পৃথিবীর অদ্ভুত সব ভাস্কর্যের সন্ধান!

ভাস্কর্য দেখতে কার না ভালো লাগে,পাথরের প্রতিটি খাঁজে খাঁজে ফুটে উঠে ভাস্করের মনের ভাব।বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় নানারকম ভাস্কর্য।সুন্দর এসব ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক।তবে এসবের পাশাপাশি আছে আরো অনেক অদ্ভুত ভাস্কর্য যার আবেদনও কিন্তু কম নয়,আজ কথা হবে এসব কয়েকটি নিয়ে।

“ডেথ কিস”বারসেলোনা,স্পেন

১৯৩০ সালে মৃত্যু বরণ করা এক ব্যক্তির কবরের উপর এই স্ট্যাচু নির্মাণ করা হয়।

সাদা মর্মর পাথরের তৈরি এই ভাস্কর্যে এক মৃত্যু শয্যায় শায়িত মানুষ এবং ডেথ কিস প্রদানকারী কংকালকে দেখানো হয়েছে।নশ্বর এই পৃথিবীতে মানুষের প্রতি পদক্ষেপে যে মৃত্যু তার শীতল নিঃশ্বাস ফেলে যাচ্ছে,এই ভাস্কর্যটি আমাদের তাই মনে করিয়ে দেয়।গুজব আছে যে,বিখ্যাত পরিচালক ইংগমার বারগম্যান এই ডেথ কিস ভাস্কর্যটি দেখে তার অন্যতম মাস্টারপিস “সেভেন্থ সিল” মুভিটি বানানোর জন্য অনুপ্রানিত হন।

“ব্লু মাস্ট্যাং”ডেনভার,আমেরিকা

দূর থেকে দেখে এই নীল রঙ এর ঘোড়ার ভাস্কর্যটিকে আর দশটা আকর্ষণীয় ভাস্কর্যের মতই লাগে,কিন্তু কাছে গেলেই আপনার ভুল ভাঙবে।এর বীভৎস চাহনি আর মুখভঙ্গি দেখে দর্শনার্থীরা দিয়েছেন ব্লু লুসিফার এবং স্ট্যালিয়ন ফ্রম দি হেল সহ বিভিন্ন নাম।বলা হয়ে থাকে যে,এই মূর্তিটি এমনই অভিশপ্ত যে পরিবহনের সময় ভাস্কর লুইস জিমেনজ এর পায়ের উপর মূর্তির মাথাটি খসে পড়ায় রক্তবাহী নালিকা ছিঁড়ে তিনি মারা যান।

“ক্রলিং বেবি”প্রাগ, চেক রিপাবলিক

শিশুদেরকে নিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানারকম ভাস্কর্য আছে,সেখানে শিশুদের স্নিগ্ধতা আর চপলতা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।কিন্তু ডেভিড চারনির তৈরি প্রাগের এই হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চাদের ভাস্কর্য কেমন জানি একটু বেখাপ্পা।মুখবিহীন এই বাচ্চাগুলোর ভাস্কর্য প্রাগের টেলিভিশন টাওয়ার এবং কাম্পা পার্কে রয়েছে।

“ক্লোক অফ কন্সাইন্স”সালজবারগ,অস্ট্রিয়া

অস্ট্রিয়ার সালজবারগ ক্যাথেড্রালের দক্ষিন প্রান্তের প্রবেশদ্বারে এই ক্লোক অফ কনসাইন্সের ভাস্কর্যটি অবস্থিত।বিখ্যাত ডন জুয়ানকে হত্যাকারী কমান্ডারের স্মৃতিস্বরূপ এই ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয় বলে জানা যায়।ইউরোপের বিভিন্ন শহরে শুন্য গহ্বরকে ঘিরে মনুষ্যাকৃতির চাদর ঢাকা এই অবয়বের অনেকগুলো রেপ্লিকা আছে।

“আপসাইড ডাউন স্ট্যাচু”প্রাগ,চেক রিপাবলিক

আরেকটি ডেভিড চারনির উদ্ভট ভাস্কর্য,যা চেজ রিপাবকলিকের প্রাগে অবস্থিত।প্রাগের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত সেন্ট ওয়েন্সেলাসের মনুমেন্টের প্যারোডি হিসেবে এই উলটো ঘোড়ার পিঠে সওয়ারির ভাস্কর্য তৈরি করা হয়।প্রথমে আসল ভাস্কর্যটির পাশাপাশি এই প্যারোডিটাকে রাখা হলেও পরবর্তীতে সরিয়ে লুক্রিন শপিং মলে এনে রাখা হয় একে।

“হ্যাংগিং বেবি”ঘেন্ট,বেলজিয়াম

বেলজিয়ামের ঘেন্টের এক দালান এর সাথে লাগানো বিষণ্ণ চেহারার বালকটির নির্মাতা কে তা জানা যায়নি।রাতে পথ চলতি অনেক পথচারী কিংবা গাড়িচালক এই মূর্তিটি দেখে সত্যিই ভয় পেয়ে যান।

“ম্যান হ্যাঙ্গিং আউট”প্রাগ,চেজ রিপাবলিক

ডেভিড চারনির তৈরি প্রাগের আরেকটি অদ্ভুত স্ট্যাচু,যা বিখ্যাত মনোবিদ সিগমুন্ড ফ্রয়েডের স্মরণে বানানো হয়েছে।সুউচ্চ টাওয়ারের উপরে একটি লম্বা বিমকে ডানহাতে ধরে বামহাত পকেটে ঢুকানো নতমুখী এক গম্ভীর বৃদ্ধের ভাস্কর্য সত্যিই কৌতুহল জাগায়।এই ভাস্কর্যটি দর্শনার্থীদের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় যে ভাস্কর্যটিকে কয়েকটি দেশ ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।তবে মজার বিষয় হচ্ছে অনেক দর্শনার্থীই একে ভ্লাদিমির লেনিনের ভাস্কর্য বলে মনে করেন।

                                                                             

 

 “সিমিটেরো মনুমেন্টালি”

আগে এই কবরস্থানে শুধু সমাজের উচ্চস্তরের মানুষদের মৃতদেহই স্থান পেত।পরে সেখানে ধীরে ধীরে অনেক ছোট ছোট ভাস্কর্যও তৈরি হতে লাগলো কবরগুলির আশেপাশে।এখন এই কবরস্থানটি নানারকম অদ্ভুত ভাস্কর্যের মিউজিয়াম হিসেবেও বিখ্যাত।

সেন্ট বারথেলমিউর ভাস্কর্য,ইটালি

ইটালির মিলানের কাপড় দিয়ে শরীরকে অর্ধ-আবৃত করা সেন্ট বারথেলমিউর এই ভাস্কর্যটিকে আপাতদৃষ্টিতে আর দশটা ভাস্কর্যের মতই মনে হবে,কিন্তু কাছে গিয়ে দেখলেই আপনার ভুল ভাঙবে।আসলে বারথেলমিউর এই মূর্তিটাকে একপাশে আবৃত করে রাখা কাপড়টি হচ্ছে সেন্ট বারথেলমিউর নিজের শরীরের চামড়াটাই।

এই হচ্ছে কয়েকটা অদ্ভুত ভাস্কর্যের কথা,এসব ছাড়াও আরো অনেক ভাস্কর্য আছে পৃথিবীর নানাপ্রান্তে।সময় সুযোগ পেলে নাহয় দেখে আসবেন একদিন।