৫০ এর দশকের অনিন্দ্যসুন্দরী সুপারমডেলরা

“মডেল”, নামের মতই তাদের কাজ। তারা ফ্যাশন আইকন, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মেকআপ থেকে শুরু করে ওয়াশিং মেশিন, তাদের মুখ দেখা যায় টিভিতে, খবরের কাগজে, বিলবোর্ডে! এই মডেলিং পেশার শুরু কিন্তু বহুবছর আগে থেকে। ১৮৫৩ সালে চার্লস ফ্রেডরিক ওর্থ, যাকে বলা হয় “Father of Haute Couture”, তিনি তার পত্নীকে বলেছিলেন তার ডিজাইন করা কিছু ড্রেস পরে ছবি তুলতে, যেগুলো তিনি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করবেন। এরপর থেকে ধীরেধীরে এই “মডেলিং” খ্যাতি লাভ করে। এর শুরু কিন্তু হয়েছিলো প্যারিস থেকেই, যা এখনো ফ্যাশনজগতের স্পটলাইট!

এখন যেমন মডেল হওয়ার জন্য অনিন্দ্যসুন্দরী ছিপছিপে তরুণী হতে হয়, তখন কিন্তু এমন ছিলোনা, যে কোন বডি শেপের তরুণীরাই মডেলিং করতো। ঘরোয়া ভাবেই এসব জামাকাপড় পরে মডেলিং করতেন। কিন্ত ১৯৫০ এর দিকে এসে যখন ফোটো মডেলিং এর চর্চা শুরু হয়, তখনই বদলে যায় মডেলিং জগতের হালচাল।

৫০ দশকের আগে মডেলদের খ্যাতি ততটা ছিলোনা। তারা মডেলিং করতো, অল্প কিছু টাকা হাতে পেতো। মানুষের কাছে তাদের মর্যাদা খুব বেশি ছিলোনা। কিন্তু ফোটো মডেলিং এর চল শুরু হতেই খোঁজ শুরু হয় এমন সব মেয়েদের, যাদের ছবিতে সুন্দর দেখাবে! ১৯৪৬ সালে এইলেন এবং জেরার্ড ফোর্ড শুরু করেন আমেরিকার নিউইয়র্কে “ফোর্ড মডেলস” মডেলিং এজেন্সি, এই ফোর্ড মডেলস এর হাত ধরেই বদলে যায় মডেলিং এর পৃথিবী।

১৯৫০ দশকের চারজন সবচেয়ে বিখ্যাত অনিন্দ্যসুন্দরী মডেলের আগমন হয় মডেলিং জগতে, ফোর্ড মডেলস এর হাত ধরে। তারা হচ্ছেন জিন প্যাটশেট, ডভিমা, মেরি জেন রাসেল এবং সুজি পার্কার

জিন প্যাটশেট:

১৯৪৮ সালে মেরিল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক আসেন জিন এবং সেই বছরই এপ্রিলে তিনি ফোর্ড মডেলস এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ভোগ ম্যাগাজিনের কভারে জায়গা করে নেন। ১৯৪৯ সালে ব্রিজেট বেট টিশেনর একটি ফটোশ্যুট করে জিনকে নিয়ে, যার নাম “দ্য টেরট রিডার”। ছবিটি এতই বিখ্যাত যে সেটি ওয়াশিংটনডিসি এর স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়ামের আর্ট সেকশনে শোভা পাচ্ছে। জিন প্যাটশেট ভোগ ম্যাগাজিনের দুইটি বিখ্যাত কভারের মুখ ছিলেন। এর মধ্যে ১৯৫০ সালের জানুয়ারি কভারটি এতই খ্যাতি লাভ করেছিলো যে ১৯৫০ দশক জুড়ে ফ্যাশন জগতে এই কভারটির চর্চা ছিলো। জিন প্যাটশেট তার মডেলিং ক্যারিয়ারে ৪০ এর ও বেশি ম্যাগাজিনের কভারে মুখ দেখিয়েছিলেন!

“দ্য টেরট রিডার”

 

ডভিমা:

কোন এক সুন্দর বিকেলে নিউইয়র্ক এর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ডভিমা। তখনই তিনি নজরে পরেন ভোগ ম্যাগাজিনের এডিটরের। তারপর জীবন বদলে যায় ডভিমার! এডিটরের নজরে আসার পরদিনই ভোগ ম্যাগাজিনের ফটোশ্যুটে অংশ নেন তিনি। ফটোগ্রাফার ছিলেন বিখ্যাত আরভিং পেন। তিনি ছিলেন এই দশকের হাইয়েস্ট পেইড মডেল। তার সবচেয়ে বিখ্যাত ফটোশ্যুট “ডভিমা উইথ দ্য এলিফেন্টস”। ১৯৫৫ সালে প্যারিসের রাস্তায় ক্রিশ্চিয়ান দিওরের ইভনিং ড্রেস পরে তিনি সেই শ্যুট করেছিলেন। এই ফটোশ্যুটের ছবি ২০১০ সালে ১, ১৫১, ৯৭৬ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে। ভাবা যায়!

“ডভিমা উইথ দ্য এলিফেন্টস”

মেরি জেন রাসেল:

মেরি জেন রাসেল ফোর্ড মডেলস এজেন্সির হাত ধরে মডেলিং জগতে পা রাখেন। মডেল মানেই উচ্চতা হবে ৫ ফুট ৮-১০ ইঞ্চি, এ যেন ছিলো এক অলিখিত শর্ত। কিন্তু মেরি জেন রাসেল ছিলেন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, অর্থাৎ মডেলিং জগতে তিনি ছিলেন খানিকটা বেমানান! তবুও কিন্তু তিনি সেই দশকের অন্যতম নামী মডেল ছিলেন। তিনি তার ক্যারিয়ারকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। তার ব্যক্তিত্ব, প্রফেশনালিজম আর নজরকাড়া সৌন্দর্য্য তাকে এনে দিয়েছিলো “One Of exquisite models of 1950’s” এর মর্যাদা। তার সবচেয়ে বিখ্যাত ফোটোগ্রাফ ছিলো “Girl with Tobacco on tongue” যা শ্যুট করা হয়েছিলো ১৯৫১ সালে “Vogue” ম্যাগাজিনের জন্য। এই শ্যুটের জন্য বেশ বিপদে পরতে হয়েছিলো তাকে। কথা ছিলো ধূমপানরত অবস্থায় তার ছবি তোলা। কিন্তু তিনি তো ধূমপান করতেন না! তবুও ছবিতে যেন কোন ত্রুটি না থাকে তিনি একদিনে ধূমপান করা শিখে তারপর ফটোশ্যুট করেন! তিনি ছিলেন কিংবদন্তী ফোটোগ্রাফার আরভিং পেন এর অন্যতম প্রিয় মডেল।

“গার্ল উইদ টোব্যাকো অন টাং”

 

সুজি পার্কার:

সুজি পার্কার ছিলেন বিখ্যাত মডেল ডোরিয়ান লেইহ এর বোন। কিন্তু মডেলিং জগতে পা রাখা মাত্র ডোরিয়ানের খ্যাতি ম্লান হয়ে যায় সুজির কাছে। মাত্র পনের বছর বয়সে “লাইফ” ম্যাগাজিনের কভারে দেখা যায় তাকে। তারপর তিনি হয়ে যান বিখ্যাত ব্র‍্যান্ড শ্যানেলের ব্র‍্যান্ড আ্যম্বাসডর। সুজির সমন্ধে শ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা কোকো শ্যানেল বলেছিলেন, “One of the faces of the confident, post war American woman“।

রেভলনের অ্যাডে সুজি পার্কার

পার্কার আরো পরিচিতি লাভ করেন মেকআপ ব্র‍্যান্ড রেভলনের ব্র‍্যান্ড আ্যম্বাসডর হয়ে। এছাড়া তিনি কাজ করেছেন ম্যাক্স ফ্যাক্টর, হার্টজ, ব্লিস, ড্যুপন্ট, সিম্পলিসিটি এর মতো ব্র‍্যান্ডের হয়ে। তিনি ৭০টি ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভারে মুখ দেখিয়েছেন! তিনি ছিলেন প্রথম মডেল যিনি ৫০ দশকে বছরে ১ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছিলেন! সুজি পার্কারকে এখনো ফোর্ড মডেলস এর একজন অন্যতম সেরা মডেল বলে গণ্য করা হয়।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট