চমকপ্রদ ঐতিহাসিক ফ্যাক্ট যেগুলো স্কুলে পড়ানো হয় না!

স্কুল-কলেজ পাশ করতে আমাদের যেসব ঐতিহাসিক ঘটনা গলাধঃকরণ করতে হয়েছে, তাতে যে আমরা খুব বেশি কিছু শিখে ফেলেছি তা বোধহয় কেউই বলবেন না। আজকে আমরা আলোচনা করবো এমন কিছু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের মুদ্রার অপর পিঠ সম্পর্কে, যা শুনলে হয়ত তাজ্জব বনে যাবেন। আসুন, শুরু করা যাক।

কিম-জং-ইল তার অপেরা রিহারস্যাল করছেন। ছবিঃ Korean Central Television

১. কিম জং-ইল ছিলেন একজন প্রতিভাবান কম্পোজার

মানুষ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার কুখ্যাত স্বৈরাচারী শাসক, কিম জং-ইল ছিলেন একজন ইন্টারেস্টিং ব্যক্তি। একদিকে তিনি ছিলেন একজন দারুণ গলফ প্লেয়ার, ফ্রেঞ্চ মদের ব্র্যান্ড কনিয়াক প্রেমী, সিনেমাপ্রেমী। অন্যদিকে তিনি দারুণ মিউজিক কম্পোজারও ছিলেন বটে।

ঘৃণ্য এই লোকটি প্রায় ছয়টি অপেরার কম্পোজ করেছিলেন, যার ভেতরে “Sea of Blood” সবথেকে জনপ্রিয়। তার জীবদ্দশায় এটি তিনি প্রায় ১৫০০ বারেরও বেশিবার পারফর্ম করেছিলেন। নর্থ কোরিয়া নিউজ সার্ভিস এটিকে “ক্লাসিক্যাল মিউজিকের শাশ্বত রত্ন” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কিম তার বাবা কিম-ইল-সাং এর সাথেও কিছু কম্পোজিশনের কাজ করেছিলেন।

"Sea Of Blood" শুনতে এখানে ক্লিক করুন

২. জোসেফ স্টালিন ছিলেন ফটো ম্যানিপুলেশন শিল্পের জনক

কুখ্যাত সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিন মিডিয়া কন্ট্রোলের জন্য সুপরিচিত। তিনি মিডিয়া ব্যাবহার করে নিজেকে একজন নিখুঁত মানুষ ও গ্রেট লিডার হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইতেন।

তার ছবি কিভাবে, কোথায় তুলতে হবে এ ব্যাপারে কঠোর নিয়ম ছিল, যেন তার দেহের বিশেষ কিছু অংশ তিনি আড়াল করতে পারেন।

লক্ষ-লক্ষ মানুষের হত্যাকারী স্টালিন যখন কারো সাথে ছবি তুলতেন, আর সে লোকটি যদি মারা যেত, বা উধাও হয়ে যেত; তখন তার ফটোগ্রাফ্রারদের উপর নির্দেশ ছিল যেন তারা যেন ছবি থেকে ওই হারানো লোকটিকে বাদ দিয়ে দেয়। আর এই চর্চার শুরু তিনিই করেছিলেন, যাকে আজ আমরা বলি ফটোশপিং। মজা না?

৩. উইন্সটোন চার্চিল এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ধুমপানের বদনাম

বলা হয় যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় প্রাইম মিনিস্টার, স্যার উইন্সটোন চার্চিল জীবনকে সম্পুর্নরুপে উপভোগ করতে জানতেন। খানাপিনা, মদ আর ধুমপানের ব্যাপারে তিনি কখনো না করেন নি। তার ধুমপানের মাত্রা এতই বেশি ছিল যে তার নামে একটা সিগার (Cigar) ব্র্যান্ডও আছে।

তার ফেভারিট সিগার ছিল কিউবান “Romeo y Juliet”। তিনি সবসময় সবখানেই ধমপান করতেন। অবস্থা এতই বেগতিক ছিল যে চার্চিল মশায়ের জন্য আলাদা একটা স্পেশাল হেলমেট ডিজাইন করা হয়েছিল, যাতে প্লেনে বসেও তিনি ধুমপান করতে পারেন। শেষ জীবনে এসে তিনি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেন ও দৈনিক সিগারেটের পরিমাণ কমিয়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫টি(!) সিগারেট খাওয়া শুরু করলেন। হা হা।

৪. ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন ব্যাবস্থা আবিস্কারের জন্য দায়ী দুজন আসামী

১৯০৩ সালে উইল ওয়েস্ট নামের একজন ক্রিমিন্যাল পুলিশ কর্তৃক অ্যারেস্ট হন। পরবর্তিতে তাকে ক্যানসাসের লিভেনওর্থ এর কারাগারে সাজা কাটতে পাঠানো হয়। জেলে ঢুকানোর পরে দেখা যায়; আগে থেকেই ওই জেলে উইলিয়াম ওয়েস্ট নামে আরো একজন আসামী আছে।

তাদের শুধু যে নামে মিল ছিল তাই নয়, তারা দেখতেও ছিল মোটামোটি একই চেহারার ও একই গড়নের। যদিও তারা এর আগে কখনও পরিচিত ছিল না। একারনে কারাগার কর্তৃপক্ষের সঠিক আইডেন্টিফিকেশন গ্রহনে বেশ সমস্যা হতে লাগল। তাছাড়া এরকম ঘটনা যে অন্য কোথাও হবে না তারই বা কি নিশ্চয়তা। আর তখন তারা বারটিলিয়ন সিস্টেম রেখে আরো স্পেসিফায়েড আইডেন্টিফিকেশন মেথডের সন্ধানে লাগলেন। পরবর্তিতে আবিষ্কৃত করা হল ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম।

৫. চিফ ব্ল্যাকবার্ড তার প্রিয় ঘোড়ার উপরে বসেই কবরে সমাহিত হয়েছেন

ওহামা নেটিভ ইন্ডিয়ান ট্রাইব একদা সবচেয়ে শক্তিশালী গোত্রে পরিণত হয়েছিল। তারা মিসিসিপি নদী আর রকি পর্বতমালার মধ্যবর্তি অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করেছিল, যেটি বর্তমান ইউনাইটেড স্টেটস ও কানাডার সীমানায় অবস্থিত। এই শান্তিপ্রিয় গোত্রের লোকেরাই সর্বপ্রথম ঘোড়াচালনায় সর্বসেরা হয়ে উঠেছিল ও বহির্বিশ্বের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে শুরু করেছিল।

তৎকালীন সময়ে এই গোত্রটির অভুতপুর্ব উত্থানের নেপথ্যে ছিল চিফ ব্ল্যাকবার্ডের সুচিন্তিত লিডারশিপ। দূরদর্শী এই নেতাই গোত্রের বাইরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার ট্রেড রুটের সুচনা করেন। ১৮০০ সালে চিফ ব্ল্যাকবার্ড জলবসন্তে (চিকেন পক্স) আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাকে মিসৌরী নদীর পাড়ে একটা উঁচু পাহাড়ের মাথায় সমাহিত করা হয়। তার স্মরণে পাহাড়টির নাম রাখা হয়েছে ব্ল্যাকবার্ড হিল। পূর্ণ মর্যাদা ছাড়াও তার শেষ ইচ্ছা মোতাবেক তাকে তার প্রিয় ঘোড়ার উপর বসিয়েই কবরস্থ করা হয়েছিল।

৬. আইনস্টাইনকে ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হতে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল

বিখ্যাত নোবেলবিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তার থিওরি অফ রিলেটিভিটির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ধর্মের দিক থেকে ইহুদী ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এ দুনিয়া ছেড়ে চিরবিদায় নেন। তার মারা যাওয়ার তিন বছর আগে তাকে ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হবার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়।

ইজরায়েল সরকার পক্ষ থেকে আইনস্টাইনকে পাঠানো চিঠি

কিন্তু সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিটি সেই আমন্ত্রণ বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারন হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি ওই পদের জন্য উপযুক্ত লোক নন। কারন তার অত বেশি মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা আর বসে বসে অফিশিয়াল ডিউটি পালনা করার ক্ষমতা নেই।

৭. ইতিহাসের সবথেকে স্বল্পতম সময়ের যুদ্ধ

১৮৯৬ সালে জাঞ্জিবারের সুলতান হামাদ-বিন-থুয়েইনির মৃত্যুর পরে খালিদ-বিন-বারঘাশ সিংহাসনে বসেন। কিন্তু ব্রিটিশদের কাছে খালিদ খুব পছন্দের ব্যাক্তি ছিলেন না।

ফলে ব্রিটিশরা নতুন একজন সুলতানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে খালিদকে তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে দাবী করে বসে। সুলতান খালিদও সেই দাবী নাকচ করে বসে্ন ও তার রাজপ্রাসাদের চারিপাশে সৈন্য দিয়ে ব্যারিকেডের ব্যাবস্থা করে। যাতে করে ব্রিটিশ আর্মিরা তার প্রাসাদে আক্রমন করতে না পারে।

জাঞ্জিবার আর্মিদের প্রায় ২৮০০ সৈন্য ছিল। অন্যদিকে ব্রিটিশ আর্মিদের ছিল প্রায় ১৫০০ সৈন্য, যারা বিপরীত পক্ষের তুলনায় খুবই শক্তিশালী। এছাড়াও দুটো গানবোট ও তিনটা ক্রুজার নিয়ে তারা আক্রমন করতে এসেছিল।

এই যুদ্ধে ৫০০ এর ও অধিক জাঞ্জিবার সৈন্য নিহত হন। অপরদিকে মাত্র একজন ব্রিটিশ সৈন্য নিহতের ঘটনা ঘটে। সুলতান খালিদ কোনমতে জার্মান ইস্ট আফ্রিকায় পালিয়ে যান, যেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। এই অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধ মাত্র ৩৮ মিনিট স্থায়ী ছিল। আর এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে অল্প সময়ের যুদ্ধ।