হবু মায়েদের হাসপাতালে যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

“মা” কথার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে পৃথিবীর সকল কথার মধুর নির্যাস। মাতৃত্ব নারী জীবনের সেরা পূর্ণতা । আপনি যদি সন্তানসম্ভবা হয়ে থাকেন, তাহলে সন্তান প্রসবের জন্য আপনাকে কিছুদিন হাসপাতালে অথবা কোন মাতৃসদনে অবস্থান করতে হতে পারে। হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে কিছু প্রস্তুতি অবশ্যই আপনার নেয়া উচিত । তা না হলে দেখা যাবে আপনার স্বামীকে বারবার হাসপাতাল আর বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে।  এটি যদি হয় আপনার প্রথম সন্তান তাহলে আপনি অনেক কিছু সম্পর্কে অবগত নাও থাকতে পারেন। আর সেজন্য আপনার এমন কিছু প্রস্তুতি নেয়া উচিত যা আপনার প্রথম সন্তান আগমনের সময়টি  চিন্তামুক্ত হয়ে উপভোগ করতে পারেন।  সন্তান প্রসবের সময় থেকে সন্তান প্রসবের পর কিছু সময় আপনাকে  হাসপাতালে থাকতে হতেই পারে। হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে  আপনার এমন কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী আপনার সঙ্গে থাকা উচিত যা হাসপাতালে অবস্থানের  সময়টা আপনার সুন্দর কাটবে।  সুতরাং জেনে নিন এমন কিছু বিষয় যা না জানলেই নয়।

(১) হেলথ রিপোর্ট ও প্রেসক্রিপশন হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে ব্যাগের মধ্যে গুচিয়ে নিন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন , বিভিন্ন টেস্ট রিপোর্ট, প্রয়োজনীয় ঔষধ। এসব জিনিস ব্যগে নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখুন। হাসপাতালে ভর্তি হতে  এবং ডায়াগনোসিসের জন্য প্রেসক্রিপশন, রিপোর্ট অবশ্যই প্রয়োজন হবে।

(২) মোবাইল ফোন, চার্জার এবং ফোন বুক মোবাইল ফোনটি  সাথে রাকতে একদম ভুলবেন না। ব্যাগ গোছানোর শুরুতেই  মোবাইল ফোন ,চার্জার গুছিয়ে নিন। চার্জারটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা যাচাই করে নিন এবং ব্যাগের মধ্যে এমন জায়গায় রাখুন যাতে খুব সহজে খুঁজে পান । কারন, প্রয়োজনের সময় এই মোবাইল ফোনটিই হয়ে উঠবে আপনার পরম বন্ধু। মোবাইলের বেশী করে টাকা রিচার্জ করে নিন। দরকার হলে কয়েকটি রিচার্জ কার্ড ব্যাগে রাখুন। এই সময়ে আমরা  অনেকেই ফোন বুক এর প্রয়োজনীয়তার কথা মনেই থাকে না। কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমনটি হতেই পারে যে আপনার মোবাইল এর চার্জ শেষ, ফোন সুইসড অফ, অথচ আপনার এমন একজনকে ফোন করা দরকার যার নাম্বারটি আপনার মনে পড়ছে না। কাজেই  ফোন বুক ব্যাগে রাখতে ভুলবেন না।

(৩) নিজের জামাকাপড়, স্লিপার ও মোজা: গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। ফলে গর্ভবতী নারীর একটু বেশি গরম অনুভূত হতে পারে।গর্ভাবস্থায় সবসময় একটু ঢিলাঢালা হালকা পোশাক শরীরের জন্য ভালো।তাই ব্যোগ গুছানোর সময় বেশ কয়েকদিনের হিসাব করে পরিস্কার জামাকাপড় নিন।  গর্ভবতী মহিলাদের  জন্য সুতির হালকা আরামদায়ক জামাকাপড় সঙ্গে রাখা উচিত। শীতকাল হলে গরম জামাকাপড় ব্যাগে রাখতে ভুলবেন না।  স্বাভাবিক হাঁটাচলার জন্য এবং ওয়াশ রুম এ ব্যবহারের জন্য আলাদাভাবে দু’ জোড়া স্যান্ডেল অবশ্যই সাথে রাখুন। খেয়াল রাখবেন স্যান্ডেল গুলো যাতে স্লিপারি না হয়। আর সময়টা যদি হয় শীতকাল তবে সাথে মৌজা রাখতে অবশ্যই ভুল করবেন না।

() ‍হালকা প্রসাধনী : সৌন্দর্য সুস্থতার প্রতীক। আমরা সকলেই সুন্দর থাকতে পছন্দ করি।অনেকের এমন ও অভ্যাস দেখা যায় যে ঘুম থেকে উঠেই আয়নাতে নিজের মুখ খানা দেখেই দিন শুরু করেন। আপনি যদি সেরকম সৌখিন মনের না ও হয়ে থাকেন তবুও সাথে কিছু হাল্কা প্রসাধনী যেমন চিরুনি, আয়না, হেয়ার বেন্ট, ময়শ্চারাইজার লোশান্‌ ইত্যাদি একটি ছোট পার্স ব্যাগ এ গুছিয়ে নিতে পারেন। নিজেকে একটু টিপটপ দেখাতে কে না ভালবাসে, বলুন তো?

(৫)   বিছানার চাদর, বালিশ, কাঁথা বা হালকা কম্বল: মানসিক সুস্থতাই শরীর সুস্থ থাকার পূর্ব শর্ত।  অনেকেই নিজের বিছানা, বালিশ, চাদর, কম্বল ছাড়া ঘুমেই আসে না।   আর হাসপাতালের বিছানার কথা ভাবলেই গা গুলিয়ে উঠে। কিন্তু নিরুপায় ও জটিল অবস্থায় নার্সিং হোম এ তো যেতেই হবে। কাজেই  চটজলদি নিজের প্রয়োজনীয় দু’খানা বিছানার চাদর,পাতলা কাঁথা ,যদি সময়টা হয়ে থাকে শীতকাল তবে পাতলা কম্বল আর সুযোগ থাকলে নিজের অতি প্রিয় নিত্যসঙ্গী বালিশ খানাও নিয়ে যেতে ভুলবেন না।

(৬) শিশুর জন্য কাপড় : অনেকেই দেখা যায় ডেলিভারির দু:শ্চিন্তায় নবজাতকের সুরক্ষার কথা একেবারেই ভুলে যায়।  নবজাতকের আগমন পরবর্তী মুহূর্ত গুলো যাতে সন্তান  নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকে সে চিন্তা মাথায় রেখে  কিছু হাল্কা সুতি কাপড়ের কাঁথা, ন্যাপকিন, নরম বেবি তোয়ালে ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগের মধ্যে গুছিয়ে রাখুন।

(৭) মোমবাতি / চার্জলাইট : যদি হয় প্রথমবার মা হওয়া ,তবে এমনিতেই মনের জানালায় অজানা ভয় , আতঙ্ক, ভাবনা এসে উঁকি দিয়ে যায় প্রতিমুহূর্ত, আর অনাগত নতুন সত্ত্বা যাকে এতদিন পরম যত্নে নিজের মাঝে বেড়ে তুলেছেন তার ছোট ছোট হাত পা নাড়ানাড়ি অনুভব করার শেষ অপেক্ষমান মুহূর্ত গুলোতে আলো ছাড়া কি চিন্তা করা যায়? মোটেও না। তাছাড়া লোডশেডিং এর যন্ত্রণায় যাতে বিরক্ত হতে না হয়  তাই সার্বক্ষণিক নিজের সাথে মোমবাতি / চার্জলাইট, লাইটার রাখতে একদম ভুল করবেন না।

(৮) ইলেকট্রিক কেটলী ও পানির বোতল: আপনার প্রসবকালীন সময়টা যদি শীতকাল হয়, তাহলে সবসময় আপনার গরম পানির প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য পানি গরমের জন্য ইলেকট্রিক কেটলী থাকলে তা খুবই কাজে দেয়। তাছাড়া পানি খাওয়ার জন্য পানির জগ বা বিশুদ্ধ কয়েকটি খাবার পানির বোতল অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।

(৯) কিচেনওয়্যার, কেটরী, পনির জগ : আপনার প্রসবকালীন সময়টা যদি শীতকাল হয়, তাহলে সবসময় আপনার গরম পানির প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য পানি গরমের জন্য ইলেকট্রিক কেটলী থাকলে তা খুবই কাজে দেয়। তাছাড়া পানি খাওয়ার জন্য পানির জগ বা বিশুদ্ধ কয়েকটি খাবার পানির বোতল অবশ্যই সঙ্গে রাখুন। তাছাড়াকেনাকাটার ঝামেলা মুক্ত থাকতে বাসা থেকে কিছু কিচেনওয়্যার যেমন – বাটি, চামচ, নাস্তার প্লেট, গ্লাস, মগ  ইত্যাদি ছোট জিনিসগুলো নিয়ে যাওয়াই উত্তম।

(১০) চশমা, কাগজ-কলম ও অতিরিক্ত অর্থ   : যারা চশমা ব্যবহার করেন তাড়াহুড়া বশত চশমা নিতে ভুলে যাবেন না। আর নার্সিং হোম এ সার্বক্ষণিক আলো জ্বালা থাকে। যারা আলোতে ঘুমুতে অসুবিধায় পরেন তাদের জন্য বলছি, আজকাল চশমার কাপড়ের তৈরি আলো প্রতিবন্ধক পাওয়া যায়, তা সাথে ব্যাগের কোণে  রেখে দিন। প্রয়োজন এ কাজে আসবে। আর যাদের লেখালেখির অভ্যাস আছে তাঁরা তাঁদের এইরকম একটা বিশেষ মুহূর্তে মনের অনেক না বলা অনুভূতির কথা ডায়েরি বা নোটবুক এ লিখে রাখার তাগিদে কাগজ,কলম, ডায়েরি বা নোটবুক নিতে ভুলে জাবেন না যেন। শুধু ডেলিভারি বলেই নয়, যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে অতিরিক্ত কিছু টাকা সাথে রাখুন। যদি নিজের কাছে রাখার মত পরিস্থিতি না থাকে তবে বিশ্বস্ত কারো কাছে দিয়ে রাখবেন যেন দরকারে চেয়ে নিতে পারেন।

(১১) হালকা খাবার  : প্রসবর সময় দেখা যায় অনেক গর্ভবতী মহিলারই  মুখ শুকিয়ে যায়। এজন্য সবসময় সুগার ফ্রি লজেন্স সঙ্গে রাখতে পারেন।  আর তাই এক প্যাকেট সুগার ফ্রি লজেন্স, ঔষধ খাওয়ার সময় হালকা কিছু খাওয়ার জন্য কিছু শুকনো খাবার ব্যাগে অবশ্যই রাখবেন।

(১) বই/ ম্যাগাজিন : অনেকেই বই বা ম্যাগাজিন পড়তে খুব ভালোবাসেন। মানসিক অবসাদ ও হাসপাতালের বিরক্তিকর সময় থেকে নিজেকে হালকা রাখার জন্য সময় কাটাতে বই বা ম্যাগাজিন পড়ার জন্য কিছু পছন্দের বই বা ম্যাগাজিন সঙ্গে রাখতে পারেন।