ভৌতিক অণুগল্প -পথিক

কাকডাকা ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা এক গ্রাম্য স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে অভিক। হাতঘড়ির কাঁটা কি আলসামো করে ধীরগতিতে চলছে নাকি সূর্য আকাশের সাথে অভিমান করে আজ একটু বিলম্বে দেখা দিচ্ছে এসব সাত-পাঁচ ভেবে বাল্যবন্ধু ইমনের অপেক্ষায় অভিক।
বহুবছর বাদে গ্রামে আসা হচ্ছে তার। অভিক আর তার গ্রাম- দুজনের কাছেই দুজনকে বড্ড অচেনা ঠেকছে।

-“তুমি আমাদের সেই ছোট্ট অভিক না।আমাদের পলাশের ছেলে ?”
অচেনা গলার স্বর অভিকের ভাবনার ছেদ ঘটায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকের চোখজোড়া ছাড়া আর সবটায় শীতের প্রকোপ হতে সুরক্ষার কবজে ঢাকা।
-“আপনাকেতো ঠিক চিনতে পারলাম না। ”
-“আমি তোমার পাশের বাড়ির পরেশ কাকা। তোমার বাবার বন্ধু। ”
-“কেমন আছেন কাকা? কতো বছর বাদে দেখা। ”
-“বাড়ির পথ নিশ্চয় চিনতে পারছোনা? চলো আমি এগিয়ে দেয়। ”
-“আপনি এতো ভোরে এই স্টেশনে?কোথাও কি যাচ্ছেন। ”
-“যাচ্ছি বাবা। সে অনেক দূরের পথ। তোমার বাড়ি চলে এসেছে। সামনের পথ ধরে সোজা এগিয়ে যাও। ভালো থেকো। ”

-“অভিক তুই বাড়ির পথ চিনলি কি করে? ”
-“তুই স্টেশনে এলিনা কেন ইমন।আমি তো পরেশ কাকার……”
-“আর বলিসনা। একটু আগে পরেশ কাকা মারা গেছেন। তুই আসবি শুনে বলেছিলো আমার সাথে যাবেন স্টেশনে। মাঝরাত্রিরে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক। তারপর সব শেষ। “

অভিকের শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে যাওয়া শীতল স্রোত যেন দুচোখে আঁধার নামার পূর্বাভাস।