একজন মিনি ও বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাস বদলে দেওয়া পারফরম্যান্স

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শকদের আনাগোনা চলছে৷ বাইরের গেটে লোকজনের দীর্ঘ লাইন৷ সদ্য শেষ হওয়া ত্রি-দেশীয় সিরিজের ফাইনালে হাতুরু শিষ্যদের কাছে টাইগারদের নাকানি-চুবানি খাওয়ার দৃশ্যটা ভুলে তারা যে ফের স্টেডিয়াম মুখো হয়েছে- এটা দেশের ক্রিকেটীয় উন্মাদনাই প্রকাশ করে৷ তারা বিশ্বাস করে- দল এখনো সেই ম্যাচুরিটি খোয়ায়নি৷ আর সেই বিশ্বাসের প্রতিদান দিতেই যেন নবাগত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন৷ আর চট্রগ্রামের দর্শকরা দেখল, তামিম-ইমরুল জুটির ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিং৷ মাত্র ৫৩ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেললেন ওপেনার তামিম ইকবাল৷ দলীয় ১৬ ওভারের মাথায় লংকান অফ-স্পিনার পেরেরাকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে খোয়ালেন নিজের মূল্যবান উইকেট৷ স্কোর বোর্ড বলছে, স্বাগতিকদের সংগ্রহ তখন ৭২/১৷ কিন্তু সেটাকে ১৭২ পর্যন্ত টেনে নিতে পারলেন না ইমরুল-মমিনুল জুটি৷ ১২০ রানে নিজের খেই হারিয়ে ফেললেন কায়েস৷ বাস্তবিকই নিজের দুর্বুদ্ধিচার পরিচয় দিলেন তিনি৷ ফ্রন্ট ফুটে খেলতে গিয়ে সানদাকানের যে গুগলিটি হাটুর ওপরে লাগলো, তা যে স্টাম্প পর্যন্ত যেতে যেতে আরো উঁচুতে উঠবে- সেটা আর কে না জানে৷ হাত তুললেন আম্পায়ার, অথচ একটা রিভিউ খোয়া যাবার ভয়ে সেটা চাইলেন না ইমরুল৷ রিপ্লে তে ভুলটি ধরা পড়ল৷ ততক্ষণে তিনি ড্রেসিংরুমে ঢুকে গেছেন৷ এরপর দিনের বাকী সময়টা মমিনুল-মুশফিকের৷ চা-বিরতিতে যাবার আগে মমিনুল তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের দ্রততম এবং ষষ্ঠ সেঞ্চুরি৷ আর ফিরে এসে নিজের ফর্ম ধরে রাখার ইঙ্গিত হিসেবে মুশফিক তার নিজের ১৯তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন৷ দল তখন বেশ স্বস্তিতে৷ ভালোয় ভালোয় দিনের শেষভাগের খেলাও এগোচ্ছে৷ কিন্তু বিপত্তিটা ঘটালো নতুন বল৷ দিনের আট ওভার বাকী থাকতে লংকান অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল নতুন বল তুলে দিলেন পেস নেতৃত্বে থাকা লাকমালের হাতে৷ আস্থার প্রতিদান দিলেন তিনি৷ তৃতীয় উইকেট জুটিটি (মুশি-মমিনুল ২৩৬) ছত্রখান করে ছাড়লেন৷ শেষ বিকেলে দর্শকদের স্বস্তির দফারফা করে দিয়ে একে একে তুলে নিলে মুশফিক, লিটনকে৷ অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে আলতো ছোঁয়া দিলেন মি. ডিপেন্ডেবল৷ উইকেট কিপার ডিকওয়েলা তালুবন্দি করলেন তাকে৷ আর লিটন তো অচিমাত্রায় টেস্ট খেলুড়ে বনে গিয়ে নিজের প্রথম বলটা রাইজ করে খেলতে গেলেন৷ লাকমালের সুইং করা ডেলিভারিটি অফ স্টাম্প উপরে ফেলল৷ দলীয় ৩৫৬ রানের মাথায় নিজের আক্ষেপপূর্ণ ৯২ রানে ফিরলেন মুশি, লিটন তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি৷ দিনের বাকী সময়টার হাল ধরলেন মাহমুদুল্লাহ৷ দিনশেষে স্বাগতিকদের সংগ্রহ দাঁড়াল ৩৭৪/৪৷ মমিনুল ১৭৫, আর স্বয়ং অধিনায়ক অপরাজিত থাকলেন ৯ রানে৷

জহুর আহমেদের উইকেট যেন বড়ো সংগ্রহের কথাই বলছিল৷ সাথে মিনির সাবলিল ব্যাটিং দর্শকদের স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাচ্ছিল৷ অন্তত সে যতটা ডমিনেটেড ছিল লংকান বোলারদের ওপর৷ নামটা হাতুড়েসিংহের দেওয়া। কিন্তু এখন এই নামেই সতীর্থরা ডাকে।

কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি৷ কে জানতো আগের দিনে অনায়াসে দেড়শো পেরুনো লিটল মাস্টার পরদিন ড্রেসিংরুমে কপাল ফেলে মাঠে নামবেন৷ সকালবেলা ভেজা মাঠে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ২৪ রান দূরেই থেমে গেল তার ঝলমলে ইনিংসটি৷ এদিন মাত্র ১ রান যোগ করে সাজঘরে ফেরেন মমিনুল৷ এরপর মোসাদ্দেকও বেশিক্ষণ টিকল না৷ নিজের ছন্দ হারা ব্যাটিং দেখিয়ে ব্যক্তিগত ৮ রানে ফিরে গেলেন৷ রঙ্গনা হেরাথকে লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ ফিল্ডার সানদাকানের হাতে ধরা পড়তে হলো তাকে৷ এরপর মেহেদী মিরাজও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি৷ লাহিরুর দারুণ এক থ্রোতে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি৷

৩৫৬/২ থেকে ৪১৭/৭ ৷ একেই বলে উল্টো রথে চড়া৷ মাত্র এক সেশনের ব্যবধানে লংকানরা চালকের আসনে বসে গেলেন৷ মূলত লড়াইটা তখন মাহমুদুল্লাহ বনাম শ্রীলংকা৷ অবশ্য তাকে খানিকটা সঙ্গ দিয়েছে সানজামুল, মুস্তাফিজুর৷ কিন্তু সেটা যে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল- তা যেন স্ট্রাইক এন্ড ধরে রাখা অধিনাককে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল৷ প্রত্যেক ওপারে শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে অপর প্রান্তকে সুরক্ষিত রাখছিলেন তিনি৷ এই যখন অবস্থা, সফরকারীদের উদ্দারকর্তা আবারো লাকমাল৷ ম্যাচের ১৩০তম ওভারে মুস্তাফিজকে তুলে নিয়ে স্বাগতিকদের ৫১৩ রানের ইনিংসটি থামিয়ে দিলেন তিনি৷ শেষপর্যন্ত অধিনায়ক ৮৩ রানে অপরাজিত৷

এখন দরকার একটা রাজকীয় শুরু৷ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দর্শকদের আনাগোনা ত্রমশও বাড়ছে৷ সেই সাথে রোদের তেজও৷ তেতে ওঠা পিচ থেকে বাড়তি ফায়দা ওঠাতেই ফিল্ডিংয়ে নামলো বাংলাদেশ৷ শুরু হলো শক্তহাতে৷ ২.৩ ওভারের মাথায় কোন রানের খাতা খোলার আগেই মিরাজের প্রথম শিকার করুনারত্নে৷ টার্ন করা অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বলটি ঠেলে দিতে গিয়ে স্লিপে ইমরুলের হাতে ধরা পড়লেন৷ আর এর পরপরই ঘটল বোলারদের ছন্দপতন৷ ওপেনার কুশল মেনডিসের সাথে জুটি বাঁধলেন তিন নম্বরে নামা ডি সিলভা৷ ঝড়ো, অথচ সাবলিল ব্যাটিং দেখিয়ে চমকে দিলেন গ্যালারির দর্শকদের৷ উপরন্ত দিনের শেষভাগে অধিনায়কের এলোমেলো সিদ্ধান্ত দেখতে হলো তাদেরকে৷ বোলাররাও যেন যুৎসই ডেলিভারি দিতে পারছিলেন না৷ কিংবা অতিমাত্রায় ব্যাটিং পিচ থেকে কিছু পাবার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা৷ ফলশ্রুতিতে ডি সিলভা ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরী তুললেন, মেন্ডিস অপরাজিত থাকলেন ৮৩ রানে৷ দলীয় ১৮৭/১ নিয়ে সফরকারীরা দিনের ইতি টানলেন৷

পরদিনটা শুরু হলো লংকানদের সেই উল্টো রথে চড়া অবস্থাতেই৷ বোলারদের সেই পুরনো চেহারা৷ মাঠে দর্শক খুব কম৷ গুটিকতক এদিকওদিক যাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাদের যেন আর তর সইছে না৷ চাতক পাখির মতো একটা উইকেটের জন্য চেয়ে আছে৷ কিন্তু তাদের আকুতি থোরাই কেয়ার করল বোলাররা৷ মধ্যাহ্ন ভোজের আগে কোন লংকান ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে পারল না তারা৷ নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি করে ফেললেন মেনডিস, ডি সিলভা যেন আরো পোক্ত, নতুন উদ্যমে গেড়ে বসেছেন উইকেটে৷

শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় সেশনের পানি-বিরতির আগে ৩০৮ রানের এই জুটিটি ভাঙেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ৷ অফ স্টাম্পের বাইরে দেওয়া বাউন্সটি পুল করতে গিয়ে আকাশে ভাসান ডি সিলভা৷ উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাস সেটিকে তালুবন্দি করতে ভুল করেননি৷ গ্যালারির দর্শকরা তখন প্রাণ ফিরে পেল৷ কিন্তু সে উৎসব বিষাদে রূপ নিতে দেরী হয়নি৷ যখন মেনডিস, আর রোশান মিলে স্কোরবোর্ডে আরো ১০৭ রান যোগ করেন৷ এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মেনডিস বেশ মেজাজি ব্যাটিং দেখিয়েছেন৷ চার ছয়ের ফুলঝুড়িতে যখন ইতিহাসের দিকে এগোচ্ছিলেন, তখনি তাইজুলের নিজেকে ফিরে পাওয়া৷ ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে তাকে মারতে গিয়ে মিড অনে মুশফিকের হাতে ধরা পরেন তিনি৷ মাত্র চার রানের জন্য কুশাল মিস করেন আকাঙ্খিত ডাবল সেঞ্চুরী৷ স্বাগতিকরা তখন ম্যাচে ফেরার খানিকটা আভাস দিচ্ছিল৷ কিন্তু আবারো যেন বাড়া ভাতে ছাই ঢালল রোশান-চান্দিমাল জুটি৷ তৃতীয় দিনের খেলা বন্ধের ঘোষণা আসবার আগে তারা অবিচ্ছিন্ন ছিলেন ৮৯ রানে৷ ৫০৪/৩ রানের এক বিশাল বোঝা প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে স্বস্তিতে হোটেলে ফিরল সফরকারীরা৷
.
প্রথম দুদিনের পর পরিস্থিতিটা এমন ছিল যে- বাংলাদেশই এই ম্যাচে তখন পর্যন্ত আধিপত্য ধরে রেখেছে৷ কিন্তু সময়ের সাথে হাতুরু শিষ্যরা যেন একেকটা কামান হয়ে টাইগারদের সামনে এসে দাঁড়ালো৷ তৃতীয় দিনের ব্যবধানে এই ম্যাচের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল তারা৷ কথায় বলে- ওস্তাদের মার শেষ রাতে৷ কথাটা চতুর্থ দিন যেন ফলেই গেল৷ রোশান ডে সিলভা-চান্দিমাল মিলে ওস্তাদের পক্ষ থেকে সেই মারটা যেন দিয়ে গেলেন টাইগারদের৷ জহুর আহমেদের গ্যালারি নিষ্প্রাণ৷ খাবারের দোকানের বার্গার গুলো ড্যাব ড্যাব করে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কিন্তু দর্শক কই? মাঠের পারফর্মেন্স বলছে- এ যে ঘোড়ারোগের সেই পুরনো বাংলা দেশ৷ সেই তকমা গা থেকে ঝেড়ে ফেলে মধ্যাহ্ন ভোজের আগে আশার আলো হয়ে ফুটে বের হলেন মিরাজ৷ ম্যাচের তৃতীয় শতক হাকানো রোশানকে তুলে নিলেন তিনি৷ লিটনের হাতে ক্যাচ দেবার আগে ১০৯ রানের ঝলমলে ইনিংস উপহার দিলেন দলকে৷ সফরকারীদের লিড বাড়ছে হু হু করে৷ সেটার গতি ঠিকঠাক রাখতেই যেন অভিজ্ঞ ডিকওয়েলা বলের সমান গতিতে ব্যাট চালালেন৷ ৪৭ বলে করলেন ক্যারিয়ারের ৮ম অর্ধ শতক৷ চা-বিরতির আগে লংকান উইকেটরক্ষক সাজঘরে ফেরার আগে স্কোরবোর্ডে যোগ করলেন আরো ১১৩ রান৷ সেখান থেকে সফরকারীদের বেশিদুর আর টানতে পারেনি৷ হেরাথ, লাকমালরা মিলে যা যোগ করলেন, তাই নিয়ে লিড গড়ালো দুইশোতে৷

blankশেষ বিকেল৷ রোদ মরে আসছে৷ উইকেটের ঝাঁঝও কমছিল৷ গুটিকতক দর্শক যা আছে, দুরু দুরু বুকে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে৷ আশংকা- এই বুঝি সব শেষ হয়ে যায়৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে দুই একটা বড় টার্ন ছাড়া পিচ তখনো স্থিতিশীল৷ সে চিত্র ফুটেও উঠল টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংসে৷ ধৈর্য্যশীলতার সাথে শুরু করলেন দুই ওপেরনার৷ ১৫ ওভারে ৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি৷ ভীমরতিটা আগে ধরল ইমরুলকেই৷ পেরেরার স্পিনিং ডেলিভারিটি চিকি খেলতে গিয়ে লাগল ব্যাটের টো’য়ে৷ শর্ট স্কয়ার লেগে স্বয়ং লংকান অধিনায়ক দাঁড়িয়ে তখন৷ ক্যাচটি লুফে নিতে দেরি করলেন না৷ টাইগাররা খোয়ালেন ১ম উইকেট৷ কে জানতো- দিনশেষে সেই অংকটা গিয়ে তিনে দাঁড়াবে৷! হ্যাঁ, চতুর্থ দিন গিয়ে শেষ হলো মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে৷ অফ স্টাম্পের বাইরের বল চার্জ করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন তামিম(৪১)৷ এর কয়েক মুহূর্তে পরেই মুশফিকের কপাল পুড়ল অভিনব উপায়ে৷ ব্যাট ছোঁয়া বল তার কেডসের ওপর পড়ে চলে গেল শর্টের ফিল্ডারের হাতে৷ বাকী সময়টা পার করলেন সেই মমিনুল, আর লিটন জুটি৷ স্বাগতিকরা হোটেলে ফিরল ৮১/৩ স্কোর নিয়ে৷

বলা চলে- এই ম্যাচে টাইগারদের দুঃস্বপ্নের রাত এটি৷ দল তখনো ১১৯ রানে পিছিয়ে৷ হাতে আছে ৭ উইকেট৷ কে জানে- পরদিন প্রথম প্রহরেই না এই বাঁধ ভেঙে যায়৷ ভয়টা অমূলক নয়৷ ইতিপূর্বে টাইগারদের এমন রেকর্ড রয়েছে৷ ব্যাটিং কলাপ্স যেন বর্তমান কোচ সুজন শিষ্যদের কাছে যেন জল-ভাত হয়ে গেছে৷ কিন্তু দর্শক? তবু তো তারা বুক বাঁধে৷ এও তো তাদের পরনো রোগ৷ সবার একটাই চাওয়া- অন্তত ড্র হোক, তবু হার নয়৷ জহুর স্টেডিয়ামে আজও দর্শক কম৷ গ্যালারির এমাথা ওমাথায় অলস ভঙ্গিতে বসে আছে৷ এবারেও উদ্ধার কর্তা সেই মমিনুল৷ ক্রিজের অপর প্রান্তে আগের ইনিংসে শুণ্য রানে ফেরা লিটন৷ আজ যেন নিজেকে মেলে ধরেছেন৷ লাঞ্চ বিরতিতে যাবার আগে এ জুটি যোগ করলেন আরে ১০৬ রান৷ স্বাগতিকরা তখন মাত্র ১৩ রানে পিছিয়ে৷ মমিনুল তার ব্যাক্তিগত ৭০ নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শুরু করে পানি পানের বিরতির আগেই তুলে নিলেন ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় শতক৷ নাম তুললেন রেকর্ডের পাতায়৷ প্রথম বাংলাদেশি কোন ব্যাটসম্যান এক ম্যাচে দুই ইনিংসেই শতক হাকানোর কৃতিত্ব দেখালো৷ সেই সাথে এই অনবদ্য পারফরমেন্সে ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে গেলেন পনেরোটি ধাপ! তার কিছুক্ষণ আগে নিজের প্রথম অর্ধশতক পূর্ণ করেছেন লিটন৷ দুজনের ১৮০ জুটি ভাঙে দলীয় ২৬১ রানে৷ মমিনুল ফিরলেন ১০৫ রানে৷ ততক্ষণে ম্যাচ ড্র হবার ইঙ্গিত স্পষ্ট৷ দর্শকদরা অপেক্ষা করছে লিটনের প্রথম শতকের জন্য৷ কিন্তু সে যেন এক অধরা কোন জিনিস৷ আবার অনেকটা হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলার মতোন ব্যাপার৷ ঠিক সেই কাজটিই করলেন লিটন৷ চা-বিরতির আগে লংকান স্পিনার হেরাতকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়লেন তিনি৷ মাত্র সেই ছয় রানের আক্ষেপে ভাটা পড়ল লিটনের প্রথম শতকটি৷ ব্যক্তিগত ৯৪ রানে ফিরলেন লড়াকু এই টাইগার উইকেটরক্ষক৷ দল চা-বিরতিতে গেল ২৮১/৫ স্কোর নিয়ে৷ ৮১ রানের লিড, হাতে ৫ উইকেট৷ ফিরে এসে মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক জুটি ব্যাট করলো ৮ ওভার৷ যোগ হলো আরো ১৯ রান৷ আর তাতে ম্যাচের যা সমীকরণ দাঁড়ালো, তাতে দুই অধিনায়কেরই ড্র মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় রইল না৷ দিনের ১৭ ওভার বাকী থাকতেই ফুরালো উপভোগ্য এই টেস্ট ম্যাচটি৷ হয়তো পরতে পরতে টান টান উত্তেজনা ছিল না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং পিচের এই ম্যাচ কিছু প্লেযারকে তো রানে ফেরালোই৷ সেই সাথে ফেরালো বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের উপর ভর করেই মিনি করেছেন এই অসাধারণ পারফরমেন্স।

তাই,
আমরা বিশ্বাস রাখবো যতোদিন
হারার আগেই বাংলাদেশ হেরে যাবে না ততোদিন …