেকেও সে তার কলেজের বন্ধুটিকে চিনতে ভুল করেনি । বন্ধুটি যে তার সাথে একটি বার কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আবীর তা দূর থেকে দেখেই বুঝে নিয়েছে । পুরানো বন্ধু তাকে তো আর হতাশ করা যায়না । তাছাড়া তার লিখার প্রতি ভালোবাসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই বন্ধুটির ভালোই অবদান রয়েছে ।

বাড়ি ফেরার পর যেন পুরো শরীর টা বুঝিয়ে দিচ্ছে আজ প্রচুর ধকল গেছে তার ওপর । আবীর বাবা-মায়ের সাথে অল্প কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নিজ রুমে চলে এল । কথায় আছে মানুষ যখন একা থাকে তখন তার পুরানো সব স্মৃতি নতুন করে তার চোখের সামনে ভেসে উঠে । আবীরের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হলোনা । খুব মনে পড়ছে তার ছোটবেলার কথা । তাদের সে ছোট্ট ঘর , স্কুল, খেলার মাঠ , পুকুর সবকিছুই তার স্মৃতির পাতায় এখনো রঙিন । আবীরের বাবা পেশায় ছিলেন শিক্ষক । তাদের গ্রামের একটি স্কুলের সকল ছাত্রের কাছে প্রিয় একটি মানুষ । আবীর সে স্কুলেরই ছাত্র ছিল । বই পড়তে আবীর ছোট থেকেই খুব ভালোবাসতো । আর লিখার আগ্রহটা তখন থেকেই । আর তার লেখা গুলোর পাঠক ছিল তার বাবা । ভুল ধরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে অনুপ্রাণিত করা সবটাতেই সে তার বাবার সঙ্গ পেত । স্কুলের দেওয়ার পত্রিকা ছাড়া তার লিখা গুলো অন্য কোথাও ছাপানোর সুযোগটা সে পায়নি তখনো , গ্রাম বলে কথা । উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রাম থেকে শহরে আসা । সবকিছুই নতুন । গ্রামের সে সহজ – মানুষ গুলোকে খুব মনে পড়ত তার । শহরের মানুষগুলোও শহরটার মতো যান্ত্রিক মনে হতো তার । ছাত্র হিসেবে সে বরাবরই মেধাবী । আর সেটা গ্রাম হোক আর শহর মেধা সব জায়গায় তার জায়গা করে নিতে ।

গ্রামের এই সহজ সরল ছেলেটিকে প্রথম দিকে সবাই অবজ্ঞার চোখে দেখলেও এখন সে তার শিক্ষক , বন্ধু সবারই নয়নমণি। সবারতো আর অন্যের ভাল সহ্য হয়েনা । সেরকম কিছু মানুষও ছিল তার আশেপাশে যাদের ঠিক বন্ধু বলা যায়না । গ্রামের ছেলে, কথার মধ্যে আঞ্চলিক ভাব থাকবে এটা নতুন কিছ অথবা লজ্জার কিছু নয় । সে ঈর্ষান্বিত লোকগুলোর কাছে এটা ছিল আবীরকে অপমান করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার । “ যে ঠিক মতো কথায় বলতে জানেনা সে আর কি লিখবে । এইসব লেখকদের কি বলা হয় জানিস । হা-ভাতে লেখক “। এই ধরণের অপমান জনক কথাবার্তা আবীরকে প্রায় সময় শুনতে হতো । কিন্তু বুদ্ধিমানেরা অপমানের জবাব মুখে নয় , কাজের মাধ্যমে দেয় । পড়াশোনার পাশাপাশি লেখক হিসেবেও সে একটি জায়গা করে নিয়েছে পুরো ক্যাম্পাসে । বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তার প্রকাশিত লিখাগুলো ভালই দর্শক প্রিয়তা কুড়তে শুরু করেছে। আজকের সেই বন্ধুটি যে আবীরকে সবার সামনে নিজের বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে খুব গর্ববোধ করছিল একসম্য আবীর তার কাছে ছিল হা-ভাতে লেখক । “ এরকম লেখক কত দেখেছি । আজকে আছে কালকে নেই । কি আর করবে । এ স্কুল মাস্টারের ছেলে । বাবার মতো গ্রামের পাঠশালায় গিয়ে পড়াবে আর নিজের এই বস্তা পচা লেখা ওই গ্রামের ছেলে মেয়ে গুলোকে শোনাবে “। মাঝের মধ্যে এই ধরণের কথা গুলো দিয়ে আবীরকে আঘাত করতে ছেলেটি ভালোই উপভোগ করতো । কিন্তু তা বলেতো আর ত্থেমে থাকা যায়না ।

কলেজ শেষ হওয়ার পর সেই কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলো শেষ । হাজার কাজের মধ্যেও লেখা জিনিসটা কখনো দূরে সরিয়ে রাখতো না সে। ভাগ্যিস রাখেনি , নয়লে তার তেতো বন্ধুটির  মুখটা থেকে মধু ঝরা কথাগুলো সে কখনোই শুনতে পেত না ।