ভূত ভয়ঙ্করঃ কাছে ডাকে, করে টেলিফোন (পর্ব-১)

জাপানের একটি ছোট্ট গ্রাম। চারিদিকে আগুন ঝরছে। আগুন ঝরা গ্রীষ্মকাল এখন। আমি ফুকুতা । আমার বাবা মায়ের খুব আদরের সন্তান। আমি জাপানে থাকি। আমি এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে দাদা বাড়ি বেড়াতে যাব। প্রতিবছরই আমার মা বাবা আমাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যায়। আমার দাদা বাড়িতে একটা বিশাল উঠান আছে। আমি সেখানে খেলা করতে খুব পছন্দ করি। আমি যখনই গ্রামের বাড়ি যায় তখনই আমার দাদা দাদি আমাকে কোলে তুলে নেয় এবং আদর করে। আমি দাদা দাদির একমাত্র নাতি হওয়াতে তাদের আদরের অন্ত নেই।

কিন্তু এবার আমার দাদা বাড়ি যাওয়াটা যে আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে তা হয়ত আমাদের কারোই জানা ছিল না। আমার জন্য দাদা বাড়িতে এক ভয়ংকর নিয়তি অপেক্ষা করছিল যা আমাকে এখনও তাড়া করে ফেরে।

আমি শেষবার ৮ বছর বয়সে দাদা বাড়ি গিয়েছিলাম। সেবার আমার বাবা মা আমাকে দাদা দাদীর কাছে রেখে জাপানের অন্য অংশে ঘুরতে চলে গেল নিজেদের সাথে কিছু আলাদা সময় কাটানোর জন্য। দাদা দাদির সাথে আমার ভালই সময় কাটছিল। একদিন দুপুরে দাদা দাদি ঘরের ভেতরে ছিল আর আমি বাইরে উঠানে খেলছিলাম। এক সময় আমি ক্লান্ত হয়ে ঘাসের উপর শুয়ে পড়লাম এবং শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে লাগলাম  আর ভাবতে লাগল কত্ত সুন্দর এই আকাশ! ঠান্ডা হিমেল হাওয়া আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। অনেকক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমি ঘাসের উপর থেকে উঠতে যাব তেমন সময় হঠাত আমি একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলাম, পো, পো, পো, পো………

ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কোথা থেকে শব্দটা আসছিল। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছিল যে, খুব কাছেই হচ্ছিল শব্দটা এবং খুব মোটা এবং ভারী পুরুষ কন্ঠে শব্দটা হচ্ছিল, পো,পো,পো,পো,পো,………

আমি ঘাসের উপর শোয়া থেকে উঠে শব্দের উৎস খুঁজতে লাগলাম। হঠাত দেখতে পেলাম যেই দেয়ালটা উঠানটাকে ঘিরে রেখেছে তার উপরে একটা খড়ের টুপি। আর সেখান থেকেই শব্দটা আসছে। ভাল করে তাকানোর পরে দেখতে পেলাম যে, টুপিটা আসলে দেয়ালের উপরে না টুপিটা আসলে দেয়ালের পেছনে। মনে মনে বললাম,হুম, তাহলে শব্দটা দেয়ালের পেছন থেকেই আসছে।

পো,পো,পো,পো,পো,পো………… একটা মোটা ভারী পুরুষ কণ্ঠ শব্দটা করেই যাচ্ছে।

এরপর টুপিটা নড়াচড়া করতে শুরু করল যেন কেউ সেটা পরিধান করেছিল। এরপর যা দেখা গেল সেটার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম খড়ের টুপিটা দেয়ালের ওপাশে থামল এবং একটু উঁকি দিল। একটি মহিলাকে দেখা গেল। দেয়ালটি মোটামুটি অনেক উঁচু ছিল প্রায় ৮ ফুট মত হবে। এটা ভেবে অবাক হচ্ছিলাম কোন মহিলা এত লম্বা কিভাবে হতে পারে? মনে মনে ভাবছিলাম এত উঁচু জুতা কি আছে যেটা সে পরিধান করে এত লম্বা হল? এরপর মহিলাটি হেঁটে চলে গেল এবং সাথে সাথে আওয়াজটিও উধাও হয়ে গেল।

আমি মনে অবাক ভাব নিয়েই ঘরে ঢুকলাম। দাদা দাদি রান্নাঘরে বসে চা পান করছে। আমি দাদা দাদির কাছে গেলাম এবং কি দেখেছি তা তাদের সম্পূর্ণ খুলে বললাম। তারা প্রথমে আমার কথাতে মনোযোগ দিচ্ছিল না কিন্তু যখনই আমি, পো,পো, পো, পো, পো শব্দটির কথা বললাম, তখন তারা আমার কথার প্রতি মনযোগী হল । আর আমার কথা শুনে তখনই দাদা দাদি ভয়ে জমে গেল। দাদি ভয়ে আতংকে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল আর দাদা আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল, এটা জানা জরুরী। কি বললে তুমি? একটা মোটা গভীর পুরুষালি কন্ঠ? সে লম্বায় ঠিক কতখানি?

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, এটা উঠানের দেয়ালের সমান উঁচু ছিল। এ কথা শুনে দাদা প্রশ্নে প্রশ্নে আমাকে জর্জরিত করে ফেলল, যে কোথায় এটা ঘটেছে? সে কোথায় দাঁড়িয়ে ছিল? আমি তখন কি করেছি? সে কি আমাকে দেখেছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমি বুঝতে পাচ্ছিলাম না ঠিক কি কারণে দাদা আমাকে এসব জিজ্ঞাসা করছে।

আমার পক্ষে যতটা সম্ভব সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম। হঠাত করেই দাদা দৌড়ে গিয়ে টেলিফোন হাতে নিল এবং কারও সংগে কথা বলল। কি কথা বলল তা আমি শুনতে পেলাম না। এদিকে দাদিমা ভয়ে কাঁপছিল। পুরো বিষয়টা তখনও আমার কাছে স্পষ্ট নয় যে কি হয়েছে।

টেলিফোনে কথা শেষ হলে দাদা দাদিকে ডেকে বলল, আমার এখনই যেতে হবে। তুমি ফুকুতার কাছেই থাক। কোনভাবেই ওকে চোখের আড়াল করবে না।

আমি অবাক হয়ে চিৎকার করে বললাম, কি হয়েছে দাদা?

দাদা দুঃখ ভারাক্রান্ত চোখে অসহায়ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, তোমাকে হাচিশহাকুশামা পছন্দ করেছে। এটা বলেই সে খুব দ্রুত পায়ে তার গাড়ির দিকে গেল এবং গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল।

আমি ভয়ে ভয়ে দাদিকে জিজ্ঞাস করলাম কে এই হাচিশহাকুশামা? আর আমাকে সে পছন্দই বা করেছে কেন? আর পছন্দ করলে ভয় পাওয়ার কি আছে?

দাদি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল, ভয় পেয় না। তোমার কিছুই হবে না। তোমার দাদা অবশ্যই কিছু একটা করবে।

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু দাদির ভয় পাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঘটেছে যা ঠিক নয়।

যখন আমরা রান্নাঘরে দাদার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখন দাদি আমাকে বলল যে কি হয়েছে। কেন তারা এত চিন্তিত। সে বলল, এই এলাকায় একটা খুব বিপদজনক এবং ভয়ংকর আত্মা তাড়া করে ফেরে। গ্রামবাসীরা এর নাম দিয়েছে হাচিশহাকুমা। এর নাম এটা হয়েছে এর উচ্চতার জন্য। জাপানে হাচিশহাকুমা শব্দটির অর্থ হলঃ ৮ ফুট লম্বা।

একে একেকজন একেকভাবে দেখেছে। কেউ দেখেছে বুড়ো মহিলার বেশে আবার কেউ কেউ দেখেছে তরুণীর বেশে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই একটা বিষয় একরকম ছিল যে, এই মহিলা অতিরিক্ত লম্বা এবং সে পো,পো,পো আওয়াজ করতে থাকে সবসময়।

অনেক অনেক বছর আগে একজন সন্যাসী এই আত্মাকে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিল চারটি ছোট ছোট ধর্মীয় মূর্তি দ্বারা। কিন্তু কোনভাবে এই অপ আত্মাটি সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং সে যাকে পছন্দ করে তার মৃত্যু অবধারিত হয়।

এসব শুনে আমার কাছে খুব অদ্ভুত লাগছে কিন্তু বুঝতে পারছিনা কি বিশ্বাস করব। একটু একটু ভয়ও লাগতে শুরু করেছে তখন।

এর মধ্যেই দাদা একজন বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে হাজির হয়েছেন। দাদা আমার সাথে বয়স্ক মহিলার পরিচয় করিয়ে দিলেন। বয়স্ক মহিলার নাম কে সান। কে সান আমার হাতে এক টুকরো চামড়ার কাগজ ধরিয়ে দিল এবং বলল তা সবসময় ধরে রাখতে। এরপর কে সান এবং আমার দাদা উপরে আমার শোবার ঘরে চলে গেল আমাকে আর দাদিকে আবার রান্না ঘরে একা রেখে। পুরো পরিস্থিতি খুব থমথমে আকার ধারন করেছে।

চলবে…...