প্রজেক্ট গ্রিন: ঘরের বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য রাখুন অক্সিজেন সমৃদ্ধ গাছ

TREE.pngপ্রকৃতির এক পরম বন্ধু হলো বৃক্ষ বা গাছ। এই বসুন্ধরাকে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে এবং মানব সভ্যতার ক্রমবর্ধমান বিকাশের পথে গাছের ভূমিকা এক কথায় অনস্বীকার্য। যান্ত্রিক সভ্যতার প্রতি তীব্র আকর্ষণের কারনে আমরা গাছের এই সৃষ্টিশীলতাকে দিন দিন অস্বীকার করছি। আর এর মাধ্যমে পরিবেশকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি। অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে । পরিবেশে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘরের বাতাসও এখন আর নিরাপদ নেই। এক গবেষণায় দেখা যায়, ঘরের ভেতরের বাতাস বাইরের বাতাসের তুলনায় ২ থেকে ৫ গুণ বেশি দূষিত হয়ে থাকে। থেকে ৫ গুণ বেশি দূষিত হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) এর মতে, বিশ্বে ৩ শতাংশ রোগ ঘরের দূষিত বাতাসের কারণে হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত ঘরের বাতাস আর পরিবেশকে পরিষ্কার এবং দূষণমুক্ত রাখা। প্রকৃতিতে এমন কিছু গাছ রয়েছে, যা ঘরে রাখলে শুধুমাত্র অক্সিজেনই পাবেন না, সঙ্গে ঘরের মধ্যে থাকা দূষিত বাতাসও পরিষ্কার করার কাজ করবে। সেরকম কিছু গাছের সন্ধান দেব আজ আপনাদের-

১. অ্যালোভেরা:

বাংলায় এর নাম ঘৃতকুমারি। এই গাছের রস ত্বক ও চুলের পরিচর্যায় কাজে লাগে। ঘরের ভেতরের বাতাসকে পরিষ্কার রাখতে এবং অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এর তুলনা নেই। ঘরের কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফর্মালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ শোষণ করে বাতাসকে পরিষ্কার করে দূষণ মুক্ত রাখে।  মাত্র একটি অ্যালোভেরা গাছ  ৯টি বায়োলজিকাল এয়ার পিউরিফায়ারের সমান কাজ করে।

২. এরিকা পাম:

প্রতি মানুষ পিছু চারটে মানুষের মতো উচ্চতার এরিকা পাম থাকলে বাড়ির পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়ে যেত। এই গাছ আবহাওয়াকে ঠান্ডা রাখেতে সাহায্য করে। তবে এই গাছ রোদ ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই সপ্তাহে একবার অন্তত এই গাছ রোদে রাখতেই হবে।

৩. দ্রাকাএনা

প্রায় ৪০ ধরনের দ্রাকাএনা গাছ রয়েছে। যেগুলো খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। এই গাছ ঘরের বাতাস থাক বেন্জেন, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন দূর করে। তবে এই গাছ ঘরের কুকুর বা বিড়ালের জন্য বিষাক্ত।

৪. ড্রাগন টি

ড্রাগন টি খুব সহজে যত্ন এবং পরিচর্চা করা যায়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে না। বিভিন্ন তাপমাত্রায় বেড়ে উঠার আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে এই গাছটির।  আলোর প্রয়োজন থাকলেও সূর্যের আলোর প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন নিয়মিত পানি দিলেই এই গাছ দ্রুত বেড়ে উঠে।

৫. মানি প্লান্ট :

অক্সিজেন তৈরির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ভেতরের বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র জলেও এই গাছ বড় হতে পারে। বায়ু দূষণকারী গ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে কাঠের আসবাবপত্রে যে আঠা ব্যবহৃত হয় তা থেকে তৈরি দূষণ এই গাছ শোষণ করে নেয়। তবে এই গাছের পাতা বিষাক্ত।

৬. পথোস:
এই গাছটির পাতা দেখতে অনেকটা হৃৎপিণ্ডের মতো। কম আলো এবং ঠান্ডা সহ্য করার অসাধারণ ক্ষমতা আছে এই গাছটির। পথোস ফরমালডিহাইড এবং কার্বনমনোক্সাইড থেকে বাতাসকে মুক্ত করে। তাই নিশ্চিন্তে ঘরে রাখতেই পারেন ঝোপযুক্ত গাছটি।

৭. ফিগ

সিগারেটের কারনে যে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় তার বিরুদ্ধে কাজ করার এক আত্যাশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে এই গাছটির। কাজেই যারা ঘরে ধূমপান করেন, তাদের ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত করার জন্য এই গাছটি রাখতে পারেন। বেশ কার্যকর ফল দিবে নি:সন্দেহে বলা যায়। এটি কার্বন ড্রাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ দূর করে থাকে।

৮. পিস লিলি

পিস লিলি আকারে ছোট কিন্তু বাতাস পরিষ্কার করার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা এর রয়েছে। পিস লিলি  বাতাসে উপস্থিত রাসায়নিক এবং টক্সিন নিমেষের মধ্যে শুষে নিতে পারে। খুব সহজেই জন্মে এই গাছ, গ্রীষ্মকালে ফুলও হয়। এই গাছ ছায়াযুক্ত স্থান ও কম ভেজা মাটিতে রাখল দ্রুতবৃদ্ধি পায়। পিস লিলি বাতাসে মিশে থাকা ট্রাইক্লোরোথাইলিন, অ্যামোনিয়া, বেন্জেন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন  এবং ফর্মালডিহাইড জাতীয় টক্সিন শুষে ঘরের বাতাসকে দ্রুতই পরিষ্কার করে দেয়।

৯. স্পাইডার প্লান্ট

সরু সরু পাতার এই গাছ খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে উঠে। স্পাইডার প্লান্ট বিষাক্ত গ্যাস শোষন করে নিতে পারে।  এই গাছ প্রচুর পরিমানে কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করতে পারে বলে রান্না ঘরে এই গাছ রাখলে ভালো। একটা স্পাইডার প্লান্ট প্রায় ২০০ বর্গ মিটার জায়গার বাতাস পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারে। আপনি চাইলেই খুব সহজে অল্প পরিশ্রম, অল্প খরচে এবং পরিচর্চায় আপনার ঘরে টবে এই গাছ লাগাতে পারেন। মোটামুটি উজ্জ্বল ও সরাসরি আলোর বিপরীতে এই গাছ ভালো বাড়তে পারে।

১০. চাইনিজ এভারগ্রিন
এই গাছ কম আলো, কম জলেও বাঁচে বলে বাড়ির ভেতরে যেখানে সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছায় না, সেখানেও বেঁচে থাকে এই গাছ। এই গাছকে এয়ার পিউরিফায়ার নামেও ডাকা হয়।

১১. স্নেক প্ল্যান্ট

ঘরে জমে থাকা টক্সিন পরিষ্কার বা অক্সিজেন সরবরাহ তো করেই। এর থেকেও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হলো রাতেও এরা ঘরের মধ্যে অক্সিজেন  ছাড়ে। বেডরুমে রাখার জন্য সব থেকে আদর্শ গাছ এটা। অফিস কিংবা রেস্টুরেন্টে এই গাছটি প্রতিনিয়ত দেখা যায়। এ গাছ সহজে মরে না। বিশেষ আলো বা জলেরও প্রয়োজন পড়ে না। মাঝে মাঝে পানি দিলেই চলে। শুকনা স্থানে এই গাছ হয়ে থাকে। অল্প আলোতে ও বেঁচে থাকতে পারে। ঘরের ভেতরের বাতাসে থাকা বেন্জেন, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন নামক বিষক্ত রাসায়নিক গ্যাসকে দূর করে স্নেক প্ল্যান্ট।

১২. গার্ডেন মাম

গবেষণায় দেখা যায় যে, গার্ডেন মাম বাতাস পরিষ্কার করার জন্য অন্যতম সেরা একটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেন্জেন, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন দূর করে থাকে। জনপ্রিয় এই গাছটি সল্প খরচেই ও পরিচর্চায় ঘরের টবে লাগানো যায়।

১৩.  বস্টন ফার্ন

ফ্রিলের মতো এই গাছ বাড়িকে ঠান্ডা রাখেতে সাহায্য করে। বেঞ্জিন, জাইলিন ও ফর্মালডিহাইডের মতো বায়ু দূষণকারী গ্যাস শোষণ করার সঙ্গে সঙ্গে এই গাছ প্রচুর জলীয় বাষ্প বাতাসে ছাড়ে। তাই গরমকালে এই গাছ পরিবেশকে ঠান্ডা রাখে। বস্টন ফার্ন ঠান্ডা ভেজা আদ্র স্থানে জন্মাতে পারে। এই গাছের জন্য সূর্যালোকের প্রয়োজন নেই। এই ছোট্ট গাছটির উপযুক্ত জন্ম স্থান হছে আমাদের বাথরুম।

১৪.  ফিকাস

আকৃতি ও গঠনের দিক থেকে ফিকাস গাছটি অনেকেরই পছন্দ। ঘরের বাতাস দ্রৃত এবং খুব ভালো পরিষ্কার করতে পারে এই গাছ। বিশেষত, বাতাসের টক্সিন শুষে নেয় এবং টাটকা বাতাসের জোগান দিতে পারে এই গাছ। কোন পাত্রে এই গাছ লাগানো হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে এর বৃদ্ধি। এরা সাধারণত ২ থেকে ৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছের বৃদ্ধির জন্য খুব একটা আলো বা জলের প্রয়োজন হয় না। তবে ঘরে যদি ছোট বাচ্চা বা পোষ্য থাকে, তাদের থেকে গাছটিকে েএকটু দূরে রাখতে হবে।  কারণ এ গাছের পাতা শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
১৫. ইংলিশ আইভি

এই গাছের পাতা বিষাক্ত কিন্তু আর সব হাউস প্লান্টের মতো এই গাছেও বেঞ্জিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিনের মতো বায়ু দূষণকারী গ্যাস শোষণ করার সংঙ্গে সংঙ্গে সিন্থেটিক মেটেরিয়াল থেকে যে দূষণ ছড়ায় তাও কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন রঙের ইংলিশ আইভি বাজারে পাওয়া যায়। শীতকালে এই গাছ দ্রুত বাড়ে।

১৬. ব্যাম্বো প্লাম:

ঝোপযুক্ত গাছটি ঘরের মধ্যে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।  ব্যাম্বো প্ল্যাম টিকিয়ে রাখতে বেশি পরিচর্চার প্রয়োজন পড়ে না। কয়েকদিন পর পর কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে গাছটি রাখতে হয়। এত গাছ খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে। এই গাছ ৮ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষাক্ত দূষণ মুক্ত করে ঘরের পরিবেশকে করে তোলে বসবাসের উপযোগী।

১৭. প্যালেনোপসিস অর্কিড
এটিও এক ধরনের অর্কিড। এটি খুব জনপ্রিয় গাছ নয়। এই গাছ পরিচর্চায় একটু বেশিই যত্নের প্রয়োজন হয়।  গাছটি বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখতে খুব সাহায্য করে।