“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি”

আজকেও মনে হচ্ছে কলেজ বাসটা মিস হবে ।“ তুই কেন যে এতো ঘুম কাতুরে । একটু কম ঘুমোলে কি এমন ক্ষতিটা হয় তোর ? তখন তো আর রোজ রোজ তোকে আর বাসের জন্য দৌড়তে হতোনা । এইবার বুঝেই দেখ সাময়িক আলসামোর মাশুল টা ঠিক কত গুন হতে পারে ‘’। নিজের অবচেতন মনেই দৌড়ের মধ্যে দিয়েও অনামিকা এইসব ভেবে যাচ্ছে আর সমানে আফসোস করে যাচ্ছে । দু দিন পর নজরুল জয়ন্তী । সঞ্চালনার ভার পড়েছে ওর ওপর । কলেজে দেরি করে পৌঁছনো মানেই হলো ঐ বাঘিনীর ন্যায় ম্যাডামের সামনে নিজেকে কিছুক্ষণ নিষ্পাপ শিকারের মতো বিলিয়ে দেওয়া ।
বাস স্টপে পোঁছতেই একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পেলো অনামিকা । এখনও দেখছি বাস আসেনি ।

– “ এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো তাহলে আমাদের ঘুমন্ত রাজকন্যা । ‘’
– “ কি আর করবো বল । আমার বিছানার সাথে যে আমার গভীর ভালোবাসা ঠিক যেমনটি ছিল কাজী নজরুল সাথে তার কলমের । ‘’
– “ সবার ছোটোখাটো ব্যাপার গুলো যার নজর এড়িয়ে যেতে পারেনা নিজের ব্যাপারে যে কেন তার এতো হেলা সেটাই বুঝিনা । কিন্তু তোর ভাগ্যটা আজ ভালো মনে হচ্ছে । তাই আজ বাসের সাথে ঠিক সময়ে তোর দেখা হবে । ‘’
-“ ঐ জায়গাটাতে অতো ভীড় কেনরে সুমি ? চল গিয়ে দেখিতো’’
– “ আরে বাবা , ছাড়তো ওসব । তুই ছাড়াও দৃষ্টিপাত করার আরো লোকজন রয়েছে এখানে । কোন দরকার নেই ঐসব বাজে ঝামেলায় নিজেকে জড়ানোর । ‘’
-“ তুই থাক । আমি গেলাম “
– “ আসছি ,আসছি । তোকে নিয়ে সত্যি আর পারা গেলোনা । দেখতে মনে হয় কত শান্ত একটা মেয়ে । কিন্তু এই শুভ্রতার আড়ালে হঠাৎ কেন যে বিদ্যুৎ চমকায়।‘’
তারা গিয়ে দেখতে পায় একটি ছেলে, বয়স খুব বেশী হলে ২৫-২৬ হবে তার বয়সী আরেকটি ছেলেকে ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছে আর বাকি সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে । অনামিকা ব্যপারটি ঠিক মেনে নিতে পারলোনা । সে ছেলেটির কাছে গিয়েই কোন রকম সাত-পাঁচ না ভেবেই তার শার্ট এর কলার সজোড়ে টেনে ধরলো ।
-“ দিনে দুপুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গুণ্ডামি করা হচ্ছে ! একি ! আবার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । আপনি ছেলেটিকে এইভাবে মারছেন কেন ? কি করেছে সে ? যদি কিছু করেও থাকে তাকে শাস্তি দেওয়ার আপনি কে ? কি ব্যাপার আপনি কি কথা বলতে পারেন না ? এইভাবে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছেন যে ? আর আপনারা , সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছেন ? কেউ কিছুই বলছেন না ! চমৎকার !’’
_ “ আরে ম্যাডাম ঐ লোফারটা একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামী করছিলো । মেয়েটি প্রতিবাদ করতে গেলে এই মেয়েটির গায়ে হাত তুলতে যায় । এই ছেলেটি প্রথম দিকে বেশ ভদ্র ভাবেই ছলেছিলো মেয়েটির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে । কিন্তু ঐ ছেলেটি তখন আশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে যা সত্যি মেনে নেওয়া যায়না ।”

সব শোনার পর অনামিকার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । যে মানুষটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করলো আর সে কিনা তাকেই সবার সামনে অপমান করে বসলো । কিন্তু কোথায় সেই ছেলেটি ? ভীড়ের মাঝখানে যে কখন মিলিয়ে গেছে অনামিকা তা বুঝতেই পারিনি । কিন্তু ছেলেটি তাকে কিছু বললো না কেন ? কিন্তু তার চোখের দৃষ্টিতে অনামিকার জন্য কোন রাগ বা অভিযোগতো সে দেখতে পাইনি ।

২৫ মে। নজরুল জয়ন্তী । পুরো অডিটোরিয়াম খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । নীল শাড়ীতে অনামিকাকে বেশ লাগছে । কিন্তু তার সহ –সঞ্চালকের তো দেখা নেই । কিছুক্ষণ পর সে জানতে পারলো তার সহ – সঞ্চালক আজকের অনুষ্ঠানে থাকবেনা । তার পরিবর্তে থাকছে “ নীল” নামের একজন । তাদের কলেজের প্রাক্তন ছাত্র । কলেজ থাকাকালীন সব নজরুল জয়ন্তীর সঞ্চালনার ভার তার ওপরেই থাকতো । কিন্তু এ কি দেখছে অনামিকা ! এইতো সে অচেনা যুবকটি যাকে সে ভীড়ের মাঝে হারিয়ে ফেলেছিল । কিন্তু আজ যে অনামিকার চোখ সরতে চাইছেনা তার ওপর থেকে । নীল পাঞ্জাবি তার নামটাকে যেন আরো সুন্দর করে তুলেছে। পুরো সময়টা তারা পাশাপাশি কিন্তু পরস্পরের যেন পরস্পরকে মুখে কিছু বলার প্রয়োজন হচ্ছেনা , চোখের ভাষায় যেন সবটা বলা হয়ে যাচ্ছে । দুজনের দৃষ্টি পরস্পরকে আরো জড়িয়ে নিয়েছে যখন নীলের কণ্ঠে অনামিকা শুনতে পেলো “ তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি বলো একি মোর অপরাধ “ ।

দেখতে দেখতে ৪ টি বছর কেটে গেলো । আজ ২৫ মে । নীল – অনামিকা হাজির তাদের সেই প্রাঙ্গনে । কিন্তু আজ তারা আর অপরিচিত কেউ নয়। নীল রঙ্গে অনামিকা নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছে ২ বছর আগেই ।