১০ টি তথ্য যেগুলোকে আমরা বৈজ্ঞানিক সত্য বলে ভুল করি

image source- youtube/Shusha band (შუშა ბანდი) - Cosmo
image source- youtube/Shusha band (შუშა ბანდი) – Cosmo

কিছু বহু প্রচলিত মিথ বা জনশ্রুতি আছে যে গুলোর বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা নেই কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত আছে , তেমন কিছু মিথ বা জনশ্রুতি নিয়েই আমাদের আজকের এই ফিচার।

১। মহাশূন্যে মাধ্যাকর্ষণ

মিথঃ মহাশূন্যের মধ্যে কোন মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে না।

আসলে মহাশূন্যে মাধ্যাকর্ষণ থাকে শুধু তাই না অনেক বেশি থাকে। মহাকাশচারীদের ওজনহীন মনে করা হয় কারণ তাঁরা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। আসলে  তাঁরা পৃথিবীর দিকে পতনশীল কিন্তু পার্শ্বাভিমুখে পর্যাপ্ত গতির কারণে  মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব ব্যর্থ হয়। মূলত  তাই তারা সবসময় পৃথিবীর দিকে পতিত হয় কিন্তু কখনো অবতরণ করে না। মাধ্যাকর্ষণ সম্পূর্ণ স্পেসশিপের সব  স্থানে  বিদ্যমান থাকে।  যখন একটি শাটল কক্ষপথের উচ্চতা পৌছায়  ( ২৫০ প্রায় মাইল পৃথিবীর উপরে),  তখন মাধ্যাকর্ষণ মাত্র  ১০% কমে যায় ।

২। বজ্রপাত

মিথঃ বজ্রপাত কখনো একই জায়গায় দুইবার হয় না

কিন্তু এটা খুব সাধারণ ঘটনা যে বজ্র একই জায়গায় পরপর দুইবার আঘাত করে । সম্ভবত নির্দিষ্ট এলাকায় বজ্রপাত বেশী হয় যেমন উঁচু গাছে বা ভবনে । একটি বৃহৎ ক্ষেত্রের মধ্যে,  কোন লম্বা বস্তু  একাধিক বার বিদ্যুৎ পৃষ্ট  হতে পারে যতক্ষণ না ঐ বজ্র যথেষ্ট দূরে চলে  না যায় বা অন্য কোন  নতুন লক্ষ্য খুঁজে না পায় । এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এ বছরে  প্রায় ২৫ বার বজ্রপাত হয় ।

৩। ঘর্ষণ তাপ

মিথ: উল্কা  ঘর্ষণ দ্বারা উত্তপ্ত হয় যখন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে

যখন একটি উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে , তখন এর  গতি অনেক থাকে । আর এই গতির কারণে উল্কাপিণ্ডের সামনের বায়ুমণ্ডলের বায়ু সংকুচিত হয়  ফলে তীব্র তাপের সৃষ্টি হয়। বায়ুর উপর চাপের কারণে তাপের ত্রীবতা বৃদ্ধি পায় এবং উল্কাপিণ্ডটি উত্তপ্ত হয়ে উজ্জ্বল ভাবে জ্বলতে থাকে যা আমরা দেখতে পাই। উল্কা উত্তপ্ত হচ্ছে যখন পৃথিবীতে আঘাত করে, এই মিথ দূর হবে যদি তা উল্কা হয়। উল্কাপিণ্ড যখন আঘাত করে তখন তাঁরা প্রায় সবসময় খুব ঠাণ্ডা থাকে, আসলে তাঁরা তুষারপাতে ঢাকা থাকে।  কারণ যাত্রার শুরু থেকেই উল্কা অনেক ঠাণ্ডা থাকে, ফলে প্রবেশের এই তাপ যথেষ্ট  নয় উল্কাপিণ্ডকে উত্তপ্ত করার জন্য, এই তাপ বড়জোর  এর বাহিরের আবরণকে পুড়াতে পারে ।

৪। মস্তিষ্ক কোষ

মিথঃ মস্তিষ্কের কোষ পুনরায় তৈরি হয় না।

বিজ্ঞান সমাজে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে এই মিথটি প্রচলিত ছিল এবং বিশ্বাস করা হতো। কিন্তু ১৯৯৮ সালে সুইডেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলা এর সাল্ক ইনস্টিটিউটের  বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের কোষ ও পুনরায় তৈরি হয়। এর আগে ধারণা করা হত যে জটিল মস্তিস্ক নতুন কোষ তৈরিতে বাধা দেয়, কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞান কেন্দ্র নতুন কোষ তৈরি করতে পারে। যা অ্যালঝেইমার রোগের   চিকিৎসার নতুন সম্ভবনা প্রদান করে।

৫। পাঁচ সেকেন্ড নিয়ম

মিথঃ খাবার খাওয়ার সময় যদি খাবার হাত থেকে পড়ে যায় তবে তা ৫ সেকেন্ডের মধ্যে তুলে খেলে তা নিরাপদ।

এটা শুধু কথার কথা এর সুস্পষ্ট কোন ভিত্তি নেই।  খাবার খাওয়ার  সময় হাত থেকে মেঝেতে পড়ে গেলে , যদি সেখানে জীবাণু থাকে , তাহলে সেই খাবার জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হবে, সেটা যত দ্রুত মেঝে থেকে তোলা হোক না কেন ।  তবে কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুযুক্ত ময়লা খাবার দেহে শক্তিশালী  রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে সাহায্য করে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়।

৬। চুইংগাম

মিথঃ চুইংগাম হজম হতে সময় লাগে সাত বছর ।

চুইংগাম হজম হতে সাত বছর লাগে না । আসলে চুইংগাম সবটুকু হজম হয় না। চুইংগামের উপরি ভাগে কিছু পরিমাণ চিনি ও ফ্লেভার থাকে যা মানবদেহে ভিতরে ভেঙ্গে যায় এবং হজম হয় । সাধারণত চুইংগামের হল নমনীয় পলিমার যা এলাস্টমার নামে পরিচিত, এর সাথে গ্লিসারিন এবং উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা হয় , যা চুইংগামকে নরম ও আর্দ্র রাখে।  চুইংগামের খুব সামান্য পরিমাণ শরীরে শোষিত হয় বাকিটা বর্জ্য হিসাবে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

৭।  নখ এবং চুল

মিথঃ মৃত্যুর পরেও নখ ও চুল বড় হয়।

একজন মৃত ব্যক্তির নখ ও চুল বড় হওয়ার জন্য তার খাওয়া , পুষ্টি পরিপাক এবং কোষীয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির শরীরে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না ফলে কেরাটিন নামক প্রোটিনও উৎপন্ন হয় না, যা নখ ও চুলের একটি উপাদান । যেহেতু মৃত ব্যক্তির শরীরে কোন কেরাটিন উৎপন্ন হয় না  তাই মৃত্যুর পরে চুল ও নখ বড় হয় না ।

৮। সূর্য

মিথঃ সূর্য একটি আগুনের গোলক।

অনেকে মনে করেন যে সূর্য একটি বিশাল আগুনের গোলক যা থেকে তাপ ও আলো ছড়াচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সূর্য হচ্ছে একটি বিশাল গ্যাসের বৃত্ত ছাড়া কিছুই নয়। সেখানের কোন আগুন নেই। সূর্য হিলিয়াম দিয়ে তৈরি। নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্য থকে তাপ ও আলো নির্গত হচ্ছে। আসলে সূর্য হল একটি বিশাল উজ্জ্বল গাসের আধার ।

৯। চাঁদ

মিথঃ পূর্ণিমা  মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করে।

জনশ্রুতি আছে যে পূর্ণিমা রাতে মানুষ অদ্ভুত আচরণ করে , বিশেষ করে এই কথাটি বেশী বলে যারা  বৃদ্ধ বা মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে কাজ করে। ধারণা করা হয় মানুষের মস্তিষ্কে যে পানি আছে তা চাঁদের দ্বারা আকর্ষিত হয় ফলে এই সময় মানুষের হিংসাত্মক অপরাধের বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।

১০। মাছি

মিথঃ একটি মাছির আয়ু ২৪ ঘণ্টা।

প্রচলিত জনশ্রুতি আছে যে , মাছির আয়ু মাত্র ২৪ ঘণ্টা বা এক দিন। এটি একটি ভুল ধারণা, একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মাছি  তিন সাপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। শুধু তাই না একটি ডানা ছাড়া  একটি মাছি কয়েক দিন  পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

লেখিকা সম্পর্কেঃ মাহাবুবা শিরিন সুইটি । ভাল লাগে বই পড়তে, সিনেমা দেখতে, নতুন নতুন খাবার খেতে, ঘুরে বেড়াতে এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। আমি তেমন লিখতে পারি না ।