দেখতে পারেন ভিন্ন স্বাদের কিছু দক্ষিণ ভারতীয় রোমান্টিক চলচ্চিত্র

south indian moviesরোমান্টিক মুভির জন্য দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্ববিখ্যাত। অসাধারণ সব মাস্টারপিসের জন্ম দিয়েছে তারা। তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের উপমহাদেশও এখন সেপথে হাঁটছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের মালায়াম চলচিত্রগুলো তো বিশ্বে এখন একটা নিজস্ব ধারা তৈরি করে নিয়েছে। আজ আপনাদেরকে কিছু চমৎকার দক্ষিণ ভারতীয় চলচিত্রের কথা বলব যেগুলো রোমান্টিসিজমের সংজ্ঞা আপনাকে নতুন করে চিনাবে।

১। Premam (2015):

মালায়াম শব্দ ‘প্রেমাম’ মানে হচ্ছে ‘ভালবাসা’। মানুষের আবেগ লাগামহীন। সে যেকোন বয়সে যেকারো প্রেমে পড়তে পারে। এই চলচিত্রে মূল চরিত্রে অভিনয় করা জর্জের (Nivin Pauly) জীবনের তিনটি বিশেষ সময়ে তিন নারীর প্রেমে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তবে এই প্রেম হাল-জামানার শরীর সর্বস্ব বলিউডী প্রেম না। পুরো ছবিটা একটা ছেলের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো। হ্যাঁ, নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বৈকি, তবে এর পরতে পরতে মনের মণিকোঠায় লুকিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা প্রেম ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। মালার চরিত্রে অভিনয় করা Sai Pallavi-র দূর্দান্ত হাসি আর সেলিন চরিত্রের Madonna Sebastian-এর অভিনয় দর্শক অনেকদিন মনে রাখবে। ছবিটির গান, শ্যুটিং লোকেশন, অভিনয় সবকিছুই অসাধারণ। IMDb তে ৮.৪/১০ পাওয়া চলচিত্রটি বেশ কয়েকটি ভাষায় রিমেক হওয়ার কথা রয়েছে।

২। Sairat (2016):

বলিউডের মিঃ পারফেক্টশনিষ্ট Amir Khan মারাঠি মুভি  সাইরাত দেখার পর বলেছিলেন- ছবিটি দেখার সময় কোনমতেই কান্না থামিয়ে রাখতে পারিনি। শুধু আমির-ই নন, বলিঊডের শীর্ষস্থানীয় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই সাইরাত নিয়ে নিজেদের উন্মাদনার কথা জানিয়েছেন। মাত্র ৪ কোটি রুপী বাজেটের এই ছবি আয় করেছে সোয়া ১০০ কোটিরও বেশি। কি আছে এই ছবিতে যা পুরো ভারতকে এভাবে কাঁপিয়ে দিল? তা জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে মারাঠি মুভি সাইরাত (ইংরেজিতে Sairat মানে হল Wild)। ছবির গল্প খুব আহামরি কিছু না। দুই টিনএজার পারশা (Akash Thosar) আর আর্চির (Rinku Rajguru)  প্রেমে পড়ার গল্প সাইরাত, প্রেমের টানে ঘর ছাড়ার গল্প। এই ছবির মূল বিশেষত্ব হচ্ছে, ছবিটি দেখার সময় আপনার মনেই হবেনা আপনি কোন মুভি দেখছেন! অভিনয় এতই প্রাণবন্ত যে আপনার মনে হবে বাস্তবে ঘটে চলা ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী আপনি! গানগুলো অসাধারণ, বারবার শুনলেও মন ভরবে না, এমন। IMDb তে সাইরাতের রেটিং ৮.৯/১০ এবং দিন দিন তা আরো বাড়ছেই! সাউথ ইন্ডিয়ান না হলেও মুভিটি সাড়া ফেলেছে সারা বিশ্বেই!

৩। 100 Days of Love (2015):

একটি ভিন্ন স্বাদের রোমান্টিক মুভি ‘ভালবাসার ১০০ দিন’। ভিন্ন স্বাদের বললাম এই জন্য যে, রোমান্স শুরু হতে হতেই মুভি প্রায় শেষ হয়ে যায়! প্রেমিকার সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া, চাকরি চলে যাওয়া সব মিলিয়ে হতাশায় আচ্ছন্ন সিনেমার নায়ক ‘বালান’ (Dulquer Salman)। ঠিক সেই মূহুর্তে নায়িকা শীলার (Nithya Menen) সাথে তার প্রথম দেখা। নিজের জন্য একটা ট্যাক্সি ঠিক করেছিল বালান, কিন্তু সে বসার আগমূহুর্তে শীলা সে ট্যাক্সিতে বসে পড়ে আর তার দিকে তাকিয়ে এক ভুবন ভোলানো হাসি দেয়। আর সেই হাসিতে উধাও তার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট। তার মনে হতে থাকে যেন এই মেয়েটির জন্যই সে তার সারাটা জীবন অপেক্ষা করেছে। কিন্তু শীলা তো হাসি দিয়েই গায়েব, কিন্তু এখন বালানের কি হবে? বন্ধু উমারকে (Sekher Menon) নিয়ে সে নেমে পড়ে শীলাকে খুঁজতে। সঙ্গে ক্লু হিসেবে থাকে শীলার ফেলে যাওয়া ৮০-র দশকের একটা এসএলআর ক্যামেরা। চমৎকার কিছু গান ব্যবহার করা হয়েছে এই সিনেমায়। IMDb তে রেটিং ৬.৪/১০।

৪। Neelakasham Pachakadal Chuvanna Bhoomi (2013):

‘নীলাকাশাম পাচাকাদাল চুভান্না ভূমি’ এর অনুবাদ করলে দাঁড়ায় নীল আকাশ, সবুজ সাগর, লাল পৃথিবী। নাম শুনেই অনুমান করা যায় ছবিটা ভ্রমণ নিয়ে, আসলেও তাই। ছবির শুরুতে দেখা যায় ক্যারালার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করা দুই বন্ধু কাসি (Dulquer Salman) আর সুনি (Sunny Wayne) মোটর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, গন্তব্য অজানা। যাত্রা বিরতির ফাঁকে ফাঁকে কাসির কল্পনায় জানা যায় তাদের এই গন্তব্যহীন যাত্রার কারণ, পথ চলতে চলতেই গন্তব্য ঠিক হয় নাগাল্যান্ড, আসির (Surja Bala) বাড়ি। ক্যারালা থেকে সূদূর নাগাল্যান্ড মোটর বাইকে যাত্রা আর কাসির কল্পনায় তার আর আসির প্রেমকাহিনী, এভাবেই আগাতে থাকে মুভির কাহিনী। প্রেম, পারিবারিক দ্বন্ধ, হিন্দু ধর্মের বিশেষ কুসংষ্কার জাত বিভেদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর ভ্রমণ… সবকিছুর মিশেলে চমৎকার উপভোগ্য সিনেমা এটি। IMDb রেটিং ৭.৬/১০।

৫। Anarkali (2015):

শান্তুনু (Prithviraj Sukumaran) একজন নেভি অফিসার, প্রেমে পড়ে রিয়ার এডমিরাল জাফর ইমামের (Kabir Bedi) মেয়ে নাদিরার (Priyal Gor)। কিন্তু নাদিরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং শান্তুনু এর সুযোগ নিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে নেভি থেকে শান্তুনুকে বহিষ্কার করা হয়। শান্তুনু হারিয়ে যায় নাদিরার জীবন থেকে, কিন্তু নাদিরা তাকে হারাতে দেয় নি। ৫ বছর পর ঠিকই শান্তুনুকে খুঁজে বের করে। সময় গড়িয়ে যায়, কিন্তু জাফর ইমাম সাহবের রাগ কমে না, তিনি শান্তুনুকে তখনো জামাই হিসেবে মেনে নিতে রাজি নন। এদিকে নাদিরাও তার বাবার অনুমতি ছাড়া শান্তুনুকে বিয়ে করবে না। আবার শুরু হয় তাদের অন্তহীন প্রতীক্ষার গল্প। অসম্ভব রোমান্টিক একটা মুভি আনারকলি। কাহিনী খুব স্লো, কিন্তু এক মূহুর্তের জন্যেও বিরক্ত হবেন না আপনি। দৃশ্যায়নের জায়গাগুলো দেখার মত। IMBb তে আনারকলির রেটিং ৭.৬/১০।

লেখকঃ ফরহাদ আহমদ নিলয়