সাধারণত কম বেশী আমাদের সবার মধ্যেই কোন না কোন বিষয়ে ভয় কাজ করে। কিন্তু এই ভয়গুলো আমাদের মধ্যে বেশীরভাগ সময় স্থায়ী হয় না , কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যারা সারাক্ষণ কোন বিষয় বা বস্তুর ভয়ের মধ্যেই বসবাস করে। আসুন জেনে নেয়া যাক এমন ১০ টি অদ্ভুত ভয়ের কথা যা কিছুটা অস্বাভাবিকও বটে । আর এসব ভয়ের সাথে আপনাদের কারও ভয়ের মিল থাকলে তাও কমেন্টে জানাতে পারেন।
১। অটোমাটোফবিয়া (মায়া স্বরে কথা বলা নকল পুতুলের ভয় )
ভয়ের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে এই অটোমাটোফবিয়া । এখানে কথা বলা নকল পুতুলের প্রতি মানুষের ভয় কাজ করে । এই ভয়ে যারা আক্রান্ত তাদের কোন চিকিৎসা প্রয়োজন নেই যদি তা অনেক প্রকট না হয় । কারন সুচারু বিরক্তিকর কোন ধারনার প্রতি এমন সুচারু প্রতিক্রিয়া হওয়াটাই স্বাভাবিক । তবে এই ভয়ের তীব্রতা যদি অনেক বেশী হয় তবে অবশ্যই মনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার ।
২। ক্যাথিসফবিয়া (বসার ভয় )
ক্যাথিসফবিয়া হচ্ছে বসার ভয় । অর্থাৎ কেউ বসতে ভয় পায় । যদি কেউ অশ্ব রোগে আক্রান্ত হয় তবে সে এই ভয়ে আক্রান্ত হতে পারে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই ভয় তীক্ষ্ণ অথবা ব্যাথাদায়ক কোন বস্তু দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের সাথেও যুক্ত থাকতে পারে । অনেক সময় এই ভয়ের কারন হতে পারে স্কুল জীবনের কোন শাস্তি যা বসার সাথে সম্পর্কিত অথবা এটা অন্যান্য ভয়েরও নির্দেশক হতে পারে যেমন ; কোন প্রভাবশালী বা উচ্চ পর্যায়ের কারও সামনে বসার ভীতি। এই ভয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেমন, ঘাম হওয়া , লম্বা বা সংক্ষিপ্ত শ্বাস – প্রশ্বাস এবং উদ্বিগ্নতা ।
৩। আরাচিবুটিরোফবিয়া (মুখের উপরের চোয়ালে চিনাবাদামের মাখন লেগে যাওয়ার ভয় )
এটি হচ্ছে মুখের উপরের চোয়ালে চিনাবাদামের মাখন লেগে যাওয়ার ভয় । এই ভয়টা যাদের আছে তাদের মনে সব সময় একটা চিন্তা কাজ করে যে, চিনাবাদামের মাখন কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে । যেসব শিশুদের ছোটকালে চিনাবাদামের মাখন বা জেলি স্যান্ডউইচ প্রতিদিন জোরকরে খাওয়ানো হয় পরবর্তীতে তাদের এই বিষয়ে আতঙ্ক কাজ করে । এই ভয়ে আক্রান্ত একজন তার বক্তব্যে বলেন , “ সে যখন কোন চীনাবাদামের মাখনের আশেপাশে যায় তখন সে অতিরিক্ত ঘামতে থাকে এবং পুরো শরীর দুমড়ে মুচড়ে সংকুচিত হয়ে আসে । তার মুখের উপরের অংশ অমসৃণ হয়ে যায় এবং চুলকানি শুরু হয় । সে তখন ঐ ভয়ের মধ্যে আর থাকতে পারে না । তখন তার চিনবাদামের মাখন এর প্রতি তৃষ্ণা নিবারন করতে হয় সেটা না কিনেই প্রচণ্ড ভয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে । যদি কারও এমন গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হয় তবে অতি দ্রুত মনো চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া প্রয়োজন ।
৪। প্যান্থারাফবিয়া (শাশুড়ির প্রতি ভয়)
আগের সবগুলো ভয়ের তুলনায় এই ভয়টি মোটামুটি সবার কাছেই পরিচিত । এটা হচ্ছে কারও শাশুড়ির প্রতি কারও ভয় । যারা বিবাহিত তাদের মধ্যে কখনও না কখনও এই ভয়ংকর ভয় কাজ করে । পশ্চিমা সমাজে এই ভয় এতটাই বেশী যে , তাদের সিনেমা এবং অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই এই বিষয়টি উঠে আসে । প্যান্থারাফবিয়ার সাথে সম্পর্কিত আরেকটি ভয় হচ্ছে সৎ মায়ের প্রতি ভয় যার বিখ্যাত ভুক্তভোগী হচ্ছে সিন্ডারেলা ।
৫। ডেমনোফবিয়া (শয়তানের ভয় )
ডেমনোফবিয়া হচ্ছে অতিপ্রাকৃত শয়তানের প্রতি একটি অস্বাভাবিক এবং পুনঃ পুনঃ ঘটনশীল ভয় যেখানে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, শয়তানের অস্তিত্ব আছে এবং মানুষের ক্ষতি করার জন্য এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে । যদিও যারা এই ভয়ে আক্রান্ত তারা বুঝতে পারে যে, তাদের এই ভয় অতিরঞ্জিত এবং অমূলক তবুও তারা এই ভয় থেকে বের হতে পারে না । তাই যখন শয়তানের বিষয়ে আলোচনা করা হয় তারা অস্বাভাবিক উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে , কোন অন্ধকার ঘরে বা গাছ পালা ঘেরা জায়গা অতিক্রম করে অথবা যখন কোন শয়তানের এক্সরসিজম এর সিনেমা দেখে তখন অস্বাভাবিক ভয় পেতে থাকে। যারা এইরকম ভয়ে আক্রান্ত প্রায়ই দেখা যায় যে, তারা তাদের গলায় রসুনের মালা পরিধান করে আছে, ক্রস বহন করছে অথবা গুলিভর্তি পিস্তল বহনকরছে শয়তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
৬। আইসোপট্রফবিয়া ( আয়নার ভয় )
সাধারনভাবে আইসোপট্রফবিয়াবলতে আয়না ভয় পাওয়াটাকে বোঝায় । আরও নির্দিষ্টভাবে বলা যায় যে, এটা হচ্ছে আয়নার ভেতর দিয়ে আধ্যাত্মিক বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের ভয় । এই ভয়ে আক্রান্ত ভুক্তভোগীরা প্রায়ই অযৌক্তিক উদ্বেগ এর মধ্যে থাকে যদিও তারা জানে যে, তাদের এই ভয় অযৌক্তিক । কারন তাদের এই ভয়ের পেছনে প্রায়ই কিছু কুসংস্কার জড়িয়ে থাকে । তারা এটা মনে করে যে, আয়না ভেঙ্গে যাওয়া অশুভ অথবা তারা যদি আয়নার দিকে তাকায় তাহলে অতিপ্রাকৃত কিছু আয়নার ভেতর থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবে । এই ভয়ে তারা আয়না দেখতে ভয় পায় এবং আয়না এড়িয়ে চলে ।
৭। ডিপনোফবিয়া ( রাতের খাবারের সময় আলোচনা করার ভয় )
রাতের খাবার টেবিলে যে, আলোচনা হয় সেটাকে অনেকে ভয় পায় । আর এই ভয়ের নাম ডিপনোফবিয়া । এটা সত্য যে, খাবারের টেবিলের আলোচনা মাঝে মাঝে অপ্রীতিকর হতে পারে কিন্তু যাদের মধ্যে এই ডিপনোফবিয়া আছে তারা কোন কারন ছাড়াই এই রাতের খাবারের টেবিলের আয়োজনটাকে এড়িয়ে চলে অন্য মানুষের সাথে আলোচনা করার ভয়ে ।
৮। পেডিওফবিয়া ( পুতুলের ভয় )
পেডিওফবিয়া হচ্ছে পুতুলের প্রতি অযৌক্তিক ভয় । যারা এই ভয়ে আক্রান্ত তারা যে শুধু কোন ভয়ংকর দর্শন পুতুলেই ভয় পায় তা নয় । তারা সব ধরনের পুতুলকেই ভয় পেয়ে থাকে ।
৯। ম্যাগিরোকফবিয়া ( রান্নার ভয় )
ম্যাগিরোকফবিয়া হচ্ছে রান্নার প্রতি ভয় । ম্যাগিরোকফবিয়া শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ mageirokos থেকে যার অর্থ হচ্ছে, “রান্নায় দক্ষ ব্যক্তি” । যদি কেউ একা বাস করে তবে এই ভয় তাদেরকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে পরিচালিত করে । এই ভয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রান্নায় দক্ষ ব্যক্তিদের প্রতি চরম ভীত হয়ে পড়ে এবং এই ভয় এবং অপর্যাপ্ততার অনুভূতির পেছনে অনেক রোগের কারন থেকে থাকতে পারে ।
১০। এগিরোফবিয়া ( রাস্তা পার হওয়ার ভয় )
এগিরোফবিয়া হচ্ছে রাস্তা, মহাসড়ক বা অন্যান্য গাড়ি বহুল রাস্তা পার হওয়ার ভয় অথবা যানবাহন বহুল রাস্তায় নিজেদের নিয়ে ভয় । এগিরোফবিয়া শব্দটি এসেছে গ্রীক gyrus শব্দটি থেকে যার অর্থ হচ্ছে ভয়ের কারন হিসেবে যানবাহন থেকে ঘুরে যাওয়া । এই ভয় এর কিছু ভাগ আছে । যেমন – ভুক্তভোগীরা প্রশস্ত রাস্তা নির্দিষ্টভাবে বলা যায় যে, শহরতলিসুলভ একমুখী রাস্তা ভয় পায় আবার যেকোনো জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হতে ভয় পায় এমনকি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হতে ভয় পায় । তবে গাড়ির ভয় আর রাস্তা পারাপারের ভয় এক নয় ।
লেখিকা সম্পর্কেঃ শারমীন আক্তার সেতু। আমি পেশায় একজন মনোবিজ্ঞানী । কবিতা লিখতে এবং পড়তে পছন্দ করি । মনোবৈজ্ঞানিক ফিচার লেখার সাথে যুক্ত আছি । তাছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও লিখতে এবং জানতে পছন্দ করি । আমি এর আগে পরামর্শ .কম এ লেখার সাথে যুক্ত ছিলাম । এখন কিছু ইংরেজি সাইটে অনুবাদের কাজ করছি । আমার শখ ভ্রমন এবং গান গাওয়া । বাগান করতে পছন্দ করি এবং বিভিন্ন গাছ,ফুল্,ফল এবং নতুন নতুন জায়গার সাথে পরিচিত হতে ভাল লাগে ।