দ্য লাইট বাল্ব কন্সপিরেসি- বৈদ্যুতিক বাতি কেন কম দিন টেকে?

এডিসনের ১ম বৈদ্যুতিক বাতি (১৮৭৯)

কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে, আপনার ঘরের বাল্বগুলো কেন সারাজীবন টেকে না? কিংবা যতদিন টেকে, তার চেয়ে বেশিদিন কেন টেকে না? কারো কারো মতে বড়বড় লাইট বাল্ব প্রস্তুতকারকেরা লাভের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবেই বাল্বগুলোকে প্রযুক্তিগতভাবে কম উন্নত করে তৈরি করেন।

১৮০৯ সালে হামফ্রি ডেভি যখন প্রথম লাইট বাল্ব আবিষ্কার করেন, তখন থেকেই এই সমগ্র ব্যবসার মধ্যে সন্দেহজনক কিছু একটা ছিল। বাল্ব আবিষ্কারের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার ব্যাপারটি প্রথম যাঁর নজরে আসে, তিনি স্যার থমাস এডিসন। তিনি বাণিজ্যিকভাবে অধিক পরিমাণে লাইট বাল্ব তৈরির জন্যে সুবিধাজনক উপায় উদ্ভাবন করেন। ১৮৭৮ সালে নিউইয়র্ক শহরে তিনি এডিসন ইলেক্ট্রিক লাইট কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, “আমরা বিদ্যুৎকে এতটাই স্বল্পমূল্যের করে তুলবো যে কেবল ধনীরাই মোমবাতি ব্যবহার করবেন”।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের মধ্যে লাইট বাল্ব উৎপাদন শিল্পে পণ্যের মানের ক্ষেত্রে কিছু কোম্পানি আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯২৪ সালে ওসরাম, ফিলিপস এবং জেনারেল ইলেক্ট্রিক কম্পানি মিলে ‘ফিবাস কার্টেল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীব্যাপী লাইট বাল্বের উৎপাদন ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা। ১৯৩৯ সালে ফিবাস কার্টেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে ১৫ বছর পর্যন্ত এটি লাইট বাল্ব উৎপাদনের প্রতিযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছিলো।

ফিবাস কার্টেলের মতে তাদের উদ্দেশ্য লাইট বাল্ব শিল্পের মান বজায় রাখা হলেও ষড়যন্ত্রতত্ত্ববিদরা এটিকে ভিন্নভাবে দেখেন। তাঁরা মনে করেন যে, লাইট বাল্বের আয়ু কমিয়ে বাল্বের চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে লাভের পরিমাণ বাড়ানোই এই প্রতিষ্ঠানের আসল উদ্দেশ্য। তাঁদের মতানুসারে ১৯২৪ সালের পূর্বে একটি আদর্শ লাইট বাল্বের আয়ু ছিল প্রায় ২০০০ ঘণ্টা। ফিবাস কার্টেল প্রতিষ্ঠার পর এই আয়ুষ্কাল অর্ধেকে নেমে আসে। মূলত নিম্নমানের উপাদান এবং উৎপাদন পদ্ধতির কারণেই পণ্যের মানের এমন অবনতি ঘটে। তবে মান কমিয়ে আনার এ বিষয়টি সাধারণ জনগণের নজরে যাতে না আসে, তাই এ প্রক্রিয়াটি খুব ধীরেধীরে সম্পন্ন করা হয়।

যদিও ১৯৩৯ সালে ফিবাস কার্টেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তবে ষড়যন্ত্রতত্ত্ববিদরা মনে করেন যে, তাদের এই কর্মপদ্ধতি পশ্চিমা কম্পানিগুলোকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল। কারণ দেখা গেছে, যেসব দেশের কম্পানিগুলো পশ্চিমা আদর্শের ওপর নির্ভরশীল ছিল না, তাদের উৎপাদিত বাল্বগুলো পশ্চিমা কম্পানির বাল্বের চেয়ে দ্বিগুণ সময় টিকতো। তাঁরা আরও ব্যাখ্যা করেন যে, আধুনিক চাইনিজ বাল্বগুলো প্রায় ৫০০০ ঘণ্টা পর্যন্ত টেকে। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটেনে তৈরি করা কিছু বাল্ব আজ অবধি কর্মক্ষম আছে। যেমন ‘Centennial light’ নামে প্রচলিত লাইট বাল্বটি ১০৮ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং আজও এটি সচল রয়েছে।

কেউ কেউ আবার বাল্ব তৈরিতে অতীতের সব আদর্শকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। জার্মান ঘড়িনির্মাতা Dieter Binninger ১৭৭৫ সালে এমন একটি লাইট বাল্ব তৈরি করেছিলেন, যা নির্বিঘ্নে ১,৫০,০০০ ঘণ্টা অর্থাৎ ১৭ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে Binninger উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পরপরই তাঁর ১,৫০,০০০ ঘণ্টা মেয়াদ সম্পন্ন সেই বাল্বের পেটেন্টও গায়েব হয়ে যায়। অবশ্য ষড়যন্ত্রতত্ত্ববিদরা মনে করেন এটি কোন ‘দুর্ঘটনা’ ছিল না।

তবে বাল্বের আয়ু কম হওয়ার পেছনে কোন ষড়যন্ত্র থাকুক বা না থাকুক, কিছু প্রতিষ্ঠান সবসময়ই তাদের পণ্যের ত্রুটির মধ্য থেকে লাভ আদায় করে নেবে।