নকল ৭ টি তাজমহল সম্পর্কে জানা-অজানা!

taj-0অনন্ত ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে খ্যাত তাজমহল আজও দাঁড়িয়ে আছে। মমতাজ মহলের প্রতি শাহজাহানের ভালবাসার স্মৃতিতে নির্মিত প্রাসাদটি এখনও হাজার হাজার পর্যটকের কাছে খুবই আকর্ষনীয়। সাদা মার্বেল পাথরে যমুনা নদীর তীরে নির্মিত তাজমহল শুধুমাত্র ভালবাসার নিদর্শনই নয় তা আজ ভারতের জন্য অহংকারও বটে। নির্মাণকৌশল ও স্থাপত্যশৈলীতে মুগ্ধ করার মত স্থাপত্যটির বিশ্বের সবথেকে বেশি ফটোগ্রাফী করা হয়েছে। মনোমুগ্ধকর এই তাজমহলটি অনেক দেশেই রেপ্লিকা বা কপি বা নকল করা হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছে অনুরুপ তাজমহল নির্মাণের। বহুদেশের মধ্যে আমাদের দেশেও তৈরি করা হয়েছে একটি তাজমহল। আজ জানব এমনই কয়েকটি নকল তাজমহল সম্পর্কে জানা-অজানা কিছু তথ্য।

১। মিনি তাজমহল

একজন অবসর প্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার তার স্ত্রীর ভালবাসার স্মৃতি লালন করতে তৈরি করেছেন একটি ছোট তাজমহল। পোস্ট মাস্টারের নাম হচ্ছে ফাইজুল হাসান কাদেরী। ভারতের উত্তর প্রদেশের বুলন্দ শহরে তিনি এটি নির্মাণ করেন। জানা যায়, ফায়জুল হাসান এর প্রিয়তম স্ত্রী ২০১১ সালে গলায় ক্যান্সার হয়ে মৃত্যুৃবরণ করেন। ৮০ বছর বয়ষ্ক ফায়জুল তার জীবনের সকল সঞ্চিত অর্থ দিয়ে এই স্থাপত্যটি নির্মাণ করেছেন। সঞ্চিত অর্থের পাশাপাশি তাজমহলের মত মার্বেল পাথর ও সবুজ আচ্ছাদনে আবৃত করতে তার আরো অধিক টাকা খরচ করতে হবে।

২। বাংলাদেশের তাজমহল

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ১০ মাইল পূর্বে সোনারগাঁওয়ে গিয়ে দেখে আসতে পারবেন বাংলার তাজমহল। ভারতের আগ্রায় গিয়ে আসল তাজমহল দেখার সামর্থ নেই যাদের তাদের কথা বিবেচনা করেই ৫ বছরে ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে তাজমহলটি নির্মাণ করেন চলচিত্র নির্মাতা আহসানুল্লাহ মনি। মনি ১৯৮০ সালে ভারতের তাজমহলটি দেখতে গেলে অনুরূপ একটি মহল তৈরির কথা ভাবতে থাকেন। অতঃপর মনোবাসনা পূরণের জন্য ২০০৮ সালে তাজমহলটি নির্মাণ করেন।

বাংলার তাজমহল দেখার পর এর সৌন্দর্য নিয়ে সমালোচকরা যাই বলুক, ভারতীয় দূতাবাস কিন্তু ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেছিল মনিকে ৩০০ বছরের অধিক পুরনো তাজমহলের মেধাস্বত্ব লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে!

৩। যুক্তরাজ্যের তাজমহল

১৭৮৭ সালে রয়েল প্যাভিলিয়ন এর নির্মাণ শুরু হয়। একে ব্রিজটন প্যাভিলিয়ন হিসেবেও ডাকা হয়। ব্রিটিশদের এই স্থাপনাটি তাজমহলের মত হওয়ায় অনেক বিখ্যাত হয়েছে। এটি তৈরিতে ইন্দো-সারাসেনিট স্টাইল অনুসরণ করা হয়েছে। যে স্টাইলটি ভারতেই বর্তমান আছে। প্রথম বিশ^যুদ্ধের সময় ডিসেম্বর, ১৯১৪ থেকে জানুয়ারী, ২০১৬ পর্যন্ত এটি মিলিটারী হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন ব্যবহৃত হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। বর্তমানে বাৎসরিক প্রায় ৪ লক্ষ দর্শনার্থী এটি পরিদর্শন করে!

৪। তাজ আরাবিয়া

দুবাইয়ে নির্মিত হচ্ছে তাজমহলের চেয়ে ৪ গুণ বৃহত্তম তাজমহল। তাজ আরাবিয়া নামক এই মহলটি আমিরাত রোডের ফ্যালকন সিটির ৪ কোটি ১০ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে।

তাজমহলের আদলে তৈরি এই ভবনটিতে ৩৫০ কক্ষবিশিষ্ট ২০ তলা কাচনির্মিত হোটেল থাকবে। আশাকরা হচ্ছে, তাজ আরাবিয়া লোকজনকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। এতে ২ লাখ ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে বাগান করা হবে। রেস্টুরেন্ট, নাইটক্লাব সহ এই মহলটিতে ২ হাজার আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা করা হবে। ভবনটি ২০১৭ সালে উন্মুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

৫। চীনের তাজমহল

চীনারা নকল বা রেপ্লিকা করতে পারে না এমনকিছু কল্পনাই করা যায় না। সুতরাং তারা তাজমহলের রেপ্লিকা করবে না কেন? তাই চীনারা নিজেদের দেশে তাজমহলও তৈরি করেছে। চীনের তাজমহলটি চীনের সেনজেনের একটি পার্কে তৈরি করা হয়েছে। সেনজেনকে চীনের জানালা বলা হয়। সেনজেনে নির্মিত পার্কটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক নির্দশনগুলোর রেপ্লিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে। যদি কখনও তাজমহলের পাশে আইফেল টাওয়ার কিংবা পিসার হেলানো টাওয়ার চোখে পড়ে তবে অবাক হবেন না কিন্তু! কেন বলছি জানেন? চীন আইফেল টাওয়ারেরও রেপ্লিকা তৈরি করেছে।

৬। ডেকানের তাজ বা বিবির মাকবারা

যদি আপনি ভেবে থাকেন মুঘল বংশের মাঝে শুধু শাহজাহানই ভালবেসে তাজমহল গড়েছিল তাহলে এই তথ্যটি জেনে হবাক হবেন। অবাক করা তথ্যটি হচ্ছে শাহজাহানের পরবর্তী বংশধরেরাও প্রথা হিসেবে অনুরূপ স্থাপনা নির্মাণ করতেন! শাহজাহানের নাতি এবং আওরঙ্গজেবের পুত্র আযমশাহ তার মা দিলরাস বানু বেগমের স্মৃতির উদ্দেশ্য নির্মাণ করেছেন বিবির মাকবারা। যেটি মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গজেবে অবস্থিত। বিভিন্ন দিক থেকে এই মহলটি আসল তাজমহলের মতই দেখায়।

৭। তাজমহল হাউসবোট

উদ্যোক্তা বিল হারল্যান্ড ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি ভারতে আসেন। তিনি তাজমহল দেখে অনুরূপ আরেকটি নির্মাণের জন্য মনোনিবেশ করেন। পরে দেশে ফিরে গিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সোসালিতোতে তাজমহল হাউসবোট নির্মাণ করেন। এটি দেখলে মনে হবে তাজমহল নৌকায় ভাসছে! এই মহলটি নির্মাণে তৎকালীন ব্যয় হয়েছিল ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণ তালিকায় যতগুলো নামই থাক তার প্রথম সারিতে থাকছে তাজমহল। স্থাপত্যশৈলী, চকচকে মার্বেল পাথর, হাজার হাজার মূল্যবান পাথর, বাগান, ইসলামিক নির্মাণ আদলে তৈরি তাজমহল দেখে আজও দর্শনার্থীরা হতভম্ব হয়ে যায়। তাজমহলের সৌন্দর্যময়তা কিংবা ভালবাসায় বিভিন্ন দেশ ও স্থানে নির্মিত হচ্ছে আরো তাজমহল। বিভিন্ন সময়ে সেই তথ্যগুলো পত্র-পত্রিকায় এসেছে। সেগুলোই আজ একত্রিত করে বাংলাহাব.নেট এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম। আশা করি সবারই ভাল লাগবে লেখাটি।

লিখেছেন ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম। সৈনিক ক্লাব, চেয়ারম্যান বাড়ী, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।