মেরিলিন মনরো: ‘দ্যা ফ্লাইং স্কার্ট’

মেরিলিন মনরো! যার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে অপূর্ব সুন্দরী এক নারীর ছবি। যাকে নিয়ে কৌতূহলের কোন শেষ নেই। অসাধারণ সৌন্দর্য আর অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি পৃথিবীর সবচেয়ে আবেদনময়ী নারীর কথা উঠলেই মেরিলিন মনরোর নাম সবার আগে মনে পরে।মনে পরে যায়, সাদা ড্রেস পরিহিত তার সেই আইকনিক ছবিটির কথা। আজ আমি আপনাদের বলবো মেরিলিন মনরোর সেই বিখ্যাত আইকনিক ড্রেস “The Flying Skirt” এর পিছনের কাহিনী।

পরিচালক বিলি ওয়াল্ডার কখনো ভাবেন নি, যে উনার লেখা “দ্যা সেভেন ইয়ার ইচ” মুভিটির একটি দৃশ্য, তার সাথে একজন যুগান্তকারী অভিনেত্রী এবং হঠাত বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়া একটি ইতিহাস সৃষ্টি করবে!এমনকি যারা এই মুভিটি দেখেন নি তারাও এক বাক্যে স্বীকার করেন, দমকা বাতাসে উড়তে থাকা মেরিলিন মনরোর সেই সাদা ড্রেস পরিহিত ছবিটি পৃথিবীর সবচেয়ে আইকনিক ছবিগুলোর মধ্যে একটি।

পোষাক ডিজাইনার উইলিয়াম ট্রাভিল্লা এই সাদা ড্রেসটি ১৯৫৫ সালে ডিজাইন করেন। “দ্যা সেভেন ইয়ার ইচ” মুভিটির একটি দৃশ্য থাকে যেখানে মেরিলিন মনরো এবং তার সহ-অভিনেতা টম এওয়েল ট্রান্স-লাক্স ৫২ স্ট্রীট থিয়েটার থেকে ১৯৫৪ সালের হরর মুভি “ক্রিয়েচার ফ্রম দ্যা ব্ল্যাক লেগুন” দেখে বের হয়ে ম্যানহাটনের ৫৮৬ লেক্সিংটন এভেনিউ তে অবস্থান করবেন। যখন ভূগর্ভস্থ ট্রেন অতিক্রম করছিলো তখন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা মনরো বলে উঠলেন, “উহুহু! তুমি কি কোনো পাতাল হাওয়া টের পাচ্ছো?” সাথে সাথে এক দমকা বাতাস বয়ে যায় এবং মনরোর পরিহিত সেই সাদা ড্রেস বায়ুপ্রবাহে উড়তে থাকে। মূলত দৃশ্যটি ধারন করার সময় ছিলো ১৯৫৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, ট্রান্স-লাক্স সময় রাত একটায়। কিন্তু প্রায় ৫০০০ জনের মতো উৎসুক জনতার ভিড় তার উপর তাদের উল্লাসিত চিৎকারে মনরো তার স্পিচ বারবার ভুল করছিলেন। ফলে, শুটিং টা শেষ করা প্রায় কঠিন হয়ে পড়েছিলো। এই একটি দৃশ্য ধারন করতে প্রায় তিন ঘন্টা এবং চৌদ্দবার শুট করতে হয়েছিলো।কিন্তু তারপর ও ফূটেজটির মধ্যে এতো বেশি কোলাহল ছিলো যে, পরিচালক বিলি ওয়াল্ডার শেষমেশ 20th Century Fox এর সেটে এই দৃশ্যটি ধারন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু অন্তত দুঃখের বিষয় এই যে, তার সেই আইকনিক ছবিটি মুভিতে আর দেখানো যায় নি।

কিন্তু মনরোর সেই লাস্যময়ী স্বরূপ এবং তার উড়ন্ত স্কার্ট এর সাথে ‘হালকা যুদ্ধ’ সবার কাছে মজার মনে হলেও শুধুমাত্র একজনের কাছে এই দৃশ্যটি ছিলো অপমানের আর লজ্জাজনক! এবং সেই একজন ব্যাক্তি ছিলেন মেরিলিন মনরোর সেই সময়ের স্বামী জো ডিম্যাগিও!তিনি এই দৃশ্য এবং সাদা পোষাকটি এতোটাই ঘৃণা করতেন যে তাদের সম্পর্কের পরিণতি হয়েছিলো ডিভোর্স!

১৯৬২ সালে মনরোর মৃত্যুর পর, ডিজাইনার উইলিয়াম ট্রাভিল্লা ড্রেসটি লোকচক্ষুর অন্তরালে উনার অন্য সংগ্রহ গুলোর সাথে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু উইলিয়ামের মৃত্যুর পর, উনারই একজন কলিগ বিল সেরিস ড্রেসটি ‘হলিউড মোশন পিকচার মিউজিয়াম’ এর ডেবি রেনল্ডস পরিচালিত ‘হলিউডের স্মৃতি সংগ্রহশালায়’ আবার প্রদর্শন করেন। ২০১১ সালে রেনল্ডস ঘোষণা দেন যে, তিনি মেরিলিন মনরোর সাদা ড্রেসটি নিলামে তুলবেন। ২০১১ সালের ১৮ জুন প্রথম নিলাম হয়। ধারনা করা হয়েছিলো ড্রেসটি ১-২ মিলিয়ন ডলারে ক্রয় হবে কিন্তু পরে ড্রেসটি সর্বমোট ৫.৬ মিলিয়ন ডলারে ক্রয় করা হয়।
মেরিলিন মনরোর এই অসাধারণ প্রতিরুপকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য সিউয়ার্ড জনসন ২০১১ সালে শিকাগোর ইলিনয়স এ ২৬ফিট লম্বা একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। পরে এটি ক্যালিফোর্নিয়ার পাল্ম স্ট্রীট এ স্থানান্তরিত করা হয়।

অসাধারণ সুন্দরী এবং জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী অনেকটা হতাশা থেকে ১৯৬২ সালে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

লেখিকাঃ পিঙ্কি চৌধুরী, কন্টেন্ট ডেভেলপার, টিম বাংলাহাব