ডেমনলজি বা পিশাচবিদ্যা-পর্ব ১-লামিয়া ও ইম্পোজার গল্প

lamia

lamiaঅনেকেরই জ্বীন-ভুত-পরী নিয়ে অনেক মাথা ব্যাথা। তারা কি সত্য, নাকি মিথ্যা, তারা শুধুই কি মিথ, পুরোটাই গুঁজব নাকি আসলেই ফ্যাক্ট? না, আমি কোন জ্বীন-ভুত বিশারদ নই। তবে ডেমন নিয়ে মনের কোনে একটু তরল জায়গা বরাবরই ছিল, আম্মু-আব্বু, দাদী-নানীদের মুখে সেই ছোটবেলা থেকেই এগুলো শুনে ঘুমিয়েছি কি না তাই। সেই তরল জায়গায় কবে কবে যে ডেমনের শেওলা জমে গেছে জানিনা। সেখান থেকেই এদের উপরে একটু পড়াশুনা করতে শুরু করেছিলাম আর কি। আর যেহেতু, বাংলা হাবের মত ওয়াইড প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত যখন হয়েই গেছি, ভাবলাম যা পড়ছি, সবার সাথে শেয়ার করলে দোষ কোথায়। তাই সিরিজ আকারে শুরু করলাম ডেমনলজি। সাথে থাকুন, আশা করি খারাপ লাগবে না। আর যদি সিরিজটি পছন্দ হয় বা না হয়, নিচে কমেন্টে আপনার অনুভূতি জানাতে ভুলবেন না। আর শেয়ার করাটা কিন্তু বাঞ্ছনীয়।

আজ প্রথম দিনে শুরু করলাম, সুন্দরী ডেমন লামিয়া কে দিয়ে।

গ্রীক মিথলজিতে লামিয়াকে পাওয়া যায়। ব্যাবিলিয়ান ও অ্যাসিরিয়ান ধ্বংসের দেবতা ‘ল্যামি’ এর সাথে মিল রেখে তার নাম রাখা হয়েছে লামিয়া। তার পিতা ছিল লিবিয়ার রাজা ‘বেলোস’। লামিয়া তার অতিরিক্ত শারীরিক সৌন্দর্যের কারনে জিউসের নজরে পড়ে। জিউস তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন ও বিনিময়ে কিছু ক্ষমতা দেয়। তার ভেতরে একটি ক্ষমতা হচ্ছে সে লোকেদের চোখ তুলে আবার পুনঃস্থাপন করতে পারত। তার কয়েকটা ছেলেও হয়েছিল। এসব খবর শুনে জিউসের স্ত্রী হেরা ভীষণ চটে যায়। হেরা লামিয়ার সবকয়টা ছেলেকে মেরে ফেলে আর লামিয়ার প্রতি স্পেল ছুড়ে দেয় যাতে লামিয়ার ছেলেসন্তান হলে যেন মৃত (Stillbirth) জন্ম দেয়।

এসব কান্ড কারখানায় লামিয়াও ভয়ানক ক্ষেপে যায়। সে তখন ডেমনে রুপ নেয় আর কসম কাটে যে সে সবার বাচ্চা মেরে ফেলবে।  পরবর্তিতে লামিয়া ‘ইম্পোজা’ আর ‘মর্মো’ এর সাথে জোট বাধে। তারা সবাই মিলে ঘুমন্ত যুবক, নির্জন রাস্তা বা বনের মাঝে দিয়ে যাওয়া পথচারীকে যৌনআমন্ত্রণ এর মাধ্যমে আক্রমণ করে, তাদের রক্ত-মাংস পান করে। লামিয়া অবশ্য ঘুমন্ত যুবকের বীর্জ দিয়ে প্রচুর মেয়ে সন্তান পয়দা করে। তারা শিশুদের আক্রমণ করে ও তাদের রক্ত-মাংস খেয়ে ফেলে। তাদের মানুষের মত পা থাকে না, তবে অসম্ভব রূপবতী ও দর্শনধারী হয়। এদের বলা হয় Lamiae।

John Keats তার “Lamia” কবিতায় লামিয়ার দৈহিক বর্ণনায় বলেছেন, লামিয়ার কোমর নিচের অংশে সাপের ন্যায় লেজ আছে। আর দেহের উপরের অংশে উন্নত স্তন আর অসম্ভব রূপবতী চেহারা। অনেকে অবশ্য বলে থাকেন লামিয়ার মায়ের নাম Scylla। তবে সরাসরি এর কোন যোগসুত্র মিথলজিতে পাওয়া যায় কি না আমি জানি না।

হিব্রু পন্ডিতেরা অবশ্য বলে থাকেন, Lamiae হচ্ছে লিলিথের ডেমনিক শিশুখাদক সন্তান লিলিম, অ্যাডামের প্রথম স্ত্রী।

এবার আসুন ইম্পোজার দিকে। গ্রীক ভাষায় Empousae মানে “বাহিনী”। অবশ্য ইংলিশে Empusa দ্বারা ভ্যাম্পায়ারের সমার্থকও বুঝায়। তবে গ্রীক মিথলজিতে ইম্পোজা হচ্ছে লামিয়ার মতই আরেকজন মহিলা ডেমন, আচার-আচরনে কিছুটা সাকিউবাসের মত। সাকিউবাস নিয়ে অন্য কোন দিন আলোচনা করা যাবে, তবে বুঝার স্বার্থে এইটুকু যেনে রাখুন সেও এক মহিলা ডেমন যে ঘুমন্ত মানুষের সাথে যৌন সহবাস করে। ইম্পোজাকে বহুবচনে বলা হয় empousai।

ইম্পোজা হচ্ছে অন্ধকারের রাজ্য, ভূত-পেত্নী আর জাদুর রাণী হ্যাকেছ (Hecate) আর স্পিরিট মর্মো এর মেয়ে। এরা কালো জাদু, পশু আর ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী। মানুষ যখন তাদের মৃত আত্মীয়ের নামে কিছু উৎসর্গ করে এরা তার মাঝখানে এসে হাজির হয়। এরা দেখতে ভয়ানক কুৎসিত আর নোংরা। এদের আগুনের তৈরী চুল, বিষদাত আছে, শরীরের পিছনের অংশ গাধার পিছনের প্রান্তের মত। এদের আবার পায়ে সমস্যা আছে। এক পা ব্রোঞ্জের আর এক পা গাধার। এরা গরু, শিয়াল বা সুন্দরী রমণীর ছদ্মবেশ ধারন করতে পারে।

হ্যাকেশিয়ান ডেমনদের একটা প্রজাতিই হচ্ছে empuse বা empousa নামে। রাণী হ্যাকেছ এদের নির্জন রাস্তা পাহারা দিতে আর পথচারীদের সাইজ করতে পাঠায়। ইম্পোজাদের জন্মই হয়েছে নির্জন পথচারী আর ঘুমন্ত মানুষদের রক্ত-মাংস খাবার জন্য। এদের এক গ্রুপ ঘুমন্ত মানুষদের উপর আক্রমণ করে আর এক গ্রুপ পথচারীদের। এরা সাধারনত নির্জন রাস্তায় সুন্দরী নারীর রুপে আবির্ভুত হয়। তারপর নির্জন রাস্তার পথচারীদের ভুলিয়ে ভালিয়ে ভুল পথে নিয়ে আসে। তারপর এরা তাদের হাড়-মাংস-রক্ত খেয়ে ফেলে। কিছু রেকর্ড অনুসারে, এরা দৌড়ে অন্ধকারে পালিয়ে যায়, আর পথচারীদের অপমানসূচক চিৎকার করতে থাকে। তারপর মানুষ তাদের দিকে তেড়ে এলে সুযোগ বুঝে স্পেল নিক্ষেপ করে আর চিবিয়ে খায়। তবে যেসব পুরুষের মনের জোর আছে, তারা এদের স্পেলের ফাদ থেকে বেরিয়েও আসতে পারে। 

অনেকে বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, আরেকদল স্লিপ প্যারালাইসিস ঘটাতে ওস্তাদ। তারা ঘুমন্ত মানুষের ঘরে ঢুকে তাদের দেহ অবশ করে ফেলে আর রক্ত খায়। অনেকেই স্বপ্নে এদেরকে দেখার কথা বলেছেন। মিথলজিতে অবশ্য এর যৌক্তিকতাও আছে। এদের আবার মানুষের শরীরের ভেতরে ঢুকে পড়ারও ক্ষমতা আছে। এরা কখনো কখনো শুধু দূর থেকে দেখেও মানুষকে বিমোহিত করে রক্ত পান করতে পারে।

বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন তুলে দয়া আর্টিকেলটিকে খাটো করবেন না। কারন এগুলো সবই মিথোলজির কথা। একবিংশ শতাব্দিতে মিথোলজির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই যেন কেমন শোনায়। তবে সে যাই হোক না কেন, হে যুবকেরা, লামিয়া আর ইম্পোজা হইতে সাবধান। :-p

আর শেয়ার না করলে আপনার উপরে লামিয়া ছেড়ে দেয়া হবে। Drag Me To Hell সিনেমায় তো দেখেছেন, লামিয়ার কখনও খালি হাতে ফেরত যায় না। হা হা হা…