শীতের সকাল ও একজন ঢাকাবাসীর কথা 😄😄😄

-ঢাকার-শীত-1.jpg

কুয়াশা মোড়া শীতের সকাল!

চোখ খুলতেই রফিক সাহেবের মনে পরে গেলো হাড় হিম করা সব কাজের কথা হাড় কনকনে শীতে কুয়াশার চাইতে ঘন ধুলো আর গাড়ীর ধোঁয়ার সমুদ্দুর পাড়ি দিয়ে ৬ নাম্বার বাসের একটুকরো জায়গা দখলের লড়াইয়ে নামার কথা ভাবতে ভাবতে উঠে বসেন তিনি।  পেছন থেকে নরম বিছানা আর উষ্ণ কম্বল মোবাইল কোম্পানির চেয়ে লোভনীয় অফার দিয়ে তাকে অবিরাম ডাকে ।  খুব একটা অহংকারী না হলেও মাটিতে পা পরতে চায়না তার, এক একটা টাইলস যেনো এক একটা বরফের চাই।  মুখের সামনে বসের গম্ভীর চেহারাটা আবছাভাবে ভেসে উঠতেই একছুটে দৌড় দিলেন হাত মুখে ধুয়ে কর্পোরেট ভুত সাজার কাজে।  রাস্তায় নেমেই কুন্ডুলি পাকিয়ে ঘুমিয়ে থাকা কুকুরগুলোকে দেখে ভীষণ হিংসে হলো  মনে মনে ক বর্গীয় গালি দিয়ে হাটতে শুরু করলেন বাস কাউন্টারের উদ্দেশ্যে।  একটা দুটো রিকশা ডাক দিয়েছিলেন বৈকি, কিন্ত তারা সাফ বলে দিয়েছে “যামুনা”।  ছেলেবেলার শীতের সকাল রচনার কথা মনে পরলো তার, কতোইনা রংচঙে শীতের সকালের বর্ণনা মুখস্থ করেছিলেন তিনি।  শুধুমাত্র সেসব মিথ্যের পাপেই জাহান্নামে যাবেন বলে মনে হলো তার।  কাউন্টারের পাশে বসে যে মানুষটি পিঠা বিক্রি করছিলো তার সাথে রচনায় লেখা দাদীর চেহারার কোন মিল নেই।  বাস আসতেই হুড়মুড় করে বাস ওঠার যুদ্ধে সামিল হলেন।  সিটে বসতে যাবেন এমন সময় কোন জাদুবলে কে জানে, আরেকজন তার চোখের সামনেই সে পড়লো।  অগত্যা দাড়িয়েই যাত্রা শুরু করলেন তিনি।  বাসের জানালার ঝাপসা কাচের ওপারের দৃশ্যগুলো বায়োস্কোপের মতো দ্রুত পার হতে লাগলো।  ছেড়া সোয়েটার গায়ে কয়েকটা বাচ্চা আগুন পোহাচ্ছে, চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ানো লোকগুলোর মুখ দিয়ে বের ওয়া ধোঁয়া কুয়াশা না সিগারেটের সেটা ঠাহর করতে পারলেননা। 

আস্তে আস্তে লজ্জা ভেঙ্গে সূর্য উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলো।  ট্রাফিক সিগন্যালের ফাদে পরে খেয়াল করলেন সব গুলো লাইনের গাড়ীই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে শুধু তারটা ছাড়া।  মনে মনে ট্রাফিক পুলিশের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করলেন।  সিগ্ন্যাল ছাড়তেই একপাল লোক হাত উচিয়ে রাস্তা পার হয়ে গেলো।  মেজাজ সপ্তমে উঠলো তার; এতোক্ষন কই ছিলি তোরা? গাড়ি এগিয়ে যায় । নিজের শৈশবের কথা মনে পরে তার, পিঠা-পুলি আর খেজুরের রসের সুবাস বাসের যাত্রীদের ঘামের গন্ধে মিলিয়ে যায়।  গন্তব্যের কাছাকাছি আসতেই ভীড় ঠেলে বাসের দরজার দিকে এগিয়ে যান রফিক সাহেব।

হাটতে হাটতে তার মনে পরে গ্রামের মেঠোপথে হেটে স্কুলে যাওয়ার স্মৃতি।  মনেপরে পাখির ডাক গাছের পাতার আড়ালে সূর্যের লুকোচুরি হঠাত কানে আসে কাকের ডাক, গাড়ীর হর্ন আর মানুষের কোলাহল ; নস্টালজিয়া থেকে সোজা নেমে আসেন ইট-পাথরের নগরে।  এমন লাখ লাখ রফিক সাহেবের নিরন্তর ছুটে চলায় সরব হয়ে থাকে নগরের শীতের সকাল।  যদিও নগর জীবনে শীতের আবেদন আলাদা তবু যেন প্রতি পদক্ষেপে আলাদা করে অনুভব করা যায় শীতকে।  খেজুর গাছের বদলে রাস্তায় সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট, রসের হাড়ির বদলে ঝুলে থাকে কোন এক পিরের দান বাক্স আর নগরের রাস্তাজুড়ে সোনালি আভায় সকাল সন্ধ্যা জমে হিম হিম কুয়াশা। দাদী-নানীদের হাতের পিঠার জায়গায় আছে নানা নামের কিংবা বেনামের পিঠার দোকান।  নগরের ছিন্নমূল শিশুরাই গ্রামের দুরন্ত শৈশবের প্রতিনিধি।  নগরের শীতের সব্জিরা ভ্যানে চড়ে ঘুরে বেড়ায় এপার ওপার। 

গারীর কাচে জমে থাকা শিশির বিন্দুগুলোতে যখন সকালের রোদের আলোকচ্ছটার নানা রঙ ছড়ায় হীরক দ্যুতি ; সেই সৌন্দর্য কি দেখা হয়েছে চোখ মেলে? তবে যাদের জীবনে শীত আনন্দের নয়অভিশাপের তাদেরকে সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীকে আরেকটু বাসযোগ্য আর মানবিক করে তোলা কি খুব বেশী অসম্ভব? 

[zombify_post]