পৃথিবীখ্যাত কিছু প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিমূলক কার্যাবলী

যদিও  আমরা ছোট কাজগুলোই বেশি সন্দেহজনক,ধূর্ততা এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত ভাবি কিন্তু অনেক বড় কোম্পানিও এসব কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত।এমনকি অনেক  সম্মানিত প্রতিষ্ঠানও হাতেনাতে ধরা পড়েছে।

এরূপ কিছু ঘটনার উদাহরণ হল-

সিগনেট জুয়েলারস

২০১৬ সালে BuzzFeed ”কে” কোম্পানিকে নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে।এতে বলা হয় মার্কিন মহিলারা যারা হীরার আংটি মেরামত এর জন্য ”কে” এর নিকট যায় তখন মেরামতকৃত নতুন আংটি টি সম্পূর্ণ হীরার দেয় না। তারা একটি মনুষ্যসৃষ্ট, যথেষ্ট সস্তা বিকল্প moissanite নামক জিনিস মিশিয়ে দেয়।এই রিপোর্টটির প্রাক্কালে ”কে” কোম্পানির প্রধান কোম্পানি সিগনেট জুয়েলারস লিমিটেড এর ২০ শতাংশ বিক্রি কমে যায়।প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক লাইট হীরা বদল করার  রিপোর্ট সংবরণ করার চেষ্টা করে এবং বিক্রয় বাড়ানোর জন্য সেলস প্রমোশন দেওয়ার কার্যক্রম করে।কিছুদিন পরেই অন্য  প্রতিবেদনে তাদের  অর্থায়ন সম্পর্কে প্রকাশ করা হয়। ধূর্ত হিসাব  ব্যবহার করে কোম্পানি গ্রাহকদের থেকে বিভিন্নভাবে  লোকসান ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।এই সব খারাপ খবর এর পর কোম্পানিটির অনেক ক্ষতি হয় এবং নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন এটা  স্বল্প বিক্রেতাদের একটি চালাকি।

বেস্ট বাই এর মিথ্যা ওয়েবসাইট

মে মাসের ২০০৭ সালে  বেস্ট বাই এর গ্রাহকরা কানেকটিকাট অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে অভিযোগ জানান যে বেস্ট বাই এর ওয়েবসাইট এবং তাদের প্রকৃত অবস্থানের পণ্যগুলোর মাঝে দামের অসঙ্গতি। অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির সাথে কথা বললে তারা বলে ব্যাপারটি সমাধান করবে।কিন্তু গ্রাহকরা পরবর্তীতে দাবি করে এখনো এই সমস্যাটি বিদ্যমান।একজন গ্রাহক অনলাইনের ওয়েবসাইটে একটি পণ্যের দাম দেখে এবং ঐ গ্রাহক তাদের দোকানে যায়।দেখা যায় যে ওয়েবসাইট এবং দোকানের দামের মধ্যে ভিন্নতা।ওয়েবসাইটে মূল্যটা বেশি ছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জানা যায় দুটি ওয়েবসাইট ছিল এবং তারা প্রায় পুরোপুরি অভিন্ন ছিল যার ফলে গ্রাহকরা বুঝতো না।একজন মুখপাত্র বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন।

ওয়েল্স ফারগো ব্যাংক

২০১৬ সালে ওয়েল্স ফারগো ব্যাংক এর কিছু গ্রাহক রিপোর্ট করেন, কোন কারণ ছাড়াই নাকি ব্যাংক তাদের কাছ থেকে ব্যাংক ফি চার্জ করা হয়েছে।অতঃপর ব্যাংক ব্যাপারটি তদন্ত করা শুরু করে এবং আবিষ্কার করে যে প্রায় ২মিলিয়ন এর উপর Ghost Account রয়েছে।

খবর নিয়ে জানা যায় গ্রাহকদের অজান্তে হিসাবগুলো খোলা হয়েছে,তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট কর্মচারীদের দ্বারা গোপনে খোলা হয়।তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিক্রয় বেশি দেখিয়ে যেন বোনাস পেতে পারে।

এ কাজে অন্তর্ভুক্ত ৫,৩০০ কর্মচারীকে বহিষ্কার করা হয়।

ওয়ালমার্ট

২০০৫ সালে ওয়ালমার্টের কর্মচারী জানতে পারে যে ওয়ালমার্ট ডি মেক্সিকো ব্যাপক দুর্নীতির সাথে সংযুক্ত।ইতিমধ্যে   মেক্সিকো দুর্নীতির সমস্যায় পরিচিত হয়,তার মধ্যে ওয়ালমার্ট ডি মেক্সিকো ঘুষ কেলেঙ্কারিতে  সব শীর্ষস্থানে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জানা যায় ওয়ালমার্টের মেক্সিক্যান সাবসিডিয়ারি দায়িত্বে নিয়জিত কর্মকর্তা মোট ২৪ মিলিয়ন অঙ্কের ঘুষের সাথে জড়িত ছিল।ওয়ালমার্ট ডি মেক্সিকো একটি স্বাধীন সাবসিডিয়ারি যার কারণে এর প্রধান কোম্পানি এই ঘটনার কিছুই জানতো না।এমনকি ওয়ালমার্ট ডি মেক্সিকো এর নির্বাহী কর্তা মার্কিন নির্বাহী কর্তা এর কাছে এই দুর্নীতি লুকিয়ে রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

ওয়ালমার্ট সব মেক্সিক্যান এর  কাজকর্ম বন্ধ করে দেয় কিন্তু যারা এই কাজে সহায়ক ছিল তাদের কোনরকম শাস্তি প্রদান করা হয়না।২০১২ সাল পর্যন্ত এই ব্যাপারটি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়।২০১৬ সালে  নিউ ইয়র্ক টাইমস ওয়ালমার্ট এর কেলেঙ্কারি প্রকাশ করে।

ব্যাংক অব আমেরিকা

২০১৪সালে ব্যাংক অব আমেরিকাকে প্রায় ৳৮০০মিলিয়ন  ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত অবৈধ কাজের জন্য জরিমানা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।ব্যাংক দ্বারা ধার্যকৃত অনেক ফী ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।এরূপ একটি ঘটনা হল গ্রাহকদের বলা হয় নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিনামূল্যে নিতে পারবে কিন্তু আসলে পরে তার জন্য মূল্য কেটে নেয়া হয় গ্রাহকদের থেকে।

ব্যাংকটি কিছু  অ্যাড-অন সেবা প্রদান করে গ্রাহকদের বিভ্রান্তিতে ফেলে এবং যেসব তথ্য গ্রাহকদের দিয়েছিলো তার অধিকাংশই ছিল বিভ্রান্তকর এবং পরিসেবাগুলি অদরকারি।অযথাই এসব এর জন্য গ্রাহকদের নিকট থেকে  ব্যাংক চার্জ ধার্য করে।২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাংক এসব কাজ করে।এর প্রভাব অনেক গ্রাহকের ওপর পড়ে।প্রায় ১.৯ মিলিয়ন গ্রাহক প্রভাবিত হয়।তাদেরকে তাদের নিজেদের ক্রেডিট অপেক্ষা বেশি খরচ বহন করতে  হয়েছিলো এই ঘটনার কারণে।  অবশেষে গ্রাহকদের অভিযোগে ব্যাংক অব আমেরিকা ২০১৪ সালে গ্রাহকদের ফান্ডে এরকম অতিরিক্ত খরচের অর্থ প্রত্যর্পণ করতে সম্মত হয়।

অশান ফাইনানশিয়াল কর্পোরেশন

অশান ফাইনানশিয়াল কর্পোরেশন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা বন্ধকী সংক্রান্ত ব্যাপারে গৃহমালিকদের দেনা-পাওনা নিয়ে কাজ করে।যুক্তরাষ্ট্রীয়দের মতানুসারে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্নরকম প্রতারণা করে গৃহমালিকদের বন্ধক নিয়ে।পুরনো চিঠি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে সময়মত তাদের বন্ধকীগুলির পরিশোধ করা হয় নি।কোম্পানি এই চিঠির উপর ভিত্তি করে তাদের ওপর ফী ধার্য করে।বাড়ির মালিকরা যদি এই ফী এবং অতিরিক্ত ধার্যকৃত মূল্য পরিশোধ করতে না পারে তবে কোম্পানি বাসার ওপর বন্ধকী শর্ত প্রয়োগ করে।এভাবে ১৮৫০০০ মালিক এর শিকার হয়েছে।

২০১১সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।তদন্ত করার পর সি.এফ.পি.বি অশান ফাইনানশিয়াল কর্পোরেশন কে ২০১৩সালে ২.১ বিলিয়ন জরিমানা বন্দোবস্ত এবং ১২৫মিলিয়ন বারিরমালিকদের ফেরত দেওয়ার আদেশ প্রদান করে।

এক্সনমোবিল কোম্পানি এবং জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটি যখন দেখা দেয় তখন মূলত জীবাশ্ম-জালানী কোম্পানিগুলোর উপরই দোষারোপ দেওয়া হয়।এটা অনেক সুপরিচিত খনি থেকে কয়লা অথবা তেল উত্তোলন এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয়।কিন্তু এক্সনমোবিল কোম্পানি এর বিশ্বাস এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কোন সম্পর্ক নেই।১৯৭০ এর শুরুর দিকে শিল্প বিশেষজ্ঞরা এক্সনমোবিল কোম্পানিকে সতর্ক করে বলে জলবায়ু পরিবর্তন তেল ব্যবসাকে প্রভাবিত করবে।এই অশুভ ভবিষ্যৎবাণী শুনেও এক্সনমোবিল কোম্পানি জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটি অস্বীকার করে।২০০৮ সালে জলবায়ু সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য কোম্পানিটি এক ক্যাম্পেইন এর ওপর $৩০ মিলিয়ন ব্যয় করে।কোম্পানিটি বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন তথ্য চাপা দেওয়ার ও চেষ্টা চালায়।