ভালোবাসা দিবস স্পেশাল-একটি সিরিয়াস ব্রেকআপ ও আপনি কি করবেন

ফিচারের প্রচ্ছদ ছবির ছড়া কৃতজ্ঞতা- রোমেন রায়হান, কার্টুন- মেহেদী হক

মনে করুন, আপনি খুবই সিরিয়াস একটি প্রেমের সম্পর্কতে জড়িত আছেন। প্রতিদিন দেখা হয়, কথা হয় ফোনে, মেসেঞ্জার বা হোয়াটস এপে প্রতিদিন হাজার খানেক মুঠোবার্তা  আদান প্রদান হয় আপনার আর তার। এভাবে গেল ৬ মাস বা, ৬ বছর! হঠাৎ একদিন আপনার অথবা তার মনে হল; কিছু একটা ঠিক নেই। যেভাবে ভেবে রেখেছিলাম, সেভাবে কিছুই এগোচ্ছে না। উপরন্তু দেখলেন, কিছুদিন পর পর ঝগড়া হচ্ছে। ঝগড়া হয়ে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপরে, আপনারা দুইজনে মিলে ঠিক করলেন, কিছুদিন এর একটা বিরতি নিয়ে দেখি। অথবা, এটা ঠিক করে ফেললেন যে এই এক সমস্যা নিয়ে আর নয়। আপনার বা তার, অথবা দুইজনেরই; মুক্তি চাই। তো পাঠক, অভিনন্দন। আপনার ‘ব্রেক-আপ’ বা ভালো বাংলায় ‘বিচ্ছেদ’ যাকে আমরা বলি; সে সময়টা শুরু হয়ে গেছে। আর, এই ব্রেক-আপ এর পর যদি এমন মনে হয় যে, “আমার কিছু ভাল লাগছে না” বা “এটা আমি কি করলাম” অথবা “তাকে ছাড়া আমি থাকব কি করে”; তাহলে আপনার জন্যই এই লেখাটা উপযুক্ত। আপনি চান আর না চান; আপনাকে কিছুটা মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে তখন তো যেতেই হবে, যদি আপনার বিন্দুমাত্রও আত্মিক যোগাযোগ ওই মানুষটার সাথে থেকে থাকে কোনসময়।

আমাদের সবারই কমবেশি এই হৃদয়ঘটিত টানাপোড়েন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা আছে। হয়ত সেটা খুব বেশি মারাত্মক ছিল, নতুবা একেবারেই হালকা কিছু। সুতরাং, আমরা কমবেশি সবারই কমবেশি ধারণা আছে এমন অবস্থায় কি করা উচিৎ। আমি শুধু সেই জানা কথাগুলোই আরেকবার জানাবো। যেহেতু, এই পুরো লেখাটাই ব্রেক-আপ এর পর কি করবেন এই নিয়ে এবং আমরা সবাই জানি যে শোনা কথা আরেকবার কারো কাছ থেকে শুনলে তা খানিকটা বিশ্বাসে পরিণত হয়।

১| প্রথমেই যদি খুব বেশি মন খারাপ হয়, আপনার হাউমাউ করে বা চুপচাপ বসে হালকা কান্নাকাটি করতে মন চায়; তো কাঁদুন। বন্ধুর সাথে কথা বলে কান্নাকাটি করুন, বা একলা একলা বসে কাঁদুন। কান্নাকাটি করার ব্যাপারটা মাঝেমাঝে খুবই উপকারে আসে। ওইযে, একটা কথা আছে না; “কান্নায় শোক দূরীভূত হয়!” কথাটা অনেকাংশেই সত্য। আর, চোখের পানি পড়লে মনের কষ্টও একটা সময় আনুপাতিক হারে কমে যাবার সম্ভাবনা আছে।

২|এসময়ে নিজেকে একলা, সব কিছু হতে দূরে রাখার একটা প্রবণতা কাজ করতে পারে। ভুলেও এটা করবেন না। নি:সংগতার মত ভয়াবহ কিছুই আর হয় না। মাঝেমধ্যে নিজের জন্য একাকী কিছুটা সময় বের করতে পারেন। কিন্তু তা যেন কোনক্রমে এক বা দুইদিনের বেশি না হয়। তাহলে প্রবল হতাশা আপনাকে গ্রাস করে নেবার সুযোগ পাবে। বান্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, বাবা-মা, ভাই-বোন; মোট কথা যারা আপনার জন্য ভাবে; তাদের সময় দিন। পুরনো সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিন।

৩| আপনার নিজের দিনপঞ্জি নানা ধরণের কাজের তালিকায় পরিপূর্ণ করুন। আপনি রান্না করতে ভালোবসলে রান্না করুন, খেতে পছন্দ করলে কোন বন্ধুকে নিয়ে খেতে চলে যান প্রিয় রেস্তরাঁটিতে, সিনেমা পছন্দ করলে সিনেমা দেখুন, গল্পের বই পড়ুন, শপিংয়ে যান। মোটকথা যা মন চায়, করে ফেলুন। কিন্তু, কোন বিরহ সংগীত কোনমতেই শুনবেন না। এই ধরণের গান শুনলে নতুন করে মন খারাপ লাগার সৃষ্টি হতে পারে।

৪|প্রাক্তনের যা কিছু আপনার কাছে আছে; উপহার, ছবি বা অন্যকিছু, তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করুন। ফেলে দিতে মন না চাইলে নিজের কাছে রাখুন। জোর করে এগুলো হতে মন সরাতে গেলে হিতে বিপরীত ও হতে পারে। সুতরাং, সে চেষ্টা না করাই ভাল। আমার মতামত হচ্ছে ফেলে না দিয়ে এগুলো অন্য কোথাও ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেমন: যে বন্ধুকে পছন্দ করেন না তাকে উপহার হিসেবে দিতে পারেন। আপদ বিদেয় হবে, বন্ধু অবাক হবে, সেই সাথে এই মন্দার যুগে আর্থিকভাবে কাজেও লাগবে।

৫| আপনার প্রাক্তনের সাথে পুরোপুরিভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিন। কোন ফোনকল নয়, কোন মুঠোফোনে টেক্সট নয়, কোন ইমেইল নয়। দেখা করার তো প্রশ্নই আসে না। শুরুতে শুরুতে খারাপ লাগলেও পরবর্তীতে এটা কাজে দেবে।

৬|আপনাদের পরিচিত স্থান, গান, রেস্তরাঁ, এমনকি রাস্তাও অন্তত মাসখানেক এড়িয়ে চলুন। ভালো লাগবে দেখবেন।

৭|এটা আমার নিজস্ব একটা বুদ্ধি। আপনার প্রাক্তনের যা যা খারাপ, বিরক্তিকর তা একটা কাগজে টুকে নিয়ে নিজের আয়নার সামনে লাগিয়ে রাখুন। প্রতিদিন একবার এই জিনিস দেখুন, এরপরে নিজেকে দেখুন; তারপরে চিন্তা করুন। আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি কতটা মূল্যবান এবং এই ব্রেক-আপ নিয়ে চিন্তা করার চাইতে গ্লোবাল ওয়ার্মইং বা মেরুকরণ নিয়ে চিন্তা করা অনেক বেশি কাজের।

৮|নিজে যা যা এতদিন সম্পর্কতে থাকার সময় করতে পারেননি, সব এবারে করা শুরু করুন। আপনার সুখী হওয়া অন্য কারো হাতে নেই। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, ঈশ্বরের কাছে সুন্দর আগামীর জন্য হাত তুলে প্রার্থনা করুন। মেডিয়েশন করুন, ইয়োগা করুন।

৯| নতুন নতুন বন্ধু বানান। তাদের সাথে কথা বলুন। নিজেকে আরো একটু গোছান। নিজের গণ্ডী ছেড়ে বেরিয়ে আসুন। সর্বোপরি নিজেকে মেলে ধরুন। কে জানে! হয়ত ভবিষ্যৎ এ আপনার জন্য আরো ভালো মনের কোন মানুষ অপেক্ষা করে আছে। এই বিচ্ছেদকে স্বাভাবিকভাবে নিন। নিজেকে বা প্রাক্তনকে কোনভাবেই দোষী ভাববেন না।

এটা কখনোই সহজ হয় না, যখন আপনাকে এমন একটা বিষয় নিয়ে প্রতিদিন ভাবতে হয়, যা নিয়ে আপনার কোন অভিজ্ঞতাই আগে ছিল না। কিন্তু একটা কথা আছে না, “There is always a first time!” ধরেই নিন, এই বিরহও ঠিক তেমন। আপনি চান আর না চান, যদি সেই মানুষটার সাথে বিন্দুমাত্র কোন মানসিক বা আত্মিক সংযোগ কখনো থেকে থাকে, তো আপনি কোন না কোন সময় খানিকটা হলেও নিজের জন্য অসহায় বোধ করবেন। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এটা জানা যে, একদিন আপনিও এই মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কে জানে! হয়ত আজ থেকে দশবছর পরে এককাপ উষ্ণ কফির পেয়ালা হাতে আপনি হাসতে হাসতে চিন্তা করবেন-‘হা ঈশ্বর! আমার পছন্দ এত বাজে ছিল!’

লেখিকা সম্পর্কেঃ নাহিদ জাহান মুনা । ডাক্তারি পড়তে গিয়ে পলিটিক্স পড়তে চলে এসেছি এবং অত্যন্ত সৌভাগ্যের সাথে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ নামক একটা ভয়াবহ রসকষহীন সাবজেক্ট থেকে পোস্টগ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলেছি। বই পড়া, মুভি দেখা, ঘুরাঘুরি করা ভাল লাগে। বই পড়তে পড়তে বাসায় একটা ছোটখাটো লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলেছি। লেখার অভ্যাস কখনোই ছিল না। তারপরও শুরু করে ফেলেছি সাহস করে।