প্রজেক্ট গ্রিন ২: মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে চাইলে ঘরে এই গাছগুলো রাখা চাই

mosha-tree.png

প্রজেক্টি গ্রিন এর ১ম পর্ব পড়ুন প্রজেক্ট গ্রিন: ঘরের বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য রাখুন অক্সিজেন সমৃদ্ধ গাছ

মশা আমাদের দৈনন্দিন কর্মচঞ্চলতার দিনের এক ক্ষতিকর উপদ্রব। মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কতোই না চেষ্টা। কিন্তু কিছুতেই কিছু করার জো নেই। ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার ভয় প্রতিনিয়ত আমাদের চোখ রাঙানি দেয়। এক মুহূর্তেও আমাদের নিশ্চিন্ত থাকতে দিচ্ছে না এই মশা। এক দিকে মশারি না টাঙিয়ে ঘুমনোর কথা ভাবাও যায় না, অন্য দিকে আবার রাতেও গরমে ঘেমে নেয়ে এককার। সব মিলিয়ে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। চলছে নানা গবেষণা। ফলও মিলেছে খুব দ্রুত। নাসার এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে রাখা যায় এমন কিছু গাছ যা বাড়িতে মশার সমস্যা দূরে রাখতে পারবেন খুব সহজে।  মশা থেকে মুক্তির এই  কার্যকর ব্যবস্থা সত্যিই অসাধারণ, তাই না! আসুন জেনে নিই এমন কিছু গাছের তথ্য যা ঘরে রাখলে মশা তাড়াতে রাখবে  কার্যকর ভূমিকা।

(১)  লেমন থাইম:

লেমন থাইম বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। মশা তাড়াতে এই গাছের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন লেমন থাইমের পাতা গুঁড়ো করে ঘরে রাখলে মশার উপদ্রব ৬২% পর্যন্ত কমানো যায়।  ঘরের আলো বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় এ গাছ রাখলে দ্রুত বৃদ্ধি পায়।  সহজে মরে না এই গাছ।  বিভিন্ন রান্নায় উপকরণে এই গাছের পাতা ব্যবহৃত হয়।

(২) তুলসি :

তুলসিতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদানে ভরপুর। তাই মৌসুমী রোগ এবং সংক্রমণ সারাতে বেশ সাহায্য করে তুলসি। প্রবাদ আছে, যে বাড়িতে  তুলসি গাছ থাকে সে বাড়িতে কোন ভাইরাস ইনফেকশন জনিত রোগব্যাধি থাকেনা বা হয় না। কারন তুলসি গাছের হাওয়া ভাইরাসের জীবানুমুক্ত করে এবং দূর করে ব্যাকটেরিয়াও।তাই বাড়িতে তুলসিতলা রাখাই হত চারপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত, বিশুদ্ধ রাখার জন্য। আবার মশা তাড়াতেও সাহায্য করে এই তুলসি।

(৩) লেমন গ্রাস:

এটি এক ধরনের ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। এই গাছের মধ্যে থাকে ন্যাচারাল অয়েল সিনট্রোনেলা যা মশা তাড়ানোর কাছে ব্যবহার করা হয়। তাই বাড়িতে লেমন গ্রাস লাগালে রেহাই পেতে পারেন মশার হাত থেকে। লেমনগ্রাস অত্যন্ত সুগন্ধি, লেবুর গন্ধযুক্ত ঔষধি প্রায়ই এশিয়ান রন্ধনে ব্যবহৃত হয় ৷ এর অনেক ভেষজগুণ আছে। থাই বা চাইনিজ খাবার রান্নার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ লেমন গ্রাস। আপনি  ইচ্ছে করলেই বারান্দা বা এপার্টমেন্টের  এক কোণেই লেমন গ্রাস  লাগাতে পারেন।  তেমন কোন যত্নও নিতে হয় না। বেশ আলো বাতাস আছে এমন জায়গায় রাখুন এই গাছের চারা। দেখবেন কি সুন্দর বেড়ে উঠছে।

(৪)   গাঁদা:

এই ফুল লাগালে শুধু যে দেখতে সুন্দর লাগে তাই নয়, বিভিন্ন রকমের গাঁদা থেকে পোকামাকড়ও থাকে শতহাত দূরে। গাঁদা গাছে থাকা পাইরেথ্রামের গন্ধ পোক-মাকড়, মশা সহ্য করতে পারে না।  চাষীরা জমিতে গাঁদা গাছের শুকনা গুড়া বা অপ্রয়োজনীয় অংশ প্রয়োগ করে নেমাটোডের মতো মারাত্মক রোগের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া ক্ষত ও আঘাতে এর পাতার রস অত্যন্ত কার্যকরী।পাতার রস কান পাকা রোগ ছাড়াও ছত্রাকনাশক হিসেবে বেশ কার্যকরী।গাঁদা ফুলের নির্যাস টিউমারের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। গাঁদা ফুলের নির্যাস ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে এটি গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও চাষাবাদ হয়ে থাকে। বাগানের চারপাশ জুড়ে লাগাতে পারেন গাঁদা গাছ। শোভাও বাড়বে, মশাও হবে না বাড়িতে।

(৫)লেমন বাম:

লেবু পাতার গন্ধের মতো এর পাতার গন্ধ এতো তীব্র যে,  মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়  তাড়াতে  খুব সাহায্য করে। তাছাড়া,লেমন বামের চমৎকার কিছু গুণাগুণ আছে।  এই যেমন: স্নায়ুকে শান্ত রাখা, গাছের পাতা দিয়ে তৈরি হার্বাল চা হজমের সমস্যা, ঘুমের সমস্যাতেও উপকারী। অ্যারোমাথেরাপিতে লেমন বাম অয়েল শান্ত ও রিলাক্স এর জন্য ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ও কসমেটিক জগতে বহু কসমেটিক্সে ব্যবহার করা হয় লেমন বাম বিশেষ করে রিংকেলস দূর করার জন্য।

 (৬)  রসুন:

রসুনের গুনের শেষ নেই। রান্নায় যেমন অনন্য স্বাদ স্বাদ বাড়ায়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, হৃদ্‌স্বাস্থ্যের জন্য এবং ক্যানসারের মতো রোগ প্রতিরোধেও রসুন খুব কার্যকরী। কিন্তু আপনি জানেন কি বাড়িতে রসুন গাছ লাগালে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রসুনের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি ভাইরাল গুণের কারনে মানুষের শরীরের নানা রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে মশার আক্রমণ থেকেও পাওয়া যায় রক্ষা। কাজেই বাড়িতে রাখুন রসুন গাছ।

(৭)  সাইট্রোনিলা গ্রাস

মশা প্রতিরোধকারী আরেকটি শক্তিশালী উদ্ভিদ হচ্ছে এই সাইট্রোনিলা গ্রাস। বিভিন্ন মশা প্রতিরোধকারী যেসব স্প্রে বাজারজাত করা হয় তার একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে এই গাছ। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং অন্ধকারচ্ছন্ন জায়গায় এই গাছ ভাল বৃদ্ধি পায়।

(৮)ক্যাটনিপ:

ক্যাটনিপ একধরনের পুদিনা জাতীয় গাছ। এই গাছকে বলা হয় মশার যম। যে কোনও মসকিউটো রিপেলেন্টের থেকে ১০ গুণ বেশি শক্তিশালীএই ক্যাটনিপ।

(৯) ল্যাভেন্ডার:

ল্যাভেন্ডার গাছ হতে তৈরী তেল বাণিজ্যিকভাবে মশা তাড়ানোর জন্য যেসব কয়েল বা স্প্রে তৈরী হয় তাতে ্ইনগ্রেডিয়েন্ট  হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। ল্যাভেন্ডার গাছের তীব্র গন্ধ মশা, পোকামাকড় সহ্য করতে পারে না। তাই বাড়িতে কোন এক জায়গায় ছোট টব বা পাত্রে ল্যাভেন্ডার গাছ  লাগালে দারুণ উপকার পাবেন। এ গাছ সহজে মরে না। শুধু মশা তাড়ানোর জন্য নয়, ল্যাভেন্ডারের রয়েছে আরও প্রচুর গুণ। উত্কণ্ঠা, ব্যথা উপশম, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাতেও দারুণ উপকারী ল্যাভেন্ডার।

 (১০)রোজমেরি:

রোজমেরি একটি বহুবর্ষজীবী ঔষধি। রোজমেরির পাতায় ভীষণ সুঘ্রাণ থাকে যা মশা তাড়াতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। বাগানে যদি রোজমেরি গাছ লাগান তাহলে মশার হাত থেকে রেহাই তো পাবেনই, সঙ্গে জুটবে আরও অনেক উপরি পাওনা। সুগন্ধী রোজমেরি শুঁকলে স্মৃতিশক্তি ও মনোসংযোগ বাড়ে। ঔষধী গুণও রয়েছে রোজমেরির। এর পাতা দিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করা যায় যা চুলের জন্যে খুব উপকারি। এর ওরগ্যানিক তেল লাগাতে পারলে চুলের অধিকাংশ সমস্যা চলে যায়, চুল পড়া বন্ধ হয়, চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। তাছাড়া ব্যবহার করতে পারেন রান্নাতেও।

অবাক হচ্ছেন তো এই ভেবে যে, আসলেই গাছগুলো মশা তাড়াতে পারে? একবার বাড়িতেই গাছগুলো লাগিয়েই দেখুন না,  সত্যিই কাজ করে কিনা।  তবে গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই গাছগুলোতে এমন কিছু উপাদান আছে যা মশার যম। ভাবুন তো একবার কোন মশার কয়েল কিংবা মশা বিনাশকারী স্প্রে ছাড়াই আপনি কত সহজে কিছু গাছ লাগিয়ে মুক্তি পেতে পারেন মশার সমস্যা থেকে। এই গাছ আপনাকে শুধু অক্সিজেনই দিচ্ছে না বা ঘরের দুষিত বাতাসকে পিউরিফাই করছে না, মশাও তাড়াচ্ছে ; যা সত্যিই অভাবনীয়।