জন্মদিন উদযাপন এবং কেকে মোমবাতি রাখার ইতিহাস!

মধ্যযুগে,অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জন্মদিন উদযাপন করা হতো না।কারণ সনাতন ক্যাথলিক রা বিশ্বাস করতেন, এই ধরণের উদযাপন পৌত্তলিকতা এবং এসব খ্রিষ্টধর্মের জন্যে হুমকিস্বরূপ।সনাতন শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানগুলো,যেসব অনেকটা জন্মদিন উদযাপনের মতো,সেগুলোর সাথে জন্মদিন এবং জন্মদিনের কেকের সাথে যথার্থ সম্পর্ক রয়েছে।

পঞ্চাদশ শতাব্দীতে, জার্মান বেকার এক স্তর বিশিষ্ট জন্মদিনের কেক তৈরী করা শুরু করে ছিলো।এটি মুলত সেসব বাবা মায়ের জন্যে বিশেষত তৈরী হতো,যারা তাদের বাচ্চার জন্মের এক বছর উদযাপন করতো। ১৮ শতকে জার্মানীতে কেকের উপর মোমবাতি যুক্ত করার আগ পর্যন্ত এই ঐতিহ্যই চলছিলো,পূর্ববর্তী নজিরগুলো সেই প্রমাণ দেয়। জন্মদিনে পালনের এই সংস্করণ ‘কিন্ডারফেস্ট’ নামেই প্রচলিত ছিলো। এই প্রথাটিই বাচ্চাদের আধুনিক রীতিতে জন্মদিন পালনের মূল উৎস।

কিন্ডারফেস্ট

কিন্ডারফেস্টে বাচ্চাদের একটি বিশাল উদযাপন -কক্ষে নেয়া হতো। সেখানে তাদের ইচ্ছেমত জন্মদিন উপভোগ করার সুযোগ দেয়া হতো।’অশুভ আত্মাগুলো মানুষের আত্মা চুরি করতে পারে’ জার্মানদের মাঝে এরকম বিশ্বাসও ছিলো।তাই উদযাপনকারী ব্যক্তিককে রক্ষা করতে তাকে ঘিরে রাখতো সবাই এবং প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করতো।জন্মদিনে উপহার দেওয়া সে সময়কার রীতি ছিলো না। উদযাপনকারীর জন্যে শুভকামনা করলে সেই টুকুই সে সে সময়ে যথেষ্ট ছিলো। যদি কোনো ব্যক্তি উপহার নিয়ে আসতো তবে তা উদযাপনকারীর জন্যে আগামীতে সুন্দর একটা নতুন বছরের চিহ্ন বুঝাতো।

যাই হোক,কেক এবং মোমবাতির প্রসঙ্গে ফেরা যাক।মোমবাতির ব্যবহার নিয়ে সবচেয়ে পুরাতন স্মৃতি পাওয়া যায় ১৭৪৬ সালে। যখন লুড ভন জিনজেনডরের জন্মদিন খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়।অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা একজন অতিথির ভাষ্যমতে,
“অনুষ্ঠানে কেকটি যথেষ্ট বড় ছিলো, কোনো ওভেনে সেঁকতে পারবে এমন।এবং ব্যক্তির বয়স অনুযায়ী কেকে ছিদ্র করা হয়েছিলো। প্রত্যেকটি ছিদ্রে একটি মোমবাতি গেঁথে দেয়া হয়েছিলো,এবং মাঝখানে ছিলো আরো একটি মোমবাতি।”

প্রায় পঞ্চাশ বছর পর,প্রিন্স অগাস্ট সেক্সে গোথা এলটেনবার্গ তার নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের বর্ণনায় বলেন, ” একটি বিশাল কেকে প্রায় ৫০ টি রঙিন, জ্বলন্ত মোমবাতি সাজিয়ে রাখা হয়েছিলো। মোমবাতিগুলো প্রায় গলে যাচ্ছিলো এবং পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছিলো এবং বাড়তি যেসব মোমবাতি ছিলো তা আগামী বছরগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো।”

এসব মন্তব্য গুলো এটাই বুঝায় যে, পুরাতন ঐতিহ্য অনুযায়ী ব্যক্তির বয়সের সমান সংখ্যক মোমবাতি ব্যবহার করা হতো। এছাড়া বাড়তি মোমবাতি যুক্ত করা হতো আগামী বছরের প্রতীক হিসেবে।

লেখিকাঃ তাসনিম শর্মি