চারশো বছর বছরের পুরনো বটগাছ এবং তাকে ঘিরে যত কিংবদন্তী!

ছোটবেলা থেকেই গ্রামবাংলার প্রচলিত কিছু ধারণার কথা শুনে এসেছি এবং অনেক গল্প বা ঘটনার কথাও শুনেছি ! সেসব গল্প বা ঘটনার অধিকাংশই ছিল কোন বটগাছ, তেঁতুল গাছ এবং বাঁশঝাড়কে কেন্দ্র করে। এই গল্প বা ঘটনাগুলো কতটুকু সত্য তা যেমন নিশ্চিত করে বলা মুশকিল ঠিক তেমনি গ্রামবাংলার প্রচলিত কিছু ধারণা বা বিশ্বাস যা যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের চিন্তা ধারায় বহন করছে, কিন্তু তাদের এ বিশ্বাসের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়াও ততটাই মুশকিল ! তবে এমন অদ্ভূত বিশ্বাসের মজবুত কোন ভিত্তিতো অবশ্যই আছে যার সন্ধান বিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা আজ অবদি খুঁজে পাননি।

এমনি এক প্রাচীন বটগাছের সন্ধান পাওয়া গেছে ভারতের পাঞ্জাবের ফতেহগড় সাহেব জেলার অন্তর্গত চরোটি খেড়ি গ্রামে। সেখানে একটি প্রাচীন বট গাছকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে এরকমই কিছু অদ্ভুত রহস্যের কথা।

অতিকায় এই বটগাছের বয়স প্রায় ৪০০ বছর! গ্রামের মানুষের যত ক্ষতিই হোক তবু তাঁরা বটগাছটি কাটা তো দূরের কথা গাছটির একটি শেকড়ও কেউ কাটেনা ! তাঁদের ধারণা, এই গাছের নাকি রয়েছে অলৌকিক সব ক্ষমতা ! অনেক অনুসন্ধানী দলও কৌতুহলবশত দেখতে আসে এই বটগাছটিকে। কিন্তু সত্যি এই গাছ দেখলেই কেমন অন্যরকম অনুভূতি হয় গা ছম্‌ছম্‌ করে যেকোন মানুষেরস! বিস্তৃত বটগাছটির বিশাল দেহ। উপরে নীচে অনেকখানি অংশ জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করছে প্রাচীন এই বটগাছটি। বটগাছটি যেন আস্তে আস্তে সব নিজের দখলে নিতে চাইছে আর যেন গাছটির দিকে আড়চোখে তাকানো মানুষদের দ্রুত সরে যেতে হুমকি দিচ্ছে! স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, কেউ এই গাছের একটি শেকড় কাটলেই কিছুদিনের মধ্যেই তাকে ঢলে পড়তে হবে অবধারিত মৃত্যুর কোলে।

এই সেই বিখ্যাত বটগাছ

এই বটগাছের আশেপাশে রয়েছে জনবসতি এবং কৃষিজমি। অন্য সব বটগাছের মত এই গাছের শেকড়ও সুযোগ পেলেই মাটির ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের জমিতে। অনেক সময়ে পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিতেও শক্তিশালী হানা দেয় গাছটির শেকড়!  মাটির নীচে বট গাছের মোটা শেকড় থাকলে চাষবাসের অসুবিধা হয়। ফলে সেই শেকড় কেটে ফেলাই বিধেয়। কিন্তু সেখানকার লোকজন কখনই এই গাছের শেকড় কাটেনা। কারণ যারাই নাকি কেটেছে এর শেকড় সে অথবা তাঁর নিকটতম আত্মীয় ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে অথবা আত্মহত্যা করেছে তাদের কেউ।

ঐ গ্রামের একজন বয়স্ক লোক অনিল চৌহানকে এই গাছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, সে তাঁর জীবনে এমন অনেক উদাহরণ দেখেছে যারা এই গাছের শেকড় কাটার কিছুদিনের মধ্যেই অস্বাভাবিকভাবে মারা গেছে, আত্মহত্যা করেছে অথবা তাঁর নিকট কোন আত্মীয় হঠাৎ করেই মারা গেছে। তাঁর যৌবনকালে এক কৃষকের কথা মনে আছে। যার জমিতেও এই গাছের শেকড় আটকে গিয়েছিল। ফলে সে এর একটি শেকড় কেটে ফেলে।শেকড় কাটার সাতদিন পরেই সে কলেরা হয়ে মারা যায়।

এছাড়া মাত্র বছর দশেক আগেও এক যুবক প্রচলিত এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে এর একটি শেকড় কাটে। কিন্তু তার ঠিক দশদিন পরে যুবকের স্ত্রী আত্মহত্যা করে! এসব বিভিন্ন ঘটনার কারণে এই গাছের শেকড় কেউ কাটে না যতই ক্ষতি হোক। প্রয়োজনে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

আরেকদিকে চরোটি খেড়ির বাসিন্দাদের কাছে গাছটি শুধুমাত্র যে ভয়ের সামগ্রী তা নয়, বরং তাঁরা শ্রদ্ধাও করেন এই বটগাছটিকে। কারণ তাঁদের বিশ্বাস, এই গাছে নাকি বৃক্ষদেবতার অধিষ্ঠান। যার জন্যই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বটগাছটি ! গাছটিকে কেন্দ্র করে পূজার্চনাও লেগে থাকে। বিভিন্ন কারণে তাদের মনে বৃদ্ধি পেয়েছে এই গাছের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য। মানুষের কাছে ভয় এবং ভক্তির অদ্ভূত সংমিশ্রণ প্রাচীন বটগাছকে ঘিরে।

স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিজগতকে রহস্য দিয়ে ঘিরে রেখেছেন, সেজন্যই কিছু কিছু রহস্য ভেদ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার মানুষের পক্ষে। তবে এর সত্যতা সম্পর্কে এখনও অনেকেই সুনিশ্চিত না। দেখা যাক ভবিষ্যতে হয়ত জানবো।

তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট

ছবিঃ 
https://twitter.com/Devinder_Sharma/status/922062347816067072

https://www.istockphoto.com/photos/banyan-tree?excludenudity=true&sort=mostpopular&mediatype=photography&phrase=banyan%20tree