স্বপ্ন কি সত্যি হতে পারে? জানুন ১০ রহস্যময় স্বপ্নের বাস্তব হওয়ার ঘটনা

dreams-1-1স্বপ্ন মানুষের অবচেতন মনে ঘটতে থাকা নানা কাল্পনিক ঘটনার দৃশ্যাবলী, জেগে উঠার সাথে সাথে যা পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়।  স্বপ্ন কখনও সত্যি হয় তা কি আপনি মানেন? আপনি মানুন আর নাই মানুন, আপনি যতই অবিশ্বাসী বা বিজ্ঞানমনস্ক হোন না কেন এই বিশাল পৃথিবীতে অদ্ভুত কত যে ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা দেয়া অনেকক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঠিক যেমন স্বপ্ন।  পশ্চিমী আধুনিক মনোবিদ্যাও জানায়, আমাদের অবচেতনে অনেক সময়েই সঞ্চিত থাকে ভবিষ্যৎ-স্মৃতি। এবং তা প্রতীকের আকারে স্বপ্নে প্রকট হতেই পারে। কাজেই স্বপ্ন যদি কোন ভবিষ্যত রহস্যের সমাধান দেয় বা কোন ভবিষ্যত ঘটনার চিত্রকল্প আপনাকে জানান দিয়ে দেয় তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারন পৃথিবীতে এমন কিছু ভবিষ্যত ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে এই স্বপ্ন। এমনই ১০  অদ্ভুত সত্যিকারের রহস্যময় স্বপ্নের কথা জানাচ্ছি আজ আপনাদের।

১. আব্রাহাম লিঙ্কনের মৃত্যু

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৫ সালে মৃত্যুর দু’সপ্তাহ আগে  এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন। তিনি দেখলেন, হোয়াইট হাউসে একটা কফিনকে ঘিরে বহু মানুষের জমায়েত হয়েছে।  অনুষ্ঠানে সমাগতদের  একজনকে  কফিনের ভিতর কার মৃতদেহ শায়িত রয়েছে তা জানতে চান। উত্তরে সেই ব্যক্তি জানান যে কফিনটি আমেরিকার রাষ্ট্র্রপতির। এরপর  মৃতদেহ দেখতে তিনি এগিয়ে যান। কফিনে উঁকি মেরে তিনি চমকে উঠলেন। কারণ কফিনে শায়িত মৃতদেহটি আর কেউ নন, স্বয়ং তিনিই। পরের দিন সকালে এই অদ্ভুত স্বপ্নের কথা লিঙ্কন তাঁর স্ত্রীকে জানান।  এই স্বপ্নের দুসপ্তাহ পরেই ১৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় ফোর্ড থিয়েটারে উইলকেস বুথ নামে এক বন্দুধারীর গুলিতে তিনি আহত হন এবং পরদিন সকালে মারা যান।

২. ফ্রেডরিখ ক্যাকুল

ফ্রেডরিখ ক্যাকুল ছিলেন জার্মানির এক বিখ্যাত রসায়নবিদ। এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন যে, একটি সাপ নিজের লেজে নিজেই চুমু খাচ্ছে। এই অবস্থায় সাপটিকে দেখতে সম্পূর্ণ একটি রিংয়ের মতো মনে হচ্ছিল তাঁর। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এ স্বপ্ন দেখার কিছুদিন পরই ফ্রেডরিখ  আবিষ্কার করলেন কার্বনের গঠন ও কাঠামো। অথচ গত বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি অনেক গবেষণা চালানোর পরেও সফল হতে পারেননি।

৩. ফ্লাইট ১৯১, যুক্তরাষ্ট্র এয়ারলাইন্স

ডেভিড বুথ নামের একজন ব্যক্তি ১৯৭০ সালে একই দুঃস্বপ্ন প্রায় ১০ রাত্রি দেখেন। কি ছিল তার সেই দুঃস্বপ্নে? তিনি জানান, যখন তার ঘুম গভীর হয় তিনি স্বপ্নে দেখেন  একটি প্লেন রানওয়ের সময় কোন কারনে তার চাকায় আগুন ধরে যায়। প্লেনটি নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ে এবং তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। পুরো প্লেনটিতে আগুন লেগে যায়।  তিনি তার এই স্বপ্নের কথা আমেরিকান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানান। তারা বুথের  কথা শুনে এই ‍সিদ্ধান্তে পৌছান যে, তিনি হয়তো বোয়িং-৭২৭ বা ডিসি-১০ বিমান স্বপ্নে দেখেছিলেন। এই ঘটনার কয়েকদিন পরই  আমেরিকান বিমান ডিসি-১০ এর ফ্লাইট-১৯১ টেক অফের কিছুক্ষণ পরেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। জানা যায় নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে না পারার কারনে বিমানটির ইঞ্জিন ভেঙ্গে যায় এবং আগুন লেগে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ২৭৩ জন যাত্রীই এই দুঘর্টনায় মৃত্যুবরণ করেন।

৪.ওকলাহোমা শহরে বোমা বিস্ফোরণ

আমেরিকার আধ্যাত্মিক মিডিয়াম ট্যানা জানান যে, তার স্বপ্নে অশরীরী আত্মারা আসে এবং আত্মারা তাঁকে অদূর ভবিষ্যতের বহু ঘটনার কথা জানিয়ে যান।  ১৯৯৫ সালের এক লাইভ রেডিও অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ওকলাহোমা শহরের এক বাড়িতে বিধ্বংসী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবে জঙ্গিরা।  এর ঠিক ৯০ মিনিট পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে চুরমার হয়ে যায় ওকলাহোমার অ্যালপ্রেড পি মুরাহ ফেডেরাল বিল্ডিং।  ঘটনার হোতা টিমথি ম্যাকভেই ও তার সঙ্গীরা পরে গ্রেপ্তার হয়।

৫. হারিকেন ক্যাটরিনা ঘটনা

ওরেগন রাজ্যের বসবাসকারী জেরেমী ড্রিসকল নামেরে এক সন্ন্যাসী একদিন সকালে রেডিওতে লুসিয়ানা রাজ্যের হারিকেন সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন শুনছিলেন। ঐ দিনই তিনি স্বপ্নে দেখেন উত্তর দিক থেকে সামুদ্রিক এক তীব্র ঝড় প্রবল বেগে সমুদ্র উপকূল এলাকায় আঘাত হানছে। যদিও এই হারিকেন রাজ্যের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে কিন্তু এলাকাটি লোক বসতিহীন থাকায় কোন মানুষের মৃত্যুর  দৃশ্য তিনি দেখতে পাননি। জেরেমির এই স্বপ্ন পূর্বের কোন ঘটনা না ভবিষ্যতের কোন ইঙ্গিত তা জানাতে না পারলেও তাঁর এই স্বপ্নের বেশ কিছুদিন পর ২০০৫ সালে আগস্ট মাসে সামুদ্রিক হারিকেন ‘ক্যাটরিনা’ নিউ ওরলেনস রাজ্যে  প্রবলভাবে আঘাত হানে। জেরেমি তাঁর এই স্বপ্নের কথা তাঁর  ‘দি মঙ্কস আলফাবেট’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন।

৬. মার্ক টোয়েনের ভাইয়ের মৃত্যু

বিখ্যাত মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন ও তার ভাই হেনরি দুজনে মিসিসিপি নদীতে চালিত বোটগুলিতে এক সময়ে কাজ করতেন। একবার মার্ক স্বপ্ন দেখেন যে, তাঁর বোনের বাড়িতে হেনরির মৃতদেহ একটি ধাতব কফিনে শায়িত রয়েছে। পুরো কফিন সাদা ফুল দিয়ে ঢাকা। এই স্বপ্নের এক সপ্তাহ পরেই এক মোটর বোট বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় হেনরির। মৃত ভাইকে শেষবারের মতো দেখতে গিয়ে চমকে ওঠেন মার্ক। স্বপ্নে তিনি ভাইকে যে অবস্থায় দেখেছিলেন অবিকল একইভাবে হেনরির লাশ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্বপ্নে দেখা ভাইয়ের ধাতব কফিন বাস্তবে দেখতে পেয়ে এতোই অবাক হন যে তার কারন তিনি এক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে জানতে চান।প্রত্যক্ষদর্শী জানান যে, হেনরীর মৃতদেহের অবস্থা এতোটা শোচনীয় ছিল যে, অন্য মৃতেদেহগুলোকে কাঠের কফিনে শোওয়ানো হলেও হেনরির মৃতদেহকে ধাতব কফিনে রাখা হয়।

৭. জুলিয়াস সিজারের মৃত্যু

প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের প্রখ্যাত সেনাপতি জুলিয়াস সিজার ৪৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে সিজারের স্ত্রী কালপুর্নিয়া স্বপ্নে দেখেন যে,  তাঁর স্বামী নিহত হচ্ছেন আততায়ীদের হাতে। ভীত কালপুর্নিয়া তাঁর এই স্বপ্নের কথা সিজারকে জানান। তিনি সিজারকে অনুরোধ করেন যে, তিনি যেন সেনেটে না যান। সিজার কালপুর্নিয়ার এই স্বপ্নের কথা হেসে উড়িয়ে দেন এবং সেনেটে না যাওয়ার অনুরোধ মানতে রাজি হননি।  নিয়তির পরিহাস, শেষ পর্যন্ত সেনেটেই আততায়ীদের হাতে ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হন‌।

৮. জেবি প্রিস্টলি

 বিখ্যাত নাট্যকার জেবি প্রিস্টলি একবার স্বপ্ন দেখেন, তিনি বারান্দায় দাড়িঁয়ে আছেন।  আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপরিচিত অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ি দৃশ্য দেখছেন! এর ঠিক ১০ বছর পরে প্রথমবারের মতো তিনি গ্রান্ড ক্যানিয়ন পাহাড় দেখতে যান। সেখানে পৌঁছা মাত্রই কেন যেন তাঁর মনে হতে লাগল এ রকম কোনো জায়গায় তিনি আগেও এসেছেন। তখনি অনুভব করলেন, এ গ্রান্ড ক্যানিয়নই তিনি এক সময় স্বপ্নে দেখেছিলেন।

৯. টাইটানিক দুর্ঘটনা

১৯১২ সালে টাইটানিক-দুর্ঘটনা ঘটে। তারপর অনেক মানুষেরই দাবি, তাঁরা নাকি এই দুর্ঘটনা ঘটার কথা আগেই স্বপ্নে দেখেছেন। তাঁরা নাকি স্বপ্নে একটা বিশাল জাহাজকে ডুবে যেতে দেখেছেন‌। এইসব দাবির অধিকাংশই পরে মিথ্যা বলে প্রমানিত হয়। কিন্তু অন্তত একজনের স্বপ্নকে অস্বীকার করার উপায় ছিল না। কারণ টাইটানিক-দুর্ঘটনা সম্পর্কে নিজের স্বপ্নের কথা তিনি চিঠি লিখে জানিয়ে যান তাঁর এক পরিচিতকে। চিঠির তারিখ দেখে জানা যায়, চিঠিটি লেখা হয়েছিল টাইটানিক-ট্র্যাজেডির অনেক আগে।

১০. ক্যালিগুলার হত্যা
রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা নিজের মৃত্যুর দিন কয়েক আগে একটি স্বপ্নে দেখেন যে, দেবরাজ জুপিটারের সিংহাসনের সামনে তাঁকে আনা হয়েছে । জুপিটার তাঁকে লাথি মেরে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এই স্বপ্নকে অনেকেই মৃত্যুর পূর্বাভাস বলে ব্যাখ্যা করেন। ক্যালিগুলা এই স্বপ্নকে গুরুত্ব দিতে চাননি। অথচ পরের দিনই তিনি নিহত হন।

লেখকঃ প্রকাশ কুমার নাথ। পেশায় কম্পিউটার প্রোগ্রামার । ভালো লাগে বই পড়তে আর নানান দেশের খবর সংগ্রহ করতে। এছাড়া গান শুনার নেশা তো রয়েছেই । ইচ্ছে আছে বই লেখার । কালি, কলম আর মগজাস্ত্র এক সুরে বাঁধার অপেক্ষায় আছি ।