কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন- ‘আরো ছোট করুন’

https://www.youtube.com/watch?v=YdsHGS0MQ84

 

বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নারী নির্যাতন বিরোধী একটি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেন আশুতোষ সুজন। এতে প্রধান চরিত্রে মডেল হিসেবে অভিনয় করেছেন শাহনাজ সুমি। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জুঁই নারকেল তেলের নারী দিবসের বিশেষ বিজ্ঞাপনচিত্র এটি। এ বিজ্ঞাপনচিত্রটি কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়নি। শুধু অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশের পরই আলোচনায় উঠে আসে এটি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন মডেল সেলিব্রেটিরাও বিজ্ঞাপনীটি শেয়ার করেন। সম্প্রতি বিজ্ঞাপনচিত্রটি নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতেও আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশংসায় ভাসছে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের পাতায়।

বিজ্ঞাপনটি নিয়ে স্কুপহুপ ৩ এপ্রিল, ইন্ডিয়া টাইমস ৫ এপ্রিল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ৫ এপ্রিল এবং ইয়াহু নিউজ ৬ এপ্রিল বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এছাড়া গত ১৩ এপ্রিল নিউ ইয়র্ক টাইমসও একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজ্ঞাপনটি নিয়ে। টাইমস লিখেছে, ‘প্রায় দুই মিনিট দৈর্ঘ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রটিতে দেখা যায়, এক তরুণী পার্লারে যান তার লম্বা চুল ছোট করতে। বিউটিশিয়ান যত ছোট করেন তিনি শুধু বলেন, আরো ছোট। সবশেষে নারীটি বলেন, আরো ছোট করে দিন। এমন ছোট করুন যেন, এভাবে কেউ মুঠো করে ধরতে না পারে। তরুণীর শেষের এই সংলাপটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে’

এ প্রসঙ্গে নির্মাতা আশুতোষ সুজন বলেন, ‘এই বিজ্ঞাপনটির আইডিয়া সান কমিউনিকেশন লিমিটেডের। তাদের তৈরি গল্পে স্কয়ার টয়লেট্রিজের সহযোগিতায় গল্পটি দারুণভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি সারা দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এবং ভিনদেশি গণমাধ্যমে দারুণভাবে আলোচিত হয়েছে। এমন ভালো কাজ আরো হোক। সামনের দিনগুলোতে ভালো ভালো বিজ্ঞাপন তৈরি হোক’।

কেউ কেউ হয়তো ভাববে, বিজ্ঞাপনটিতে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য একজন নারীকে চুল কেটে কেবল আত্মরক্ষা করতে দেখা গেল। এতে তো পুরুষদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার কোনো মেসেজ ছিল না। সে প্রসঙ্গে আশুতোষ সুজন বলেন, ‘আমাদের দেশে ১০০ জন নারীর মধ্যে ৮০ জন নারী কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঐ বিজ্ঞাপনটির শেষে একটি ফোন নম্বর উঠতে দেখবেন। নির্যাতিত নারীরা ঐ নম্বরে কল করে জানালে, সহায়তা পাবেন’।

পুরুষপ্রধান এই দেশে এমন নারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি জীবনের কোন না কোন সময়ে নিজের বাবার কাছে, বরের কাছে নির্যাতিত হননি। সেই নারী অশিক্ষিত কিংবা শিক্ষিত, কর্মজীবী নাকি গৃহিণী- সেসব কোনও ভূমিকা রাখে না। পুরুষদের এমন বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি কেন- তার জবাবে এই বিজ্ঞাপনচিত্রটি।

কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? নারীরা নারীদের কাছেও সহমর্মিতা পায় না। আজ হোস্টেলে পরিচিত এক ছোটবোনকে বললাম এই বিজ্ঞাপনীটির ব্যাপারে। যখন আমি দুই মিনিটের এই বিজ্ঞাপনটির কথা বর্ণনা করছিলাম, তখন আমার নিজেরই গলা কেঁপে উঠছিলো। অথচ সেই মেয়েটা নিতান্তই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে হাসতে বললো, ‘মনে হয় জামাই’র হাতে মাইর খেয়েছে বেচারি!’ আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। একটা মেয়ে যখন মেয়ের দুঃখ বোঝে না, তখন ছেলেরা কী করে বুঝবে! তবে নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিলাম, এই ধরণের মেয়ে যেমন আছে, তেমনি পুরুষদের মধ্যেও ভালো মানুষ আছে। একসময় পরিবর্তন আসবেই।

সবচেয়ে ভালো খবরটাই তো এখনো দেওয়া হয়নি। এই বিজ্ঞাপনচিত্রটি কান চলচিত্র উৎসবে দেখানো হবে। সিনেমা জগতের সবচেয়ে প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ উৎসবগুলোর মধ্যে ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ অন্যতম। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের সাথে কানকেও সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং মর্যাদাপূর্ণ উৎসবের সম্মান দেয়া হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনও বিজ্ঞাপনচিত্র প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কানে যাচ্ছে। তবে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্য এটা এত বড় একটা গৌরবের ব্যাপার, অথচ এই নিয়ে মিডিয়াতে কোন মাতামাতিই নেই! কয়েকটি অনলাইন ভিত্তিক নিউজ পোর্টালে আসলেও কোন মূল ধারার দৈনিক এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন রিপোর্ট করেনি। যে দেশীয় বিজ্ঞাপনটি নিয়ে বাইরের দেশে এত মাতামাতি, সেটা নিয়ে দেশে কোন খবরই নেই, এরচেয়ে বড় দুঃখের ব্যাপার আর কি হতে পারে?