উত্তর কোরিয়ার সুপ্রীম লিডার কিম-জং-উন

পরিচিতিঃ উত্তর কোরিয়া এই মুহূর্তে পৃথিবীর একটি রহস্যমণ্ডিত দেশের নাম।উত্তর-পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া। এর উত্তরে গণচীন, উত্তর-পূর্বে রাশিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ কোরিয়া এবং পশ্চিমে পীত সাগর অবস্থিত। দেশটির আয়তন ১ লাখ ২০ হাজার ৫৩৮ বর্গকিলোমিটার। উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যা ৩ কোটির কাছাকাছি। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহরের নাম পিয়ংইয়ং। 

কে এই অদ্ভুত শাসনকর্তাঃ কিম –জং- উন। কিছু দিন আগেও বিশ্বের অনেকেই তাকে চিনতেন না। কিন্তু ফ্রন্টলাইনে আসার পর থেকেই তিনি সারা বিশ্বের আগ্রহের কারণ। তিনি উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার ফার্স্ট সেক্রেটারি, উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সেনা কমিশন ও জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কোরিয়ান পিপলস আর্মির সুপ্রিম কমান্ডারও তিনি।

২০১১ সালের জানুয়ারির শুরুতেই অনেক উত্তর কোরিয়াবাসী জানতে পারেন, সে বছরের ৮ জানুয়ারি এক বিশেষ দিনের মর্যাদা পেতে চলেছে। এক তরুণ নেতাকে চার তারকা জেনারেল ও দেশটির শীর্ষ নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে বরণ করে নিতে দিনটিতে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। সেই তরুণই আজকের বৈচিত্র্য আর রহস্যেঘেরা নেতা কিম- জং- উন। কিমের জন্মদিনটি কোরিয়ানদের কাছে আজও অজানা। তাকে নিয়ে অনেক অজানা  বিষয়ই রয়েছে দেশটির অধিবাসীদের কাছে। গণমাধ্যমে প্রথম খোলাখুলিভাবে কিম জং উনের নামটি এসেছিল ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে। মাত্র ১৪ মাস পরই পুরো দেশের নেতৃত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। ২০১১-এর ডিসেম্বরে আকস্মিকভাবে মারা যান তার বাবা কিম-জং-ইল।

অল্প বয়সে দেশের শাসনভার তুলে নেওয়ার পর অনেকেই তাকে নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু সবার সংশয় উড়িয়ে দিয়ে তিনি এখন সবার আগ্রহের কারণ।

কিমের অদ্ভুত শাসন পদ্ধতি সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ

  • যদি উত্তর কোরিয়াতে কোন সন্তানের জন্ম হয় তবে তার নাম কিম জং উন রাখা যাবে না।এমনকি যাদের নাম কিম-জং-উন, তাদের জন্ম সনদ সংশোধন করতে হবে। বাবা কিম-জং-ইল ও দাদা কিম-ইল-সাংয়ের নামে নাম রাখার ক্ষেত্রেও একই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
  • এই দেশে কেউ নিজ ইচ্ছায় চুল কাটতে পারবেনা। নির্দিষ্ট কিছু আঙ্গিকে চুল কাটতে হবে। যেমন- দেশের সব পুরুষকে বিশেষ ১০টি আর মেয়েদের ১৮টি হেয়ার স্টাইলের মধ্যেই যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে। আর কিম জং উন যেভাবে চুল কাটান সেভাবে দেশের আর কেউ কাটাতে পারবেন না। এই একটি কাটিং কেবল তাদের শাসক কিম-জং এর জন্যই বরাদ্দ।
  • উত্তর কোরিয়া তে গাঁজা সেবন সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য।যে যার ইচ্ছামত যেকোনো জায়গায় যখন তখন গাঁজা সেবন করতে পারবে। তাই গাঁজাপ্রিয় মানুষের কাছে উত্তর কোরিয়া একটা স্বর্গ বলে বিবেচিত হতেই পারে! এ দেশে যে যত খুশি গাঁজা খেতে পারেন। গাঁজা সেখানে কোনো নিষিদ্ধ মাদক নয়। অন্যান্য সব সাধারণ খাবার-দাবারের মতোই সেখানে গাঁজা টানা হয়।                                                                                 
  • কিম-জং-উন এর বিপরীতে কেউ কোন কাজ করলে বা কোন কথা বললে তার জন্য অপেক্ষা করে ভয়ঙ্কর শাস্তি।হতে পারে তা মৃত্যুদণ্ড। একবার তিনি তার চাচা কে মৃত্যুদণ্ড দেন,কারন ছিলো তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা।এমনকি তার চাচি শোক প্রকাশ করার ফলে তার চাচির ও মৃত্যুদণ্ড হয়।
  • কিমের শাসন আমলে সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার টি হল, এই দেশে কেউ নীল রঙের জিন্স প্যান্ট পরতে পারবে না।কারন পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ মানুষ জিন্স পরে।
  • উত্তর কোরিয়ায় বছরের বিশেষ দুটি দিনে কেউ জন্ম নিলে সেই দিনে জন্মদিন উদযাপন করা যাবে না। উত্তর কোরিয়ার সাবেক দুই শাসক কিম-ই-সুং এবং কিম-জং-ইল মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে সেই দিনগুলোতে দেশের কোনো সাধারণ মানুষের জন্মদিন উদযাপন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ। এ নিয়ম মানতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ মানুষকে ৮ জুলাই বা ১৭ ডিসেম্বরের জন্মদিন উদযাপন করতে হয় একদিন পর, অর্থাৎ ৯ জুলাই এবং ১৮ ডিসেম্বরে।