সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা- ব্ল্যাক ম্যাজিসিয়ান সুরুজ আলী

সুরুজ আলী ( ছদ্মনাম) । যার বিশাল ধানী জমি, বড় বাড়ি, তিনটে পুকুর , গবাদী পশু আর বাগান ভরা প্রায় সব রকম ফল ও দামী গাছ। কিন্তু না! তৃপ্ত নয় সে। কুচক্রী সুরুজ আলীর কুদৃষ্টি পড়ে ফুপাতো ভাই ওসমানের অঢেল সুখ, সম্পত্তি আর সুন্দরী বউয়ের উপরে।

স্বার্থপর সুরুজ আলী, নিজ স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে তার অসৎ পথের বাধা কাউকে মনে হলে তাকে দুনিয়া ছাড়া করতেও দ্বিধা করেনা। সে সবার অলক্ষ্যে, সাধুবেশী আলখাল্লার ছদ্মবেশে , সমাজের চোখের আড়ালে কালোজাদু চর্চা করে থাকে নিজের ভোগবিলাসের লোভে।

গোপনে সে সফল কালো জাদু চর্চা করত তার নিজের গোপন কক্ষে। মানুষের ক্ষতি সাধনে শয়তানের আরাধনা করত সে। এদিকে চক্রান্ত আঁটতে থাকে ভাইকে হত্যার জন্য। কিন্তু সরল চোখগুলো বুঝতেও পারেনি হায় ! সুযোগ বুঝে মৃত্যু বান মারে ভাইয়ের সদৃশ্য নরম পুতুলের শরীরে, যেন তিন মাসেই মরে বিদেয় হয় সে! সত্যিই ধীরে ধীরে শয্যাশায়ী ভাই একদিন অকালে পতিত হয় মৃত্যু মুখে , সুখের সংসার দুঃখের বানে ভাসিয়ে চলে যায় ওসমান ( ফুপাতো ভাই)। আর রেখে যায় ফুটফুটে দুটি সন্তান, বয়ষ্ক বাবা মা আর পরমা সুন্দরী স্ত্রী।

শেষ হয়ে গেল সব। কঠিণ শোকে মুহ্যমান আপনজন। তবু তারা জীবনের তাগিদে কাটিয়ে ওঠে কিছুটা। কিন্তু স্বামীর শোক কাটাতে পারেনি স্ত্রী ! পতিভক্ত শয্যাশায়ী সেও একদিন স্বামীর টানে নশ্বর দুনিয়া ছেড়ে অবিনশ্বর দুনিয়ায় পাড়ি দিলেন, আর ফুটফুটে সন্তান দুটি রেখে যান দাদা দাদীর নিরাপদ আশ্রয়ে..। কিন্তু বাপ মা মরা বাচ্চাদের মানুষ করা কি এত সহজ? কত কষ্টে অভাব অনটনেও আগলে রেখে ছিলেন দাদা দাদী তাদেরকে আর বিশাল সম্পদকে। বাচ্চারা শৈশব কাটিয়ে ওঠার আগেই হঠাৎ একদিন রক্তবমি ছুটে মারা যায় তাদের আগলে রাখা দাদা দাদীও। চতুর সুরুজ আলী তাদেরও সরিয়ে দেয়, কালো বিদ্যার মাধ্যমে। ধ্বংস হয়ে গেল পুরো সংসার! তারপর ওৎ পেতে থাকা সুরুজ আলী সব সম্পত্তি দখল করে ওদের বের করে দেয়! তারপর ওরা নানার আশ্রয়ে মানুষ হতে লাগলো পরে নানাও মারা যায়! অনাদরে কঠিণ জীবন পার করতে থাকে ওদের কেউ নেই। শুধু নানা অল্প কিছু সম্পদ ওদের নামে লিখে দিয়ে যান!

এদিকে কুচক্রী সুরুজ আলী একটি পরিবার ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি ! শখের নোংরা খেলা তার নেশায় রুপান্তরিত হয়। এদিকে তার স্ত্রী তার এত অসাধুতা , অন্যায় সহ্য করতে না পেরে সন্তান নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু এতটুকু ভাবান্তর ঘটলো না সুরুজ আলীর তাতে। সে আরো চায়..!

সে সহজ উপায়ে নারী ভোগে ব্যর্থ হলে বশ করে নারী, নষ্ট করে তাদের জীবন ! অন্যের সুফলা জমি নিজের করতে বান মেরে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিত কত নিষ্পাপ প্রাণ , কত পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম প্রাণ কেড়েছে তার নোংরা কড়াল গ্রাসে।নাহ্ সে খ্যান্ত নয় তৃপ্ত নয় সে মরণ নেশায় আরো মাতে! তার কুমতলবি কুদৃষ্টিতে সহ্য হয়না কারো সুখ। সে সুখী দম্পতিদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পায়! তার ক্ষমতা, দাপট, কুকর্মের কথা সবাই জ্ঞাত হয়। সামনে সবাই তাকে ভয় পায় , সালাম দেয় কিন্তু আড়ালে ঘেণ্যা করে অভিশাপ দেয় সকলে।

কত সংসার ধ্বংস করেছে, কত হাহাকার কত অভিশাপ নিজের নসীবে জুটিয়েছে সে নিজেও জানেনা! সে অধিকাংশ কুমতলবে সফল হয়। কিন্তু প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম বশ করতে সফল হতে পারেনা আর কোনদিন কেউ পারবেওনা ! অবশেষে বার্ধক্য তার জীবনে কুৎসিত কাল হয়ে দাঁড়ায়! যৌবনের ক্ষমতা আস্তে আস্তে হ্রাস পেতে থাকে, দাপট কমতে থাকে। কালোজাদু চর্চাও বিফল হতে থাকে, কালোজাদু রাজ্যের রাজা শয়তানও তার অক্ষমতায় ঠাট্টা করতে শুরু করে যেন।তার সঙ্গী অসাধু লোকবলও জীর্ণ সুরুজ আলির সঙ্গ ত্যাগ করতে থাকে। একা হতে থাকে সে… তার সমস্ত দাপট নতজানু হয়ে যায় প্রকৃতির কাছে। অবৈধ দখলকৃত সম্পদ হাত ছাড়া হতে থাকে । শুধু তাই নয় নিজের সম্পত্তিও অন্যের দখলে চলে যেতে থাকে ঠিক যেভাবে সে হাসিল করেছিলো ভরা যৌবনে! অবশিষ্ট থাকে তার বিশাল বাড়িখানা,একটি পুকুর, আর অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা কড়ি! কোন রকম খেয়ে শুধু একা বেঁচে থাকা অসহায় জীবন। হঠাৎ কুঁজো শরীরের সমস্তে নাম নাজানা কঠিন রোগ বাসা বাঁধে। অসহ্য ব্যাথা যন্ত্রনায় দিনরাত আর্তনাদ করতে থাকে কিন্তু কেউ সহজে কাছে আসে না ঘৃণীত সুরুজ আলির। জমানো টাকা চিকিৎসায় শেষ হয়ে যায় কিন্তু কোন ডাক্তার কবিরাজ তার রোগের নিরাময় করতে পারেনা ! অবশেষে নিরুপায় একটু একটু করে বিক্রি করতে থাকে মাছভরা পুকুর, বাড়ির আসবাব পত্র, তারপর ঘরের চালা, অবশেষে মজবুত খুঁটিও। শূন্য ঘরে একলা পড়ে

ক্ষুধার জ্বালায় কাঁতরায় আর মরণব্যাথায় গড়াগড়ি খায়! সে নিজের মরণ ভিক্ষা চায় কিন্তু মরণও যেন ঘেন্না করে ! এভাবে আরো বেশ কিছুদিন পরে কঙ্কালসার দেহ নিথর হয়ে ভয়ঙ্কর মৃত্যুর মুখে পতিত হয়! হায় ! কোথায় সেই ক্ষমতা দাপট , সম্পদ আর কোথায় নিজের স্ত্রী সন্তান? কেউ পাশে নেই! তিনদিন পরে পঁচা গন্ধে অতিষ্ট প্রতিবেশী তার খবর লয়…!

এ গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। ৫০/৬০ বছর আগের ঘটনা। এখনও সে ঘটনা এবং সুরুজ আলীর কথা মানুষ ঘেন্না ভরে স্মরণ করে।

প্রতিহিংসা, কুকর্মের ফল ভালো হয়না কোনদিন। যতই ক্ষমতাশীল হোক, যতই উপেক্ষা করুক স্রষ্টা এবং স্রষ্টার গড়া নিয়ম কিন্তু একদিন ঠিকই মহান স্রষ্টা এবং তাঁর গড়া নিয়ম তাকে গন্ডিবদ্ধ করবেই কে রেহাই পাবেনা। এবং ভয়ঙ্কর কষ্টের মৃত্যু যন্ত্রনা থেকেই তার বা তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নানের জীবন শুরু হয়।

এই পবিত্র রমজানের ওসিলায় আল্লাহ্ যেন আমাদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সত্যিকার মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করেন, স্রষ্টার আনুগত্য দাসত্বে এবং তাঁর সৃষ্টির কল্যাণে যেন সদা নিয়োজিত থাকতে পারি সবাই। আমীন।

শুভকামনা সবার জন্য।