কথামালা – ম্যারিলিন মনরো

wallpaper-monroe-marilyn-official-imagesছোট্ট নরমা জীন ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে কাঁপছে। অদ্ভুত একজন মহিলা তাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইছে, কিন্তু তার মা প্রাণপণ বাঁধা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সেই অদ্ভুত মহিলা চলে গেলো, কিন্তু ফিরে এলো কিছুদিন পর আবারও। সাত বছর বয়সী, বাদামী চুলের ছোট্ট নরমা তখনো জানতো না এই অদ্ভুত মহিলাই তার আসল মা গ্ল্যাডি। সে আসলে গ্ল্যাডির মেয়ে, মিসেস অ্যাইডা তার পালক মা।

এরপর শুরু হলো নরমার যাযাবর, ছন্নছাড়া জীবন। কখনো এখানে কখনো ওইখানে। পালক বিভিন্ন পরিবার, বিভিন্ন পেশা, একসময় একাধিক স্বামী। ২৯ বছর পর যখন তার মৃত্যু সংবাদ পুরো পৃথিবীর সিনেমাপ্রেমী মানুষকে স্তম্ভিত করে দিলো, ততদিনে সে আর নরমা জীন নেই – হয়ে গেছে ম্যারিলিন মনরো; যার উপর তার মাকে নিয়া কথা না বলার কঠিন নির্দেশ ছিলো। ম্যারিলিন মনরো – হলিউডে বেঁচে থাকার জন্য যাকে নিজের চুলের রং থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছুই বদলে ফেলতে হয়েছিলো।

আসলে কেমন ছিলো ধোঁয়াটে জীবন আর মৃত্যুর নায়িকা ম্যারিলিন মনরো? সত্যিই কি তিনি শুধু একজন “Dumb Blonde” ছিলেন? কিন্তু তাঁর আসল চুলের রং তো সোনালী ছিলো না। তাঁর অবসর কাটানোর প্রিয় সঙ্গী ছিলো বই, অপছন্দ ছিলো দামী পোশাক আর প্রসাধন সামগ্রী। তাঁর ভেতরের নরমা জীনকে খোঁজার জন্যই  বিভিন্ন সময় বলা উদ্ধৃতিগুলো নিয়ে আজকের কথামালা, ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ করা।

ম্যারিলিন মনরোর বেশীরভাগ উদ্ধৃতিতে বারবার কোন না কোনভাবে মেয়েদের কথা, তাঁর নিজের কথা এসেছে। অগোছালো, সুন্দর এসব কথার ভেতরে নায়িকা ম্যারিলিন মনরো না, বরং নরমা জীনকেই বেশী খুঁজে পাওয়া যায়।

কথামালা-১

“নিজের সাফল্যের কারনে অনেক মানুষের ঘৃণা পেতে হয়। কিন্তু এমন না হলে কতো ভালোই না হতো। আশেপাশের মানুষের চোখে ঈর্ষার আগুন না থাকলে সাফল্যলাভের আনন্দ অনেক বেড়ে যায়।”

কথামালা-২

“আমার জন্য সবচেয়ে দারুণ সময় হচ্ছে ঘুমানোর সময়টা। কারন তখন নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখা যায়।”

কথামালা-৩

একসময় খ্যাতি চলে যাবে, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমি বিখ্যাতই থাকবো। যদি কখনো আমার খ্যাতি চলে যায়, তাহলে আমি বুঝে যাবো যে খ্যাতি আসলে সবসময়ই অনিশ্চিত।

কথামালা-৪

মানুষ চন্দ্রজয়ের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু মানুষের হৃদয়জয়ের দিকে সম্ভবত কারো আগ্রহ নেই।

কথামালা-৫

বিখ্যাত হওয়া আসলে আমার একটা অভিজ্ঞতা, আমি নিজে এই খ্যাতির ভেতরে জীবনযাপন করি না।

কথামালা-৬

সবসময় মনে রেখো, তোমার মধ্যে কোন কমতি নেই। নিজেকে নিয়ে লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই।

কথামালা-৭

কারো সাথে থেকে অসুখী হওয়ার চেয়ে একা থেকে কষ্ট পাওয়া ভালো।

কথামালা-৮

আমি যখন একা থাকি, তখন নিজেকে ঘুছিয়ে নিই।

কথামালা-৯

দেখতে যেমনই হোক না কেন, সব ছোট্ট মেয়েকে বলা উচিত যে সে সুন্দর।

কথামালা-১০

নিজের জীবনকে যেভাবে সাজাবে, তোমার জীবন ঠিক তেমনি হবে। তবে এটা ঠিক যে যত চেষ্টাই করো না কেন, জীবনে একটু এলোমেলো ভাব থাকবেই। এরমধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যপার হচ্ছে, কীভাবে জীবনকে এলোমেলো করবে সেটা পুরোপুরি তোমার হাতে। আর যাই হোক না কেন, মেয়েরাই তোমার বন্ধু হবে। সবাই যে চিরদিন থাকবে তা না – কেউ আসবে, কেউ আবার চলে যাবে। এই যাওয়া-আসার মধ্যেই কয়েকজনকে সবসময় পাবে যারা কখনো তোমাকে ছেড়ে যায় নি – আর তারাই হল তোমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তাই এই বন্ধুদের কখনো যেতে দিও না।

তোমার বোনরাও কিন্তু সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে পারে, পুরো পৃথিবীতে তাদের জুড়ি মেলা ভার।

আর জীবনে প্রেমিকদের আসাযাওয়া ও চলতে থাকে। যদিও আমার বলতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু তাদের বেশীরভাগই তোমার মন ভেঙ্গে দিতে আসবে। তাই বলে কারও পথ চলা থেমে থাকে না, তুমি থমকে দাঁড়ালে জীবনসঙ্গীকে কীভাবে খুঁজে পাবে? তোমাকে পরিপূর্ণ করবে যে মানুষ, এগিয়ে না গেলে তাকে তো পাবে না। একবার বিফল হওয়ার মানে এই নয় যে আর কখনো সফল হতে পারবে না।

তাই একদম হাল ছেড়ো না, সবসময় লেগে থাকো আর নিজের উপর পূর্ণ আস্থা রাখো – বিশ্বাস রাখো। তুমি তোমার উপর ভরসা না করলে আর কেই বা তা করবে? তাই মাথা উঁচু করো আরেকটু, আত্মবিশ্বাসী হও, খুশী থাকো। জীবনটা অনেক বেশী সুন্দর আর সুখে থাকার উপকরন চারপাশেই ছড়ানো আছে।