৩ টি সর্বাধিক বিক্রিত ‘মিথ্যা’ বইয়ের সেরা হয়ে ওঠার গল্প

ছবি- লিস্টভার্স
ছবি- লিস্টভার্স

একটি সার্থক বইয়ের সফল হয়ে ওঠার সূত্র কেউ জানে না। এটা কি বর্ণনার বাহুল্য?  অথবা সম্ভবত তার অপ্রতুলতা ? এটা কি সরাসরি বলা সৎ ভাষা, ছোট ছোট বাক্য, বা একটি উদ্ভট কিংবা কল্পনাপ্রসুত গল্পের কাঠামো ? উত্তর আশ্চর্য্যরূপে অধরা রয়ে যায়, যদিও সবাই একমত হবেন যে, কঠোর পরিশ্রমই একটি বই এর সফলতার চাবিকাঠি। প্রায়ই দেখা যায় , একজন দুর্বৃত্ত  লেখক তার আকাশচুম্বি স্বপ্ন এবং গোপন পরিকল্পনা দ্বারা সমালোচক এবং পাঠকদের একইসঙ্গে প্রতারিত করেন. আর কিছু লেখক সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবে বজায় রাখেন। অবশ্যই এই ফিচারে বর্ণিত চতুর সাহিত্যিক এই সততার পর্যায়ে পড়েন না।

১। নেইকেড কেইম দ্য স্ট্রেঞ্জার

১৯৬৯ সালে লং আইল্যান্ড Newsday -এর সাংবাদিকরা *Naked came the stranger* শিরোনামের একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন। সেই সাংবাদিকরা সেসময়ের নিকৃষ্ট মানের এবং অশ্লীল উপন্যাসের জনপ্রিয়তায় বিরক্ত ছিলেন।.সম্পাদক মাইক ম্যাক গ্রেডি, পাঠকের জঘন্য রুচি প্রমাণ করবার জন্য একটি ফাঁকিবাজি রূচিহীন উপন্যাসের প্লট তৈরি করলেন। উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু একটি শহরতলির একজন মহিলার  অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক এবং প্রতিটি অধ্যায়ে বর্ণিত ছিল তার ভিন্ন ভাবে পালিয়ে যাবার ধরণ (সাধারণত প্রতিবার ভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতিটি সময়)। উপন্যাসের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি সাংবাদিকেরা প্রতিটি গল্পের মূল রূপরেখা জানতেন এবং এক এক জন একটি করে অধ্যায় লিখেছিলেন যাতে প্লট ইচ্ছাকৃতভাবে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ে। বস্তুত, জমা পরা খুব ভাল লেখাগুলি অবিলম্বে খারিজ হয়ে যায়। ম্যাকগ্রেডির শ্যালিকা পেনেলোপ অ্যাশ বই এর লেখকের ভূমিকা পালন করেন, “একজন শান্ত লং আইল্যান্ড গৃহিনী যিনি ভাবতেন তিনিও  যে. সুসানের মতন করে লিখতে পারেন”। তিনি এমনকি ফটোগ্রাফারদের জন্য পোজ্ দিলেন এবং প্রকাশকদের সঙ্গে দেখাও করেন। বিশ হাজার কপি বিক্রি করার আগ পর্যন্ত ম্যাক গ্রেডি এবং তার সহকর্মীরা যেকোন ধরণের সন্দেহের বাইরে থাকলেন। যাইহোক ১৯৬৯ সালের শেষ নাগাদ, উপন্যাসটি মোট ১৩ সপ্তাহ নিউ ইয়র্ক টাইমস সর্বাধিক বিক্রিত তালিকায় অতিবাহিত করেছিল। *Naked came the stranger* সারা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উপন্যাস হিসেবে সাফল্য পেয়েছিল।

২। ল’লিবারতিনে

১৯৫০-এর দশকে, জাঁ শেফার্ড একটি গভীর রাতের রেডিও শো এর সঞ্চালক ছিলেন এবং তিনি তাঁর শ্রোতাদের ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিলেন। শেফার্ড তার শ্রোতাদের “নিশি মানব” হিসেবে বর্ণিত করেছিলেন কারণ তারা সবসময় মাঝরাতের ওই অদ্ভুত সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনতেন. শেফার্ডের যারা অনুগামী ছিল না, তাদের নিয়ে ওঁর কোন মাথাব্যথা ছিল না। বিট (beat) আন্দোলন, জ্যাজ শিল্পী, এবং তরুণ সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে শেফার্ড জনপ্রিয় ছিলেন।এমনকি জ্যাক ক্যারোনাক মত ব্যক্তিরাও শেফার্ডের প্রশংসা করতেন।

একদিন শেফার্ড একটি বিশেষ বই এর খোঁজে একটি বইয়ের দোকানে গেলেন এবং খুঁজে না পেয়ে কর্মচারীর সাহায্য চাইলেন। তিনি প্রকাশনার তালিকা ঘেঁটে জানিয়ে দিলেন যে এই নামে কোনও বই প্রকাশই হয়নি। তা সত্ত্বেও শেফার্ডের স্থির বিশ্বাস ছিল বইটির অস্তিত্ব আছে। রাতের অনুগামী শ্রোতাদের সাহায্য নিয়ে, দিনের শ্রোতাদের ওপর একটি উদ্ভট মিডিয়া ধাপ্পাবাজির ছক কষলেন। এইভাবে শেফার্ড তার অনুগামীদের স্থানীয় বইয়ের দোকানে এমন বইয়ের খোঁজ করতে বললেন যার কোনও অস্তিত্ব নেই। জাল শিরোনাম ছিল *ল’লিবারতিনে* আর এই কল্পিত লেখকের নাম ছিল ফ্রেদেরিক আর ইয়ুইন্গ। লেখক সম্পর্কে  অতিরঞ্জিত তথ্য দেয়া ছিল। ইয়ুইন্গ কল্পনানুসারে একজন রয়্যাল নেভির কমান্ডার যিনি আঠারো শতকের এরোটিকা বা আদি রসাত্মক লেখার বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

শ্রোতারা শেফার্ডের কথা শুনলেন এবং দলে দলে ওই বইটির খোঁজ করতে শুরু করল। এমনকি যেই অনুগামীরা দেশের বাইরে যেতেন তারা সেখানেও ওই বইটির খোঁজ করতে লাগল। বিভ্রান্ত বই বিক্রেতারা প্রকাশকদের সাথে যোগাযোগ করতে লাগল এবং লাইব্রেরি গুলি এই রহস্যময় বইটির জন্য অর্ডার দিতে লাগল। ধাপ্পাবাজি এখানেই বন্ধ রইল না। একজন স্টুডেন্ট এই কল্পিত ওপর একটি আর্টিকল লিখে বি+ মার্ক্স পেলেন। অনুগামীরা বইয়ের ক্যাটালগ কার্ড তৈরি করে দেশ জুড়ে সমস্ত গ্রন্থাগারে রেখে দিল। একজন ন্যু ইয়র্ক গসিপ লেখক দাবি করেন যে তিনি লেখকের সঙ্গে খেয়েছেন। যদিও ওই বইটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না তথাপি ন্যু ইয়র্ক টাইমসের নতুন বই তালিকায় সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে রেকর্ড করে।

৩। মাই ওউন সুইট টাইম

*মাই ওউন সুইট টাইম* একটি আত্মজীবনী যেটা মনে করা হয় একজন আংশিক আদিবাসী নারী ওয়ান্ডা কুলম্যাট্রি দ্বারা লিখিত। বইটিতে লেখিকা তার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াতে শ্বেতাঙ্গ পালক পিতা মাতার কাছে বেড়ে ওঠা নিয়ে লিখেছিলেন। বইটি *dobbie award* পেয়েছিল প্রথম একজন মহিলা লেখকের সৃষ্টি হিসেবে। বইটি ১৯৯৬ সালের নিউ সাউথ ওয়েলসে হায়ার সেকেন্ডারিতে পাঠ্য ছিল। পরে জানা গেল বইটি আসলে লিঁও কার্মে নামের একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি লিখেছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি স্বীকার করলেন এই বিখ্যাত এই উপন্যাসের তিনি লেখক,  অস্ট্রেলিয়ার লেখক সমাজে এটা যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। সিডনি হেরাল্ড পত্রিকার প্রথম পাতায় কার্মেনকে বলা হয়েছিল  “বিখ্যাত শ্বেতাংগ ভাঁওতাবাজ” বইটির বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হল এবং পুরস্কারের টাকা নিয়ে নেওয়া হল। এমনকি কার্মেনের এজেন্টকে পুলিশ আটক করে। তিনি নিজের যুক্তির সপক্ষে বলেন অস্ট্রেলিয়াতে শ্বেতাঙ্গ পুরুষের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তাই কার্মেন নিজের বই ভিন্ন নামে প্রকাশ করেছিলেন।

লেখিকাঃ শ্রেয়নী দে সরকার, কলকাতা, পশ্চিমবংগ, ভারত থেকে।  ভালবাসি রোম্যান্টিক লেখা পড়তে,কবিতা খুব প্রিয়। আমি মোটেই লিখতে পারিনা।