বিজয়ের মাসের ভাবনা- স্বাধীনতা ও আমরা

ছবি কৃতজ্ঞতা- ছবিওয়ালা

ডিসেম্বর , প্রতিটি বাংলাদেশীর জন্য গর্বের একটি মাস । আমাদের মহান বিজয় দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে নতুন একটি দেশ , “ বাংলাদেশ “ । দেশের জন্য এতটা ত্যাগ সত্যি হতবাক করে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে ।

“ স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে , স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন “ । ছোট থেকেই এই কথাটির সাথে আমরা পরিচিত । কিন্তু আমরা যারা বর্তমান বাসিন্দা রয়েছি সত্যি কি এই কথাটির মানে বুঝি নাকি বইয়ের পাতায় বন্দী করে রেখেছি কথাটির মানে ? একটি দেশ কতটা এগিয়ে যাবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর সে দেশের নাগরিকদের ওপর , ঠিক কতটা দেশপ্রেম মনে বিরাজমান তার ওপর । আমাদের দেশপ্রেম কি ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার এর মধ্যে বন্দী হয়ে যাচ্ছে? আসুন দেখে নিই আমাদের দেশপ্রেমের কিছু নমুনা, যা আসলে হতাশাব্যঞ্জক বৈকি!

  • বিজয় দিবস পুরো দেশ কে রাঙিয়ে তুলে বিজয়ের আমেজে । লাল সবুজের পতাকা ঘিরে থাকে পুরো দেশকে । কিন্তু আজকাল প্রায় দেখা যাচ্ছে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান গুলো জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হলেও শেষ হচ্ছে বিদেশী গান দিয়ে । এটা কি মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান প্রদর্শন করা নাকি স্বাধীনতার বদনাম করা ? উত্তর টা আমাদেরকেই খুঁজতে হবে ।
  • সারাবছর দেশকে গালাগাল করে শুধু স্বাধীনতা দিবস , বিজয় দিবসে দেশপ্রেম দেখানো “গরু মেরে জুতো দান ছাড়া আর কিছু না “ । দেশকে নিয়ে কতরকম অভিযোগ আমাদের । রাস্তাঘাট কত অপরিষ্কার , ট্রাফিক জ্যাম , লোডশেডিং । আমাদের দেশটার তো আর হাত পা নেই যে নিজে নিজে চলবে । আমরা যে ভাবে চালাবো সে ভাবেই চলবে। আমরা নিজেরাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলব , একটু কষ্ট করে ডাস্টবিনে ফেলব না; তারপরও নিজেদের সংশোধন করবো না । যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করা, ওভার ব্রিজ ব্যাবহার না করা , ট্রাফিক আইন মেনে না চলার পরও এইসব অভিযোগ আমাদের মুখে শোভা পায়না । আর লোড শেডিং এর কথা নাই বা বললাম । বিল তো  আমরা দিচ্ছি তাই অপচয় করার অধিকারটাও আমাদের আছে , এই ভাবনাটা আমাদের অভ্যাস এ পরিণত হয়েছে ।

দেশ আমাদের কি দিচ্ছে না দিচ্ছে সেটা হিসেব না করে দেখতে হবে আমরা ঠিক দেশের জন্য কি করছি । আমাদের প্রতিটি ভাল কাজ হবে দেশের জন্য এক একটি বিজয় ।

এইবার আসি আমদের মুক্তিবাহিনী যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করছিলেন আসলেই কি তা পূরণ হয়েছে । সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ সেদিনি পাওয়া যায় যেদিন কেউ বেকার থাকবেনা , চাকরির জন্য কাউকে আত্মহননের চিন্তা করতে  হবেনা । প্রতিটি নাগরিক যদি তাদের মৌলিক চাহিদা গুলো পুরণের নিশ্চয়তা পায় সেটাই হবে তাদের কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা ।স্বাধীন দেশের অন্নের যোগান দাতা কৃষকদের আজো বঞ্চিত করা হয় তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে । বঞ্চিত মানুষেরা চাইলেও হৃদয়ে দেশপ্রেম লালন করতে পারেনা । আমরা এতটায় সভ্য যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করলো আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতেও দ্বিধাবোধ করি । তাদের অনেকেই আজ বেঁচে আছে পঙ্গুতের অভিশাপ নিয়ে , অন্যের সাহায্যের আশায় । কথায় আছে “ যে দেশে গুণীর কদর নেয় সে দেশে গুণী জন্মায়না” ।দেশটা সবার ,দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন জাতি বর্ণ ভেদে সবাই দেখেছিল । তবুও আজ একটা “ গোষ্ঠী “ কে শুনতে হয় তারা “ সংখ্যালঘু”। তাদের উপসনালয় ও আজ হুমকির মুখে। স্বাধীন দেশে এইসব শোভনীয় নয় । আমার জানামতে নারীরাও এই দেশের নাগরিক । কিন্তু একটা সময়ের পর তাদের চলাফেরা শেকল বেঁধে দেওয়া হয় । এটা স্বাধীনতার  ঠিক কোন সংজ্ঞাতে পরে তা  আমার জানা নেই । বহু শিশু আজো দেশের সঠিক ইতিহাস জানেনা কারণ তাদের হাতে বই ধরিয়ে দেওয়ার বদলে ধরিয়ে দেওয়া হয় কাজ করার হাতুড়ি ।

দেশটা আমাদের সকলের । দেশের সুনাম আমাদের সকলের জন্য গর্বের আবার দেশের দুর্নাম আমাদের জন্য লজ্জার । দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটা কোন নির্দিষ্ট দলের নয় , দায়িত্বটা আমাদের সকলের । শুধু মুখে দেশ প্রেমের কথা না বলে সেটার প্রতিফলন ঘটাতে হবে আমাদের কাজ কর্মে , আমাদের চিন্তাভাবনায় । আবার উগ্র দেশপ্রেম যেটা অন্যকে আঘাত করে টা অবশ্যয় দূরে রাখতে হবে । আসুন ,সবাই এমনএকটি দেশ গড়ে তুলি যে দেশ সবাইকে বলতে শেখাবে

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি “       

লেখিকাঃ পূজা ধর, ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট ডেভেলপার ও ভয়েস আর্টিস্ট, বাংলাহাব