নানান দেশের অদ্ভুত সব আইনকানুন!

আমাদের দেশে প্রায়ই এমন কিছু বিরক্তিকর ঘটনা ঘটে, যেগুলো এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন: আপনার শরীরে কেউ ছাদ থেকে পানি ফেলে দিল বা বাসে বসে থুথু ফেললো আর পড়লো আপনার গায়ে। এসবের জন্যে কিন্তু আমাদের দেশে কোনো আইন হয়েছে বলে আমার জানা নেই।কিন্তু পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে যাদের রয়েছে এসবের জন্যে কড়া সব নিয়ম কানুন। তারা এসবের জন্য আদালতেও যেতে পারে। ক্ষতিপূরণের মামলা করে দিতে পারে। কারণ তাদের দেশে বড় বড় অপরাধ যেমন, খুন কিংবা মারামারির মতো ঘটনা কম থাকার ফলে মামলার সংখ্যা খুবই কম। তাই এমন ছোট ছোট মামলা নিয়ে তারা মহাব্যস্ত থাকে।

আমরা প্রায়শই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের নিয়মকানুন নিয়ে রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকি। অনেকে আবার হাপিত্যেশ করি, “ইশ! যদি এমনটা হতো, তেমনটা হতো, খুব ভালো হতো, খুব উচিত হতো।” কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন সব উদ্ভট আইন-কানুন আছে, যা জানার পর আপনি নিজ থেকে অন্তত একবার হলেও বলবেন- “যাক বাবা! বড্ড বাঁচা বেঁচে গেলাম।” সেসব অদ্ভুত আইন থেকে আমরা সত্যিই মুক্ত। শুধু অদ্ভুত বললে কম বলাই হবে, এতসব বিচিত্র আইন বিনোদনদায়কও বটে।

১.চোখ মারা আইন

আপনি যদি ভুল বশতও কোনো নারীকে চোখ মেরে থাকেন, তবে প্রস্তুত হোন আইনের নজরে আসতে। ওটুমওয়া, আইওয়াতে (Ottumwa, Iowa) আপনি যদি আইন না জেনেও এ কাজ করে থাকেন, তবে তার জন্যে আপনার জরিমানা সুলভ ট্যাঁকের কড়ি খোয়াতেই হবে।

২.ছোট্ট সোনামণির ঘরের কাজেও আইন!

দেখেছেন কি কখনও? আপনার ছোট্ট বাবুটা মায়ের পাশে পাশে ঘুরে মাকে কাজে সাহায্য করছে। এমনটা যে শুধু মা বলেছেন বলেই নয় কিন্তু! রীতিমতো আইন তৈরি করে বাধ্যবাধকতা গড়ে দেওয়া হয়েছে বলেই শিশুরা মাকে ঘরের কাজে সহায়তা করতে বাধ্য। খুব বেশি বাড়াবাড়ি মনে হলেও ঘরের কাজে সাহায্য করতে এবং মা-বাবাকে শ্রদ্ধা করতে শিশুদের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা হয়তো স্পেনেই সম্ভব।

blank

এ খবরে অনেকেই হয়তো বিস্মিত হবেন। কিন্তু এ আইনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে ছেলে বা মেয়ে শিশু উভয়কেই ঘরের কাজে পিতা-মাতাকে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। স্পেনে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে এমন অনেক আইন আছে। একটা আইন করেই দেশটির সব স্বামীদের ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করা এবং সন্তান লালন-পালনে সময় দেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কোনো স্বামী তা না করলে স্ত্রী অভিযোগের পসরা সাজিয়ে আদালতে পেশ করতেই পারেন। তখন আদালতের নিয়মানুযায়ী স্বামীর সাজা নির্ধারিত হবে। কি? যাবেন নাকি, স্পেনে?

blank

৩.চুইংগামের উপর কড়া নিয়ম

এ কথা অনস্বীকার্য যে, সিঙ্গাপুর অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে এর তুলনাই নেই। এত সব সৌন্দর্যের  ডালি তো আর একদিনে সম্ভব হয়ে উঠেনি! এর পেছনেই রয়েছে কড়া প্রশাসনিক আইন।

সিঙ্গাপুরে কেউ যদি যত্রতত্র চুইংগাম ফেলে, তবে তার জন্যে ১ হাজার ডলার জরিমানা গুণতে হবে। দ্বিতীয়বার যদি একই অপরাধ কেউ করে থাকেন, তবে তার জরিমানা ২ হাজার ডলার। সাথে শাস্তিস্বরূপ একদিনের জন্য পাবলিক প্লেস পরিষ্কার করতে তাকে বাধ্য করার নিয়ম জারি আছে। তারপরেও কেউ যদি তৃতীয়বার চুইংগাম ফেলে রাস্তা নষ্ট করার মতো দুঃসাহস দেখাতে যায়, তবে তাকে বিব পরে রাস্তা পরিষ্কার করতেই হবে যাতে লিখা থাকবে ‘I’m a litterer’।

এমনকি ফার্মেসীগুলোতে যদি বিক্রয় অনুমোদন ছাড়া অথবা ভুলবশত সেলার আইডি ব্যবহার না করে কেউ মেডিকেল চুইংগাম বিক্রি করে বসেন, তবে তাকে ২ বছরের জন্যে জেলখানার ঘানি টেনে তবেই তার মুক্তি। যত্রতত্র থুথু ফেলাও সিঙ্গাপুরে অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে।

৪.নারী বনাম সম্পত্তি

এবার আসুন নারী কোথায়, কখন সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয় তা জেনে আসি। থাইল্যান্ডে ৩০ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত নারী দেশের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। জিম-ডেলার গল্পটি আমরা কম বেশি সকলেই জানি। মিশিগানে হয়তোবা সে আদলেই তৈরি হয়েছে এ নিয়ম! কোনো মহিলা স্বামীর অনুমতি ছাড়া মাথার চুল বিক্রি করতে পারবেন না। সেখানে স্ত্রীর চুল স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য।

blank

৫.জুতা আইন

ইতালির ক্যাপ্রিতে ফ্লিপ-ফ্লপ শু বা স্কুইকি শু পরা নিষেধ। এসব জুতো পরলে নীরবতা স্খলিত হয়। সেকারণেই এমন অদ্ভুত নিয়ম করা হয়েছে।

৬.উচ্চ শব্দ অথবা হুইসেলিং আইন

অন্টারিওতে অবস্থিত পেট্রলিয়া শহরে উচ্চমাত্রার শব্দের উপরেও আইন বলবৎ আছে। কোনো প্রকার হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচি, হুইসেলিং, এমনকি উচ্চস্বরে গান গাওয়া পর্যন্ত নিষেধ এখানে।

৭.লাইসেন্স আইন

গাড়ি চালকের চালনা পদ্ধতি যদি ঠিক না থাকে, তবে পুলিশ তার লাইসেন্স বাতিল করতেই পারে। কিন্তু এথেন্সের পুলিশ কোনো গাড়ির চালকের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে, যদি ওই চালক গোসল না করে থাকে। বড়ই বিচিত্র নিয়ম!

৮.খাওয়ার ধরন নিয়ে আইন

আমাদের দেশে অনেকেরই স্বভাবজাত প্রবৃত্তি লক্ষ্য করা যায় যে, তরল জাতীয় খাবার, বিশেষ করে চা বা কফি পিরিচে ঢেলে শব্দ করে পান করেন। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার সুসানভিলে সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে সুপ খাওয়া একটি অমার্জনীয় অপরাধ পর্যায়ে পড়ে। আছে নাকি আপনার এমন অভ্যাস?

blank

৯.স্বাস্থ্য আইন

জাপান উন্নত দেশ হবার কারণে সে দেশের মানুষের আয়ুষ্কালও বেশি। তাই দেখা যায় জাপানের কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই হলো প্রবীণ গোছের। বয়স্ক এই কর্মীবাহিনীকে কর্মক্ষম রাখার অভিপ্রায়ে ২০০৮ সালে আইন করে ৪০ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের কোমরের মাপ ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী জাপানে ‘ওবেসিটি’ বা মুটিয়ে যাওয়াকে স্থানীয়ভাবে ‘মেটাবো’ বলা হয়। আইন জারি হয়, কোনো দপ্তর বা কারখানা যদি তাদের ‘মেটাবো’ কর্মীর সংখ্যা ২৫ ভাগ কমাতে না পারে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরিমানাও নির্ধারিত। দেশের বয়স্ক স্বাস্থ্যসেবায় ওই প্রতিষ্ঠানকে সাধারণের তুলনায় বেশি পরিমাণ অর্থ দেওয়ার নিয়ম আছে।

আরও কিছু মজার আইনঃ

  • তুরস্কে ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের পাইলট হওয়া বেআইনি।
  • সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালেনো দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • সৌদি আরবের জেদ্দায় ১৯৭৯ থেকে নারীদের জন্য হোটেলের সুইমিংপুল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • ইসরাইলে রবিবার নাক খোঁচানো দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • পর্তুগালে সমুদ্রে মূত্রত্যাগ করাকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • সুইজারল্যান্ডে ফ্ল্যাট বা হাউজিং কমপ্লেক্সে রাত ১০টার পর বাথরুমে ফ্লাশ করা নিষেধ।
  • অস্ট্রেলিয়াতে বাচ্চারা সিগারেট কিনতে পারবে না!! কারণ এটা আইনবিরোধী!! কিন্তু সিগারেট খেতে/টানতে পারবে!! এতে কোনো বাধা নেই!!
  • ইংল্যান্ডে টেলিভিশন ব্যাবহার করার জন্য লাইসেন্স করতে হয়!! (একটু কনফিউশন আছে।। ইংল্যান্ডে যারা আছেন তারা কি বলতে পারবেন ঘটনা সত্য কিনা??)
  • থাইল্যান্ডে গাড়ি চালানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে শার্ট পড়তে হবে!! অর্থাৎ, আপনি খালি গায়ে গাড়ি চালাতে পারবেন না!!
  • আমেরিকার ফ্লোরিডাতে আপনি যদি পার্কিং স্পটে কোনো হাতি বেঁধে রাখেন,তবে আপনাকে সেই হাতির জন্য পার্কিং ফি দিতে হবে!!
  • বিস্ময়কর একটা আইন জানাচ্ছি এইবার!! আমেরিকার নিউইয়র্কে কোনো উঁচু বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড!!
  • টেক্সাসে নিজের চোখ নিজে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।
  • টেক্সাসে খালি পিস্তল দিয়ে কাউকে ভয় দেখানো বেআইনি।
  • টেক্সাসের আইনে কোনো অপরাধ করার ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে নোটিস দিতে বলা আছে।

এসব আইন কাগজে কলমে বলবৎ থাকলেও এখন অনেক আইনই কার্যকারিতা হারিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এসব নিয়ে আর ভাবে না। তবে বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনগুলো অদ্ভুত আর মজার বলেই তা মানুষের মনে আনন্দের খোরাক জুগিয়ে চলেছে।