রহস্য গল্পঃ একটি ভূতের গল্প!

উফফ…মেসে আজকেও কারেন্ট নাই!! তাড়াতাড়ি টিউশনি শেষ করে লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে মানুষের চাপে ভর্তা হতে হতে সে চিন্তা করছিল আজকে রুমে গিয়েই গোসল করে ফ্যানটা ছেড়ে ঘুমিয়ে পরবে।কিন্তু সেই সুখ মনে হয় তার কপালে নাই।মেজাজটাই খারাপ হলো রিয়াজের।কি আর করা,অন্ধকারে কোনোমতে সিঁড়ি ধরে ধরে সে উঠার চেষ্টা করল।শালার মোবাইলটারও আজকেই চার্জ শেষ হইতে হইলো? তার আশপাশের রুমের বন্ধুরা কেউ এখনো বাইরে থেকে আসেনি মনে হয়,অবশ্য ৭-৮টা বাজে সবাই টিউশনির জন্য বাইরে থাকে।সবাই আসলেই মজা আরম্ভ হবে মেসে ভার্সিটি কোচিং করতে আসা নতুন কয়েকটা  জুনিয়রকে নিয়ে।তাদের সাথে এসব ফাজলামি(!!) নিয়ে রিয়াজের মনে কোনো সংকোচ নাই।সবলের হাতে দুর্বল অত্যাচারিত হবে এটাই তো জগতের নিয়ম,সে যখন নতুন  মেসে এসেছিলো তখন তার সাথেও এমনই করা হয়েছিলো।একদিন হয়তো এই জুনিয়ররাই সিনিয়র হয়ে অন্যদের সাথে এমন করবে। তবে জুনিয়রদের মধ্যে ফারাবী নামের পিচ্চিটারে নিয়া বেশি মজা হয়, কারণ ঐ পিচ্চিটা একটু নাদুসনুদুস আর বোকাসোকা টাইপের।

এসব ভাবতে ভাবতে রিয়াজ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ছাদের দিকে যেতে লাগলো। কারেন্ট চলে যাওয়ায় রাতের আটটা বাজেই মনে হচ্ছে রাত দশটা হয়ে গিয়েছে।এই সময় ওখানে কেউ থাকেনা ,তাই বসে বসে বাতাস খাওয়া যাবে।রিয়াজের তেমন ভুতের ভয় নেই তবে একলা থাকলে একটু গা ছমছম করে উঠে আরকি।

বাহ !আজ যে পূর্ণিমা তা জানাই ছিলোনা,পুরো ছাদ ভেসে যাচ্ছে চাঁদের হালকা আলোয়।ছাদের একদম শেষ মাথায় মনে হয় কেউ বসে আছে।সমস্যা নাই,গল্প করা যাবে  তার সাথে।“কে ওখানে?” হেঁটে ঐদিকে যেতে যেতে রিয়াজ জিজ্ঞেস করল।কিন্তু কোনো উত্তর নেই,মনে হয় শুনতে পায়নি আর ছাদটাও তো অনেক বড়। তাই রিয়াজ আরেকবার জিজ্ঞেস করলো।নাহ! এবারো কোনো উত্তর নেই,আর বসে থাকা মানুষটা মনে হয় কিছু খাচ্ছে।কারন চপ-চপ শব্দ হচ্ছে।এবার রিয়াজের মনে ভয় ঢুকে গেল।কয়েকবছর আগে এই মেসেই একজন ছাদ থেকে পড়ে মারা গিয়েছিলো।সে এককোণে বসে থাকা মানুষ আকৃতির অবয়বটার চেয়ে মাত্র ২০-২৫ হাত দূরে। ঐখানেই সে স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে রইল। হঠাত ঐ অবয়বটা ঘাড় ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকালো……।

রিয়াজ চাঁদের হালকা আলোয় যা দেখলো তা মনে হয় কোনোদিন ভুলবেনা।পিশাচটার মুখ ভর্তি কোনো খাবার দিয়ে,মুখের চারপাশে লেগে আছে রক্তের মত চটচটে জিনিস,হাতে ধরে আছে কোনো বস্তু যা দূর থেকে মাংসের টুকরার মতই লাগছে,সামনে রয়েছে আরো কিছু জিনিস।আর পিশাচটার মুখে ফুটে উঠেছে হাসি।মনে হয় রিয়াজকে দেখেই তার খুশিতে হাসি এসে গিয়েছে!!ভাবছে পেয়ে গেলাম আরেকটা শিকার!!!!

কিভাবে যে দৌড় মেরে মেসের একদম নিচতলার গেইটে এসে রিয়াজ পৌছালো সে জানেনা।কিছু দূরে যে টং দোকান আছে সেখানে কোনোমতে গিয়ে বসলো,কারেন্ট না আসা পর্যন্ত এইখানেই বসে থাকবে।কাঁপা হাতে কোনোমতে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে সে সৃষ্টিকর্তার কাছে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো আজকে তাকে জানে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য।কালকেই তিনটা ফকিরকে ৫০ টাকা করে দিয়ে দিবে আর ছাদে যাওয়া বন্ধ আজ থেকে।কিছুক্ষন বসে থেকে রিয়াজ চিন্তা করল এই ঘটনাটা কাউকে জানতে দেয়া যাবেনা। বন্ধুরা জানলে বিশ্বাস তো করবেই না বরং তাকে ভীতু বলে টিটকারি দিবে।এর চেয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো।বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে একটা ভালো তাবিজ কিনে নিতে হবে।

ফারাবীর কথা।

ভার্সিটি কোচিং করার জন্য ফারাবী বাসা ছেড়ে শহরে আসতেই চায়নি। কিন্তু মা-বাবার কথা ভেবে নিজের ভবিষ্যতের জন্য তার শহরে এসে মেসে উঠতে হইসে।একেতো কোচিং এ পড়ালেখার চাপ তার উপর আবার মেসে বড় ভাইদের ফাজলামি।এসব কিছুই সহ্য করে নিয়েছিল কিন্তু একটা জিনিস নিয়ে তার প্রথম থেকেই সমস্যা হচ্ছিল।সেটা হল খাবার।এমনিতেই ফারাবী একটু ভোজনরসিক টাইপের,তার উপর আবার বাসায় তার মা প্রত্যেকদিন তার জন্য মজার মজার খাবার রান্না করে দিত। আর এইখানে মেসের খাবারের দিকে তো তাকাতেই মন চায়না,রেস্টুরেন্টের একই রকম রান্না করা খাবার আর কতদিন খাওয়া যায়।তাই মাকে ফোন করে প্রতিদিন কষ্টের কথা বলত।আজকে বাবা তার সাথে দেখা করতে এসেছে অনেকগুলো বাসায় রান্না করে আনা খাবার নিয়ে।তাই বাবা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই সে খাবারগুলো নিয়ে ছাদে চলে এসেছে চুপিচুপি।কারণ অন্য রুমমেটরা জানলে অর্ধেকের বেশি খেয়ে ফেলবে।এজন্য ফারাবী ছাদের এককোণে বসে খাবার খাচ্ছিল।কিছুক্ষন পর কারেন্ট চলে গেলেও চাঁদের আলোয় বসে খাবার খেতে তার সমস্যা হয়নি।কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যখন ছাদে কেউ একজন এসে তার নাম জিজ্ঞেস করল।ফারাবী নামটা বলতেই চেয়েছিল তবে মুখভরতি খাবার থাকায় বলতে পারেনি।লোকটা যখন দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করল তখন সে খাবারটা কোনমতে গিলে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো।

কিন্তু লোকটা তাকে দেখে কেন যে দৌড়ে পালালো সে বুঝতে পারছেনা। চাঁদের আলোয় অবয়ব বুঝা গেলেও চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না।মনে হয় তার সমবয়সী কেউ হবে।ফারাবীকে সিনিয়র ভাই মনে করে ভয়ে পালিয়েছে।ফারাবী মনে মনে হেসে ফেললো।

খাওয়া শেষ হয়েছে।অনেকদিনপর আজকে পেট ভরলো…মাকে ফোন করে বলতে হবে।ইশ!মাংসের ঝোলগুলো হাতে-মুখে লেগে কি অবস্থা হয়েছে!মা দেখলে নির্ঘাত বকুনি দিতো।বাসায় থাকার সময় তার এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাওয়া আর খাওয়ার সময় চপ-চপ শব্দ করার জন্য কম বকুনি খায়নি।ফারাবী হাসতে হাসতে টিস্যু পেপার দিয়ে ঝোলগুলো মুছতে থাকে……

(বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে)