ভালোবাসা দিবসের বিশেষ গল্প- ভালবাসা কিছুটা অব্যক্ত

ছবি কৃতজ্ঞতা- পূজা ধর

১৪ ফেব্রুয়ারি , সবাই নিজেদের সাজাতে ব্যস্ত তাদের ভালোবাসার মানুষের জন্য । পৃথাকেও সাজতে হচ্ছে তবে তা বাবা মায়ের জন্য । পাত্র পক্ষ আজ আসছে তাদের বাড়ি । এইবার আর না করা ঠিক সম্ভব হচ্ছেনা পৃথার জন্য । ভাল ছেলে , ভাল পরিবার । ছেলে একটি বিদেশী কোম্পানিতে চাকরি করে। পৃথার বাবাকে যে জিনিসটি মুগ্ধ করেছে সে হল , ছেলেটির আজ যা কিছু হয়েছে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় । পৃথার বাবা যেন ছেলেটির মধ্যে নিজেকেই খুঁজে পেয়েছেন । বাবার এত আগ্রহ দেখে পৃথা আর না বলতে পারিনি ।আজ খুব মনে পড়ছে তার কলেজের দিনগুলোর কথা । কলেজ মানেই তারুণ্য , রঙিন স্বপ্ন ।তার ওপর পৃথার নয়নাভিরাম রুপ । যে কারো চোখ আটকে যেত তাতে । বিষয়টি পৃথা খুব উপভোগ করতো । নতুন বন্ধু , ক্যান্টিন , সাথে কলেজের ছেলেদের “ স্বপ্নের রাজকন্যা “ খেতাব সব মিলিয়ে ভালই যাচ্ছে পৃথার দিনকাল ।

কাব্য নামটিও বেশ জনপ্রিয় ছিল ক্যাম্পাসে । অল্প সময়ের মধ্যে সে তার মেধার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে । চোখে চশমা , গম্ভীর চেহারার সুদর্শন একটি ছেলে । অন্য ছেলেরা যখন মেয়েদের নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত তখন কাব্যকে পাওয়া যেত লাইব্রেরিতে । এই একটি ছেলে যে পৃথার সাথে আজ পর্যন্ত নিজের সাথে কথা বলতে আসেনি । এই ব্যাপারটি পৃথার ঠিক আত্মসম্মানে এসে লেগেছিল । পৃথা বিভিন্ন ভাবে চায়ত কাব্যর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হতোনা । এক বার নিজ থেকে গিয়েছিলো নোট চাওয়ার বাহানায় যদি কাব্যর চোখে তার রুপের ছটাক এসে পরে কিন্তু তাতেও সে ব্যর্থ । কাব্য ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আর পৃথা ছিল ধনীর দুলালী । বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার বাহানায় পৃথা কাব্যকে বিভিন্ন ভাবে আক্রমণ করছিল তার কথার বাণ দিয়ে কারণ সবাই জানে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের অনেক কিছু মুখ বুজে মেনে নিতে হয় । কাব্য চুপচাপ সবকিছু শুনে যাচ্ছিল । পৃথা সেদিন জানতে পারল কাব্য খুব কষ্ট করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায় । বাবার কাছ থেকে চাইলে বাবা তাকে ফিরিয়ে দিবে তা নয় । কিন্তু বাবাকে সে এইটুকু সাহায্য তো করতেই পারে । পৃথার সব শুনে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল । বুঝতে পারলো যা করেছে ভালো করেনি । নিজের ভুলটা শিকার করতে হবে কিন্তু সকলের সামনে নয় ।ক্লাস শেষে পৃথার গাড়ি কাব্যর পিছু করতে গিয়ে থামল অনাথ আশ্রমের পেছনে । কাব্য ব্যস্ত ছিল বাচ্চাদের সাথে আর পৃথার মুখে মিষ্টি হাসি ।কাব্যকে অনুসরন করাটা পৃথার নেশাতে পরিণত হয়েছে । রোজ সে অনাথ আস্রম আর অন্য রকম কাব্যকে খুঁজে পাওয়া । কাব্য এই বাচ্চা গুলোকে যতদূর পারে সাহায্য করে । তাদের পড়ায় , ঘুরতে নিয়ে যায় , বই কিনে দে । পৃথার চোখে কাব্য এখন তার স্বপ্নের রাজকুমার ।

কলেজের শেষ দিন । কাব্যকে আজ মনের কথাটি বলতে হবে । বা তার আগে দেখল অন্য একটি মেয়ে কাব্যর সামনে দাঁড়িয়ে আছে গোলাপ হাতে । কাব্যর মুখে হাসি ।পৃথা সেদিন আর কিছু বলতে পারিনি । কাব্য এখন সে অনাথ আশ্রমেও আসেনা । পৃথা বুঝতে পেরেছে তার ভালবাসাটা না বলায় থেকে গেল । কাব্যকে ভালোবাসার সাথে সে এই বাচ্চা গুলোকে ভালোবেসে ফেলেছে । রোজ একবার দেখা করতে যায় ওদের সাথে ।
পাত্র পক্ষ চলে এসেছে । সেই চশমা পড়া চোখ দুটি আবার সামনে , কাব্য । দুজনি গম্ভীর ।“ মনের অজান্তেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি । বলতে গিয়েছিলাম নিজের কথা গুলো । দেখলাম তার আগেই তোমার ভালোবাসার মানুষটি তোমার জীবনে চলে এসেছে। কিন্তু আজ তোমাকে এখানে দেখে খুব অবাক লাগছে “। “ সেদিনের গোলাপ গুলো তোমার জন্য ছিল পৃথা । ভুল করে একটি জায়গায় রেখে এসেছিলাম। মেয়েটি দিতে এসেছিলো । তুমি জান তোমার আর আমার পরিবারের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান । তবুও তোমায় বলতে চেয়েছিলাম তার আগেই তুমি হারিয়ে গেলে । তোমাকে একদিন অনাথ আশ্রমে দেখে খুব অবাক হয়ে গেছিলাম । মনে মনে আরো বেশি ভাল বাসতে শুরু করলাম তোমাকে । তুমি যদি আমকে দেখে সেখানে আর না যাও সে ভয়ে তোমার সামনে যায়নি । আজকের দিনটির জন্য নিজেকে গড়ছিলাম এতদিন”। “ আজকের পর থেকে রোজ আমাকে গোলাপ দিতে হবে তোমার । এটাই তোমার শাস্তি “। মিষ্টি একটি হাসি দুজনের মুখে ।