যে কসাই মানুষের মাংস বিক্রি করতো!

সাল ১৯২৪, যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা,এর মধ্যে নর্থ জার্মানির হ্যানভারে তখন সৃষ্টি হয়েছে আরেক রহস্যের।সেখানের লিন নদী দিয়ে ভেসে আসতে দেখা যায় অনেকগুলো বাচ্চার মাথার খুলি,সাড়া পরে যায় সর্বত্র।এই রহস্যের মূল হোতাকে জানতে হলে জানতে হবে ফ্রিটজ হারমান নামে এক ব্যাক্তির কথা, যাকে তার নিজের বাবা নিজে পাগলাগারদে পাঠাতে চেয়েছিলেন।

মাস মার্ডারার অফ হ্যানোভার (সোর্সঃ গুগল ইমেজ)

ফ্রিটজ হারমান ১৮৭৯ সালের ২৫ অক্টোবরে জার্মানির হ্যানভারে নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।ছোটবেলা থেকেই ফ্রিটজ ছিলেন রগচটা আর হীন চরিত্রের মানুষ।অল্পবয়সেই তিনি বিভিন্ন অপকর্মের জন্য জেল খাটে, পরবর্তীতে তিনি রাস্তার ভবঘুরে কিশোরদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেন।এরপর ফ্রিটজ মাংস ও কাপড়ের  দোকান দেন, যেখানে তিনি অন্যদের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতেন।এতে তিনি অতি দ্রুত সবার নিকট জনপ্রিয় হয়ে যা্ন।এতই জনপ্রিয়  হন যে লোকাল পুলিশ তাকে তাদের সংবাদদাতা বানায়।এদিকে ওই এলাকায় প্রায় প্রতি সপ্তাহে ছেলে নিখোঁজ হতে লাগলো।অনেক বাবা-মা পুলিশ নিয়ে ফ্রিটজ এর বাসায় সার্চ করতে আসত কারণ তাদের ছেলেকে শেষ এখানেই দেখা গিয়েছে,কিন্তু সেখানে কোনো প্রমাণ পাওয়া যেতনা।

সেইসময় ফ্রিটজ এর সাথে হ্যান্স নামে এক যুবকের যোগাযোগ হয় যার কাজ ছিল মানুষকে মেরে তাদের কাপড় বিক্রি করা। তারা দুইজনে মিলে আরো হত্যাকান্ড ঘটাতে থাকে।প্রথমে ফ্রিটজ বাচ্চাদের খাবার বা অন্যকিছুর লোভ দেখিয়ে ঘরে নিয়ে আসতেন, এরপর তিনি বাচ্চাদের ধর্ষণ করত, ধর্ষণের পরে তাদের গলায় কামড়ে হত্যা করতেন।তারপর হ্যান্স সহ মিলে বাচ্চার মাংসগুলো আলাদা করে রেখে হাড়গুলো নদীতে ভাসিয়ে দিতেন এবং বাচ্চার কাপড়গুলো হ্যান্স  বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ফ্রিটজ বাচ্চার মাংসগুলো তার দোকানের প্রাণির মাংসের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করতেন। আস্তে আস্তে ফ্রিটজ এর ব্যপারে মানুষের সন্দেহ বাড়তে  থাকে।

অনেকেই তাদের কেনা মাংসে ভিন্ন স্বাদ পেত, যেসব মানুষ জামা কিনত তাতে রক্তের ফোটা লেগে থাকত, এছাড়া প্রতিবেশিরা রাতেরবেলা ফ্রিটজের ঘরে মাংস কাটার ও পানি ফেলার শব্দ শুনতো। এদিকে যত বাচ্চা-কিশোর খুন হচ্ছিল,পুলিশের উপর ততই চাপ বাড়ছিল,খুনের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১০০তে এসে দাঁড়ালো।অবশেষে পুলিশ প্রধান ফ্রিটজের উপর নজর রাখতে দুই গোয়েন্দা লাগিয়ে দিলেন। ১৯২৪ সালের ২২শে জুন ফ্রিটজ যখন ফ্রোম নামে একটা ছেলের সাথে এসব করতে যায় তখন তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় এবং পুলিশ ফ্রিটজকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ও তার ঘর তল্লাশি করে। তল্লাশিতে পুলিশ প্রচুর কাপড়চোপড় এবং রক্তমাখা জিনিস পায়।প্রথমে সে স্বীকার করতে না চাইলেও পরে জেরারমুখে স্বীকার করতে বাধ্য হয়।একই সময়ে লিন নদীতে আরো হাড়গোড় ভেসে আসছিল।পরে পুলিশ ডুবুরি দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে প্রায় ৫০০ হাড় পায়।

ফ্রিটজ ও হ্যান্সকে গ্রেফতার করে আদালতে শুনানির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও ফ্রিটজ তার উদ্ধতপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছিলেন।

১৯২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর এই মামলার রায় হয়,রায়ে ফ্রিটজকে ফাঁসি আর হ্যান্সকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।

এভাবেই সমাপ্তি হয় এই “ম্যাস মার্ডারার অফ হ্যানভার” এর।

Image source : Google

Information source :Google,Wikipedia.