ইংরেজি বছরের মাসগুলোর নাম এলো যেভাবে

বছরের বারটি মাসের নামগুলোর উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীন রোমান থেকে । নুমা পম্পিলিয়াস সপ্তম শতাব্দীতে প্রথম “দেওয়ালপঞ্জিকা” বা “ক্যালেন্ডার” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেটি পুরানো ক্যালেন্ডার থেকে সংশোধন করা হয়েছিল । পুরানো ক্যালেন্ডারটিতে দশ মাসের উল্লেখ ছিল , নুমা পরবর্তীতে “জানুরিয়াস”ও “ফেব্রুয়ারিয়াস” নামের দুটি মাসের নাম তাতে যোগ করেন । পরবর্তীতে ,৪৬ শতাব্দীতে জুলিয়াস সিজার ক্যালেন্ডার পরিবর্তিত করে তা “ ৩৬৫ ও ১/৪ দিন” নামেতা গৃহীত করে । ১৫৮২ পর্যন্ত এই প্রভাব বিরাজমান থাকে । পরবর্তী সময়ে , ধর্ম যাজক জিগরি তা থেকে “ ১১ দিন “ বাতিল করেন এবং নতুন ভাবে “ লিপ ইয়ার “ এর প্রথা চালু করেন ।

আমরা বর্তমানে “ গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিকা “ ব্যবহার করছি । প্রত্যেকটি মাসের উৎপত্তির পেছনে রয়েছে কিছু ইতিহাস । সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক তার এক ঝলক।

জানুয়ারি

বছরের শুরুটা হয় জানুয়ারি মাস দিয়ে । এটি ইংরেজি বছরের প্রথম ও শীতলতম একটি মাস । রোমান দেবতা “ জানাস” এর নাম থেকে “ জানুয়ারি “ শব্দটির উৎপত্তি । রোমানরা বিশ্বাস করতেন এই দেবতার দুটি মুখ ছিল যার কারণে তিনি একই সময়ে সামনে ও পেছনে উভয় দিকে তাকাতে পারতেন। জানুরারি মাসটিও অতীত , ভবিষ্যৎ দুটিরই ইঙ্গিত করে ।শুরুতে এই মাসটি ছিল ২৯ দিনের । জুলিয়াস পরবর্তীতে তা ৩১ দিনে রুপান্তরিত করে ।

ফেব্রুয়ারী

রোমান দেবতা “ফেব্রুয়াস” ছিলেন “মৃত্যু ও বাতাসের” দেবতা । তার নামানুসারে এই মাসটির নামকরন করা হয় । বস্তুত , এই মাসটি ছিল ২৮ দিনের । নুমা তা ২৩- ২৪ দিনের মাসে পরিবর্তিত করলে জুলিয়াস আবার তা ২৮ দিনে স্থির রাখে এবং চার বছর পর পর এই মাসের সাথে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করেন । এখন আমরা ২৮ দিনের ফেরুয়ারি মাস দেখতে অভ্যস্ত এবং লিপ ইয়ার হলে তা ২৯ দিন ।

মার্চ

“মার্চ “ মাসটির নামকরণ হয়েছে “ মার্স “ থেকে , রোমানদের যুদ্ধের দেবতা । মার্চ বসন্তের প্রথম মাস ও রোমান বছরেরও প্রথম মাস । প্রাচীন রোমান পরবর্তীতে জানুয়ারিকে বছরের প্রথম হিসেবে ঘোষণা করে ও মার্চ কে তৃতীয় ।

এপ্রিল

প্রাচীন রোমান ক্যালেন্ডার অনুসারে এপ্রিল ছিল বছরের দ্বিতীয় মাস । যখন থেকে রোমানরা জানুয়ারি মাস দিয়ে বছর শুরু করেছে তখন থেকে এপ্রিল চতুর্থ হিসেবে মানা হতো । তাদের মতানুসারে “ এপ্রিল “ এই নামটি এসেছে “ আপ্রদিতের “ নাম থেকে যিনি ছিলেন “প্রেমের “ দেবতা , যার মানের অর্থ ছিল “ খুলে দেখা “ । নুমা এপ্রিল মাসকে ২৯ দিন হিসেবে পরিবর্তিত করলে জুলিয়াস তা আবার ৩০ দিনে নিয়ে আসেন ।

মে

রোমান দেবী “ মায়া” ছিলেন “বসন্ত , সম্মান ও নিষ্ঠার “ দেবী । তার নামানুসারে এই মাসটির নামকরণ । প্রাচীন রোমান ক্যালেন্ডার অনুসারে মে ছিল বছরের তৃতীয় মাস পরবর্তীতে তা পঞ্চম মাস হিসেবে বিবেচিত হয় ।

জুন

রোমান ক্যালেন্ডারে জুন ছিল ২৯ দিনের চতুর্থ মাস । ৪৬ শতাব্দীতে জুলিয়াস তা ৩০ দিনে রুপান্তর করে । রোমান মন্দিরের প্রধান দেবী “ জুনও “ কে সম্মান প্রদর্শনে এই মাসের নাম “ জুন” রাখা হয় । তাকে “ বিবাহ- সুখ “ সৃষ্টিকারী দেবী হিসেবে মানা হতো ।

জুলাই

প্রকৃতপক্ষে , এই মাসটির নাম ছিল “কুইনটাইলস “ যা পঞ্চম মাস হিসেবে বিবেচিত হতো । এই মাসটিতে জুলিয়াস সিজার জন্ম গ্রহন করে তাই তার নামানুসারে এই মাসটির নামকরণ করা হয়।

আগষ্ট

বছরের অষ্টম মাস যার নাম ছিল “সেক্সটাইলিস” যার অর্থ ছিল ষষ্ঠ । জুলিয়াস সিজারের পদক্ষেপ অনুসারে , সম্রাট আগাস্টাস তার নামানুসারে এই মাসটির নামকরণ করেন । তাছাড়া তার জীবনের অনেক ভাল ঘটনা গুলো এই মাসে ঘটেছিল । নুমা ২৯ দিনে পরিবর্তিত করলেও জুলিয়াস পুনরায় টা ৩১ দিনে রুপান্তর করেন ।

সেপ্টেম্বর

এই শব্দের উৎপত্তি “ সেপ্টেম “ থেকে যার অর্থ ৭ । নুমা এটিকে ২৯ দিনের সপ্তম মাস হিসেবে গণনা করতেন । জুলিয়াস তা ৩০ দিনের নবম মাসে রুপান্তর করে ।

অক্টোবর

সম্রাট অগাস্টাসের সময় এটি ৩১ দিনের অষ্টম মাস ছিল এখন যা বছরের ১০ম মাস।

নভেম্বর

রোমান সভা এই মাসটির নামকরণ করে টিবেরিয়াস সিজারের নামানুসারে ।সে সময় এই মাসটিতে ২৯ দিন গণনা করা হতো। পরে ৩০ দিন আবার ৩১।

ডিসেম্বর

৪৬ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত ডিসেম্বর ছিল বছরের ১০ মাস যাতে ২৯ দিন ছিল । জুলিয়াস পরবর্তীতে তা ৩১ দিন হিসেবে গণনা শুরু করেন