বাংলাদেশ-ভারত টি ২০ সিরিজ- তারুণ্যের শক্তিতেও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

পঞ্চপান্ডব ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত কী হবে সে কালো মেঘ যখন ঘন হয়ে আসছিল তখনই আশার আলো হয়ে আসছেন তরুণ-তুর্কিরা। কেউ কেউ হয়ত নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন, কেউবা আবার হারিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ ক্রিকেটারদের তো একদিন অবসর নিতেই হবে, তখন তরুণেরায় এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশের ক্রিকেট। রবিবার ( ৩ নভেম্বর) ভারতের মাটিতে ভারতকে হারাতে তরুণদের অবদান সেই আলোর পথই দেখায়।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে ১০০০তম ম্যাচে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ ও ভারত। গত ম্যাচের আগে পর্যন্ত দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যা, ৮টি ম্যাচের ৮টিতেই জয় ভারতের। অবশ্য, শেষ বলে হারের দুঃখ আছে আমাদের। অবশেষে সেই জুজু কাটিয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়টা তুলে নিতে পথ দেখিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তার আগে সৌম্য সরকার, নাইম শেখ মজবুত করে দেন দলের ভিত। মুশফিকের সঙ্গ নিয়ে বাকি কাজটা সারেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। সেটাও আবার তাদের মাটিতে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে ওয়ানডে অধিনায়ক যেন সবার অভিভাবকের মতো হয়ে আছেন। তার নেতৃত্বগুণ দেশ- বিদেশের প্রশংসিত। চোটের কবলে পড়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা ছেড়েছেন অনেক আগেই। টি-টোয়েন্টি সংস্করণকেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলেছেন বছর দেড়েক আগে। খেলছেন শুধু ওয়ানডে ক্রিকেট, কিন্তু খুব নিকটে আর এই ফরম্যাটের খেলা নেই। তাই পঞ্চপান্ডবের অভিভাবককে ছাড়াই অনেক ম্যাচ খেলেছে এবং খেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

Source: BdCricTime

মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই সাকিব আল হাসানকে গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্বটাও মুশফিকুর রহিমের থেকে নিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আসলো সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর। তাকে ছাড়া হয়ত ভেঙে পড়বে বাংলাদেশের ক্রিকেট, এমন দুশ্চিন্তা যে কারো মাথায় আসেনি- তা কিন্তু নয়। কিন্তু মুশফিক- রিয়াদদের নির্দেশিত পথে চলে তরুণরা জয় তুলে নিয়ে সেটি অভিজ্ঞ সাকিব- তামিমদের নামেই উৎসর্গ করেছেন।

দিল্লির বায়ূ দূষণের থেকে বাংলাদেশের সমর্থকদের বেশি চিন্তায় ছিল সাকিব ছাড়া ভারতের মাটিতে কেমন করবে বাংলাদেশ দল। কারণ একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসাবে যে এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারেরই আছে ভারতের মাটিতে দীর্ঘদিন ধরে খেলার অভিজ্ঞতা। সাকিবের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়ত সাজিয়েছিলেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও। কিন্তু সাকিব বাদ পড়ায় নতুন করে সাজাতে হয়েছে সেসব। কিন্তু হতাশ করেননি তুরণ ক্রিকেটাররা।

বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আল- আমিন হোসেনদের সাথে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তরুণ দুই বোলার আফিফ হোসেন ধ্রুব ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ধ্রুব দেড় বছরেরও অধিক সময় পরে দলে ফিরেই ত্রিদেশীয় সিরিজে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন। ভারতের বিপক্ষে ইতিহাস রচনার ম্যাচে ব্যাট হাতে তার নামার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু বল হাতেই ঘায়েল করেছেন প্রতিপক্ষকে। ৩ ওভারে মাত্র ১১ রান খরচে অসাধারণ এক ক্যাচে শিবম দুবেকে। আরেক তরুণ বিপ্লব অভিষেক ম্যাচে ২ উইকেট শিকার করার পরে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও স্বীকার করেছেন ২ উইকেট। এই তরুণদের পারফরম্যান্সই আশা জাগায়, ভাবতে শেখায় পঞ্চপান্ডব ছাড়াও একদিন এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

blank
Source: Internet

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক যেমনটা বলেছেন, ‘সাকিব তামিম ছাড়াও বাংলাদেশ যে দুর্দান্ত জয় তুলে নিতে পারে সেটা দেখেই স্বস্তি লাগছে। এছাড়া আমি ও রিয়াদ ভাই না থাকলেও তরুণেরা ঠিকই নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ দিয়ে জয় তুলে নিতে পারবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।’

ক্রিকেটারদের বিদ্রোহে এই ভারত সিরিজ একসময় পড়েছিল আশঙ্কায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটারদের সেসব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ায় ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও ভালো কিছুর আশা করা যাচ্ছে। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নতি হলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এগিয়ে যাবে দল।