জুনকো ফুরুতার মার্ডার কেস – নরক যন্ত্রণার ৪৪ দিন

 

furutaআজ আমি আপনাদের বলবো পৃথিবীর কুখ্যাত এক খুনের কাহিনী যা দুনিয়ার সব পাশবিকতাকেও হার মানায়।কাহিনীর শুরু ১৯৮৮ সালে। টোকিও, জাপান। জুনকো ফুরুতা,[জন্ম নভেম্বর ২২, ১৯৭২] ১৭ বছর বয়সী প্রাণোচ্ছল এক তরুণী। সে মিসাটোর সাইতামা প্রিফ্যাকচার এর ইয়াশিও-মিনামি হাই স্কুলের গ্রেড ১১ এর ছাত্রী। তার ১৭ তম জন্মদিনের তিন দিন পর নভেম্বর এর ২৫ তারিখ, জুনকো যথারীতি স্কুল শেষ করে বাসায় ফিরছিল। হটাত করে, তারই সমবয়সী কিছু ছেলে তার পথ আগলে দাড়ায় এবং তাকে অপহরন করে নিয়ে যায়।অপহরনকারীদের মধ্যে একজনের নাম ছিলো ‘জো কামিসাকো’। জুনকোকে তারা টোকিওর আয়াসি জেলার আদাচি গ্রামের জো কামিসাকোর এক বাড়িতে আটকে রাখে।

এটি মাত্র ৪৪ দিনের নরকযন্ত্রণারসম অত্যাচারের শুরু। জুনকোর সাথে ছেলেগুলোর কোনো পূর্বশত্রুতা ছিল না, কি কারনে তাকে অপহরণ করা হয়েছে সেটাও সে জানতো না। শুধুমাত্র তাদের পশুবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য, তারা পুরুষ, তারা যা খুশি করতে পারে তা প্রমাণের জন্য তারা জুনকোকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। জুনকোকে তারা বাধ্য করে তার মা-বাবার কাছে ফোন করে বলতে যে সে তার বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গেছে, সে কোনো বিপদে নেই। তাই তারা যেন তার জন্য কোন চিন্তা না করে। ফলে নিজেদের পশুবৃত্তি চরিতার্থ করার সুযোগ পেয়ে যায় তারা। এমন কি কামিসাকুর মা বাবার কাছে জুনকোকে নিজেদের ‘বান্ধবী’ বলে পরিচয় দেয়।

প্রথম দিনঃ

নভেম্বর ২২, ১৯৮৮; অপহরণের প্রথম দিন থেকে জুনকোকে প্রায় ৪০০ বারের উপর ধর্ষণ করা হয়। তাকে অভুক্ত রাখা হয়।পরে তাকে তেলাপোকা খেতে দেয়া হয় এবং তার নিজের মুত্র পান করতে দেয়া হয়।তাকে হস্তমৈথুনে এবং সবার সামনে স্ট্রিপডান্স করতে বাধ্য করা হয়।এটাতে কামিসাকুর দল পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতো। সিগারেটের জলন্ত অংশ আর আতশবাজি দিয়ে তার নাক, কান, মুখ আর জননাঙ্গ ঝলসে দেয়া হয়েছিলো।  

এগারোতম দিনঃ

ডিসেম্বের ১, ১৯৮৮; জুনকোকে সিলিং এর সাথে পাঞ্ছিং ব্যাগের মত ঝুলিয়ে তারা ইচ্ছেমত পেঠাতো যতক্ষণ না পর্যন্ত রক্তক্ষরণ না হতো।তার নাকে এতোটাই রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিলো যে তাকে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হতো। এর মাঝে সে একবার পালানোর চেষ্টা করেছিল।কিন্তু ধরা পড়ে যায়। ফলে পরে তার শাস্তি হিসেবে তার পায়ে দাহ্য তরল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয় যেন সে হাঁটতে না পারে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে তাকে ব্যালকনিতে শুতে জোর করা হতো।

বিশতম দিনঃ

ডিসেম্বর ২০, ১৯৮৮; এতো নির্যাতনের পরেও জুনকো মারা যায় নি। প্রত্যেকটা দিন সে এই নরপশুদের কাছে নিজের মৃত্যুর চেয়ে আর্তনাদ করেছে। তা তো হয় নি, উলটো তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। এইবার তাকে বাঁশ আর গলফ স্টিক দিয়ে পেটানো শুরু হয়। হাতের উপর ভারি বস্তু ফেলে হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিলো। প্লায়ারস দিয়ে তার হাতের নখ গুলো উপড়ে ফেলা হয়েছিল।তার বাম নিপল কেটে নেয়া হয়েছিলো। গ্রিল চিকেনের শিক আর মদের বোতল মেয়েটির জননাঙ্গে আর মলদ্বারে প্রবেশ করিয়ে পাশবিক অত্যাচার চালাতো। জ্বলন্ত বাল্ব তার জননাঙ্গে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করানো হতো যতক্ষণ পর্যন্ত বাল্বটি ভেঙ্গে না যায়। এর ফলে জুনকোর জননাঙ্গ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, কামিসাকুর বাড়িতে এতকিছু হচ্ছে অথচ তার মা-বাবা কিছুই জানতো নাহ? আসলে তারা ঠিকই জানতো। কিন্তু তারা নাকি কামিসাকুর পুরো গ্রুপটিকে এতোই ভয় পেত যে তারা পুলিশের কাছে যাওয়ার সাহস নাকি করতে পারে নি।

ত্রিশতম দিনঃ
কনক্রিটের মেঝেতে জুনকোর মুখ চেপে ধরে কামিসাকুর দল তার উপর লাফাতো। সেলাই করার সূচ দিয়ে তার বুকে খোঁচানো হতো। তার মুখের উপর গরম মোম ফেলে মুখের চামড়া আর চোখের পাপড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। তার ইনজুরি এতোটাই খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিলো যে হামাগুড়ি দিয়ে নিচের তলার বাথরুম এ যেতে তার এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল। তার কানের পর্দা ফেটে যায়। ব্রেইনের সাইজ কমে যায় এর ফলে।

চল্লিশতম দিনঃ
জানুয়ারি ১, ১৯৮৯; জুনকো তার মৃত্যু ভিক্ষা চাইতো কামিসাকুর কাছে। একা একা রক্তাক্ত বিকলাঙ্গ অবস্থায় নতুন বছর বরণ করলো জুনকো। 

চুয়াল্লিশতম দিনঃ
জানুয়ারী ৪, ১৯৮৯; কামিসাকুর গ্রুপেরই একজন মাহ-জং খেলায় হেরে গিয়ে প্রচণ্ড রেগে যায়। নিজের রাগ ঝাড়তে সে বেছে নেয় জুনকোর শরীরকে। লোহার বারবেল দিয়ে প্রচণ্ড পিটিয়ে তাকে একেবারে আধমরা করে ফেলে তারা। তারপরও রাগ না কমলে জুনকোর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তাদের এই শেষ অত্যাচার দুই ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। তার পর দিন প্রচণ্ড ব্যাথা, কষ্ট আর একাকীত্বনিয়ে মারা যায় জুনকো ফুরুতা।

এরপর চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ের ভিতর, জানুয়ারী ৫, ১৯৮৯ সালে, হত্যাকারীরা জুনকোর মৃতদেহ কনক্রিটের ড্রামে ২০৮ লিটার কনক্রিটের মাঝে চাপা দিয়ে রেখেছিলো। এই কারণে তার খুনের কেসের নাম ছিল-‘Concrete-encased high school girl murder case’।

একটি মেয়ের উপর এতো নৃশংস অত্যাচার করার পর এই চারজন নরপশুর শাস্তি হয় নামেমাত্র।  কিশোর অপরাধের দোহাই দিয়ে ১৯৯৯ সালের অগাস্ট মাসে মাত্র আট বছর জেল খেটেই বের হয়ে যায় কামিসাকু। ১৯৯০ সালে জুলাইয়ে নিম্ন আদালত তাদের দলনেতাকে ১৭ বছর, বাকি তিন সহযোগীর একজনকে ৪-৬ বছর, অন্য দুই জন কে ৩-৪ বছর এবং ৫-১০ বছর মেয়াদী কারাদন্ডাদেশ দেন। এদের মধ্যে দলনেতা সহ আরো দুই জন এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে তাদের শাস্তি আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। দলনেতাকে ২০ বছর, বাকি দুই জনের একজনকে ৫-৯ বছর (আগে ৪-৬ বছর),এবং অপরজনকে ৫-৭ বছর (আগে ৩-৪ বছর)কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু জুনকোর মা বাবা এই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তারা আবার আরেকটি মামলা দায়ের করেন এই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। সে মামলায় জিতে যান জুনকোর মা বাবা। ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে বাড়িতে জুনকোকে হত্যা করা হয়েছে সে বাড়ি এবং কিছু অর্থ পান।

জুনকো ফুরুতার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উপর ভিত্তি করে জাপানে ‘Concrete’ নামে একটি চলচ্চিত্র বানানো হয়।

এই নৃশংস ঘটনার সবচেয়ে কষ্টকর দিক হচ্ছে, সতের বছরের এক নিষ্পাপ মেয়েকে এইভাবে পৈশাচিক অত্যাচার করে হত্যা করার পরও এই চার নরপিশাচ নাম পাল্টে আদৌ পৃথিবীর বুকে শ্বাস নিচ্ছে। এই চারনরপিশাচ এর একজন হিরোশি মিয়ানো,হিরোশি ইয়োকোয়ামা নামে, জো ওগুরা, জো কামিসাকু নামে, শিনজি মিনাতো, নোবুহারু মিনাতো নামে এবং ইয়াসুশি ওয়াতানাবে স্বনামে বহাল তবিয়তে বেচে আছে।তারা মুক্ত শকুনের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর বুকে।

আমরা সবাই ভৌতিক মুভি অথবা খুনোখুনির মুভি দেখতে পছন্দ করি। কিন্তু জুনকো ফুরুতার জীবনে ঘটে যাওয়া ৪৪ দিনের এই নরক যন্ত্রণা সকল ভৌতিক মুভিকে হার মানায়। আমরা সামান্য ব্যাথা পেলে কান্নাকাটি করি, দৌড়ে মায়ের কাছে চলে যায়। কিন্তু জুনকো যে পৈশাচিক কষ্ট আর ব্যাথা সহ্য করেছে তা বর্ণনাতীত। এইরকম একটি লেখার শেষ কিভাবে করতে হয় তা আমার জানা নেই। শুধু এইটুক প্রার্থনা করি, ঈশ্বর যেন জুনকো ফুরুতার হত্যাকারীদের এবং তাদের মত সকল নরপশুদের শাস্তি দেন।

এই লেখাটিতে খুব সংক্ষেপে জুনকোর উপর এই অত্যাচারের কথা লেখা হয়েছে। কারন এই অত্যাচার, এই বর্বরতার কথা লিখতে গেলে, পড়তে গেলে ভয়ে হাত কেঁপে উঠে, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। তাই আরো বিস্তারিত পড়তে চাইলে, জানতে চাইলে নিচের এই লিঙ্ক গুলোতে গিয়ে জানতে পারবেন-

https://en.wikipedia.org/wiki/Murder_of_Junko_Furuta  অথবা,

http://www.strangetruenews.com/2013/05/japanese-horror-story-torture-of-junko.html

লেখকঃ পিংকি চৌধুরী। রিসার্চ এন্ড ডিভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ, গ্রিন সলিউশনস লিমিটেড।