শেষ হতে চললো ২০১৬ সাল। মুক্তি পেয়েছে অনেক চলচ্চিত্র। চলুন একবার ফিরে দেখা যাক কোন ইংরেজি চলচ্চিত্রগুলোকে সেরার তালিকায় রাখা যায়।
১: ক্যাপ্টেন আমেরিকা – সিভিল ওয়ার (Captain America: Civil war)
মার্ভেল ইউনিভার্সের ক্যাপ্টেন আ্যমেরিকা ফ্র্যাঞ্চাইজের তৃতীয় চলচ্চিত্র এটি। ক্যাপ্টেন আ্যমেরিকার মুভি হলেও স্টিভ রজার্সের সাথে পর্দা কাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন আ্যন্থনি ‘টোনি‘ স্টার্ক। এই চলচ্চিত্র দিয়েই মার্ভেল ইউনিভার্সের ফেজ থ্রি শুরু হতে যাচ্ছে তাই মারভেল ইউনিভার্সে এই ছবিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যাপ্টেন আ্যমেরিকা ফ্র্যাঞ্চাইজি হলেও পুরো ছবি জুড়ে আ্যভেঞ্জার্সের প্রভাব খুব বেশি ছিলো। বাজেট আরেকটু বড় করে চিত্রনাট্য খানিকটা পালটে নিলেই আয়রন ম্যান ফোর বা আভেঞ্জার্স থ্রি করে ফেলা যেতো!
তবে এই ছবিতে হাল্ক ছিলোনা বলে একটু মন খারাপ হলেও তা পুষিয়ে দিয়েছে পিটার পার্কার। অর্থাৎ আমাদের সকলের প্রিয় স্পাইডাম্যান! টম হল্যান্ডের পিটার পার্কার চরিত্রে হাতেখড়ি হলো এই মুভির মাধ্যমে। তাছাড়া ব্ল্যাক প্যান্থারকেও প্রথম বারের মতো কোন মার্ভেল মুভিতে দেখা গেলো। তাই সব দিক থেকে বিবেচনা করলে, সেরার তালিকায় খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছে এই ছবিটি।
বরাবরের মতো ক্যাপ্টেন আ্যমেরিকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্রিস ইভান্স এবং এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন আ্যন্থনি এবং জো রুসো। ছবিটি আয় করেছে ১.১৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বিশ্বের ১২তম সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র।
২: সুলি (Sully)
বিখ্যাত অভিনেতা ক্লিন্ট ইস্টউড পরিচালিত বায়োগ্রাফিকাল ড্রামা চলচ্চিত্রটি শুধুমাত্র সমালোচকদের নয়, বক্স অফিসও জয় করে নিয়েছে। প্রাক্তন আ্যমেরিকান এয়ারলাইন ক্যাপ্টেন “চেসলি বারনেট সুলেনবার্গার দ্যা থার্ড” এবং এর জীবনীগ্রন্থ “হাইয়েস্ট ডিউটি” অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রটি। একজন সাহসী পাইলট কিভাবে নিজের এবং ফ্লাইটের ১৫৫ জন যাত্রী ও ক্রু এর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, তা ই এই ছবির মূলবিষয়।
ক্যাপ্টেন সুলি এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। ছবিটি আয় করেছে ২১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৩: লা লা ল্যান্ড (La la Land)
ড্যামিয়েন শ্যাজেল পরিচালিত লা লা ল্যান্ড ছবিটি মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই সবাই বুঝে গিয়েছিলো যে এই ছবিটি ঝুড়ি ভর্তি করে পুরস্কার নিয়ে আসবে। তাই হয়েছে। বিখ্যাত অভিনেতা এবং অভিনেত্রী রায়ান গসলিং এবং এমা স্টোন অভিনীত এই মিউজিক্যাল–রোমান্টিক–কমেডি– ড্রামা মুভিটি ইতিমধ্যে পেয়ে গেছে অনেক পুরস্কার আর পেয়েছে মানুষের ভালোবাসা। পরিচালক ড্যামিয়েন শ্যাজেলের লেখা ও পরিচালিত ছবিটি হলিউডের একটি অন্যতম সেরা ছবি। অভিনেতাদের দুর্দান্ত অভিনয় এবং পরিচালকের অনবদ্য পরিচালনার কারণে ছবিটি চলাকালীন চোখ ফেরানো যায় না! সবার মন জয় করে নিয়েছে এই ছবিটি। লা লা ল্যান্ড মনোনীত হয়েছে ৭ টি বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব আ্যওয়ার্ডের জন্য। অস্কার মনোনয়ন এলো বলে!
৪: জ্যাকি (Jackie)
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির স্ত্রী জ্যাকলিন “জ্যাকি” কেনেডি‘র জীবনকাহিনী নিয়ে এই চলচ্চিত্র। JFK যখন গুলিতে নিহত হন তখন তার ঠিক পাশে বসেছিলেন জ্যাকি কেনেডি। তার পরনের গোলাপী রঙের শ্যানেল স্যুটে লেগে ছিলো তার স্বামীর রক্ত। সেই দিনগুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে।
পাবলো লারেইন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ইতোমধ্যে বহু পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। এই চলচ্চিত্রে জ্যাকি কেনেডির চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত অস্কারজয়ী অভিনেত্রী নাতালি পোর্টম্যান। তিনি এবছর জ্যাকি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরষ্কারের জন্য মনোনীতা হয়েছেন।
৫: ব্যাটম্যান ভারসাস সুপারম্যান- ডন অব জাস্টিস (Batman V Superman : Dawn of Justice)
এই ছবিটি কেন সেরা ছবির তালিকায় আছে, তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। জ্যাক স্নাইডার পরিচালিত ডিসি কমিক্সের বিখ্যাত দুই চরিত্র নিয়ে তৈরী করা এই চলচ্চিত্রটি আয় করেছে ৮৭৩.৩ মিলিয়ন ইউএসএ ডলার। ছবিটিতে ব্যাটম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করে সবার মন কেড়ে নিয়েছেন বিখ্যাত অভিনেতা বেন আ্যফ্লেক। তাছাড়া সুপারম্যানের চরিত্রে হেনরি ক্যাভিল এবং ডিসি কমিক্সের কুখ্যাত ভিলেন লেক্স লুথর এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন “দ্যা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক” খ্যাত জেসি আইজেনবার্গ। তাই এই ছবিটি যে একটি মাস্টারপিস হবে, এই বিষয়ে কারোই দ্বিমত ছিলোনা।
৬: মোয়ানা (Moana)
মোয়ানা ছবিটির মাধ্যমে আরেকজন ডিজনী প্রিন্সেসের অভিষেক ঘটলো। পলিনিশিয়ান ভাষায় ‘মোয়ানা‘ শব্দটির অর্থ সমুদ্র। এবং ছবিতে দ্বীপের রাজার মেয়ে মোয়ানা থাকে সমুদ্রের বন্ধু।
ডিজনির অসাধারণ আ্যনিমেশন, চিত্রনাট্য, দক্ষ পরিচালনা মোয়ানা ছবিটিকে ২০১৬ সালের সেরা ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে জায়গা অর্জন করে দিয়েছে। ডেমিগড মাউয়ি এর চরিত্রে ডোয়েন জনসনের পারফরমেন্স এবং মজার মজার গান ছবিটিকে দিয়েছে এক আলাদা মাত্রা।
ছবিটিতে মোয়ানা চরিত্রে কন্ঠ দিয়েছে ১৬ বছর বয়সী অওলি ক্রাভালো।
৭: ফাইন্ডিং ডোরি (Finding Dori)
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিখ্যাত চলচ্চিত্র ফাইন্ডিং নিমো এর সিকুয়েল এটি। প্রথম ছবিটির মুক্তির প্রায় ১৩ বছর পর মুক্তি পেলো এই ছবিটি। ছবিতে শর্ট টাইম মেমরি লসে আক্রান্ত ডোরি তার বাবা মাকে খোঁজার জন্য আ্যডভেঞ্চারে নেমে পরে, সাথে থাকে নিমো আর নিমোর বাবা মার্লিন। পিক্সারের অন্য চলচ্চিত্রগুলোর মতো ফাইন্ডিং ডোরিও একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ছবি।
৮: ডক্টর স্ট্রেঞ্জ (Doctor Strange)
চলচ্চিত্রটি যখন মার্ভেল ইউনিভার্সের চরিত্র ডক্টর স্ট্রেঞ্জকে নিয়ে, আর যেখানে অভিনয় করছেন স্বয়ং বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ (Benedict Cumberbatch), সেখানে এই ছবিটির অসাধারণত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর। ছবিটি পরিচালনা করেছেন স্কট ডেরিকসন এবং ছবিটি আয় করেছে ৬৪১ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
৯: ডেডপুল ( Deadpool)
যদিও এক্স ম্যান অরিজিন উলভারিন ছবিতে ডেডপুলের উপস্থিতি ছিলো, মানুষ আরো বেশি করে তাকে পেতে চেয়েছিলো। তাই অনেকেই অপেক্ষা করছিলো একটি মুভি যার পুরোটা জুড়ে থাকবে ডেডপুল।
ডেডপুল চরিত্রের রায়ান রেনল্ডস এর নজরকাড়া পারফরমেন্স, দুর্দান্ত হিউমার এবং আ্যকশনের এই মিশেল এই চলচ্চিত্রটি যে ২০১৬ সালের একটি অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র, তা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই!
১০: সুইসাইড স্কোয়াড (Suicide Squad)
DC কমিক্সের বিখ্যাত সাইকোপ্যাথিক সুপারভিলেন জোকার, তার যোগ্য সাইডকিক হার্লি কুইন সহ আরো বেশ কয়েকজন সুপারভিলেন আছেন এই ছবিটিতে। প্রয়াত অভিনেতা হেথ লেজার যেমন ব্যাটম্যান- দ্যা ডার্ক নাইট রাইজেস ছবিতে জোকারের চরিত্রে অভিনয় করে সকলের মনে দাগ কেটে রেখে গেছেন, জেরেড লিটো অভিনীত চরিত্র তেমন সারা না পেলেও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তবে মার্গট রবির হার্লি কুইন চরিত্রে ছিলো নজরকাড়া পারফরমেন্স।
ডেভিড আয়ার পরিচালিত এই ছবিটি আয় করেছে ৭৪৫.৬ মার্কিন ডলার।
১১: হেইল, সিজার ( Hail, Ceaser)
১৯৫০ শতকের পটভূমিতে তৈরী এই কমেডি মুভিতে অভিনয় করেছেন রাল্ফ ফিনিস, স্কারলেট ইয়োহানসন,জর্জ ক্লুনি এবং চ্যানিং টেটাম এর মতো অভিনেতারা। ছবিটি বক্স অফিস সাফল্য না পেলেও জোয়েল এবং ইথান কোয়েল জুটির পরিচালনা এবং সকলের পারফরমেন্স প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছে।
১২: দ্যা নাইস গাইজ (The nice guys)
শেন ব্ল্যাক পরিচালিত রহস্য–ক্রাইম–থ্রিলার– আ্যকশন এই চলচ্চিত্রটি সমালোচক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে ১৯৭৭ সালের দুই প্রাইভেট ডিডেক্টিভকে নিয়ে যারা এক কিশোরোর গুম হয়ে যাওয়ার তদন্ত করছে।
এই ছবিটিতে অভিনয় করেছেন রায়ান গসলিং এবং রাসেল ক্রো এর মতো অভিনেতারা।
১৩: জুটপিয়া (Zootopia)
এবছর ডিজনী এ্যানিমেশন দুইটি ছবি মুক্তি দিয়েছে। তার মধ্যে জুটপিয়া (Zootopia) একটি। বছরের প্রথমদিকে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রটি বছরের সেরা ব্লকবাস্টারগুলোর মধ্যে অন্যতম। অসাধারণ চিত্রনাট্য, দুর্দান্ত আ্যনিমেশন, মজার মজার চরিত্র, চিন্তার খোরাক, কি নেই এই ছবিতে। শুধু ২০১৬ সাল নয়, ডিজনীর সেরা চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
১৪: দ্যা কনজ্যুরিং টু (The Conjuring 2)
পরিচালক জেমস ওয়ান পরিচালিত এই ভৌতিক ছবিটি দর্শক মিনে তেম্ন সারা না ফেলতে পারলেও এটিই ছিলো এই বছরের সেরা ভৌতিক ছবি। ঝকঝকে চিত্রনাট্য, সুন্দর অভিনয়, গা ছমছমে সাউন্ড এফেক্ট সম্পন্ন এই ছবিটি তালিকায় রাখা যেতেই পারে।
১৫: ফ্যান্টাসটিক বিস্টস আ্যন্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম (Fantastic Beasts and where to find them)
বিখ্যাত লেখিকা জে.কে. রাউলিং এর বই ফ্যান্টাসটিক বিস্টস আ্যন্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম এর চলচ্চিত্র এটি। এই চলচ্চিত্রটি হ্যারি পটারের প্রিকুয়েল অর্থাৎ হ্যারি এবং ভলডেমর্টের আগের কাহিনী এটি। স্বাভাবিকভাবেই, এই বছরের সেরা ছবিগুলোর তালিকায় এই ছবিটিকে সহজেই রাখা যায়। বিশেষ করে ছবিটির শেষ দৃশ্যের জন্যই পুরো ছবিটি একবার দেখে নেয়া যেতে পারে!
এই তালিকাটি প্রথম বা দ্বিতীয় সেরা, এই প্রকারে তৈরী করা হয়নি।
লেখকঃ তাসনিয়া আজমী। শখ বই পড়া, বই সংগ্রহ করা। লেখালেখি শুরু করেছি বেশীদিন হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে লেখালেখি ভালবেসে ফেলেছি। ইচ্ছে ছিল সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার, বিভিন্ন কারণে হয়নি। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে নিজের বই নিজের বুকশেলফে তুলে রাখার। ইচ্ছে আছে লেখিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার।