মেঘ পাহাড়ের মিতালী সাজেক ভ্যালি

খুব ভোরে রাঙামাটি থেকে রওয়ানা দিয়েচুলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে।  ডিসেম্বরের শুরুতে কুয়াশার দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। সকালের ঘন কুয়াশায় নিজেকে ঢেকে রওনা হলাম পাহাড়ের পথ ধরে। কেবল আমরা নই, পুরোটা পথ জুড়ে সবুজ পাহাড়, তারা যেন নিজেকে আবৃত করেছিল কুয়াশার নরম চাদরে। পথিমধ্যে ক্রমেই শীতের কুয়াশা কেটে বেরিয়ে এল সূর্য। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে। তবে, রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায়। তাই সকালবেলা খাগড়াছড়িতে পৌঁছে প্রাতরাশ সেরে আবারোও যাত্রা শুরু করলাম মাহেন্দ্র খোলা জিপে।ঝলমলে রোদেলা আবহাওয়ায় কখন জানি দীঘিনালা, বাঘাইহাট, মাসালাং বাজার, কাসালাং নদীকে পেছনে ফেলে পৌঁছে গেলাম সাজেকের রুই লুই পাড়ায়।

blank

জানিয়ে রাখি, সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন । যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু , পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার । বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি থেকে মোটামোটি সাড়ে চারঘন্টা সময় লেগে যাই। আর্মি স্কটের জন্য প্রায় ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় দীঘিনালাতে। দুটা স্কট আছে, সকাল সাড়ে দশটা আর বিকেল সাড়ে তিনটা। আমরা সকালের স্কটটা ধরেছিলাম। পরেরদিন ফেরার সময়ও ওই একই স্কট ধরেছিলাম।

blank

দীঘিনালা, আমাদের যাত্রা বিরতির দ্বিতীয় স্থল। অসাধারণ স্বাদ এখানকার পাকা পেঁপের। সুস্বাদু কলাও পাওয়া যায় এখানে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয়। পরে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প। যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে। তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে। পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার। বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই। এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে।

যাত্রাপথে আমাদের তৃতীয়  বিরতি বাঘাইহাট বাজারে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এই পাহাড়ি বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে কাসালং নদী। বাজারে নেমেই এককাপ গরম চায়ে চুমুক, কুয়াশা আর শীতের সকালে কিছুটা উষ্ণতা। কিছুক্ষণের বিরতি শেষ করে আবার চলা শুরু। রাস্তার দুপাশের বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি ঘর, বিস্তীর্ণ পাহাড় আর এঁকে বেঁকে চলা পাহাড়ি রাস্তা। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সর্পিল নদী চলে গেছে দূরের পথ ধরে। মুক্ত আকাশের নিচে বিশাল সমৃদ্ধ বনভূমির সন্ধান পাবেন কেবল সাজেক ভ্যালির পথে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ, এই মৌসুমে আনারসের জুম চাষে ভরপুর পাহাড়। পাশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাসালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ছোটখাট বাজার। এই এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। আদিবাসী আর বাঙালি— মিলেমিশে এই বাজারে ব্যবসা করে। জুমের ফসল বিক্রি করার আর্দশ স্থান এই মাসালং বাজার।

blank

বন্ধুর পথ— দুপাশেই আকাশচুম্বী পাহাড়ের বুকে উদ্ধত শিখর তুলে দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষরাজি। দীর্ঘজীবি বৃক্ষের দেখা মেলে এই পথে, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন বসতি। দূরের পাহাড়ে মেঘের গড়াগড়ি দেখতে না দেখতেই আমরা পৌঁছে যাই সেই মেঘের রাজ্যে। এক সময় উঁচু পথের সমাপ্তি হয়, পা রাখি রুইলুই পাড়ায়। এটা সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র। সাজেকের মূল ফটকে ঢুকেই আমরা পুরো বিস্মিত ! এখানে এসে বিস্ময়ের মাত্রা খালি বেড়েই চলছিল। প্রায় দুই হাজার ফুট পাহাড়ের ওপর ঝকমকে প্রশস্ত পথ। শহরের আদলে তৈরি ফুটপাত একেবারে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি। পথের পাশে পাহাড়িদের বাড়িঘর নান্দনিকভাবে সাজানো। মনে হলো, বিদেশি কোনো উপত্যকায় পাহাড়ের বুকে সাজানো-গোছানো আদিবাসী-অধ্যুষিত ছোট্ট কোনো শহরে এসে উপস্থিত হলাম।

blank

প্রায় মূল ফটকের পাশেই পাহাড়ের কোল-ঘেঁষে বেশ কিছু কটেজ প্রস্তুত যেখানে আমাদের রাত যাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, বেশ অল্পই খরচ। থাকার ব্যবস্থা হলো হাপাং টং  রিসোর্টে। কাঠের তৈরি ছোট অথচ পরিপাটি একটা রিসোর্ট। পর্যটন উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে দুর্গম সাজেকের উঁচু পাহাড়ের বুক চিরে। সাজেকে গড়ে উঠেছে রুনময় ও সাজেক নামে দুটো আকর্ষণীয় রিসোর্ট। তবে আদিবাসীদের তৈরী কাঠের কটেজই আমার কাছে প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য দারুন ব্যবস্থা বলে মনে হয়েছে।  রুইলুই পাড়ায় লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা— জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাড়ার সবগুলো বাড়ির রং লাল–সবুজ। রুইলুই পাড়ার নিচ থেকে প্রধান উপত্যকার অংশ শুরু। দীর্ঘ পথ শেষ করে বহুদূরে দাঁড়িয়ে আছে মিজোরামের প্রাচীন সুউচ্চ পাহাড়ের শ্রেণি।

blank

সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর কমলক ঝর্ণাটি। কমলক ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত। সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া। রুইলুই পাড়া থেকে ২০ মিনিটের হাঁটা পথ কংলাক পাড়া। পাংখোয়াদের বসবাস এখানে। সব মিলিয়ে ১৫ পরিবারের বসবাস হবে। বিশাল পাথরখণ্ডের পাদদেশেই কংলাক পাড়ার অবস্থান।কংলাকের পাথরচূড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপত্যকা চমৎকারভাবে এক নজরে দেখা যায়। প্রথমে উঠতে মনে মনে একটু ভয় পেলেও, উঠার পর পুরো সাজেকের সৌন্দর্য্য ভয়কে জয় করে দিয়েছিলো।

পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে এখানে আকাশ ঘুমায়, পাহাড়ের বন্ধনহীন মিলন দেখা যায়। কোথাও কোথাও তুলার মতো দলছুট মেঘের স্তুপ ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের চূড়ায়, যেন স্বপ্নরাজ্য। রুই রুই পাড়ার শেষ প্রান্তে হেলিপ্যাড। তার পাশেই পাহাড়ের কোলজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে অবকাশ কেন্দ্র। এখানে বসলে মিজোরামের পাহাড়গুলো চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে অন্যরকম এক রূপ নিয়ে। সাজেক পাহাড় আর ভারতের পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল এক উপত্যকাঞ্চল। এটাকে মেঘপুরীর উপত্যকাও বলা যেতে পারে। বর্ষাকালে এখানে থাকে মেঘমালার অবাধ বিচরণ। সূর্যাস্ত দেখে, কংলাক পাড়া থেকে রওনা হলাম সাজেক ভ্যালির পথে, রাতযাপন হবে রুইলুই পাড়ায় ওই রিসোর্টে।

পূর্ণিমায় আলোয় আলোকিত  ছিল সেদিনের রুই লুই পাড়া। সহস্র নক্ষত্রে ঢাকা সাজেকের বিস্তৃত আকাশ আর নক্ষত্রের আলোয় নিচের পৃথিবী, ধবধবে জোছনার আলোয় আলোকিত উপত্যকা সাজেকের রাজ্য। অদ্ভুদ যে, জ্যোৎস্না রাতের আলোয় কাছে দূরের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জেগে উঠছে ঘন সাদা কুয়াশা। এমনই ঘন যে, কুয়াশাকে মনে হয় মেঘের ভেলা, মনে হয় সমুদ্রে বরফ জমেছে। এরকমই মেঘের ভেলায় ডুবে যাওয়া পাহাড়ের চূড়াকে মনে হচ্ছিল সমুদ্রের পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। হেড ম্যানের বাড়ির সামনে গোল বৈঠক আর গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আমার মনে শুধু বিভ্রম জাগে, এ কি আমার চেনা পৃথিবী, এই কি আমার দেশ, আমার দেশ এত্ত সুন্দর ! মনে পরে রবি ঠাকুরের সেই কবিতার লাইন

“দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু।”

আমাদের সারাদিনের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছিল সারা লুসাইয়ের অর্ডার হোটেলে। হালকা তেল, মশলায় রান্না করা আদিবাসী খাবার খেয়ে আমি মুগ্ধ। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। অনেক রাত অব্দি জেগে ছিলেন সেদিন, চোখে যেন নেশা ধরেছিলো। ঘোরলাগা রাত এক সময় ভোর হয়, মেঘ পায়ের কাছে হেসে লুটোপুটি খায়- নতুন দিনের অভিবাদন জানায়। আবারো খুব ভোরে উঠে আমরা হেলিপ্যাডের উপর চলে যাই সূর্যোদয় দেখতে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পুরো তাজ্জব ! একি সবুজ বন, গেরুয়া পাহাড় সবটুকু অদৃশ্য হয়ে আছে সাদা মেঘের আড়ালে। পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে আছে সাদা মেঘ আবার কোথাও কোথাও মেঘের বুকে জেগে আছে পাহাড়ের চূড়া, যেন মেঘের সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা সবুজ দ্বীপ।

নীলচে পাহাড়ে বুকে মেঘের সমুদ্র। যতটুকু চোখ যায় কেবল দুধ সাদা ঘন মেঘ। দিগন্তব্যাপী আকাশ ছোঁয়া পাহাড়গুলো যেন ডুবে আছে মেঘের সমুদ্রে। মেঘের রং বদলায় সকালের সূর্যের আলোয়। পাহাড় আর মেঘ যেন অবিচ্ছিন বন্ধনী, সময়ে সময়ে বদলে পাহাড়ের রূপ। পাহাড়ের প্রশস্ত বুক, আদিবাসীদের ঘর-বসতি ও নির্জন প্রকৃতির সঙ্গে দারুণ এক সখ্যতা আর প্রেম আছে ভাসমান মেঘপুঞ্জের, আছে ঝগড়াও। তাই তো বেলা বাড়তে বাড়তে মেঘ কেটে কেটে যেতে লাগলো আর আমরা ফিরতে লাগলাম চেনা লোকালয়ের পথে, ফিরলামরুইলুই পাড়ায়। সাজেক বহুরূপী, পাহাড়ের সাথে মেঘের রাগ অনুরাগ, মান অভিমানে ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায় এর রূপ মাধুরী। ভোর একসময় সকাল হলো, আমাদেরও স্কট ধরবার সময় চলে এলো তাই পেছনে সাজেককে ফেলে রেখে আমাদের ফিরতেই হলো যান্ত্রিক জীবনে। ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন। যেকোনো মৌসুমে সাজেক ভ্রমণ অনন্য। বর্ষাকালে শুনেছি এর সৌন্দর্য অসাধারণ। তবে আমার মতে, শীতকালই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

যেভাবে যাবেন : প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি অথবা দীঘিনালা। ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহন, বিআরটিসি (এসি বাস), সেন্ট মার্টিন (এসি বাস), শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল, এস.আলম পরিবহনে খাগড়াছড়ি এবং দীঘিনালায় সরাসরি যাওয়া যায়। আমরা অবশ্য রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি এসে দীঘিনালা হয়ে গেছিলাম। দলবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ভালো, খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে মাহেন্দ্র জিপ বা চাঁদের গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে। সাজেক যাওয়ার পথে বাঘাইহাট জোনে আপনার নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর এট্রি করতে হবে। আপনার লাগেজ সার্চ করে হবে।

যেখানে থাকবেন : সাজেক এলাকায় হুট্ করে গেলে কিন্তু থাকার জায়গা নাও পেতে পারেন। তাই রাতে থাকার জায়গা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে। দল বড় হলে প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকেই। থাকার জন্য আছে, রূনময় রির্সোট (বিজিবি পরিচালিত), সাজেক রির্সোট (সেনাবাহিনী পরিচালিত) আলোর রির্সোট এবং ক্লাব হাউস। রয়েছে আদিবাসীদের কটেজও।

প্রয়োজনীয় তথ্য : সাজেক অনেক দুর্গম জায়গা। এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। যাও আছে তা মূলত সৌর বিদ্যুৎ নির্ভর। উঁচু জায়গা বলে পানীয় জলের সংকট আছে, তবে সেটা গ্রীষ্মে। খাওয়ার জল কিন্তু ঝর্ণার জল, বেশ ঠান্ডা। সাজেক  প্রকৃতির সৌন্দর্য্য, সৃষ্টির অপরূপ সৃষ্টি, তাই এই সৃষ্টি যাতে তার মতো করে সুন্দর থাকে সেই দায়িত্বটাও আমাদেরই হাতে। আপনার ব্যবহার কোন প্রকার পলিথিন, পানির বোতল, প্যাকেট, ময়লা ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। না হলে সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। আর আমাদের স্বভাব থাকে, আদিবাসীদের জীবন যাপন, তাদের চেহারা, তাদের খাবার দাবার নিয়ে টিপ্পনি কাটার, সেটা মোটেও করবেন না। তারা প্রকৃতির সন্তান, তারা অতন্ত্য সহজ, অতন্ত্য সরল, অতন্ত্য ভালো। তারাও কিন্তু বাংলাদেশী, এটা ভুলে যাবেন না।

“মেঘ পাহাড়ের মিতালী যার আরেক নাম সাজেক ভ্যালি”