৫ ভিডিও ডকুমেন্ট যা আপনাকে চমকে দেবে

Infamous Suicide Forest

Infamous Suicide Forest

প্রযুক্তির প্রসারের সাথে সাথে ভিডিও ডকুমেন্টারির গুরত্ব ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এরকম অনেক অবিশ্বাস্য বিষয় এসব ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরা যায়, যা হয়তো অন্য কোন মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব হয় না। শিশু নির্যাতন থেকে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ- কোন কিছুই এসব ভিডিও ডকুমেন্টারির বাইরে নয়। েসব ডকুমেন্টের কোনটি মানুষকে ভীত করেছে, একটি বিষয়কে অন্যভাবে দেখতে বাধ্য করেছে। আজ আমরা সেরকমই কিছু ভিডিও ডকুমেন্টারির বিষয়ে জানবো।

১। হাই অন ক্র্যাক এডিক্টস, ১৯৯৫

কোকেন আসক্ত কয়েকজনের প্রতিদিনের জীবন নিয়ে এই ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়। জটিলতায় পরিপূর্ণ এসব মাদকাসক্তদের জীবন কেমন হয়- সেটাই উঠে এসেছে এখানে। বেশ্যাবৃত্তি, যৌন রোগ আর গর্ভধারণ-কেমন এই অন্ধকার জগতের চিত্র? অবিশ্বাস্য সে কাহিনী যা কোন বইতে পাওয়া যাবে না। এমনকি আপনার বিশ্বাস হবে না, কিভাবে ক্র্যাক কোকেনে আসক্তরা তিলে তিলে মারা যায়। ডকুমেন্টারির ৩ চরিত্রের মাঝে ব্রেন্ডা ৬ মাস পর মারা যায়, ডিকি জেলে চলে যায় এবং বু বু এখনো মাত্র ২০০ ডলারের বিনিময়ে খদ্দের খোঁজে।

২। আওকিগাহারা- যে বন আত্মহত্যার,২০১২

জাপানের ফুজি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত আওকিগাহারা বন এখনো কুখ্যাত হয়ে আছে “আত্মহত্যার বন” হিসেবে। এই ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, একজন ভূ-তত্ত্ববিদ কিভাবে বনের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলেন; যেখানে ইতোমধ্যেই বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছেন ও হয়তো সামনেও করবেন-যার একমাত্র কারণ বিষণ্ণতা। ডকুমেন্টারির শুরুতেই দেখা যাবে পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পরিত্যাক্ত গাড়ি, আত্মহত্যার জন্য নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন সাইনবোর্ড, একটা লম্বা দুর্ভাগ্যজনক পথ-যা দর্শকদের সামনে হাজির করবে ঝুলন্ত সেসব মৃতদেহ, গাছের ডাল থেকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে!

৩। দ্য আইসম্যান টেপস, ১৯৯২

ডিকশনারি খুলে বসুন ও কিছু শব্দ খুঁজুন। নির্মম, অনুতাপহীন, পাশবিক, নির্ভীক, হিংসাত্মকএবং অনুভূতিহীন কিংবা আরো কিছু। এসব শব্দই আপনার কাছে কম মনে হবে রিচার্ড কুক্লিনস্কির জন্য। রিচার্ড একজন আমেরিকান সিরিয়াল কন্ট্রাক্ট কিলার যাকে কমপক্ষে ৫ টি হত্যাকান্ডের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তবে তার নিজের দাবি অনুসারে তিনি অন্তত ২৫০ জনকে হত্যা করেছেন। এই ডকুমেন্টারি আপনাকে এরকম একজন মানুষের মনোজগতে প্রবেশ করার সুযোগ দেবে যে খুব ঠান্ডা মাথায় এসব খুন করতো। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল বেডেন এই ডকুমেন্টারিতে রিচার্ডের সাক্ষাৎকার নেন। রিচার্ড নিজের কাজের জন্য কোন রকম অনুতাপ বা দুঃখবোধ না করেই তার জীবনের ঘটনাগুলোর বর্ণনা দেন, যা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব।

৪। এটমিক ওন্ডস, ২০০৬

পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি জানি। সেই শীতল যুদ্ধের সময় থেকেই এ নিয়ে অনেক প্রচারণা, প্রোপাগান্ডা ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এই বোমা শুধু ধ্বংসই করে না, এর প্রভাব চলতে থাকে যুগের পর যুগ। যারা সাথে সাথে মারা গিয়েছিল বোমার আঘাতে তারাই হয়তো সৌভাগ্যবান ছিল। কারণ, বোমা বিস্ফোরণের পরও যারা বেঁচে ছিল, তাদের বেঁচে থাকতে হয়েছে বিকলাংগ হয়ে, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে। এই ডকুমেন্টারি আমাদের নিয়ে যাবে, হিরশিমা ও নাগাসাকির সেই সব দুর্ভাগা মানুষের প্রত্যাহিক জীবনে। এই ভিডিও দেখার সময় বার বার আপনার শুধু একটি কথাই মনে হবে- “মানুষ এই কাজ কিভাবে করতে পারে!” এই দুই শহরের মানুষ তো আমাদের মতোই মানুষ, এই একই পৃথিবীর। তবুও কি করুণ এদের জীবন!

৫। বুলগেরিয়া’স এবান্ডন্ড চিল্ড্রেন, ২০০৭

বিবিসি’র এই ডকুমেন্টারিতে যা দেখানো হয়েছে তা বর্ণনাতীত। বুলগেরিয়াতে শিশুদের প্রায়ই রাস্তায় ফেলে যায় তাদের অভিভাবকরা-বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের। অনেক চেষ্টা করার পরও বুলগেরিয়ার সরকারের পক্ষে এদের সবার দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছিল না। ৯ মাস ধরে ধারণ করা এ ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে বুলগেরিয়ার এতিমখানাগুলোর ভেতরের হৃদয়স্পর্শী চিত্র। এক রুমে গাদাগাদি করে থাকা অনেক শিশু, যাদের কোন শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, জীবন নিয়ে আশা নেই। এর মাঝে চমকে দেয়ার মতো একজন ছিল ডিডি নামে একজন মেয়ে, যাকে “নিরাময় অযোগ্য” বলে এসব শিশুদের মাঝে ফেলে গিয়েছিল কেউ একজন। ধীরে ধীরে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে এ ডকুমেন্টারি প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে জোর দাবি উটঢ়ে শিশুগুলোকে বাঁচানোর। এরপর ডকুমেন্টারিতে দেখানো প্রায় সব শিশুদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়, যারা দ্রুতই সুস্থ হতে থাকে। ডিডিকে স্পেশাল বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক। ইউরপের অন্যান্য দেশ বুলগেরিয়ার উপর চাপ প্রয়োগ করে যাতে সেদেশের সরকার এরকম শিশুদের ভালোভাবে দেখাশোনা করে।

সূত্রঃ লিস্টভার্স