দেখতে পারেন বিশ্ববিখ্যাত কিছু অসাধারণ কোরিয়ান ড্রামা (পর্ব- ২)

প্রথম পর্বে আমরা বেশ কিছু বিশ্ব নন্দিত কোরিয়ান ড্রামার কথা বলেছিলাম। সেই পোস্টে আপনাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় কোরিয়ান ড্রামা সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তির লেখা নিয়ে হাজির হলাম আজ। এই পর্বেও বেশ কিছু চমৎকার ড্রামার কথা জানাবো আপনাদের।

 

Descendants of the Sun

২০১৬ সালের শ্রেষ্ঠ ড্রামা বলতে পারেন এটাকে। Song Joong Ki সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। তার আরেকটা পরিচয় হচ্ছে সে সিক্রেট এলিট ফোর্সেরও একজন সদস্য। প্রায়ই বিভিন্ন গোপনীয় মিশনে তাকে ছুটে যেতে হয় বিশ্বের নানা প্রান্তে। Song Hye Kyo একজন ডাক্তার। একটা এক্সিডেন্টকে কেন্দ্র করে দুজনের মাঝে পরিচয়, প্রেম হয়। কিন্তু Song Joong Ki-র পেশাগত গোপনীয়তার কারণে সে সম্পর্ক ভেঙ্গেও যায় আবার। সময় বয়ে যায়। বহুদিন পর দুজনের আবার দেখা হয় ইরাকে, জাতিসংজ্ঞের একটা শান্তি মিশনে। দুজনের মাঝেই আবার পুরানো আবেগ জেগে উঠে, চলতে থাকে কাছাকাছি আসার চেষ্টা।

ব্যক্তিগত দ্বন্ধ, দেশপ্রেম, মানবতার প্রতি প্রেম, পেশাগত দায়িত্ববোধ সব মিলিয়ে Descendants of the Sun অসাধারণ একটা ড্রামা। এই ড্রামা দেখার সময় আপনার শুধু একটা কথাই মনে হবে- কোরিয়ান একটা টিভি ড্রামায় এত বিশাল পরিমাণ বাজেট রাখা কিভাবে সম্ভব! ১৬ এপিসোডের চমৎকার এই মিনি সিরিজটি ইংরেজি সাবটাইটেল সহ নামিয়ে নিতে পারেন এই খান থেকে।

 

Doctors

‘ডাক্তারদের ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছু থাকে না’– এই উক্তির একটা বাস্তব প্রতিফলন পাবেন এই ড্রামায়। গত বছরের সেরা ড্রামার তালিকায় এটাকেও রাখতে পারেন অনায়াসেই। ছোট বেলায় Park Shin Hye-র স্বপ্ন ছিল একজন কুক হবে, তার দাদীমার সাথে তাদের পারিবারিক রেঁস্তোরাটি চালাবে। কিন্তু ডাক্তারের ভুলের কারণে সাধারণ এপিন্ডেক্সের অপারেশান করার সময় তার দাদী মারা যান। পার্কের আশা ছিল ডাক্তার অন্তত তার ভুলটুকু স্বীকার করে আন্তরিক ভাবে স্যরি বলবে। কিন্তু স্যরি দূরে থাক, বরং সেই ডাক্তার তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল পারলে আমাকে ভুল প্রমাণ করে দেখাও! জিদ চেপে গেল তার। সপ্তাহে মাত্র ১০ ঘন্টা ঘুমাতো সে। বাকি সময় পার্ট টাইম চাকরি আর পড়াশোনা করে কাটাত। তার ডাক্তার হওয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল তার দাদীমার মৃত্যুর আসল কারণ খুঁজে বের করা। কিন্তু ডাক্তার হয়ে যাবার পর পর অনুধাবন করল যে প্রতিশোধ কখনো একজন ডাক্তারের মূল লক্ষ্য হতে পারে না। মানুষের জীবন বাঁচানোই তার প্রথম এবং একমাত্র কাজ। সেই মানুষটি যদি তার শত্রুও হয়, তবুও।

২০ পর্বের চমৎকার এই ড্রামাটি ইংরেজি সাবটাইটেল সহ নামিয়ে নিতে পারেন এই খান থেকে।

 

W – Two Worlds

২০১৬ সালের আরেকটি মাস্টারপিস কোরিয়ান ফ্যান্টাসি ড্রামা হল W – Two Worlds. ‘ডব্লিও’ হচ্ছে কোরিয়ার বিখ্যাত একটি কমিক ওয়েভটুন। ওয়েভের পাশাপাশি পাঁচ বছরে ৩৩ টি বইও বেরিয়েছে- কমিকটির জনপ্রিয়তা বোঝাতে এইটুকু তথ্যই যথেষ্ট! ৩৪ নাম্বার বইয়ে এন্ডিং কি হবে সেটা আগে ভাগে জানার জন্য চীফ সার্জন গল্পের মূল নায়িকা Han Hyo Joo কে তার কমিক রাইটার বাবার কাছে পাঠায়। কিন্তু সে তো আর জানে না তার বাবার সৃষ্টি করা কমিক জগতটি এখন আর কমিকে সীমাবদ্ধ নেই! কমিকের ভেতরেই নতুন একটা পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে! ভাগ্যের পরিহাসে হান জু কমিক রাজ্যে চলে আসে। এখানে এসে সে প্রেমে পড়ে কমিকের হিরো Lee Jong Suk-এর। কিন্তু দুই পৃথিবীর এই দুই বাসিন্দার এই অসম্ভব প্রেমের শেষ পরিণতিটা কি হবে?

দম বন্ধ করা সব সাসপেন্স সিনে ভরপুর রোমান্টিক ফ্যান্টাসি ঘরানার ১৬ পর্বের এই ড্রামাটি নামিয়ে নিতে পারেন এই খান থেকে।

 

You Who Came from the Stars

এশিয়ার টাইটানিক হিসেবে খ্যাত ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া My Sassy Girl মুভির সেই অদ্ভুতুড়ে, বদরাগী কিন্তু প্রচন্ড মায়াবী মেয়েটির কথা মনে আছে আপনাদের? The Girl ভূমিকায় অভিনয় করা Jeyon Ji Hyeon দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে এই টিভি ড্রামার মাধ্যমে আবার অভিনয়ে ফিরলেন এবং ফিরেই আবার বাজিমাত করলেন। কেন্দ্রীয় চরিত্রের অপর অভিনেতা Kim Soo Hyun একজন এলিয়েন। চারশ বছর আগে এক মিশনে তারা পৃথিবীতে এসেছিল। মিশন শেষে তার দলের বাকি সবাই ফিরে যেতে পারলেও দূর্ভাগ্যক্রমে সে পৃথিবীতে আটকা পড়ে যায়। পৃথিবীর আলো বাতাসে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে তার সমস্যা না হলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর তাকে পরিচয় বদলাতে হত। এই দীর্ঘ সময় পৃথিবীতে থেকে সে একটা বিষয়ই শিখেছে, মানুষের নিজেদের ব্যাপারে সে কখনো নাক গলাবে না। এতে কখনো সমস্যার সমাধান হয় না বরং বাড়ে। এই নীতি মেনেই সে ভালোভাবে পৃথিবীতে চারশ বছর কাটিয়ে দিয়েছিল, কোন সমস্যা হয়নি। তার নিজ গ্রহে ফেরত যাওয়ার আর মাত্র তিন মাস বাকি। ঠিক এই সময়েই সে তার পৃথিবীতে কাটানো চারশ বছর সময়ের মাঝে সবচেয়ে বড় ভুলটি করে বসে, তার পাশের ফ্ল্যাটে উঠা অভিনেত্রী মেয়েটির প্রেমে পড়ে! আর এখান থেকেই গল্পের শুরু হয়।

ইংরেজি সাবটাইটেল সহ ২১ পর্বের এই ড্রামাটি নামিয়ে নিতে পারেন এই খান থেকে।

 

49 Days

কোরিয়ান মিথ অনুযায়ী কেউ যদি তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে মারা যায় তবে গ্রিম রিফার তাকে ৪৯ দিনের একটা সময় দেয়। এই সময় তার আত্মা অন্য একজনের শরীর ব্যবহার করে বেঁচে থাকতে পারবে এবং তাকে তার নিজের শরীরে ফেরৎ আসার জন্য এই সময়ের মাঝে রক্তের সম্পর্কের বাইরে ভিন্ন তিন জন মানুষ থেকে তিন ফোঁটা প্রকৃত ভালোবাসার অশ্রু সংগ্রহ করতে হবে। অপ্রত্যাশিত একটা এক্সিডেন্টের কারণে Lee Yo Won তার নির্ধারিত সময়ের আগেই মরতে বসে। গ্রিম রিফার তাকে বেঁচে উঠবার একটা সুযোগ দেয়। পুনরায় জীবন পাওয়ার জন্য রক্তের সম্পর্কের বাইরে এমন তিন জন মানুষের কাছে থেকে প্রকৃত ভালোবাসার অশ্রু সংগ্রহ করতে হবে তাকে। সে এই সময় অন্য একজনের শরীর ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু শর্ত হচ্ছে তার আসল পরিচয় কাউকে সে জানাতে পারবে না। এই সুযোগ পেয়ে তো সে মহা খুশী। তার আবার বেঁচে উঠে ঠেকায় কে! তাকে ভালোবাসে এমন লোকের তো আর অভাব নেই! কিন্তু কাজে নামার পরই সে বুঝতে পারে আসলে সব অশ্রু ভালোবাসার অশ্রু না। এতে লোক দেখানো অংশই বেশি থাকে। নিজ স্বার্থের জন্যই সবাই তার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করত, আসলে তাকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসে এমন মানুষ নিজ পরিবারের বাইরে একজনও নেই! বেঁচে থাকার তাগিদে শুরু হয় তার ৪৯ দিনে তিন ফোঁটা প্রকৃত অশ্রু খুঁজে পাওয়ার সংগ্রাম।

চমৎকার এই ড্রামাটি ইংরেজি সাবটাইটেল সহ নামিয়ে নিতে পারেন এই খান থেকে।