জেনে নিন পবিত্র রমজানে সতেজ থাকার চাবিকাঠি…

ছবি সৌজন্য- দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

বছর ঘুরে আবার এলো মাহে রমজান। এবার এর সময়টাই এমন যে, রোজার মাঝে কখনো হয়তো থাকবে জৈষ্ঠ্যের প্রখর তাপ, আবার কখনো ঝড়-বৃষ্টি। এই আবহাওয়ায় প্রতিদিনের সিয়াম সাধনায় সুস্থ ও সতেজ থাকতে কীরকম খাদ্যাভ্যাস হওয়া উচিত, তা-ই নিয়ে এই আয়োজন।

সেহরি:
অনেকেই সেহরিকে তেমন একটা গুরুত্ব দিতে চান না, না খেয়েই রোজা রেখে ফেলেন। এটা করা একদমই উচিত নয়। সেহরি সারাদিনে ক্ষুধা লাগা প্রতিরোধ করে, কোষ ও কলাকে ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচায় এবং দিনব্যাপী কাজকর্মের শক্তি যোগায়। সুতরাং সেহরির সময়ে একটি সুপরিকল্পিত আহার আপনাকে সারাদিন সতেজ ও কর্মক্ষম রাখতে পারে।

সেহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন- লাল চালের ভাত, আটার রুটি, আলু, পাস্তা, টোস্ট খাওয়া যেতে পারে। এ ধরণের খাবারগুলো ধীরে ধীরে হজম ও শোষণ হবে এবং আপনাকে উপবাসের পুরো সময়টা জুড়ে শক্তি যোগাবে। এর সঙ্গে সবজির কোনো আইটেম বা সালাদ রাখা যায়। সাথে ডাল, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য(দই, লাবাং, পনির) খেলে আমিষের চাহিদাও পূরণ হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। তবে রোজা রাখলে সারাদিন আর পানি পান করা হবে না- এই ভেবে পানি দিয়ে পেট ভরিয়ে ফেললে কোনো লাভ নেই। এতে শুধু অস্বস্তি আর অস্থিরতা বোধ হবে। বরং ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পুরো সময়টা বেশি করে পানি ও তরল খাবার খেলেই পানির দৈনিক চাহিদা মিটে যায়।

ইফতার:
শুরুতে কয়েকটি খেজুর, তাজা ফলের রস এবং স্যুপ গ্রহণ করলে তা উপবাসের সময়ে রক্তের কমে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক করবে এবং শরীরের পানি ও লবণের পরিমাণে ভারসাম্য এনে দেবে। এরপর কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, আমিষ (যেমন- ডাল, মাংস), সবজি ও ফলের তৈরি বিভিন্ন আইটেম খাওয়া যেতে পারে। ভাজাপোড়া খাবার এবং কার্বোনেটেড ড্রিংকস একেবারেই খাওয়া উচিত হবে না। আর যা-ই খাওয়া হোক, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। সারাদিন না খেয়ে থাকার পর ইফতারে হঠাৎ অনেকখানি খেয়ে ফেললে পরিপাকতন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ পড়ে, যা কখনোই ভাল ফল বয়ে আনে না।

রামাদানে সুস্থ থাতে মেনে চলুন কিছু টিপস:

●ইফতারের পর থেকে সেহরির সময় পর্যন্ত প্রচুর পানি, তরল খাবার (ফলের রস, স্কোয়াস, স্মুদি) ও স্যুপ পান করুন। এটি সারাদিনের পানির চাহিদা পূরণ করবে, ফলে আপনি কম পিপাসার্ত বোধ করবেন।

●চা, কফি তরল খাবার হলেও, এরা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেশিবেশি পানি বের করে দেয়। তাই এগুলো কম পান করা-ই ভালো।

●ভাজাপোড়া ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। ভাপে রান্না করা, সেদ্ধ, গ্রিল ও বেইক করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

●বেশি লবণ দেওয়া খাবার বাদ দিন। সাধারণত ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত ও টিনজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে।

●রোজায় খাবারে মিষ্টতা আনতে প্রাকৃতিক উপায়, যেমন মধু বা ব্রাউন স্যুগার ব্যবহার করুন। চিনিজাতীয় খাবারগুলো নাহয় ঈদে মিষ্টিমুখ করার জন্যেই তোলা থাক।

●রামাদান সংযমের মাস, তাই খাদ্য গ্রহণেও সংযমী হোন। সেহরি ও ইফতারে পরিমাণে বেশি খাওয়ার চেয়ে খাদ্যের পুষ্টিমান বাড়ানোর দিকে নজর দিন।

●বিকেল ৩টা থেকে মাগরিব এর মধ্যবর্তী সময়টাতে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এতে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমবে।

●ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, পান-সুপারি, জর্দা খাওয়ার বাজে অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করার আদর্শ সময় হচ্ছে এই রামাদান।

পবিত্র রামাদান সংযম চর্চার মাস। এই মাস স্রষ্টার কাছ থেকে রহমত, বরকত ও নাজাত লাভের মাস। সুতরাং এই সময়ে নিয়মমাফিক চলে নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে সচেষ্ট হোন, যাতে নির্বিঘ্নে স্রষ্টার নৈকট্য লাভে সফল হতে পারেন।